Table of Contents
বেতার রচনার রচনার সংকেত (Hints)
- ভূমিকা
- বেতারের আদিকথা
- বেতারের ভেতর-বাহির
- মুক্তিযুদ্ধ ও বেতার
- বাংলাদেশ বেতারের কেন্দ্রসমূহ
- বেসরকারি বেতারসমূহ
- গণমাধ্যম হিসেবে বেতার
- শিক্ষামাধ্যম হিসেবে বেতার
- বেতারের ইতি ও নেতিবাচক দিক
- উপসংহার
বেতার রচনা লিখন
ভূমিকা:
বর্তমান সময়ে টেলিভিশন ও মােবাইল ফোন মানুষের হাতে হাতে পৌছে গেছে এবং এগুলােই হয়েছে বিনােদনের প্রধানতম মাধ্যম। কিন্তু কিছুদিন আগেও এ চিত্র ছিল না। গ্রামের হাটে-বাজারে বা বড় বটগাছের তলায় বেতার বা রেডিও শােনাই ছিল মানুষের বিনােদনের অন্যতম মাধ্যম। এই যন্ত্রই প্রথম মানুষকে আকাশ-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করেছিল। আজ বেতারের হয়ত আগের সেই যশ নেই; কিন্তু তার একটা সমৃদ্ধ অতীত আছে। বর্তমানে সরকারি গণমাধ্যম হিসেবে এখনও এদেশে বেতার ব্যবহার করা হয়। তবে কিছুকাল হলাে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান প্রচারের বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে বেতারকে আবার জনপ্রিয় করার চেষ্টা করছে।
বেতারের আদিকথা:
কয়েকজন বিজ্ঞানীর নিরলস পরিশ্রমের ফল হলাে আজকের এই বেতার । হার্তজ, ফেরাডে, জগদীশচন্দ্র
বসু, ম্যাকসওয়েল প্রমুখ বিজ্ঞানী বেতারযন্ত্র আবিষ্কারের জন্য গবেষণা চালান। অবশেষে ইতালির বিজ্ঞানী মার্কনি ১৮৯৬ সালে এ যন্ত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হন। তবে সেই যন্ত্রটি ছিল বেতার যন্ত্রের একেবারেই প্রাথমিক একটি পর্যায় । ১৮৯৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত কাজ করে তিনি মাত্র চার কিলােমিটার পর্যন্ত কথার সংকেত পাঠাতে সক্ষম হন। এরপর আরও বহু বিজ্ঞানীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আজকের আধুনিক বেতার যন্ত্রটি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। ১৯২০ সালে প্রথমবারের মতাে বেতার থেকে বিনােদনমূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়।
বেতারের ভেতর-বাহির:
বেতার বিশেষ নিয়মে তৈরি একটি যন্ত্র । কোনাে নির্দিষ্ট একটি স্থানে বেতার স্টেশন স্থাপন করা হয়। বেতার স্টেশনে যে যন্ত্রটি থাকে তাকে প্রেরকযন্ত্র বলে। আর যারা বেতারের মাধ্যমে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান শুনতে পায় তাদের কাছে একটি যন্ত্র থাকে যাকে গ্রাহক যন্ত্র বলে । প্রেরক যন্ত্র থেকে তরঙ্গ প্রেরিত হয়ে গ্রাহক যন্ত্রের সংশ্লিষ্ট এরিয়েলে এসে প্রতিহত হয়। সেই প্রতিহত তরঙ্গ ধ্বনিকে গ্রাহকযন্ত্র প্রথমে বিদ্যুত্তরঙ্গে রূপান্তরিত করে এবং পরে তা শব্দতরঙ্গে পরিণত হয় । ঠিক তখনই আমরা বিভিন্ন তরঙ্গ মিটারে ঘুরিয়ে নির্দিষ্ট কোনাে কেন্দ্রের বার্তা বা অনুষ্ঠান শুনতে পাই।
মুক্তিযুদ্ধ ও বেতার:
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেতারের অনন্য এক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ
রাতে পাকিস্তানি হানদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর ঘােষণাপত্রটি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র চালু হয়। এখান থেকে স্বাধীনতার গান, কবিতা, কথিকা, নাটিকা প্রচারিত হতাে যা মুক্তিকামী মানুষকে প্রেরণা জোগাত। এছাড়া আকাশবাণী কলকাতা বেতার থেকেও স্বাধীনতার পক্ষে নানা অনুষ্ঠান প্রচারিত হতাে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বেতারের মাধ্যমেই বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে পৌছেছিল।
বাংলাদেশ বেতারের কেন্দ্রসমূহ:
মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতার ছিল একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। তাই স্বাধীনতার পর বেতারের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারি গণমাধ্যম হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে বেতারকেন্দ্র চালু করা হয়। বর্তমানে বেতারকেন্দ্র সমূত্রে আরও সম্প্রসারণ হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রেরই কিছু নিজস্ব অনুষ্ঠানমালা প্রচারিত হয়। তাছাড়া ঢাকা থেকেও কিছু অনুষ্ঠান তারা রিলে করে প্রচার করে। এইসব বেতারকেন্দ্রগুলােকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয় অনেক শিল্পীগােষ্ঠী। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বেতারকেন্দ্রগুলােতে এখনও নানা ধরনের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। অনেকে এ অনুষ্ঠান থেকে ভালাে উপার্জনও করে ।
