Home রচনা মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা (৬০০ শব্দ)

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা (৬০০ শব্দ)

by Curiosityn
0 comment

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনার সংকেত(Hints)

  • ভূমিকা
  • বিভিন্ন ধর্মে মাতাপিতার অবস্থান
  • মাতাপিতার ভূমিকা
  • মাতাপিতার প্রতি করণীয়
  • মাতাপিতার সন্তুষ্টিতে করণীয়
  • মাতাপিতার বার্ধক্যে করণীয়
  • উপসংহার

মাতাপিতার প্রতি কর্তব্য রচনা

ভূমিকা:

প্রত্যেক মানুষেরই জীন ও অস্তিত্ব মাতাপিতার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। এ পৃথিবীতে কোনােভাবেই কোনাে সন্তান বাবা-মায়ের ঋণ শােধ করতে পারে না। সন্তানের কাছে মাতাপিতার আসন সবার ওপরে। জন্মের পর থেকে সন্তান লালিত পালিত হয় মাতাপিতার সাহচর্যে, নিবিড় স্নেহচ্ছায়ায়। সন্তানের আচরণ, শিক্ষা- এককথায় জীবন গড়ে ওঠে মাতাপিতার প্রভাবে । তাই সকল সন্তানের উচিত তাদের অপার স্নেহের প্রতিদান দেওয়া।

বিভিন্ন ধর্মে মাতাপিতার অবস্থান:

প্রত্যেক ধর্মেই মাতাপিতাকে সম্মানজনক স্থান দিয়ে তাদের সামাজিক মর্যাদার আসনটিকে গৌরবান্বিত করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত’ ঘােষিত হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে মাতাপিতার সন্তুষ্টি ব্যতীত সন্তানের জান্নাতপ্রাপ্তি অনিশ্চিত। হিন্দু বর্ণিত আছে’ ‘জননী স্বর্ণ অপেক্ষা গরীয়সী। পিতা স্বর্গ পিতা ধর্ম; পিতাই পরম তপস্যার ব্যক্তি। পিতাকে সন্তুষ্ট করলে সকল দেবতা সন্তুষ্ট হন। খ্রিষ্টধর্মেও এরূপ কথা বলা হয়েছে। সর্বোপরি ধর্ম মাতাপিতাকে তাদের যােগ্য অবস্থানের স্বীকৃতি দিয়েছে। কোনাে ধর্মই মাতাপিতার উচ্চ আসনকে খর্ব করেনি।

মাতাপিতার ভূমিকা:

পৃথিবীর আলােতে সন্তানের দিনযাপন শুরু হবার আগেই মাতৃগর্ভে সন্তানের জন্ম ও বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। বেঁচে থাকার জন্যে অনিবার্য খাদ্যটুকুও মায়ের সহযােগিতা ছাড়া গ্রহণ করতে পারে না। মাতাপিতার যুগল প্রচেষ্টা এবং সেবায় বড় হতে থাকে শিশু। সন্তানের পড়াশুনা নিশ্চিত করা, ভরণপােষণ, স্বাস্থ্যের প্রতি মনােযােগ ইত্যাদি বিষয়ে যত্নশীল। তত্ত্বাবধানের পর যতক্ষণ না সন্তান স্বাবলম্বী বা আত্মনির্ভরশীল হবে; সে পর্যন্ত মাতাপিতার কোনাে স্বস্তি নেই। মােটকথা। জীবনের সুদীর্ঘ সময় সন্তানের প্রতি মাতাপিতা থাকেন নির্ভরশীল সহায়ক শক্তি, যে শক্তির ওপর সন্তান রচনা করে তার অনাগত দিনের ভিত্তি। তাই স্তানের প্রতি মাতাপিতার এ অবদানকে বড় করে দেখাই স্বাভাবিক।

মাতাপিতার প্রতি করণীয়:

