ভাবসম্প্রসারণ: পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন, নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন।
মূলভাব : আপনার উপকার হবে ভেবে যেজন অপরের অপকারে আত্মনিয়ােগ করে, পরিণামে সে নিজেই কষ্ট ভােগ করে।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে মানুষ পরস্পর পরস্পরের সহযােগী হয়ে বসবাস করে। একে অপরের কল্যাণ সাধন করাই মানুষের মানবিক ও নৈতিক ধর্ম। পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের পার্থক্য হলাে-মানুষ শুধু নিজের কথা
চিন্তা করে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না। মানুষকে তার চারপাশের জগৎ নিয়েও ভাবতে হয়। যে মানুষ সর্বদা অন্যের উপকার করার
কথা ভাবে এবং নিজেকে সর্বদা অন্যের হিতার্থে ব্যাপৃত রাখে সে সমাজে সম্মানিত হয়। অন্যদিকে, মানুষ যখন নিজের স্বার্থকে
প্রাধান্য দেয় তখন সে অপরের ক্ষতিসাধনে তৎপর হয়। যে মানুষ সর্বদা অন্যের ক্ষতির চিন্তায় মগ্ন থাকে, সে সর্বদা হীনম্মন্য অবস্থায় থাকে। এতে তার চিত্তে শুদ্ধি আসে না বলে সে তার স্বীয় কর্মক্ষেত্রেও উন্নতি করতে পারে না। কেননা, মানুষের স্বার্থবুদ্ধি প্রাধান্য পেলে তার পরিণতি শুভ হয় না। অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিজে লাভবান হওয়ার চেষ্টা অন্যায় কর্ম বলে বিবেচিত হয়। আর এ অন্যায় যারা করে অর্থাৎ নিজের স্বার্থকে যারা বড় করে দেখে তারা মহৎ ব্যক্তি নয়, তাদের কাছ থেকে মহৎ কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। তারা সংকীর্ণমনা, অনুদার। তাদের কাজকর্মে শুধু অন্যের একার ক্ষতি হয় না বরং সমাজ ও জাতির পাশাপাশি তার নিজেরও বিরাট ক্ষতি হয়। পার্থিব কর্মের ফল মানুষ কোনাে না কোনােভাবে পৃথিবীতেই পেয়ে যায়। তাই এহেন ব্যক্তিরা নিজেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। রবি ঠাকুরের ভাষায়-
“যারে তুমি নিচে ফেল, সে তােমারে বাধিছে যে নিচে,
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তােমারে পশ্চাতে টানিছে।”
মন্তব্য : “To every action there is an equal and opposite reaction.” অর্থাৎ প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অর্থাৎ অন্যের যেটুকু ক্ষতি করা হয় তার সমপরিমাণ ক্ষতি নিজেরও হয়ে যায়। তাই অন্যের ক্ষতি করার চিন্তার পরিবর্তে পরােপকারে আত্মনিয়ােগ করাই উত্তম।