জন্ম হােক যথা তথা কর্ম হােক ভালাে ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: মানুষ পৃথিবীতে স্মরণীয় ও বরণীয় হয় তার কর্মগুণে। সেই সাথে জীবনে গৌরব ও মর্যাদার আসন লাভের পেছনেও থাকে কর্মের ভূমিকা। কর্মের দ্বারা মানুষ প্রতিষ্ঠা লাভ করে । জন্মের বা বংশের তথ্য সেখানে গৌণ।
ভাবসম্প্রসারণঃ কেউ কেউ ভাবেন, মানুষের প্রতিষ্ঠা ও গৌরব লাভের পেছনে বংশপরিচয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে তা সঠিক নয়। কারণ মানুষ কোন বংশে জন্মগ্রহণ করেছে তা বিবেচনা না করে জীবনে সে কী অবদান রেখে গেছে সেটাই মানুষের মহিমাকে তুলে ধরে। সমাজের নীচু স্তরে জন্ম নিয়েও অনেক মানুষ কর্ম ও অবদানের মাধ্যমে বড় বলে পরিগণিত হয়েছে। মানবসমাজের ইতিহাসে এ রকম অজস্র উদাহরণ আছে। উঁচু বংশ বা নীচু বংশ বড় কথা নয়, মহৎ অবদানেই মানুষ বড় মাপের মানুষ হয়। কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুসহ আরও অনেকে তাদের কর্মের অবদানের জন্যে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। এঁরা কেউ জন্মপরিচয় বা বংশগৌরবের কারণে বড় বলে পরিগণিত নন। পদ্মফুলের জন্মস্থান বড় নয়, এর সৌন্দর্য বড়। তেমনি মানুষের কর্মের সাফল্যই বড়, বংশ ও জন্মপরিচয় নয়। কর্মই জীবন। জীবনে কাজ না থাকলে জীবনই ব্যর্থ হয়। মানুষই বিভিন্ন কর্ম দ্বারা দেশ, সমাজ ও জাতির উন্নতি সাধন করে। বংশ বা জন্মপরিচয় দিয়ে দেশের উন্নতি করা যায় না।
মানুষের জীবনের ব্রত হচ্ছে কর্ম কর্মের মধ্যে লুকিয়ে থাকে মানবজীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতা। মানুষ কর্মের মাধ্যমে চেষ্টা চালায় জীবনে উন্নতি সাধনে, সাথে সাথে দেশ, জাতি ও সমাজের মঙ্গল সাধনে । মানুষের এ মহৎ কর্মগুণই তাকে অমরত্ব দান করে। জন্মপরিচয় বা বংশগৌরব কখনাে মহৎ গুণের মাপকাঠি নয় ।
একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
মূলভাব : আভিজাত্যে বা বংশ পরিচয়ে মানুষের মর্যাদা বাড়ে না, মহৎ গুণাবলির জন্যই মানুষ প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হয়।
সম্প্রসারিত ভাব : জন্মের ক্ষেত্রে মানুষের নিজের কোনাে ভূমিকা থাকে না। আশরাফ বা আতরাফ, ধনী বা দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়াটা মানুষের নিজের ইচ্ছা বা কর্মের ওপর নির্ভর নয়। কিন্তু কর্মজীবনে তার ভূমিকা ও অবদানের দায়।তার নিজের ওপর বর্তায়। তাই পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত বিচারে বংশ পরিচয় তেমন গুরুত্ব বহন করে না। বরং কর্মঅবদানের মাধ্যমেই মানুষ পায় মর্যাদার আসন, হয় স্মরণীয় ও বরণীয়। আশরাফ বা অভিজাত বলে অনেকে বংশ গৌরব বড়করে দেখে, কিন্তু তার কাজকর্মে যদি কোনাে গুণ প্রকাশ না পায়, তবে সে বংশ গৌরবের কোনাে অর্থ নেই। জন্ম কোথায় হলাে তা দেখার বিষয় নয়। সবংশে জন্মগ্রহণ করেও যদি কেউ অপকর্মে লিপ্ত থাকে তবে কেউ তাকে শ্রদ্ধা করবে না। অপরপক্ষে, একজন লােক নীচ কুলে জন্মগ্রহণ করেও তার কর্তব্যকর্ম ও চারিত্রিক আদর্শের জন্য সকলের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারে। দেশের কাছে, দশের কাছে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে কোনাে একজন মানুষের কর্মই হলাে তার বড় পরিচয়। সরােবরের শ্যাওলা অপেক্ষা গােবরের পদ্মফুলের মর্যাদা অনেক বেশি। মুসলিম জাহানের সর্বপ্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল(রা) একজন ক্রীতদাসের সন্তান হয়েও নিজ কর্মের মাধ্যমে সকলের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছিলেন। শেষ বিচারেরদিন আল্লাহ্ কারাে বংশ দেখবেন না, দেখবেন তার কর্ম।
মন্তব্য : বংশের জন্য নয়, কর্মের জন্যই মানুষ প্রকৃত মর্যাদার অধিকারী হয়।
1 comment
Nice work. Maintain this quality in the future.