Home ভাবসম্প্রসারণ ভাবসম্প্রসারণ: অর্থসম্পদের বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনাে বিনষ্ট হয় না |

ভাবসম্প্রসারণ: অর্থসম্পদের বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনাে বিনষ্ট হয় না |

by Curiosityn
0 comment

অর্থসম্পদের বিনাশ আছে কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনাে বিনষ্ট হয় না ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণ: অর্থসম্পদ অতি প্রয়ােজনীয়, তবে এ সম্পদের বিনাশ ক্ষয় আছে। অর্থসম্পদের তাৎক্ষণিক প্রয়ােজনীয়তা অনেক বেশি হলেও জ্ঞানসম্পদের প্রয়ােজনীয়তা অবিনাশী। জ্ঞান তাই অমূল্য সম্পদ।

পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য অর্থসম্পদের যে প্রয়ােজন রয়েছে এ কথা অনস্বীকার্য। এ অর্থসম্পদ আহরণের জন্যে মানুষ নিরন্তর কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। আজকের দিনে গােটা দুনিয়া ছুটছে অর্থসম্পদের পেছনে। কিন্তু এ অর্থসম্পদ চিরস্থায়ী নয়, এর ক্ষয় বা বিনাশ আছে। বাস্তবে দেখা যায় কখনাে একজন ব্যক্তি এক সময় অঢেল বিত্তের অধিকারী হয়, আবার এক সময় সব হারিয়ে পথে বসে। কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনাে হারানাের ভয় থাকে না বরং উত্তরােত্তর জ্ঞানের প্রসার ঘটে। মেধা, মনন, প্রতিভা তথা জ্ঞান এক ধরনের সম্পদ। এ সম্পদ মানুষের মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করে। মানুষকে আলাের পথে, সুন্দর পথে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে। এ সম্পদ কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। জীবন যতদিন থাকে ততদিন এ সম্পদ আলাে দেখিয়ে ব্যক্তিকে সকল বাধাবিপত্তি দূর করে পথ চলায় সাহায্য করে। জ্ঞান মানুষকে অর্থের মােহ থেকে রক্ষা করে, অর্থের নেশায় যেন পশুর মতাে অমানুষে পরিণত না হয় সেই দিকনিদের্শনা দেয়। শিক্ষাই মানুষের মধ্যে ভালাে-মন্দের বােধ জাগ্রত করে। শিক্ষার ফলেই মানুষ বুঝতে পারে ‘লােভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে জ্ঞানের ভূমিকা প্রধান। জ্ঞানসম্পদ মানুষকে অমরত্ব দান করে। কিন্তু অর্থসম্পদের অধিকারী ব্যক্তি মৃত্যুর পর মন থেকে বিলীন হয়ে যায়। জ্ঞানই মানুষকে স্মরণীয় বরণীয় করে তােলে ।

অর্থসম্পদ আজ আছে, কাল নেই। কিন্তু জ্ঞান হলাে অমূল্য সম্পদ। যুগের পর যুগ পৃথিবীতে টিকে থাকবে। তাই অর্থ-বিত্তেরপরিবর্তে সকলেরই লক্ষ্য হওয়া উচিত জ্ঞান আহরণ।

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাবঃ বিভিন্ন কারণে মানুষের ধন-সম্পদ নষ্ট হতে বা নষ্ট হয়। কিন্তু জ্ঞান সম্পদ অব্যয়- অক্ষয়, এর কোন ধ্বংস নেই।

সম্প্রসারিত ভাব : মানব জীবনে ধন এবং জ্ঞান উভয়ের প্রয়ােজনীয়তাই অনস্বীকার্য। আমাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য যেমন অর্থ-সম্পদের প্রয়ােজন তেমনি পূর্ণ মনুষ্যত্ব লাভের জন্য প্রয়ােজন জ্ঞান সম্পদ।ধনসম্পদ পৃথিবীতে চিরস্থায়ী নয়। বিভিন্নভাবে ধন-সম্পদের ধ্বংস বা বিনষ্ট হতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দস্যুর অপহরণ, অপচয়, অপব্যয় ইত্যাদি কারণে ধনসম্পদ নষ্ট হতে পারে। কিন্তু জ্ঞান সম্পদের কোনাে ধ্বংস বা ক্ষয় নেই। এটি একান্তই মানসিক, চিত্ত উৎকর্ষের সাথে সম্পৃক্ত। চর্চার মধ্য দিয়ে এর বিকাশ ও বৃদ্ধি ঘটে। জ্ঞান সম্পদের কোনাে বস্তুগত অবস্থান নেই বিধায় এটি কখনাে ধ্বংস হতে পারে না। জ্ঞানের আলােয় আলােকিত মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট কর্ম যুগ যুগান্তের বহমান ধারা। ধারায় সাত হয়ে কর্মী কর্ম পায়, শিক্ষার্থী শিক্ষা পায়, ভাবুক পায় ভাব। মানুষের সৃজন ক্ষমতা চূড়ান্ত স্ফুর্তি পায় জ্ঞানে। জ্ঞানের অদম্য শক্তিতে বলীয়ান হয়েই মানুষ তার ব্যক্তিত্বের, আবেগের, মননশীলতার যথাযথ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়। জ্ঞানের ধারক ও বাহকরাই পৃথিবীতে অমর ও অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকেন এবং তাদের পদচারণায় পৃথিবী এগিয়ে গেছে কল্যাণ ও সমৃদ্ধি পথে, এঁদের সংস্পর্শে মানব জীবন হয়েছে ধন্য। তাদের জ্ঞানের সঞ্জীবনী সুধা সঞ্চারিত ও সঞ্জীবিত হয় উত্তর প্রজন্মের চিন্তায় ও মননে। আর এভাবেই জ্ঞান সম্পদ ধ্বংসের পরিবর্তে এগিয়ে যায় উত্তরােত্তর সমৃদ্ধির পথে।

