পথ পথিকের সৃষ্টি করে না, পথিকই পথের সৃষ্টি করে ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: মানুষ ঘর থেকে বেরােলেই পথ চলে। আর চলতে চলতেই তৈরি হয় পথ । এ পথ পথিকেরই সৃষ্টি। পথ কখনাে পথিককে সৃষ্টি করতে পারেনি, আর সেটি অকল্পনীয়।
ভাবসম্প্রসারণ: পথিক অর্থাৎ মানুষ তার জীবনচক্রে গতির ওপর নির্ভর করে আপন ক্ষমতা, কর্মদক্ষতা, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে তৈরি করে চলেছে পৃথিবীর ও মানবজাতির কল্যাণের নানা পথ। সৃষ্টির উষালগ্ন থেকেই মানুষ মত্ত নানা সৃষ্টিশীল পথ তৈরিতে। ভাগ্যান্বেষণে মানুষ তৈরি করেছে দুর্জয় রহস্যের সন্ধানের পথ। সন্ধানী মানুষ সাধনা ও প্রচেষ্টা দ্বারা সকল বাধাবিপত্তি, প্রতিকূলতাকে তুচ্ছজ্ঞান করে সাহস ও সংগ্রামের পথ দেখিয়েছে। এ সাহসী ও সংগ্রামী মানুষ রচনা করেছে নতুন নতুন পথ । তারা এ পৃথিবীর বুকে আজীবন স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে। তাদের তৈরি পথ বেয়ে এগিয়ে চলছে বর্তমানের সাহসী মানুষ। মানুষই প্রথমে তৈরি করেছে সমগ্র পৃথিবীর মানুষে মানুষে মেলবন্ধনের পথ । বর্তমানে নতুন পথ সন্ধানীর তৈরি পথ এগিয়ে গিয়ে সৃষ্টি করছে আরও নতুন নতুন পথের। যুগে যুগে মহাজ্ঞানী, পণ্ডিতব্যক্তি ও ধর্মপ্রচারকগণ মানুষকে দিয়ে গেছেন সুন্দর ও আললাময় পথের সন্ধান। পথ কখনাে পথিককে সৃষ্টি করতে পারে না, আবার নিজে নিজে তৈরি হয় না। পথিকই নিজের ও দশের প্রয়ােজনে পথের সন্ধান করে বা তৈরি করে। আবার পথিক নিজের অগ্রযাত্রা এবং যাত্রা যাতে সহজতর হয় সেদিকে লক্ষ রেখে পথের সৃষ্টি করে। তবে সকল পথই সঠিক ও যথার্থ হয় না। কিন্তু জীবনসন্ধানী ও কৌতূহলী পথিক চেষ্টা চালায় গন্তব্যে পৌছার। না পারলে সেই পথ পরিহার করে অন্য পথের সন্ধান করে। পথ কখনাে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে না। সে কারণে পথে যত বাধাবিঘ্নই আসুক না কেন, সন্ধানী মানুষ তাকে তুচ্ছ ও অতিক্রম করে আপন গন্তব্যের পথ খুঁজে নেয়। সুখী ও সুন্দর পৃথিবীর সন্ধানে তাই পথিক উদ্ভাবন করে চলেছে নতুন নতুন পথ ।
পথ তৈরি হয়েছে মানুষের প্রয়ােজনে। আমাদের সকলের উচিত মহাজ্ঞানী ও মহৎ ব্যক্তিদের সুন্দর পথকে অনুসরণ করা। আগামী প্রজন্ম আরও নতুন পথের সন্ধান করে মানবজাতির ও পৃথিবীর অগ্রগতি সাধন করবে।
একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
মূলভাব : পথিক জীবনচক্রে আবর্তনকারী মহাজীবনের রথ। সে গতির প্রতীক। পথিকের পদচিহ্নে অঙ্কিত হয় পথরেখা। যে মানুষ প্রথম পথ সৃষ্টি করে মানুষকে মানুষের সাথে মেলায় সেই তাে যথার্থ পথিক।
সম্প্রসারিত ভাব : জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনা ও নানা অজানা অধ্যায় অতিক্রম করার জন্য মানুষকে নিত্যনতুন পথ তৈরি করতে হয়। এক্ষেত্রে মানুষ যেমন পুরনাে পথে চলে তেমনি প্রয়ােজনে নতুন পথ তৈরি করে। সংকটাপন্ন মানুষ খুঁজে বের করে সংকট উত্তরণের পথ। এভাবে কাল-কালান্তরে দেশ-দেশান্তরে মানুষ রচনা করেছে সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির অজস্র পথ। যে পথ একদা ছিল অভিনব, নব আবিস্কৃত শত-সহস্র মানুষের পদচারণায় সে পথ হয়েছে অতিপরিচিত। অন্যদিকে গতানুগতিক পথ চলা মানুষকে যখন গণ্ডিবদ্ধ করেছে, তখন মানুষ খুঁজেছে সম্ভাবনাময় নতুন পথ। নিজ নব লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানুষ নিত্য রচনা করে চলেছে নিত্যনতুন পথ। পথ কোনাে পথিককে সৃষ্টি করতে পারেনি, পারবেও না। মানুষের মুক্তির জন্য যে সমস্ত মহাপুরুষ পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন তাঁরাই যথার্থভাবে ‘রসতীর্থ পথের পথিক। তাদের পথনির্দেশনা প্রতিটি মানুষের আত্মমুক্তির ক্রমিক পরিণাম। তাদের প্রদর্শিত পথে চলে প্রত্যেক মানুষ স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠতে পারে। সারােয়ারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মদ (স) প্রদর্শিত পথ বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের নিকট ম্যাগনাকার্টা। মহাজ্ঞানী মহাজনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা যদি তাদের প্রদর্শিত পথে চলতে পারি তাহলে আমরাও বরণীয় ও স্মরণীয় হতে পারব।
মন্তব্য : উদ্যোগী পথিক সহজে তার গন্তব্যে পৌছার জন্য নিজেই নিজের পথ সৃষ্টি করে থাকে। আর স্বীয় সাধনায় সৃষ্ট পথই পথিকের চলার উপযােগী হয়ে নতুন দিগন্তের সন্ধান দেয়।