Table of Contents
মননশীল লেখক মানবসমাজকে কুসংস্কার, কলুষমুক্ত ও সচেতন করার উদ্দেশ্যে লেখনী ধারণ করেন। তাঁর বক্তব্য সাধারণ মানুষ যাতে বুঝতে পারে সেজন্যে নানা প্রকার দৃষ্টান্ত, উপমা-অলঙ্কার ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন। ফলে বক্তব্যের মূল ভাবটি প্রায়ই কিছুটা আড়ালে অবস্থান করে। অথচ এ অন্তর্নিহিত ভাবকে ধারণ করেই সমগ্র চরণটি রচিত।
সারাংশ ও সারমর্ম এর সংজ্ঞা
সারাংশ : একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বিস্তারিতভাবে লিখিত এক বা একাধিক অনুচ্ছেদের মূল বক্তব্যটিকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলে একে সারাংশ বলে।
সারমর্ম বা ভাবার্থ : কোনাে কবিতার একাধিক পঙক্তির মূল ভাবটি সংক্ষেপে উপস্থাপিত হলে, তাকে সারমর্ম বা ভাবার্থ বলে।
সারাংশ-সারমর্ম লিখন
সারাংশ / সারমর্ম লেখার নিয়মাবলি
সারাংশ বা সারমর্ম বলতে কোনাে গদ্য বা পদ্য রচনার মূলভাবকে বােঝায়। এতে কোনাে গদ্য বা পদ্যের মূল বক্তব্যকে অল্প কথায় প্রকাশ করা হয়। সাধারণত গদ্যের সার-সংক্ষেপকে সারাংশ এবং পদ্যের সার-সংক্ষেপকে সারমর্ম বলে। সারাংশ / সারমর্ম লেখার নিয়মাবলি—
১. পঠন: যে অংশের সারমর্ম ও সারাংশ লিখবে তা বার বার মন দিয়ে পড়বে । মূল ভাবটুকু অনেক সময় উপমা-রূপক বা অলংকারের আড়ালে থাকে। তাই উপমা, রূপক, অলংকার ইত্যাদি বাদ দিয়ে মূল ভাবটি বুঝে নিয়ে তা লিখবে ।
২. অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বর্জন: মূল ভাবকে যেহেতু খুব সংক্ষেপে লিখতে হয় সেজন্যে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় থাকলে তা বাদ দেবে।
৩. প্রসঙ্গ: মূল ভাবের বাইরে অন্য কিছুর অবতারণা করা উচিত নয়। রচয়িতার নাম জানা থাকলেও উল্লেখ করবে না।কবি বলেছেন, জাতীয় কথাও লিখবে না।
৪. অনুচ্ছেদ: সারমর্ম ও সারাংশ একটি অনুচ্ছেদে লিখবে ।
৫. প্রারম্ভিক বাক্য: প্রারম্ভিক বাক্যটি গােছালাে ও আকর্ষণীয় করতে চেষ্টা করবে।
৬. প্রত্যক্ষ উক্তি: সারাংশে প্রত্যক্ষ উক্তি থাকলে তা পরােক্ষ উক্তিতে সংক্ষেপ করে লিখবে ।
৭. পুরুষ: সারমর্ম ও সারাংশের বক্তব্যে উত্তম পুরুষ (আমি/আমরা) বা মধ্যম পুরুষ (তুমি/তােমরা) দিয়ে বাক্য কখনােই লিখবে না।
৮. উদ্ধৃতি: মূল অংশে উদ্ধৃতি থাকলে তার পুনরাবৃত্তি করবে না। প্রয়ােজনে তার ভাবটুকু উদ্ধৃতি চিহ্ন ছাড়া লিখবে।
৯. ভাষা: সারমর্ম ও সারাংশ যথাসম্ভব সহজ ভাষায় ও সরল বাক্যে গুছিয়ে লিখতে চেষ্টা করবে।
সারাংশ/ সারমর্ম লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখা বিষয়সমূহ
সারাংশ ও সারমর্ম লেখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলাে বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার তা হলোঃ
- নির্ধারিত মূল অংশটিকে বারবার পড়ে, মূল ভাবটিকে খুঁজে নিতে হবে। অপ্রয়ােজনীয় অংশটুকু বাদ দিয়ে মূল ভাবটুকু (Theme) লিখতে হবে।
- মূল ভাবটিকে বুঝতে অনুমানের উপর নির্ভর না করে, হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হবে।
- নির্ধারিত মূল অংশের শুরুতে সংলাপ দেওয়া থাকলে প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরােক্ষ উক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। উত্তম ও মধ্যম পুরুষ প্রথম পুরুষে রূপান্তরিত হবে ।
- মূল ভাবটিকে সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে সারমর্ম বা সারাংশ লেখার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
- বক্তব্য বর্ণনায় মূল ভাবের বাইরে কোনােকিছু লেখা যাবে না। বক্তব্যে কোনােপ্রকার ছন্দ, উপমা, অলঙ্কার, রূপক, উদ্ধৃতি ব্যবহার বর্জন করতে হবে।
- সারমর্ম বা সারাংশ লেখার আকার সম্পর্কে অবহিত থাকা অতি আবশ্যক। কেননা, মূল ভাবকে পাশ কাটিয়ে অথবা মূল ভাবের অর্থ ভালােভাবে না বুঝে এলােমেলাে লেখা দিয়ে লেখা দীর্ঘ করলে চলবে না। লেখাটি যেন মূলের অনুপাতে খুব ছােট বা বেশি বড় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্ধারিত মূল অংশটির তিন ভাগের এক ভাগ হলে সারাংশ যথােপযুক্ত হবে। তবে আকারের দিক বিবেচনা না করে মূল ভাবটি সঠিক ও যথাযথ হয়েছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
1 comment
It was very helpfull.