তৃষ্ণার জল যখন আশার অতীত হয় মরীচিকা তখন সহজে ভােলায় ভাবসম্প্রসারণ
ভাবসম্প্রসারণ: প্রত্যেক মানুষেরই বেঁচে থাকার জন্যে কিছু মৌলিক চাহিদা থাকে। এ সীমিত চাহিদাই যখন অসীম ও অবাধ্য হয়ে যায় তখন মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ফলে ভ্রান্তির ছলনায় মানুষ সহজেই প্রতারিত ও আশাহত হয়।
তৃষ্ণার সময় জল ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি অন্ন, বস্ত্র আর আশ্রয় ছাড়া মানুষের পক্ষে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাও অসম্ভব । তাই এ প্রয়ােজনটুকু নিবারণে মানুষ নিরন্তর সংগ্রাম করে চলে। কিন্তু তারপরও যদি সে ব্যর্থ হয়, তখন মিথ্যে মায়ায় বার বার ভুল করে । এ যেন তপ্ত মরুভূমিতে মরীচিকার পেছনে ছুটে বেড়ানাের মতাে। মরুভূমির চারদিকে শুধু বালি আর বালি। কোথাও কোনাে জলাশয় থাকে না। দু-একটা কাঁটা গুল্ম এবং কাটাজাতীয় গাছ ছাড়া জলের অভাবে কোনাে গাছপালাই সেখানে জন্মাতে পারে না। অথচ এ মরুভূমি পথিককে দেখায় জলের লােভ। তৃষ্ণার্ত পথিক যখন তপ্ত বালির বুকে দেখে আলােকরশ্মির প্রতিসরণ তখন সেটাকে জল ভেবে আকুল হয়ে ছুটে যায়। জল পানের আশায় এভাবে সে মরুভূমির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায় মিথ্যে মরীচিকার মায়ায় । মরুর কাটায় ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তারপরও সে থেমে থাকে না। প্রয়ােজনই মানুষের চিন্তাশক্তি আর কল্পনাশক্তিকে চালিত করে। বেঁচে থাকার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থেকেই মানুষ নিরন্তর অবলম্বন খোঁজে। তাই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কখনাে কখনাে মানুষ প্রহেলিকার ফাঁদে পড়ে । চাওয়া ও পাওয়ার নিদারুণ ব্যবধানের বাস্তবতা মানুষকে বােধশূন্য করে তােলে। এর ফলে মানুষ চলার সঠিক পথ থেকে পিছলে যায়। অনেক সময় এর পরিণতি হয় করুণ । তাই মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলাে প্রাপ্তির অধিকার যেমন মানুষের রয়েছে, তেমনি প্রত্যেক মানুষের চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতেও সচেষ্ট থাকা উচিত।