পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: পরিশ্রম মানবসমাজের সৌভাগ্য ও উন্নতির শ্রেষ্ঠ উপায় । পৃথিবীর সব কাজই পরিশ্রম সাপেক্ষ। যথােপযুক্ত শ্রমের দ্বারাই মানবজীবনের সৌভাগ্যের সূচনা হয়। কাজেই ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের সর্বত্র পরিশ্রমই উন্নতির মূল চাবিকাঠি।
ভাবসম্প্রসারণ: মানুষ সাধারণত বিশ্বাস করে, তার সুখ সমৃদ্ধি ও উন্নতি ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। অনেকে ভাগ্যকে দোষারােপ করে মনের দুঃখে হাল ছেড়ে দেয়। তারা মনে করে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে ছেড়া কাথাও রাজার বিছানায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু এ ধারণার পেছনে অলসতা, অন্ধ ধর্মবিশ্বাস, কর্মবিমুখ মনােভাব ও ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কাজ করে। এ পৃথিবীতে কোনােকিছুই বিনা পরিশ্রমে লাভ করা যায় না। সংসারজীবনে টিকে থাকতে হলে, জীবনকে সার্থক করতে হলে, দশের কল্যাণ করতে হলে। মানুষকে নিরলস পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রমের মাধ্যমে বিদ্যাবুদ্ধি, মানসম্মান, ধনসম্পদ সবকিছু অর্জন করা যায়। যে
জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। পরিশ্রম ব্যক্তিকে দেয় প্রতিষ্ঠা আর জাতিকে দেয় আত্মমর্যাদা। পক্ষান্তরে, শ্রমবিমুখ ব্যক্তি বা জাতি কখনাে স্বগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। পৃথিবীর যেসব মহান ব্যক্তি স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন, তাঁরা সকলেই পরিশ্রম ও সাধনার দ্বারাই সাফল্য ও সৌভাগ্য লাভ করেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আইনস্টাইন, নিউটন, বিভিন্ন ধর্মের ধর্মপ্রবর্তকরা, রাজনীতিবিদ সকলেই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছেন। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত দ্রুতগতিতে উন্নতির পথে এগিয়ে যায়। পৃথিবীর সকল উন্নত রাষ্ট্রের মূলে রয়েছে পরিশ্রমী জাতির অবদান। অপরদিকে, ব্যক্তিজীবনে ও ছাত্রজীবনে পরিশ্রম না করলে সৌভাগ্যের সূচনা হয় না, সাফল্য লাভ করা যায় না। মেধাবী ছাত্র পরিশ্রম ও সাধনা না করলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে ব্যর্থ হবে। সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ তার বুদ্ধি, মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমেই পৃথিবীর অভূতপূর্ব পরিবর্তন সাধন করে চলেছে মানবকল্যাণের জন্যে।
আজকের সভ্যতা মানুষের যুগ যুগ ধরে পরিশ্রমের সম্মিলিত যােগফল। আগামী প্রজন্মের জন্যে সুন্দর বাসযােগ্য পৃথিবী তৈরি করতে আমাদের নিরলস পরিশ্রম করতে হবে। নিজের উন্নতির জন্যে, সমগ্র পৃথিবীর মানব জাতির কল্যাণের জন্যে আমাদের উচিত অলসতা পরিহার করে, কর্মবিমুখ মনােভাব ত্যাগ করে যথাযথ পরিশ্রম করা । তবেই প্রসন্ন হবে সৌভাগ্য ।
একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
মূলভাব : শ্রম কল্যাণ বয়ে আনে। শ্রম ব্যতীত কোনাে জাতি উন্নতি লাভ করতে পারে না।
সম্প্রসারিত ভাব : সৃষ্টিকর্তা মানুষকে শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা প্রদান করেছেন পরিশ্রম করার জন্য। বিনা পরিশ্রমে কোনাে কিছু অর্জন করা যায় না। কথায় বলে, ‘পরিশ্রমে ধন আনে, পুণ্যে আনে সুখ। পরিশ্রম দ্বারা মানুষ সৌভাগ্যের স্বর্ণ শিখরে আরােহণ করতে পারে। পরিশ্রমী ব্যক্তি আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হয়। বিদ্যা, যশ, মান, প্রতিপত্তি ইত্যাদি সব কিছুর মূলে রয়েছে পরিশ্রমী ব্যক্তির নিরলস সাধনা। সব ধন-সম্পদ বা ঐশ্বর্যের মূলে রয়েছে পরিশ্রম। শ্রম দ্বারা ভাগ্যের চাকা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব যা শ্রমবিমুখ মানুষের কাছে অলৌকিক মনে হবে। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত। ডা. লুৎফর রহমান বলেন, “যে জাতির মানুষ শ্রমশীল, যারা জ্ঞান সাধনায় আনন্দ অনুভব করে, তারা জগতে শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীগণ তাদের নিরলস সাধনা ও শ্রম দ্বারা খ্যাতির শ্রেষ্ঠ আসনে
অধিষ্ঠিত হয়েছেন। প্রাণিজগতের ক্ষুদ্র কীট মৌমাছিও তার নিরলস শ্রম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মধুপূর্ণ মৌচাক তৈরি করতে
সমর্থ হয়। যে কৃষক রােদ-বৃষ্টি সহ্য করে কঠোর পরিশ্রম করতে পারে, সে-ই কেবল সােনার ফসল ফলাতে পারে। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি শ্রমৃবিমুখ হয়ে দুটি হাত গুটিয়ে বসে থাকে সে তার ভাগ্যকেও নিষ্ক্রিয় করে রাখে। ব্যক্তি কিংবা জাতীয় জীবনে সে কোনাে অবদান রাখতে পারে না। তাই জীবনে উৎকর্ষ ঘটাতে পরিশ্রমের বিকল্প নেই।
মন্তব্য : মানুষের যাবতীয় সৌভাগ্যের মূলে রয়েছে তার পরিশ্রম। পরিশ্রমী ব্যক্তি যথার্থই ভাগ্যবান।
2 comments
Thanks
Nice written