Home ভাবসম্প্রসারণ ভাবসম্প্রসারণ: স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে, সে কখনাে শেখেনি বাঁচিতে |

ভাবসম্প্রসারণ: স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে, সে কখনাে শেখেনি বাঁচিতে |

by Curiosityn
0 comment

ভাবসম্প্রসারণ: বলাে মিথ্যা আপনার সুখ,
মিথ্যা আপনার দুঃখ। স্বার্থমগ্ন যে জন বিমুখ
বৃহৎ জগৎ হতে, সে কখনাে শেখেনি বাঁচিতেই

স্বার্থমগ্ন যেজন বিমুখ বৃহৎ জগৎ হতে, সে কখনাে শেখেনি বাঁচিতে ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণ: যে মানুষ পরার্থে ত্যাগ করতে পারে না, আচ্ছন্ন থাকে নিজের সংকীর্ণ ভােগবাসনায়, জীবনের মহানন্দ তার কাছে অধরা থেকে যায়। বিশ্ব মানবের মাঝে নিজেকে মিশিয়ে দেওয়ার মধ্যেই রয়েছে মনুষ্যজীবনের চরম সার্থকতা, পরম প্রাপ্তি ও বেঁচে থাকার আনন্দ।

পৃথিবীতে অনেক মানুষ রয়েছে যারা অতিমাত্রায় স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক। তারা সর্বদা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কী করে জীবনে অঢেল টাকা-পয়সা উপার্জন করা যাবে, জীবনে সকল চাহিদা পূরণ করা যাবে, কেমন করে নিজের সন্তান-সন্ততির জীবনে প্রতিষ্ঠা ও উন্নতি হবে- এরূপ নানা স্বার্থচিন্তায় সদা মগ্ন থাকে। কিন্তু এ বাঁচা সত্যিকার বাঁচা নয়— কেবল জীবনধারণ করে বেঁচে থাকা মাত্র। কারণ পৃথিবীতে মানবজাতির আগমনই ঘটে একে-অপরের জন্যে। পরার্থে জীবন দান করার মধ্যে রয়েছে মানবজীবনের চরম সার্থকতা। নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকার জন্যে আগমন ঘটেনি। কিন্তু দেখা যায়, অনেক মানুষ। বৃহৎ জগৎ থেকে মুখ ফিরিয়ে ব্যক্তিগত সুখ-সুবিধার সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ করে রাখে। এ জীবন মানবের সার্থক জীবন নয়। আমাদের চারদিকে রয়েছে বৃহৎ জগৎ-সংসার। সেখানে অসংখ্য মানুষ কর্মে ও চিন্তায় অবদান রাখছে। তারা কখনাে সফলতা লাভ করে, ব্যর্থও হয়, কখনাে আনন্দ-বেদনার দোলায় দোলে, কখনাে দেশ ও জাতির সঙ্কট ও সমস্যায় বিচলিত হয়ে সমাধানের পথ খোঁজে। এ ধরনের বিচিত্র ঘটনা জীবনে অহরহ ঘটে চলেছে। তাই ক্ষুদ্র আমিত্বের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে বৃহৎ জগৎ-সংসারের নিরন্ন, নিরক্ষর, স্বাস্থ্যহীন কোটি কোটি মানুষের কল্যাণের কথা সকলেরই ভাবা উচিত। তবেই যেমন জীবনে স্বাদ উপভােগ করা যাবে, তেমনি দেশ ও জাতির উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণ সাধিত হবে । পৃথিবীতে অনেক মহামানব, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি মানুষের হৃদয়াসনে স্থান পেয়েছেন পরার্থে নিজ স্বার্থ উৎসর্গ করার জন্যে, আপন সত্তাকে জগতে মানবসত্তার সঙ্গে একসূত্রে গাঁথার কারণে। তারা মানবকল্যাণের জন্যে, সমাজের মঙ্গলের জন্যে দুঃখকে বরণ করে সভ্যতার ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন। এরাই প্রকৃত মানবজীবনের অধিকারী। জগতে তাঁদের মৃত্যু নেই, বিনাশ নেই।

