Home ভাবসম্প্রসারণ ভাবসম্প্রসারণ: তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি, কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ

ভাবসম্প্রসারণ: তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি, কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ

by Curiosityn
0 comment

তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি,কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: মানুষ নামে মানুষ হলেও ধীরে ধীরে ‘মানুষ’ শব্দের আগে স্বরবর্ণের ‘আ’ বর্তমানের সিংহভাগ মানুষকে আরও বিশেষভাবে বিশেষায়িত করছে। মানুষ আর জানোয়ার এর মধ্যকার সূক্ষ্ম পার্থক্যটা দিন দিন ঘুঁচে যাচ্ছে। এই জগতে কেউ মনুষত্ব নিয়ে জন্মায় না, তাকে অর্জন করতে হয়। পৃথিবীর সকল স্থানে মানুষ নামক জীব থাকলেও আসল মানুষ খুব কমই দেখা যায়।

সম্প্রসারিত ভাব: উদ্ভিদ ও তরুলতার পরিচয় তাদের নামের মধ্যেই নিহিত, কিন্তু মানুষের বেলায় তা নয়। তাকে অনেক চেষ্টা-সাধনা ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে মানুষরূপে আত্মপ্রকাশ করতে হয়। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন সৃষ্টি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন— তরুলতা জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই এ নামে পরিচিতি লাভ করে । পশুপাখির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা; জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ মানুষ হয়ে ওঠে না। মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমে মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে হয়। এজন্য মানুষকে ঐকান্তিক চেষ্টা, সাধনা আর মানবীয় বৃত্তির চর্চার দ্বারা মনুষ্যজন্মের সার্থকতা প্রতিপন্ন করতে হয় এবং সত্যিকারের মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হয়। তাকে পরিশ্রম,জ্ঞানচর্চা, ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে নিজের ও সমাজের কল্যাণসাধনের চেষ্টা করতে হয়। প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব অভাবগ্রস্তদের প্রতি সদয় ব্যবহার ও সহানুভূতি প্রকাশসহ আরও বহুবিধ মানবীয় গুণাবলি অর্জন করতে হয় এছাড়া তাকে স্নেহ-প্রীতি, প্রেম-ভালােবাসা, দয়া-মায়া প্রভৃতি মানবীয় বৃত্তির চর্চাও করতে হয়; সমাজের অন্য দশজনের সঙ্গে স্নেহ-প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। যারা সাফল্যের সঙ্গে এসব কাজ করতে পারে তারাই সত্যিকারের মানুষরূপে সমাজে আত্মপ্রকাশ করে। অন্যদিকে যাদের মধ্যে এসব গুণের অভাব পরিলক্ষিত হয় তারা মানুষ বলে গণ্য হতে পারে না।

তরুলতা ও পশুপাখির কোনাে জীবনসাধনা নেই। তার বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট; কিন্তু মানুষকে সাধনা ও চর্চার মধ্য দিয়ে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়।

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব : প্রাণ বা আত্মা থাকলেই মানুষকে প্রকৃত মানুষ বলা যায় না। ব্যক্তিত্ব, মননশীলতা ও মনুষ্যত্বের শক্তিতেইমানুষ প্রকৃত মানুষ হয়।

সম্প্রসারিত ভাব : যার প্রাণ আছে তাকেই প্রাণী বলে। সেদিক থেকে মানুষের প্রাণ আছে বলে মানুষও এক ধরনেরপ্রাণী। কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের বৃহৎ পার্থক্য রয়েছে। মানুষ মনসম্পন্ন প্রাণী। মানুষের মনে যে বিশেষ সত্তা রয়েছে তা এই পার্থক্যের কারণ। অন্য প্রাণীর মধ্যে এই মনের পরিচয় অনুপস্থিত। মানুষ তার মন দিয়ে সাধনা করে জীবনের বিচিত্র বিকাশ ঘটায়। মানুষ মন থেকে তার চিন্তা-ভাবনা, বুদ্ধি-বিবেক, আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদি প্রকাশ করেএবং জীবনে সেগুলাের সুন্দর প্রতিফলন ঘটায়। মনের কার্যকলাপ থেকে সভ্যতা- -সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে। মানুষের এ শিষ্ট্যটি প্রাণিজগতের আর কারও নেই। তাই সকল প্রাণীর উপর মানুষের স্থান ও মর্যাদা। এই শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য মানুষকে মননশীলতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যে মানুষ পশুসুলভ আচরণ করে, যার মধ্যে মানবতাবােধ নেইতাকে সত্যিকার অর্থে মানুষ বলা যায় না। কেননা মানুষ কেবল প্রাণের অধিকারীই নয়, মনেরও অধিকারী। সে মন অন্যকে ভালােবাসবে, অন্যের ভালােবাসা পাবে। তাই মানুষ হতে হলে কেবল প্রাণ থাকলেই চলবে না, শিক্ষা, সাধনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে মানবিক গুণাবলি আয়ত্ত করে সত্যিকারের মনসম্পন্ন মানুষ হতে হবে।

মন্তব্য : মনই মানুষকে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে রূপায়িত করে। তাই মানুষ হতে হলে তাকে সুস্থ মনের অধিকারী হতে হবে।

5/5 - (1 vote)

You may also like

Leave a Comment