মন্তব্য : জ্ঞান অবিনাশী। তাই প্রতিটি মানুষকে জ্ঞানের প্রতি অনুরক্ত হওয়া উচিত।

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব: জ্ঞান মানুষকে মনুষ্যত্ব দান করে। জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়ায় মানুষ প্রকৃত মানুষের গুণাবলি অর্জন করে। জ্ঞান অবিনাশী বলে একবার তা অর্জন করলে সারা জীবনের সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়।

ভাবসম্প্রসারণঃঃ জ্ঞান মানুষের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের নিয়ামক শক্তি। এ শক্তি মানুষের মাঝে বিবেকের উন্মেষ ঘটায়, জাগ্রত করে ন্যায়-নীতি, সত্য ও সুন্দরের মহিমা। সাধারণত মনুষ্যসমাজে জ্ঞানী যারা, তারাই সম্পদ হিসেবে বিবেচিত, মনুষ্যসমাজের পথপ্রদর্শক হিসেবে সম্মানিত। জ্ঞান হলাে মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ সম্পদের ক্ষয় নেই। জ্ঞান উত্তরােত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে। এ সম্পদ কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। জ্ঞানসম্পদের মতাে মানুষের অর্থ ও অন্যান্য সম্পদ চিরস্থায়ী নয়, যেকোনাে সময় ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে এর নজির বিরল নয়। আজকে রাজা, কালকে ফকির এ রকম দৃষ্টান্ত অনেক রয়েছে। কিন্তু যিনি জ্ঞানী তিনি আমৃত্যু জ্ঞানরূপ সম্পদে সম্পদশালী। তার ক্ষয় নেই। এমনকী মৃত্যুর পরেও জ্ঞানীর জ্ঞানের প্রাচুর্য পৃথিবীতে বিরাজ করে জ্ঞানীদের অমরত্ব দান করে। তাই এ সত্যই প্রতিষ্ঠিত যে, অর্থসম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনও বিনষ্ট হয় না।

জ্ঞান অতুলনীয় সম্পদ। মানুষ তার স্বরূপকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করতে পারে শুধু জ্ঞান আহরণের মধ্য দিয়েই। তাই সব মানুষেরই উচিত জ্ঞান আহরণ করা।

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

ভাব-সম্প্রসারণ : পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুই নশ্বর, কিন্তু জ্ঞান ধ্বংস হয় না। জ্ঞান চিরন্তন, জ্ঞান বিতরণ করলে কমে না, বরং বৃদ্ধি পায়। সেজন্য জ্ঞান চর্চা করা একান্ত প্রয়ােজন। অন্যদিকে প্রত্যেকটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অর্থের প্রয়ােজন অনস্বীকার্য। অর্থের জন্য মানুষ উদয়-অস্ত পরিশ্রম করে চলেছে। অর্থ এমন এক সম্পদ যা দিয়ে আমরা সমাজ জীবনে ব্যক্তিমানুষের অবস্থান নির্ণয় করে থাকি। কিন্তু এ সম্পদ কেবল মানুষের বাইরের দিকটাই প্রকাশ করে। অর্থসম্পদ যতই শক্তির অধিকারী হােক না কেন, তার কোনাে স্থায়িত্ব নেই। এককালের সম্পদশালী জমিদারও একসময় নিঃস্ব হয়ে পড়েন। কিন্তু একজন জ্ঞানী ব্যক্তি সময়ের ব্যাপ্ত পরিসরে অধিকতর জ্ঞানী হতে থাকেন। তাই বলা যায় যে, “Knowledge is power, but money is nothing.” ধনী ব্যক্তির ধনসম্পদ এক সময় নিঃশেষ হয়ে আসে। কিন্তু বিদ্বানের জ্ঞান ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাই অর্থসম্পদে নয়, জ্ঞানসম্পদে সমৃদ্ধ ব্যক্তিগণই দেশের ও জাতির প্রকৃত সম্পদ; যার কোনাে বিনাশ নেই। এজন্য অর্থ সম্পদের মাপকাঠিতে নয়, জ্ঞানসম্পদের মাপকাঠিতে মানুষের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহম্মদ (স) জ্ঞানীর কলমের কালিকে শহিদের রক্তের চেয়েও পবিত্র বলেছেন। হযরত মুহম্মদ (স) আরও বলেছেন যে, “প্রত্যেক নর-নারীর জ্ঞানার্জন করা ফরয, জ্ঞানার্জনের প্রয়ােজনে তিনি সুদূর চীনদেশে যেতেও উৎসাহিত করেছেন এবং দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষকে জ্ঞানার্জনে উপদেশ দিয়েছেন। পুরাণে বলা হয়েছে, “অসি অপেক্ষা মসি অধিকতর শক্তিশালী।” সুতরাং দেখা যায় যে, জ্ঞান এবং বিদ্যা শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। একজন অক্ষরজ্ঞানহীন ব্যক্তি নির্বোধের সমতুল্য। সেজন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে সাক্ষরতা অর্জন অর্থাৎ, জ্ঞানার্জনে রাষ্ট্রীয়ভাবে আত্মনিয়ােগ করেছে। মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ জীবসমূহের মধ্যে মানুষ জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব বলে অভিহিত করেছেন। এ জ্ঞানই মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীবহিসেবে চিহ্নিত করেছে। অর্থ সম্পদের বিনাশ অনিবার্য; কিন্তু জ্ঞানের বিনাশ নেই। জ্ঞানী ব্যক্তি জগতে সর্বত্রই অমর হয়ে বেঁচে থাকে।

4/5 - (3 votes)

You may also like

Leave a Comment