বেসরকারি বেতারসমূহ:
সরকারি বেতারকেন্দ্রের পাশাপাশি দেশে অনেকগুলাে বেসরকারি বেতার কেন্দ্র চালু হয়েছে। দিন দিন সেই বেতারকেন্দ্রগুলাে জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। দেশের মেট্রোপলিটন শহরগুলােতে কিছু কমিউনিটি রেডিও চালু হয়েছে। বেসরকারি বেতারসমূহের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল— রেডিও টুডে, রেডিও ফুর্তি, রেডিও এবিসি, রেডিও ৭১, রেডিও পদ্মা, রেডিও মহানন্দা ইত্যাদি।
গণমাধ্যম হিসেবে বেতার:
গণমাধ্যম হিসেবে বেতারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বেতার শােনার শ্রোতা আগের মতাে না থাকলেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ এখনও বেতারের মাধ্যমে প্রেরিত হয়। প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে এখনও বিদ্যুৎ পৌছেনি সেখানে আজও ব্যাটারিচালিত বেতার মানুষের মনােরঞ্জন করে। চরালে অথবা গভীর বনাঞ্চলে এখনাে মানুষ বেতারের সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের খবরাখ, পেয়ে থাকে। সরকারি বিভিন্ন আদেশ, আবহাওয়া সম্পর্কে আগাম সতর্কতা মানুষ বেতারের মাধ্যমেইপেয়ে থাকে।
শিক্ষামাধ্যম হিসেবে বেতার:
শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেতার একটি অনন্য যন্ত্র। বেতারের মাধ্যমে মানুষকে জীবন সম্পর্কে নানা ধরনের শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব হয়। মানুষ সেসব কথা থেকে নিজের ও চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে ওঠে। প্রাথমিক, গণশিক্ষা ও দূর শিক্ষার নানা অনুষ্ঠান বেতারের মাধ্যমে প্রচারিত হয়ে থাকে । ধর্মীয় ও নীতিশিক্ষার নানা বিষয় বেতারের মাধ্যমে প্রচারিত হয়। অশিক্ষায় আক্রান্ত ব্যক্তি বা গােষ্ঠী বেতারের নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিজেদের সচেতন করে তােলে।
বেতারের ইতি ও নেতিবাচক দিক:
আধুনিকযুগে বেতার আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেতারে তিনক্যাটাগরির অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় সরকারি, জনকল্যাণকর ও বিনােদনমূলক। সরকারি বেতার বাংলাদেশের সবস্থানে তরঙ্গ উন্মােচনের মাধ্যমে পাওয়া যায়। দেশের যেকোনাে সংবাদ মুহুর্তেই আমাদের সামনে এসে হাজির হয়। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্তকেই বেতারের মাধ্যমে নিজের কাছে নিয়ে আসা সম্ভব । রাজনীতি, অর্থনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন
ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বেতার আমাদের ধারণা দেয়। আবহাওয়া সম্পর্কিত যেকোনাে সংবাদ আমরা বেতারের মাধ্যমে পেয়ে থাকি। তবে অনেক সময় বেতারের মাধ্যমে অনুমাননির্ভর তথ্য প্রচারিত হয় যাতে মানুষ দিগ্ভ্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ভুল তথ্য প্রচার মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। আর এগুলাে বেতারের প্রতি মানুষের আস্থাকেকমিয়ে দেয়। তাই যারা এগুলাে সম্প্রচার করেন, তাদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।
উপসংহার:
মানবসভ্যতার আধুনিকায়নে বেতারের ভূমিকা অপরিসীম। যদিও বর্তমানে এ মাধ্যমটির জৌলুস আর আগে মতাে নেই। টেলিভিশন নিয়েই মানুষ এখন বেশি ব্যস্ত।তবে এ কথা মনে রাখতে হবে বেতারের মতাে সহজসাধ্য ও সুলত যন্ত্র বর্তমানের গতিশীল পৃথিবীতে খুবই ভালাে প্রভাব রাখবে। তাই বেতারের উন্নতিসাধন করা আমাদের একান্ত কর্তব্য। সুস্থ গণমাধ্যম হিসেবে বেতার মানুষের মনে সমধিক জায়গা করে নিক এটাই আমাদের কামনা।