Home ভাবসম্প্রসারণ ভাবসম্প্রসারণ: মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন

ভাবসম্প্রসারণ: মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন

by Curiosityn
0 comment

মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: স্বপ্নপূরণে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হয়। কোনাে কাজে সাফল্য লাভ ও লক্ষ্যে পৌঁছানাের জন্যে প্রয়ােজন হয় কর্মোদ্দীপনা ও আন্তরিক ইচ্ছাশক্তির। পরিশ্রম ও সাধনায় সিদ্ধিলাভ সুনিশ্চিত।

ভাবসম্প্রসারণ: উদ্দিষ্ট গন্তব্যে উপনীত হওয়া কোনাে সহজসাধ্য বিষয় নয়। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানাের যেমন স্বপ্ন থাকতে হবে তেমনি থাকতে হবে প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমী মানসিকতা। মনকে কর্মের পথে একনিষ্ঠভাবে চালিত করতে পারলেই সাফল্য লাভ সম্ভব হতে পারে। এক্ষেত্রে পরিশ্রম ও একাগ্রতার বিকল্প নেই। কারণ পরিশ্রমই সৌভাগ্যের প্রসূতি। আর সেই পরিশ্রমের সঙ্গে যদি যুক্ত হয় প্রবল ইচ্ছাশক্তি তবে তাে সােনায় সােহাগা। জীবন বাজি রেখে যে পরিশ্রম করতে পারে সাফল্য তার দুয়ারে এসে হাজির হতে বাধ্য। পক্ষান্তরে শ্রমবিমুখ ব্যক্তি কখনােই সাফল্যের দেখা পায় না। বন্ধুর পথ দেখে যে হাঁটা থামিয়ে দেয় সে গন্তব্যে পৌঁছাবে কী করে। সাফল্য তার হাতেই ধরা দেয় যে লক্ষে অবিচল থেকে একমনে পরিশ্রম করে যায়। যে ভাবতে পারে হয় জয়, নয় ক্ষয়’, তার সাফল্য লাভ অনিবার্য। ইংরেজিতে বলা হয়েছে, ‘Do or die.’ মানবজাতির অগ্রগতির ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, নিজেদের মনোেবল ঠিক রেখে যারা সামনে এগিয়ে যেতে পেরেছেন তারাই শেষ অব্দি সফল হিসেবে সবার কাছে স্মরণীয়-বরণীয় হয়েছেন। যে জাতি সব বাধা-বিপত্তিকে পায়ে দলে নিরলস পরিশ্রম করেছে, সে জাতি আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। পৃথিবী-বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনী আমাদেরকে সেই শিক্ষাই প্রদান করে। প্রবল আত্মশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দিগ্বিজয়ী হওয়া সম্রাট নেপােলিয়নের কাহিনি ইতিহাসে সুবিদিত। শুধু মানুষই নয় সৃষ্টিজগতের অন্যান্য অনেক প্রাণীর জীবনের দিকে তাকালেও আমরা পরিশ্রম ও অদম্য মানসিকতার দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। পিপড়া কিংবা মৌমাছির কঠোর সংগ্রামী জীবন থেকে এ শিক্ষাই পাওয়া যায় যে জীবনের সফলতা পরিশ্রম ও একাগ্রতার ওপর নির্ভর করে। অলৌকিকের সাহায্যে কিংবা সংক্ষিপ্ত পথে লক্ষ্যে পৌছানাে অসম্ভব।

আত্মপ্রত্যয় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্য করায়ত্ব করতে হয়। মানসিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পারলেই কেবল কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানাে সম্ভব।

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব : সন্ন্যাসীরা মন্ত্র সাধনার ক্ষেত্রে সিদ্ধি লাভের পূর্বে ক্ষান্ত হন না, যদিও শরীর নষ্ট হয়।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের জীবন চলার পথ বড়ই কণ্টকাকীর্ণ। তাই প্রতি পদক্ষেপে তাকে বন্ধুর পথ এবং পর্বতময় বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। এ পৃথিবীতে কোনাে কিছুই বিনা প্রচেষ্টায় লাভ করা যায় না। কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই তা অর্জন করতে হয়। কাউকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে হতাশা, সংশয় প্রভৃতি বিরূপ প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে একাগ্রচিত্তে অগ্রসর হতে হবে। রােগ, শােক, ব্যাধি, মৃত্যুযন্ত্রণা ইত্যাদি মানুষের জীবনকে স্তিমিত করে দিতেচায়। তাই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য এসবকে ঝেরে ফেলতে হবে। যে শিক্ষার্থী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে প্রচেষ্টা চালায় সে সফলকাম হবেই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধও সাধনার ফল। “স্বাধীনতা নয়তাে মৃত্যু’– এই দৃঢ়তার মধ্য দিয়েই যােদ্ধারা ক্রমাগত চেষ্টা করে দেশকে স্বাধীন করেছে। এ পৃথিবীতে যারা সাফল্য অর্জন করে ইতিহাসে বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাদের জীবনী পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, তাদের সকলেই পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়সহ কর্তব্য কাজে নিজেকে আত্মনিয়ােগ করেছেন। তারা নির্ভীক যােদ্ধার ন্যায় অসীম সাহসে সম্মুখে অগ্রসর হয়েছেন। বুকে বেঁধে নিয়েছেন প্রত্যয়ের দীপ্ত অঙ্গীকার। দক্ষ মাঝির মতােহাল ধরে পাড়ি দিয়েছেন অকূল সমুদ্র। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস বহুবার যুদ্ধে পরাজিত হয়েও হতাশ হননি। তিনি বারবার চেষ্টা করেছেন এবং অবশেষে বিজয়ী হয়েছেন। সুতরাং বলা যায়, কোনাে কাজে সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রয়ােজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, নিরলস পরিশ্রম ও কঠোর সাধনা।

মন্তব্য : জীবন বাজি রেখে কোনাে কাজে অবতীর্ণ হলে সফলতা আসবেই। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে এ ধরনের সফলতার অজস্র নজির বিশ্বের ইতিহাসে রয়েছে।

5/5 - (2 votes)

You may also like

Leave a Comment