Home রচনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা (১০০০ শব্দ) |

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা (১০০০ শব্দ) |

by Curiosityn
0 comment

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ / মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ /

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি
  • ৭ই মার্চের ভাষণ
  • স্বাধীনতার ঘােষণা
  • গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠন
  • মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনা
  • মুক্তিযুদ্ধে বৈদেশিক সাহায্য-সহযােগিতা
  • মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ
  • পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও চূড়ান্ত বিজয়
  • উপসংহার

রচনা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

ভূমিকা :

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির হাজার বছরে শ্রেষ্ঠ অর্জন। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ এক স্বাধীন সার্বভৌম দেশ।এ স্বাধীনতা কুড়িয়ে পাওয়া একমুঠো মুক্তো বা বদান্যতার উপহার নয়, এর রয়েছে সুদীর্ঘ রক্তঝরা ইতিহাস। এক সাগর রক্তও ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ স্বাধীনতা। মুক্তিসেনার রক্তে রঞ্জিত এক সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। আমাদেরস্বাধীনতার সঙ্গে অনেক সংগ্রামী চেতনা বিজড়িত।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি :

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাংলা ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামে পাকিস্তানের একটি অংশে পরিণতহয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী তাদের দুঃশাসন, শােষণ ও বঞ্চনার মাধ্যমে এদেশকে পাকিস্তানের একটিউপনিবেশে পরিণত করে। এমনকি পাকিস্তানি স্বৈরশাসক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষার ঘােষণা দিয়ে আমাদের কণ্ঠরােধ করতে উদ্যতহয়। কিন্তু এদেশের ছাত্রজনতা এমন ঘােষণায় বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের দমাতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতৎকালীন শাসকগােষ্ঠী ১৪৪ ধারা জারি করে এদেশের ভাষাপ্রেমী ছাত্রসমাজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেরাজপথে নেমে আসে। পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকে। নিহতেরখবরে পুরাে দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে উঠে। ফলে পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়। এরইধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলন সংঘটিত হয়।১৯৭০ সালে জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের ঘােষণা দেয়। আওয়ামী লীগ ১১ দফারভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং উভয় পরিষদেই পূর্ব পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু শাসকগােষ্ঠী আওয়ামীলীগের এ বিজয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। এর ফলে সারাদেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে।

৭ই মার্চের ভাষণ :

১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে জয়লাভ করার পর ক্ষমতাহস্তান্তর না করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এরূপ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩রা মার্চজাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকেও অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ তা অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘােষণা করেন। এই খবরশুনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মার্চের সাত তারিখে ঢাকায়রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভায় ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি চলমান সামরিক আইনপ্রত্যাহার, সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া, গণহত্যার তদন্ত ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের উপরগুরুত্বারােপ করেন। তার এ ভাষণ ছিল জাতির মুক্তিসংগ্রামের পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা। তাই তিনি বলেছিলেন, “তােমাদেরযার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মােকাবিলা করবে ••••••••••

স্বাধীনতার ঘােষণা :

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের পর মুক্তিকামী জনতার আন্দোলন আরও বেগবান হয়! ২৪শে মার্চইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠক ব্যর্থ হলে ২৫শে মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর গণহত্যা চালায়।২৫শে মার্চ রাতেই শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার।হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর এ ঘােষণাদেশবাসীকে জানানাের জন্য চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম, এ, হান্নান ২৬শে মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বেতার থেকে তা।প্রচার করেন। পরে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে চালুকৃত স্বাধীন বাংলা অস্থায়ী বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭শে মার্চ সন্ধ্যায় মেজরজিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার আরেকটি ঘােষণাপত্র পাঠ করেন।

গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠন:

১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়।১৭ই এপ্রিল মুজিবনগরে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার’ শপথ গ্রহণ।করে। রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলেন উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মােশতাক আহমেদ, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন এএইচ এম কামরুজ্জামান। ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। কর্নেল এম. এ. জি ওসমানীকে প্রধান।সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনা :

২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালির উপর হামলা চালানাের পরথেকেই বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে প্রতিরােধ গড়ে তােলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেইতারা মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ সময় সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরেভাগ করা হয় এবং প্রত্যেক সেক্টরে একজন কমান্ডারের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ ও সম্মুখ যুদ্ধ শুরুকরে। আবার পাক বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া অনেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে এসে গেরিলাআক্রমণ শুরু করে। দেশের আপামর জনসাধারণ মুক্তিবাহিনীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। ফলে মুক্তিসংগ্রাম সর্বজনীনগণযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়। আর এভাবে মুক্তিবাহিনীর হামলায় পাকিস্তানি বাহিনী অপদস্থ হতে থাকে।

