যৌতুক প্রথা এক সামাজিক ব্যাধি ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: যৌতুক আধুনিক সমাজজীবনের এক মারাত্মক ব্যাধি। বিয়েতে মেয়ের অভিভাবকের ওপর যৌতুকের চাপ সৃষ্টি করা আমাদের সমাজের একটা স্বীকৃত নির্যাতনপন্থা। এ নির্যাতনের মধ্য দিয়ে নর-নারীর জীবনে যে বন্ধন সৃষ্টি হয় তা জীবনে সুখ বয়ে আনতে পারে না। তাই যৌতুক জীবনধারণের পথে বিরাট অভিশাপ।
ভাবসম্প্রসারণ: আধুনিক যুগ নর-নারীর অধিকারের সমতা বিধানের যুগ। কিন্তু আজও সমাজদেহে যৌতুকের দুষ্ট ক্ষত অনেক নারীর স্বপ্নভঙ্গের কারণ। এ নিষ্ঠুর প্রথা যুগ যুগ ধরে মেয়েদের অধিকারকে অস্বীকার করছে, ক্ষুন্ন করছে তাদের মানবিক মর্যাদাকে। একদিকে যৌতুক দিতে গিয়ে মেয়ের পিতা হন নিঃস্ব, অন্যদিকে মেয়ের জীবনে নেমে আসে লাঞ্ছনার আঘাত। যৌতুকের কারণে দাম্পত্য জীবনের মাধুর্য, পারিবারিক কল্যাণ, সম্পর্কের সৌন্দর্য আর সামাজিক আদর্শবোধ- সবই কলুষিত হয়। পাত্র ও পাত্রপক্ষের মধ্যে যৌতুকের লালসা দেখে কন্যা হারিয়ে ফেলে সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধাবােধ । অন্যদিকে যৌতুকের পরিমাণ মনঃপুত না হলে কন্যাকে পাত্রের পরিবারে হতে হয় নিগৃহীত অনেক অক্ষম পিতা পাত্রপক্ষের দাবি মেটাতে না পারলে স্বামী এবং তার পরিবার নববধূর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এক সময় নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে বধূ বেছে নেয় আত্মহননের পথ । এ যেন অসভ্য যুগের বর্বরতাই প্রকাশ । অনেক সময় সুন্দর জীবনের স্বপ্ন নিয়ে যে মেয়ে প্রবেশ করে শ্বশুরবাড়িতে, মেহেদির রং না মুছতেই সে ফিরে আসে পিতৃগৃহে। অর্থের মূল্যে মেয়েদের এ মূল্য নির্ধারণ আজকের সভ্যসমাজে এক ঘৃণ্য কুপ্রথা। মুখে নারীর অধিকারের বাণী প্রচারিত হলেও আজও মেয়েদের জীবন দরকষাকষির জাতাকলে নিষ্পেষিত, এ লজ্জা গােটা সমাজের। এর হাত থেকে রেহাই পেতে হলে সবাইকে দৃঢ়সংকল্প ও অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। যৌতুক মানবমনের এক বিকৃত প্রকাশ। যার ফলে প্রতিমুহূর্তে নারী হারাচ্ছে মানুষের মর্যাদা। নর ও নারী— এ দুই সত্তা নিয়েই মানবসমাজ। এক পক্ষকে অমর্যাদা করে আরেক পক্ষ কখনােই মর্যাদার আসন পেতে পারে না। তাই যৌতুকের মতাে কঠোর ব্যাধি থেকে মানবসমাজের মুক্তি লাভ অপরিহার্য।