আত্মশক্তি বা জ্ঞানশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য ভাবসম্প্রসারণ লিখন।
আত্মশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: আত্মশক্তি বা জ্ঞানশক্তি মানুষের একটি বিশেষ গুণ, যা তার অস্তিত্বের মাঝেই নিহিত থাকে। কিন্তু মানুষ জন্মগতভাবে এ শক্তির অধিকারী হয় না। মানুষের মধ্যে আত্মশক্তি বা জ্ঞানশক্তি তখনই জাগ্রত হয় যখন মানুষের মন প্রকৃত শিক্ষার আলােকে আলােকিত হয়। বস্তুত শিক্ষার মূল লক্ষ্য মানুষের আত্মশক্তি বা জ্ঞানশক্তির বিকাশের মাধ্যমে তার মনুষ্যত্ব ও বিবেককে জাগ্রত করা।
ভাবসম্প্রসারণঃ শিক্ষা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা মানুষকে নিজেকে জানতে ও চিনতে শেখায়। প্রকৃত শিক্ষা মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববােধ জাগ্রত করে, তার ভেতরের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তােলে। যে শিক্ষা শুধু খেয়ে-পরে বা ভােগবিলাসে জীবন কাটাতে বা বাঁচতে শেখায় তা কখনাে প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না। যে শিক্ষা জীবনকে সকলের সঙ্গে উপভােগ করতে এবং কল্যাণমুখী কাজে লাগাতে শেখায় না সেটি প্রকৃত শিক্ষা নয়। এ ধরনের শিক্ষা জীবনে সােনা ফলাতে পারে না। শিক্ষা। মানুষকে শেখায় ‘লােভে পাপ, পাপে মৃত্যু। অনেকের মতে, ‘শিক্ষা মনের একটি চোখ। তাই মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটে শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ তার মানবিক গুণগুলাে অর্জন করে। শিক্ষার আলাে না হলে মানুষ আর পশুর মধ্যে কোনাে পার্থক্য থাকত না। আত্মশক্তিতে বলীয়ান মানুষই কর্তব্যপরায়ণ, বিবেকবােধ সম্পন্ন, সমব্যথী, সর্বোপরি সকল মানবিক গুণের অধিকারী। জ্ঞানশক্তি বা আত্মশক্তি না থাকলে মানুষ শিক্ষিত হয়েও কখনাে যথার্থ মানুষ হতে পারে না! ডিগ্রি বা সনদের কোনাে মূল্যই থাকে না যদি শিক্ষিত ব্যক্তি আত্মশক্তি ও জ্ঞানশক্তি অর্জন না করে। প্রতিটি মানুষ অফুরন্ত সম্ভাবনার খনি, সে কী হতে পারে তা সে নিজে জানে না, আর এ অজ্ঞতাই তার উন্নতির পথে বাধা। শিক্ষা মানুষের ভেতরে প্রতিভার আলাে জ্বালিয়ে অজ্ঞতাকে দূর করে তাকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে, সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তােলে। মানুষ জ্ঞান আহরণ করলে অর্জন করে আত্মশক্তি, আর জ্ঞান নামক এ শক্তি হৃদয়ের লুকানাে সকল গুণকে শক্তিশালী করে।
শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে মানুষ হয়ে ওঠে আত্মশক্তিতে বলীয়ান। তাই শিক্ষার উদ্দেশ্য সনদ অর্জন করে চাকরি করে। বিলাসী জীবনযাপন নয়। নিজেকে জানা, বােঝা, আবিষ্কার করা ও শক্তিশালী করাই শিক্ষার উদ্দেশ্য।
একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
মূলভাব : আত্মশক্তি মানুষের একটি মহৎ গুণ। এর অভাবে মানুষ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর শিক্ষা মানুষকেআত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তােলে।
সম্প্রসারিত ভাব : আত্মশক্তি মানুষের মহৎ গুণগুলাের মধ্যে অন্যতম। আত্মশক্তির বলে বলীয়ান মানুষ নিজের শক্তিরওপর নির্ভরশীল হয়ে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে ও কাজকর্ম করতে পারে। আত্মশক্তি না থাকলে মানুষ নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তখন সামান্য কাজেও তাকে অন্যের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সব কিছুতেই তাদের যেনসংশয় কাজ করে। অন্যদিকে শিক্ষার আলােয় আলােকিত ব্যক্তিদের দৃষ্টি বহুদূর প্রসারিত থাকে। তাদেরকে জীবনের বিভিন্ন ।সমস্যা সমাধানের জন্য পরমুখাপেক্ষী হতে হয় না। নিজের শক্তিকেই তারা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার মনে করে। আর এ সবকিছুই সম্ভব প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আত্মশক্তি অর্জনের মাধ্যমে। কিন্তু এ আত্মশক্তি মানুষের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় বিরাজকরে। তাকে সঠিকভাবে সঠিক সময়ে আবিষ্কার করে নিতে হয়। যারা উপযুক্ত শিক্ষা অর্জন করে, তারা তা পারে। আর যারামূৰ্থ তারা তার সন্ধান পায় না। পরনির্ভরশীল না হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য মানুষ শিক্ষা অর্জন করে থাকে। শিক্ষাতাকে কাজের যােগ্য করে তােলে এবং যােগ্যতা থাকলে সে দৃঢ় মনােবলের অধিকারী হয়। হাদিসে আছে, ‘যে শিক্ষা গ্রহণ করে তার মৃত্যু নেই।’
মন্তব্য : শিক্ষা মানুষকে যে কোনাে ভালাে ও সৎকর্মের যােগ্য করে তােলে। এর জন্য সর্বাগ্রে যে জিনিসটি প্রয়ােজন তাহলাে দৃঢ় মনােবল আর সুকঠিন একাগ্রতা।