মাতাপিতা পরম স্নেহে সন্তানকে লালন করলেও সন্তানের প্রতি এমন কোনাে দাবি প্রকাশ করে না। প্রতিদান হিসেবে সন্তানের নিকট মাতাপিতা মােটা অঙ্কের অর্থ কিংবা অন্য কোনাে বিনিময় প্রত্যাশা করেন না। তবুও মাতাপিতার প্রতি সন্তানের রয়েছে অনেক করণীয়। মাতাপিতাকে সম্পূর্ণ আন্তরিক শ্রদ্ধার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তাদের অসুস্থতায় সর্বাগ্রে সন্তানকে এগিয়ে আসতে হবে, তাদের উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে । মাতাপিতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা সন্তানকে বুঝতে দিতে চান না, সে ক্ষেত্রে সন্তানের উচিত নিজে উদ্যোগী হয়ে মাতাপিতার প্রতি উদার ব্যবহার করা । পিতা যদি উপার্জনে অক্ষমও হন সন্তানের উচিত নয় পিতাকে সহযােগিতা না করা এমনকি মাতাপিতার ভুল কাজেও সন্তানের কঠোর আচরণ করা সংগত নয় । মাতাপিতার সাথে পরম আত্মীয়সুলভ আন্তরিক আচার ব্যবহার করতে হবে যাতে পারিবারিক জীবন হয়ে ওঠে আনন্দমুখর।

মাতাপিতার সন্তুষ্টিতে করণীয়:

যুগে যুগে যে সকল মহামানবদেরকে জগতের শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়ে থাকে তাদের জীবন আলােচনা করলে দেখা যায়, তারা ছিলেন মাতাপিতার প্রতি অসীম শ্রদ্ধাশীল । তারা মনে করতেন মাকে অশ্রদ্ধা করলে মাটি অপবিত্র হয় এবং পিতাকে অন্তুষ্ট করলে সৃষ্টিকে অস্বীকার করা হয়। মাতার সন্তুষ্টির জন্যে বালক বায়েজিদ বােস্তামি নিদ্রাহীন রাত পার করেছিলেন। মা খুশি হয়ে স্রষ্টার কাছে আশীর্বাদ কামনা করলেন। পরবর্তীতে বায়েজিদ আল্লাহর প্রিয় মানুষে পরিণত হলেন। মায়ের সন্তুষ্টি বালক বায়েজিদের জীবনে যে উন্নতি বয়ে এনেছিল তা ছিল পৃথিবীবাসীর জন্যে একটি বড় উদাহরণ । পক্ষান্তরে, মাতাপিতার অসন্তুষ্টি সন্তানের জন্যে অমঙ্গলেরও কারণ। ধর্মে আছে মাতাপিতা যদি সন্তানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে স্রষ্টা নিজেও তাঁর বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তাই সকলের উচিত মাতাপিতার প্রতি যত্নবান হওয়া যাতে তারা সন্তুষ্ট থাকেন।

মাতাপিতার বার্ধক্যে করণীয়:

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সকল মানুষকেই বর্ধক্যে উপনীত হতে হয় বার্ধক্যকে ব্যাধিও বলা হয়ে থাকে বার্ধক্য মানুষের স্বাভাবিক কর্মতৎপরতাকে থামিয়ে দেয়। এক সময়ের বলবান মানুষটিই বার্ধক্যের সিঁড়িতে এসে বলহীন হয়ে পড়ে। শারীরিক সামর্থ্য হারিয়ে উপার্জন করা তার পক্ষে আর সম্ভব হয় না। ফলে অনেক সন্তানকেই দেখা যায় মাতাপিতাকে পরিবারের জন্যে বােঝা মনে করে এবং তাদেরকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে । সন্তান উপার্জনক্ষম অথচ তার বৃদ্ধ মাতাপিতা বৃদ্ধাশ্রমে এ অবস্থা কোনাে সন্তান বা পরিবারের জন্যে আনন্দদায়ক সংবাদ নয়। বৃদ্ধ মাতাপিতাকে সন্তানের সাধ্যমতাে সেবা করা উচিত । মাতাপিতার সুচিকিৎসা এবং প্রয়ােজনীয় সেবাদান সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব।

উপসংহার:

মাতাপিতা সন্তানের জন্যে শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ। মাতাপিতার সতর্ক পৃষ্ঠপােষকতার ফলেই সন্তান উচ্চতর জীবনের সন্ধান লাভ করে। মাতাপিতা ও সন্তানের বন্ধন পৃথিবীতে পরম ভালােবাসার বন্ধন। মাতাপিতার প্রতি উপযুক্ত কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে সে বন্ধন আরও সুদৃঢ় হতে পারে।

4.2/5 - (10 votes)

You may also like

Leave a Comment