পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করো ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: কোনাে মানুষই পাপী হয়ে জন্মায় না। প্রতিকূল পরিবেশে পাপ মানুষকে কলুষিত ও কলঙ্কিত করে তােলে। সুতরাং, পাপী বলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না, কেননা সে স্বেচ্ছায় পাপী হয়নি। তাই পাপীকে নয়, তার পাপী হয়ে ওঠার কারণ তথা পাপকে ঘৃণা করা উচিত।
ভাবসম্প্রসারণ: প্রতিটি মানুষই সুখী, নির্বিঘ্ন জীবন অতিবাহিত করতে চায়, কিন্তু সবসময় সৎ জীবনযাপন করা সবার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠে । নিয়তির খেলায় জীবনধারণের জন্যে অনেক মানুষকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও অসৎ পন্থা বেছে নিতে হয়। সে জড়িয়ে পড়ে অন্যায় কাজে, অসৎ কাজে। আবার দেখা যায়, যে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে সেও নানা কারণবশত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। জড়িয়ে পড়ে পাশবিক ও অমানবিক কাজে। তখন সে চিহ্নিত হয় পাপী হিসেবে। অথচ এরা কেউ জন্মগতভাবে পাপী ছিল না। কখনাে নােংরা পরিবেশ, প্রতিকূল সমাজের বিষাক্ত আবহাওয়া, দুর্জনের সাহচর্য অথবা অভিভাবকের তত্ত্বাবধানের জুটি মানুষকে অসৎ পথে ঠেলে দেয়। আবার অনেক সময় ভালাে মানুষও রাগে, ক্ষোভে, দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে পাপ নামক জঘন্য কাজে জড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের মানুষরা পরে অনুশােচনার আগুনে দগ্ধ হয়। এদেরকে পাপী ভেবে, পাপের কারণ অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। শুধু পাপী ভেবে শাস্তি দিলে পাপের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। এমনকি ফলাফল ভয়ংকরও হতে পারে। আবার পাপীকে তার পাপ কর্মের জন্যে ঘৃণা না করলে অনেক সময় পাপের মাত্রা সমাজে আরও বেড়ে যেতে থাকে। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে সমাজ ও দেশের কথা ভেবে, সর্বোপরি সূক্ষ্মভাবে বিচারবিশ্লেষণ করে পাপীর পাপ কাজের বিচার করা উচিত। অনেক পাপী তার পাপ কাজের জন্যে অনুশােচনায় দগ্ধীভূত হয়, আবার অনেকের মধ্যে লেশমাত্র অনুতপ্ত ভাব দেখা যায় না।
পাপী এবং পাপের মূল্যায়ন আমাদের সঠিকভাবে করা উচিত। পাপীকে ঘৃণা না করে তার প্রতি যদি সহানুভূতি দেখানাে হয় এবং ভুল সংশােধনের সুযােগ দেওয়া হয় এবং সমাজ থেকে অপরাধের উৎস নির্মূল করা যায় তাহলে সমাজে অপরাধীদের সংখ্যা কমে আসবে।
একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন
মূলভাব : ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ মানুষ কখনও ঘৃণাহ হতে পারে না, বরং তার দুষ্ট কর্মকেই আমাদের ঘৃণা করা উচিত।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ নিস্পাপ পৃথিবীতে আসে। ধীরে ধীরে সে বড় হয়। তার চাহিদার বিস্তৃতি ঘটে। কিন্তু অনেক সময়ই তার চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হয়। না চাইতেই যে পায় সে হয়তাে এ সংঘাতকে এড়াতে পারে। কিন্তু যেশিশু জন্মের পর থেকে বা পরবর্তীতে বিরূপ পরিবেশে বড় হয়, দুঃখ-কষ্ট, ক্ষুধা আর নির্যাতনের সাথে যার বাস, জীবনের প্রয়ােজনে তার পক্ষে সমাজের নিষিদ্ধ পথে, পাপের পঙ্কিল পথে পা বাড়ানাে অস্বাভাবিক নয়। বাধ্য হয়েই সে পাপী হয় ।কিন্তু জন্মের সময় তাে সে পাপী ছিল না। বরং পরিবেশের প্রতিকূলতাই তাকে পাপী করেছে। অনুকূল পরিবেশ পেলে, একটু স্নেহ-ভালােবাসার পরশ পেলে হয়তােবা তার হৃদয়ে সৃষ্টি হতে পারে অনুতাপের অমিয় ধারা। হয়তােবা সেই অমিয় ধারায় স্নান করে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে একসময়। এভাবে সমাজের বন্ধুর পথে চলতে গিয়ে বিপথগামী হওয়া ব্যক্তিদের সুপথে ফিরিয়ে এনে সমাজকে কলুষমুক্ত করা অসম্ভব কোনাে কাজ নয়। শত খুনের নায়ক ইতিহাসখ্যাত হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া বা উন্মুক্ত তরবারি হাতে নবিজি (স)-কে হত্যা করতে যাওয়া ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু পাপীকে ঘৃণা করে সমাজকে কলুষমুক্ত করা সম্ভব নয়। আর তাই মায়ের ঘৃণা সন্তানের বিরুদ্ধে নয়, সন্তানের গায়ে মাখা মলের বিরুদ্ধে সাবানের জেহাদ কাপড়ের বিরুদ্ধে নয়, ময়লার বিরুদ্ধে।
মন্তব্য : অপরাধীকে ঘৃণা না করে তার পুনর্বাসনে এগিয়ে এলে সমাজে অপরাধীর সংখ্যা হ্রাস পাবে। তাই আমাদেরসকলের উচিত পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা করে পাপীকে পাপমুক্ত হতে সহায়তা করা।
1 comment
thanks