Home রচনা চিড়িয়াখানায় একদিন রচনা (৭৫০ শব্দ) | JSC, SSC |

চিড়িয়াখানায় একদিন রচনা (৭৫০ শব্দ) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

চিড়িয়াখানায় একদিন রচনা লিখন

চিড়িয়াখানায় বেড়ানাের ব্যাপারটা আমার একটুও ভালাে লাগে না। সারি সারি খাচায় বনের মুক্ত পশু-পাখিকে আটকে রাখা আমার কাছে একরকম অমানবিক মনে হয়। তাই বড় হয়ে ওমুখাে হইনি কখনাে কিন্তু ছেলেবেলায় বেশ ভালােই লাগত আবার মায়াও হতাে। খাঁচার মধ্যে আটকে থাকা জীবজন্তুগুলােকে মনে হতাে খুব অসহায়। ছেলেবেলার দু-একবার ঢাকা চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছি। সে রকম একটি দিনের কথা মাঝে মাঝে আমার মনে পড়ে ।

আমি তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি । বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ তাই খেলাধুলা, বেড়ানাে, হৈচৈ আর গল্পের বই পড়া ! সেই ছুটিতেই আমার ছােট ফুপু আর ফুপা তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে অনন্ত আর তিতিরকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এলেন। অনন্ত আমার ছােট তাই দিগন্তের বয়সি আর আমি-তিতির – আমাদের গলায় গলায় ভাব । বাবা বললেন, তােমরা কোথায় কোথায় বেড়াতে যেতে চাও তার একটি তালিকা তৈরি করাে । অনন্ত সাথে সাথে বলে উঠল, মামা, চিড়িয়াখানায় যাব । পরদিন ছিল শুক্রবার। সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল চিড়িয়াখানায় যাবার । মামার বাড়ির আবদার বলে কথা।

ডিসেম্বর মাসের শীতের সকাল । খুব ভােরে আমার ঘুম ভেঙে গেল। ওদের ডেকে তুললাম। বড়রা ঘুম থেকে ওঠার আগেই আমরা হাতমুখ ধুয়ে জামা-কাপড় পাল্টে তৈরি হই। মা সবাইকে নাশতা দিলেন। আমাদের বাসায় কাজ করত একটা মেয়ে। ওর নাম ছিল রহিমা। রহিমাকেও আমরা সঙ্গে নিলাম। সকাল সােয়া আটটার দিকে ছােট একটা মাইক্রোতে চড়ে আমরা চিড়িয়াখানার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ঢাকা চিড়িয়াখানাটা মিরপুরে। আমাদের বাসা থেকে গাড়িতে ত্রিশ মিনিটের পথ। রাস্তায় একটা দোকানে দাড়িয়ে মা আর ফুপু অনেক রকমের খাবার কিনে নিলেন। শুক্রবারের সকাল। ঢাকার রাস্তায় কোনাে যানজট ছিল না। ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই আমরা চিড়িয়াখানায় পৌছে গেলাম । বাবা আমাদের সবার জন্যে টিকিট কেটে নিলেন। চিড়িয়াখানায় প্রবেশ পথের দরজাটা কী যে ভালাে লেগেছিল। গােল দরজা
দিয়ে একজন-একজন করে ঘুরে ঘুরে ভেতরে ঢুকতে হয় । দরজা ঘােরে, মানুষও ঘােরে।

সরু ইটের রাস্তা। দু পাশে সবুজ গাছপালা। প্রথমেই বানরের খাচা । বিশাল খাঁচার ভেতর অসংখ্য বানর লাফালাফি করছে। কোনােটা পিচ্চি, কোনােটা মাঝারি, কোনােটা বুড়াে। একটা বুড়াে বানর একটা ছােট বানরের মাথা থেকে উকুন বের করছে আর খাচ্ছে। কেউ আবার এক হাতে গাছের ডাল ধরে ঝুলে আছে তাে আছেই । চিড়িয়াখানায় প্রচুর দর্শনার্থী। আমার মনে হলাে বানরের খাঁচার সামনেই ভিড় বেশি । কেউ ওদের বাদাম দিচ্ছে, কেউ কলা। আমি খুব ভয়ে ভয়ে খাঁচার ভেতরে একটা কলা বাড়িয়ে ধরলাম। অমনি পিচ্চি একটা বানর এসে কলটা নিল । আর তখনই ঘটল মজার কাণ্ডটা । সেই পিচ্চি বানর আমার লাল জামাটা ধরে টানাটানি শুরু করে দিল। আমি যতই চিৎকার করি বানর ততই আমার জামা ধরে টানে। বাবা দৌড়ে এসেকোনােরকমে আমাকে ছাড়ালেন! বানরের এ কাণ্ড দেখে আশপাশের সবাই বেশ এক চোট হেসে নিল! শুরুতে ভয় পেলেও বাবা আমাকে ছাড়িয়ে নেবার পর আমার নিজেরও হাসি পাচ্ছিল । তিতির বলল, তাের জামাটা বােধ হয় বানরটার খুব পছন্দ হয়েছে। কাল এসে দিয়ে যাস । অনন্ত আর দিগন্ত তাে এখনাে ওই ঘটনা নিয়ে আমাকে খেপায় ।

