রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবকিছু নিয়েই মানবজীবন। মানবজীবনে দুঃখ যেমন আছে তেমনি দুঃখের কালাে মেঘ ভেদ করে এক সময় দেখা দেয় সুখের সূর্য। কাজেই দুঃখ-দৈন্যে হতাশ না হয়ে, ধৈর্যের সাথে সাধনা করতে হবে সুখ সমৃদ্ধির জন্যে।
ভাবসম্প্রসারণ: পৃথিবীতে মানুষ নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছে কখনাে দুঃখকে অতিক্রম করার জন্যে, আবার কখনাে সুখের সন্ধানে। আমরা জানি, সুখ-দুঃখ পালাক্রমে আসে মানুষের জীবনে। একটানা দুঃখ যেমন মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে, তেমনি একটানা সুখও একঘেয়ে ও বৈচিত্র্যহীন। এ দুটো বিষয় আছে বলেই মানুষ জীবনকে যথার্থভাবে উপভােগ করতে পারছে। যেমন: রাতের পর দিন, আলাের পর অন্ধকার। রাতের ভয়ভীতি দিনের আলােয় দূর হয়, অন্ধকারের পর আলাে মনে প্রফুল্লতা সৃষ্টি করে। কাজে গতি আসে। কোনাে অন্ধকারই চিরস্থায়ী নয়, সাময়িক। তেমনি দুঃখও চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ-যন্ত্রণায় পুড়ে যে সুখ পাওয়া যায় সেটা খাটি সুখ অর্থাৎ প্রকৃত সুখ। রাতের আঁধার শেষে একসময় প্রভাতের আলাে দেখা দেয়। এটি যেমন সত্য তেমনি জীবনে দুঃখকে দেখে হতাশ হওয়া উচিত নয়। প্রভাতের মতাে এক সময় সুখ এসে সেখানে উঁকি দেবে । এদের একটির অবস্থান অপরটির বিপরীতে। দুঃখের ভয় আছে বলেই মানুষ তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। সাধনা করে সুখের সােনালি প্রভাতের। দুঃখের উপস্থিতিই মানুষকে সুখের মূল্য বােঝায়। তবুও অবুঝ মানুষ চিরসুখের অযৌক্তিক কামনা নিয়ে ভাবে সুখ বুঝি তার দুয়ারে এলাে না। মানুষ ভুলে যায়। যে, ‘পতঙ্গ আনন্দ বিহারে যতই উর্ধ্বগগনে উড়তে থাকে, তার পতনের মুহূর্তও ততই নিকটবর্তী হয়। দিন আবর্তিত হয় রাতকে ঘিরে, রাত দিনকে ঘিরে তাই রাত যত গভীর হয় ততই প্রভাত এগিয়ে আসে । সুখ-দুঃখ তেমনি এক রহস্য।
জীবনে দুঃখ-যন্ত্রণা দেখে কাপুরুষের মতাে মুষড়ে পড়া মােটেই কাম্য নয়। প্রকৃতির নিয়মে রাত দিনের আলােকে গ্রাস করে চিরস্থায়ী হতে পারে না । তেমনি সুখ ও দুঃখও কখনাে চিরস্থায়ী নয়।
মূলভাব : মানব জীবন যতই দুঃখময় হােক না কেন একপর্যায়ে গভীর অমানিশা কেটে গিয়ে দেখা দেয় প্রভাত সূর্যের রশ্মি, সুন্দর-সুখী। ও বিপদমুক্ত বাঞ্ছিত মুহূর্ত।
সম্প্রসারিত ভাব : মানব জীবন কণ্টকমুক্ত নয়। জীবন চলার পথে সুখ-দুঃখ, বিপদ-আপদ পাশাপাশি অবস্থান করে। ফলে কখনাে সুখ, আবার কখনাে দুঃখ এসে জড়িয়ে যায় জীবনের সাথে। দুঃখ ছাড়া যেমন সুখ কল্পনা করা যায় না, তেমনি জীবনে শুধু দুঃখ থাকে তাও ভাবা নিরর্থক। বেদনার শেষ সীমায় অবস্থান করে স্বাচ্ছন্দ্যিক জীবনের খেয়া। অন্ধকার রাত্রির প্রহর কেটে দেখা দেয় সােনালি উষা। তাই দুঃখের আঁধারে জীবন ঢেকে গেলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ দুঃখের পর একসময় সুখ আসতে বাধ্য। রাত যত গভীর হয় ততই তা দিনের সান্নিধ্যে আসে- এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তেমনি দুঃখ-বেদনা, বিপদ-আপদ যতই গভীর থেকে গভীরতর হয় বুঝতে হবে সুখের সােনালি প্রভাত ততই নিকটে। এ প্রসঙ্গে বার্নার্ড জোসেফ বলেছেন, “এমন কোনাে রাত নেই যার ভাের হবে না। এমন কোনাে দুঃখ নেই যা সময়ে ফিকে হয়ে আসবে না।
মন্তব্য : জীবনের পাশাপাশি মৃত্যুর আহ্বান যেমনি অমােঘ সত্য, তেমনি সুখ-দুঃখ একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িতএকটিকে বাদ দিয়ে অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা মিথ্যা মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়।