মুক্তিযুদ্ধে বৈদেশিক সাহায্য-সহযােগিতা :

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্র এবং বিভিন্ন সামাজিক ওসাংস্কৃতিক সংগঠন ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। পাক বাহিনীর অত্যাচারে প্রায় এক কোটি বাঙালি ভারতে আশ্রয় নেয়।ভারত সরকার এসকল উদ্বাস্তুদের খাদ্য, বস্ত্র, ঔষধ দিয়ে সাহায্য করে। রাশিয়া সরকারসহ পূর্ব ইউরােপীয় দেশগুলােরসরকার ও জনগণ বাংলাদেশকে সহযােগিতার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী পাক বাহিনীর নির্যাতন-হত্যার বিরুদ্ধে জনমত গঠন।করে। এসময় যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দুই পরাশক্তি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও তাদের জনগণ বাংলাদেশের জনগণেরন্যায্য দাবির প্রতি একাত্মতা ঘােষণা করে। অবশেষে বৈদেশিক সাহায্য ও মুক্তিবাহিনীর নিরলস চেষ্টায় নয় মাসে বাংলাদেশস্বাধীন হয়।

মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ :

১৯৭১ সালের নভেম্বরের ২১ তারিখে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারএকটি যৌথবাহিনী গঠন করে। ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করলে এরপর থেকে মুক্তিবাহিনী ওভারতীয় বাহিনী যৌথভাবে হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করে। ৬ই ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকেস্বীকৃতি দান করে। যৌথবাহিনীর সুদৃঢ় আক্রমণে ১২ই ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলায় পাকবাহিনীর সবগুলাে বিমান বিপর্যস্ত হয়েপড়ে। এভাবে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে ১৩ই ডিসেম্বরের মধ্যে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হয়।

পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও চূড়ান্ত বিজয় :

১৪ই ডিসেম্বর যৌথবাহিনী ঢাকার মাত্র ১৪ই কিলােমিটার দূরে অবস্থান করে।অবস্থা বেগতিক দেখে ১৬ই ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজী তার ৯৪ হাজার সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্রসহসােহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথ কমান্ডের নিকট আত্মসমর্পণ করে। আর এভাবেই বালাদেশের চূড়ান্ত বিজয় সূচিত হয়।

উপসংহার :

বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনাে খণ্ডিত বিচ্ছিন্ন স্বপ্ন বা কুড়িয়ে পাওয়া কোনাে বিষয় নয়। ঐক্যবদ্ধ জীবনপ্রচেষ্টা, মিলন-বিরহ, আশা-নিরাশার বাস্তব অনুভূতি সম্বলিত এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী অপরাজেয় চেতনা; মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লঙ্গমানুষের আত্মত্যাগ আর দু’লক্ষ মা-বােনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে সংযােজিত হয়েছে। আর আমরা পেয়েছিলাল-সবুজের পতাকাসমৃদ্ধ বাংলাদেশ নামের একটি নতুন ও স্বাধীন ভূখণ্ড।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা

বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাস পরিক্রমায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস বর্বরতার মুখে ১৯৭১ সালের ২৬-এ মার্চ শুরু হয় বাঙালিরমুক্তিসংগ্রাম । দীর্ঘ সংগ্রামের সফল পরিণতি ও পূর্ণতা আসে সে বছরেরই ১৬ই ডিসেম্বর। এ দিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীনিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করলে মুক্তিযুদ্ধের অবসান হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয় একটি স্বাধীন দেশ — বাংলাদেশ

১৯৭১-এর ২৫-এ মার্চ রাতে বাংলার ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালি সৈন্য থেকে শুরু করে অগণিত নিরীহ, অসহায় মানুষের ওপর ঝাঁপিয়েপড়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ট্যাংক, কামানসহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। বাংলারসবুজ শ্যামল মাটি সিক্ত হয়েছিল নিরস্ত্র বাঙালির লাল রক্তে, নদীর স্বচ্ছ জলধারায় মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল রক্তধারা। যত্রতত্র অগ্নিসংযােগ ও লুটপাট করে ধ্বংসপুরীতে পরিণত করতে চেয়েছিল তারা এ জনপদকে। তাদের এই হিংস্রতা, বর্বরতা,অন্যায় আগ্রাসন মুখ বুঝে সহ্য করেনি বাংলার মানুষ। যার যা আছে তাই নিয়েই প্রতিরােধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়েএনেছিল কাঙ্ক্ষিত বিজয়।

মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনাে ঘটনা নয়। ১৯৪৭-এর পর থেকে একের পর এক আন্দোলনের সিড়ি ডিঙিয়ে চূড়ান্ত ফসলহিসেবে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়। ‘৫২-র ভাষা আন্দোলন, ‘৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৬২ সালের সামরিক আইন ও শিক্ষাকমিশন রিপাের্টবিরােধী আন্দোলন, ‘৬৬-র ছয় দফার আন্দোলন, ‘৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানেরই চূড়ান্ত পরিণতি ‘৭১-এরমুক্তিসংগ্রাম। অমর একুশে ফেব্রুয়ারির পথ বেয়েই এসেছিল ১৬ই ডিসেম্বর।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সাধারণ জনগণকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যেসববাঙালি সৈন্য ছিল তারা এবং আধা-সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্যরাও তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিবাহিনীর সাথে সংহতি প্রকাশ করে।১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। রাস্তায়যাকেই দেখতে পায় তাকেই গুলি করে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলােতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায়। পুরােনােঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাসহ বহু আবাসিক এলাকায় আগুন ধরিয়ে দেয়, অসংখ্য মানুষ হত্যা করে, লুটপাট চালায়।।মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।গ্রেফতারের পূর্বেই অর্থাৎ৩-এ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে২৬ ও ২৭-এ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘােষণা। ঘোষণার পরপরই সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃসৃতমুক্তিযুদ্ধ। ১০ই এপ্রিল মেহেরপুরে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামেমেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননের নামকরণ হয় মুজিবনগর। ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমেদেরনেতৃত্বে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় গেরিলা ওসম্মুখ যুদ্ধ চালানাের সুবিধার্থে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম. এ. জি ওসমানীর তত্ত্বাবধানে সমগ্র দেশকেএগারােটি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। বাঙালির সংগ্রামের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার সরকারের সমর্থন জ্ঞাপন।করেন এবং অত্যাচারিত বাঙালিকে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৯৭১সালের ২৫-এ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের পর দেশের সকল স্তরের জনগণ প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায়। বেঙ্গল।রেজিমেন্টের সৈনিক, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্রছাত্রীসহ সকল পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে।মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকাও ছিল গৌরবােজ্জ্বল। তারামন বিবি ও সেতারা বেগম বীর প্রতীক খেতাব লাভ করেন। এছাড়াওসংবাদপত্র, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও প্রবাসী বাঙালিরাও নানাভাবে সাহায্য-সহযােগিতা করেন। শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মীদের অবদান ছিল প্রশংসনীয়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে সকলে নিজ নিজ অবস্থানথেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছে লাখাে শহিদের রক্ত, অগণিত মানুষের চোখের জল আর কোটি মানুষের।আত্মত্যাগের বিনিময়ে। এ যুদ্ধে এক কোটি নিরপরাধ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে, ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছে, দুই লক্ষ বাঙালিনারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। বাংলাদেশের এক শ্রেণির লােক পাকিস্তানিদের এ নৃশংসতাকেসমর্থন ও মদদ দিয়েছে। এ শ্রেণির সহায়তায় নৃশংসতম ও বর্বরােচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন বাঙালি শিক্ষাবিদ,সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিল্পী ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত ওনীল নকশা অনুযায়ী সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ রাত্রি থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের আগ পর্যন্তবুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চলে । ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ভয়াবহ রূপ নেয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসের প্রতিটি ক্ষণ ছিল চরম আতঙ্ক আর অপরিসীম আশায় উদ্বেলিত। বাঙালি জাতিউদ্বুদ্ধ হয়েছিল প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর গভীর দেশপ্রেমের চেতনায়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল শশাষকের বিরুদ্ধে শােষিতের, মিথ্যারবিরুদ্ধে শাশ্বত সত্যের এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামের মূর্ত চিত্র। মুক্তিযুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় বাঙালির শক্তিশালীজাতীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশের অভ্যুদয় তাই এক গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায় ।

4.1/5 - (61 votes)

You may also like

Leave a Comment