কেবল ব্যক্তিগত পার্থিব ভােগ, বাসনার মধ্যে মানবিক মূল্যবােধের কোনাে পরিচয় মেলে না। ক্ষুদ্র ভােগসুখ বা স্বার্থমগ্নতার মধ্যে পরিভােগর উল্লাস আছে, কিন্তু প্রকৃত সুখ নেই। প্রকৃত সুখ তখনই লাভ করা যায় যখন নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে। মানুষ বৃহৎ জগৎ সংসারের জন্যে নিজেকে নিবেদিত করে ।

একই ভাবসম্প্রসারণের ভিন্ন প্রতিলিপন

মূলভাব : স্বীয় স্বার্থের গণ্ডিতে মানুষের জীবন হয়ে পড়ে নিষ্ফল। পক্ষান্তরে বৃহত্তর স্বার্থে আত্মনিয়ােগ করতে পারলে জীবন হয় সার্থক ও সফল।

সম্প্রসারিত ভাব : এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মানে কেবল শারীরিক অস্তিত্ব রক্ষা করা নয়। টিকে থাকা আর বাঁচারমধ্যে যােজন যােজন পার্থক্য রয়েছে। তেলাপােকা সৃষ্টির আদিকাল থেকে কোনাে ধরনের বিবর্তন ছাড়াই টিকে আছে।কূপমণ্ডুক নিরাপদে টিকে থাকে দিনের পর দিন। কিন্তু এদের এই টিকে থাকায় কোনাে সার্থকতা নেই। বরং মুক্ত আকাশে স্বাধীন প্রজাপতির রঙিন পাখা মেলে যে উড়াউড়ি, তা শুধু টিকে থাকাই নয়, বেঁচে থাকা – সার্থকতার সাথে বেঁচে থাকা।তার জীবন হয়তাে অত্যল্পকালের। কিন্তু বিশ্বের আর সকল কিছুর সাথে নিজেকে সার্থকভাবে মিলিয়ে নিয়ে সেই স্বল্পায়ু জীবনকেও সে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। একইভাবে মানুষের যথার্থ মনুষ্যত্বও ফুটে ওঠে নিজেকে সবার সাথে মিলিয়ে নেওয়ারমধ্যে, সবার মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যে। কারণ জগতের নিয়মই হচ্ছে Live and let live. অর্থাৎ, দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে। বস্তুত এই বােধই মানুষের সমাজ বন্ধনের মূলসূত্র। স্বার্থলােলুপতা ও আত্মসুখপরায়ণতা মনুষ্যত্বের পরিপন্থী। জীবনে পরম সার্থকতা লাভের জন্য নিজের সুখ বা দুঃখকে মিথ্যা বলে বিবেচনা করতে হবে। স্বার্থপর ব্যক্তি বৃহত্তর জীবনাঙ্গন থেকে স্বেচ্ছানির্বাসিত। পৃথিবীর ভালাে-মন্দ, সুখ-দুঃখ, মঙ্গল-অমঙ্গল তার হৃদয় মন স্পর্শ করে না।তারা আপনাকে নিয়েই বিব্রত থাকে। মানব ধর্মের অবমাননাকারী এসব ব্যক্তি পৃথিবীর জঞ্জাল। তাদের বাঁচা মরা সমার্থক। কিন্তু যারা সত্যিকারের মানুষ তাঁরা স্বার্থের কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে আচ্ছন্ন করে রাখেন না।

মন্তব্য : জীবন মানে বাইরের জগতের সাথে ভাব বিনিময়। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে মানব জীবন। সার্থকতায় প্রােজ্জ্বল হয়ে ওঠে। নিজের দুঃখকে তুচ্ছ মনে করে অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করতে পারলেই জীবনসুখময় ও আনন্দময় হয়ে উঠবে। কবির ভাষায় বলা যায়,

“সবারে বাসলে ভালাে।নইলে মনের কালি ঘুচবে নারে।”

4.2/5 - (26 votes)

You may also like

Leave a Comment