এরপর একে একে হরিণ, হাতি, জেব্রা, গরিলা, আর সজারুর খাচা পেরিয়ে এলাম খাচার সামনেই একটা করে সাইনবাের্ড ঝােলানাে রয়েছে। তাতে রয়েছে সেই প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম, খাদ্য তালিকা এবং প্রাণীটি সম্পর্কে নানা রকম তথ্য ! হঠাৎ একটা হিংস্র গর্জন ভেসে এলাে। ওটা ছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ডাক | বাঘের ডাক শুনেই রহিমা কাঁদতে শুরু করল। আমরা ওকে যতই বোঝাই, ওটা খাঁচার মধ্যে আটকানাে ততই সে কাদে। অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে ওকে নিয়ে আমরা গেলাম বাঘের খাঁচার সামনে। সেখানে অনেক মানুষের ভিড়। ভিড় খানিকটা হালকা হলে সামনাসামনি দেখলাম বাংলাদেশের জাতীয় পশুকে। বিশাল শরীর নিয়ে বসে আছে দুটো বাঘ । মাঝে মাঝে হাঁটাহাঁটিও করছে। ওদের হাঁটার ধরন দেখে আমার মনে হচ্ছিল, ওদের যেন কিছু একটা পাহারা দেবার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খুব মনােযােগ দিয়ে সেই দায়িত্বই পালন করে চলেছে দুজন।

বাঘের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা গেলাম সিংহের খাঁচার সামনে। কেশর ফুলিয়ে বসে রয়েছে সিংহরাজ। দেখে মনে হচ্ছিল জাতীয় চিন্তায় মগ্ন সে ।

কুমির যেখানে থাকে সেটা একটা বড় ডােবা। কুমিরের বেষ্টনীও ছিল বিশাল । দুটো কুমির ডােবার পানিতে অর্ধেক শরীর ডুবিয়ে রেখেছিল । এরপর অজগর, চিতাবাঘ, উটপাখিসহ রং-বেরঙের বিচিত্র সব পাখি দেখলাম। চিড়িয়াখানার বিশাল চত্বর ঘুরে দেখতে দেখতে আমাদের সবারই তখন খিদে পেয়ে গেছে। ঘন গাছপালায় ঘেরা ছায়া-ছায়া সবুজ চত্বরে বসে আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে নিলাম। এরপর গেলাম পশুপাখির জাদুঘর দেখতে। ঢুকেই তিমি মাছের বিশাল কঙ্কাল দেখে আমি ভয়।
পেয়ে গিয়েছিলাম । আরও কত কী যে সেখানে ছিল—– সাপের ডিম, উটপাখির বিশাল ডিম । ফুপা বললেন, উটপাখির ডিম নাকি এত শক্ত আর বড়, সেটার ওপর একজন মানুষ অনায়াসে দাড়িয়ে থাকতে পারে ।

সব ঘুরে, দেখে একসময় সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ল। এবার বাড়ি ফিরতে হবে। তিতির বলল, কিরে বানরটা তােকে এত ডাকাডাকি করল, তুই না হয় ওর সঙ্গে থেকেই যা। তিতিরের কথা শুনে সবার সে কী হাসি। আমি আর কী করব, আমিও দুঃখ দুঃখ মন নিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখলাম। ফেরার পথে ভাবছিলাম, খাঁচার ভেতরেই বানরগুলাে এত দুষ্টুমি করে, ছেড়ে দিলে না জানি কী করত। এরপর ওই লাল জামাটা পরলেই আমার সেই পিচ্চি বানরটার কথা মনে পড়ত।

2.2/5 - (4 votes)

You may also like

Leave a Comment