Home ভাবসম্প্রসারণ ভাবসম্প্রসারণ: কর্তব্যের কাছে ভাই বন্ধু কেহই নাই |

ভাবসম্প্রসারণ: কর্তব্যের কাছে ভাই বন্ধু কেহই নাই |

by Curiosityn
0 comment

কর্তব্যের কাছে ভাই বন্ধু কেহই নাই ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণ: মানুষ কর্মের মাধ্যমে মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। আর এ অর্জনের পেছনে যেসব গুণ অপরিহার্য, কর্তব্যনিষ্ঠা সেসবের একটি। কর্তব্যের স্থান ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও নিজ স্বার্থের অনেক ঊর্ধ্বে। একজন মানুষের কর্তব্যবােধের প্রমাণ পাওয়া যায় তার ন্যায়-অন্যায় বােধের মাধ্যমে। ন্যায়বান হলে সেখানে কর্তব্যই প্রধান হয়, বন্ধুবান্ধব, শত্রুমিত্র, আত্মীয়-অনাত্মীয়তার কোনাে প্রশ্নই ওঠে না। মানুষ যেহেতু সমাজে বসবাস করে সেই কারণে তাকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনেক কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পাদনকালে মানুষকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আইনকানুন ও বিধিবিধান মেনে চলতে হয়। কিন্তু কর্তব্যপরায়ণ মানুষ সবসময় সহজে নিজের কর্তব্য পালন করতে পারে না। তার কাজে বাধা হয়ে দেখা দেয়। সুবিধাবাদী লােকের তােষামােদ এবং বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের অনুরােধ । অনেক সময় অন্যায় ও অপরাধের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে আবদার ও অন্যায় হস্তক্ষেপ কর্তব্য পালনে বাধা হয়ে দাড়ায়। তাই দৃঢ় মনােবল ও সাহসী পদক্ষেপ না নিতে পারলে যথাযথ কর্তব্য পালন করা যায় না। আত্মীয়স্বজন, ভাই, বন্ধুর স্বার্থ রক্ষা করতে গেলে বা স্বজনপ্রীতি দেখাতে গেলে কর্তব্য ও ন্যায় বিপন্ন হয়। সত্যিকার কর্তব্যপরায়ণ লােকের কাছে কর্তব্যই প্রধান। এ ধরনের ব্যক্তিকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন আচ্ছন্ন করতে চাইলেও বিবেক সেই নীতিবর্জিত কাজের কাছে নতিস্বীকার করে না, এমনকি আপনজনের আকুতিকে ন্যায়ের আদর্শে অটল থেকে বিসর্জন দেয়। এ ধরনের নীতিবান ব্যক্তিরা কখনাে কর্তব্যের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হন। কর্তব্য পালন করতে গিয়ে অনেক মানুষই নিজের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বিরুদ্ধে গেছেন।

কর্তব্যের কাছে আপন পর বলে কোনাে ভেদাভেদ নেই । দয়ামায়া, স্বজনপ্রীতি ও করুণা দ্বারা কর্তব্যপরায়ণ ব্যক্তি। নিজেকে কখনাে ভূলুণ্ঠিত করেন না। কর্তব্যের প্রতি দৃঢ় থাকাই তাঁর আদর্শ।

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব : কর্তব্যের কঠিন পথ প্রেম-ভালােবাসা ও স্নেহ-বন্ধনের ঊর্ধ্বে। সমস্ত সংকীর্ণতাকে পরিহার করে কর্তব্যকেবড় করে দেখার মধ্য দিয়েই প্রকাশ ঘটে মনুষ্যত্বের, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের।

সম্প্রসারিত ভাব : আল্লাহর সৃষ্ট অন্যান্য জীবের সাথে মানুষের পার্থক্য এই যে, মানুষ তার আপন দায়িত্ব সম্পর্কেসচেতন। তাই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কর্তব্য পালন মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানব জীবনে মৃত্যু যেমন একঅমােঘ সত্য, তেমনি কর্তব্যের আহ্বানে সাড়া দেওয়া মানব জীবনেরই অংশ। কর্তব্যবােধই মানুষকে সত্যিকারের মানুষরূপেচিনতে সহায়তা করে। দোলনা থেকেই ছােট্ট মানব শিশুটি ধীরে ধীরে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হতে থাকে।এমনিভাবে পারস্পরিক বােঝাপড়া ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সে গড়ে তােলে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি। মূলত মানবজীবনটাই নানাবিধ কর্তব্যের জালে আবদ্ধ। যেমন- সন্তান-সম্ভতির প্রতি বাবা-মায়ের, সমাজের প্রতি সমাজপতিদের এবংগরিবের প্রতি ধনীর কর্তব্য আবহমান কাল ধরে চলে আসছে। এসব কর্তব্য-কৰ্মকে বাদ দিয়ে জীবনের সার্থকতা খুঁজতেযাওয়া নিছক মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। মানবিক সম্পর্ক কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী প্রভৃতি সম্পর্কের উর্ধ্বে থেকে কর্তব্য পালনু মনুষ্যত্বেরই পরিচায়ক। দেশ মাতৃকার ডাকেসাড়া দেওয়া, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, অন্যায় ও অসত্য থেকে দূরে থাকা প্রভৃতি কর্তব্য পালনে মানুষকে নানাবিধ স্বজনপ্রীতির নিগড়ে আবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যথার্থ কর্তব্য পালনে এ বাধা অতিক্রম করে যেতে হবে অনায়াসে।

মক্তব্য : সত্যনিষ্ঠ ন্যায়বান মানুষ কখনাে কর্তব্যকে বিসর্জন দেয় না। কর্তব্যের সামনে সকল সম্পর্ককে উপেক্ষা করেদায়িত্ব পালন করার মধ্যেই যথাযথ মনুষ্যত্বের প্রকাশ, বিশ্বমানবতার কল্যাণ নিহিত।

3.7/5 - (6 votes)

You may also like

Leave a Comment