Sabbir8986 / December 29, 2020
Table of Contents
উত্তরঃ
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বইমেলা হলাে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ যা লেখক, প্রকাশক এবং পাঠকের মিলনমেলা হিসেবেও পরিচিত। প্রতিবছর পুরাে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই মেলা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে ও বর্ধমান হাউজ ঘিরে অনুষ্ঠিত হয়। তবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সীমিত জায়গায় মেলায় আগতদের কোণঠাসা অবস্থার নিরসনকল্পে বর্তমানে সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার পরিসর বাড়ানাে হয়েছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্যে আত্মােৎসর্গের যে করুণ ঘটনা ঘটে, সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতেই এই মাসে আয়ােজিত এই বইমেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ এই মেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতােই প্রাচীন। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে চিত্তরঞ্জন সাহা বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে একুশে বইমেলার গােড়াপত্তন করেন। ১৯৭৬ পর্যন্ত তিনি একাই এটি চালিয়ে যান। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। কালক্রমে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য বইমেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলা একাডেমি চত্বরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১৪ সাল থেকে বইমেলা সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পূর্বে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রন্থমেলা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতাে। তবে বর্তমানে পুরাে ফেব্রুয়ারি মাস এই বইমেলা চলে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় মেলা নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে । প্রকাশনীসমূহের স্টলগুলাে প্রকাশক এলাকা, প্রকাশক-বিক্রেতা এলাকা, শিল্পকর্নার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং লিটল ম্যাগাজিন ইত্যাদি এলাকায় বিভাজন করে স্থান দেওয়া হয়। মেলায় প্রবেশের জন্য কোনাে প্রবেশ মূল্য ধার্য করা হয় না । মেলা চলাকালীন প্রতিদিনই মেলাতে বিভিন্ন আলােচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর বসে; প্রতি সন্ধ্যায় থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মেলাতে লেখককুঞ্জ রয়েছে ফলে বইমেলা পরিণত হয় প্রকাশক-লেখক-পাঠকের মিলনমেলায়। এই মেলার ফলে অনেক লেখক তাদের বই প্রকাশের স্থান পান, তেমনি অনেক পাঠক বইমেলা থেকে তার কাঙ্ক্ষিত বইটি কেনার জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে। বর্তমানে অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বছরের কোনাে এক সময়ে একটি নির্দিষ্ট উপলক্ষে কোনাে স্থানে বইয়ের স্টল সাজিয়ে কিছু দিনের জন্য বই প্রদর্শন এবং বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হলে তাকে বইমেলা বলা হয়। আমাদের দেশে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে বইমেলার আয়ােজন করা হয়ে থাকে। এদের মধ্যে একুশের বইমেলা বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। বালা একাডেমি একুশে বইমেলা আয়ােজন করে থাকে। সার্বিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ১৯৮৫ সাল থেকে এই মেলার প্রচলন হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মৃতিকে বাঙালি জাতির মানসে চির জাগরূক করে রাখা এবং জনগণের মাঝে বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যই এই মেলার আয়ােজন। বর্তমানে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে এই মেলার পরিধি বৃদ্ধি পেয়ে পার্শ্ববর্তী সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিস্তৃত হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে অনুষ্ঠিত একুশের বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। সারা দেশ থেকে আসা লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে এই বইমেলা প্রাঙ্গণ। মেলার পরিচ্ছন্ন-সুন্দর, বর্ণোজ্জ্বল স্টলগুলাে সাজানাে থাকে। স্টলগুলােতে শােভা পায় নতুন পাতার গন্ধে মােড়ানাে নতুন নতুন বই। একুশের বইমেলায় প্রতিদিন কোনাে না কোনাে বইয়ের মােড়ক উন্মোচন করা হয়। নতুন বই প্রকাশ উপলক্ষে প্রতিদিনই আয়ােজন করা হয় বিভিন্ন সেমিনার, কবিতা পাঠের আসর, আলােচনা চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মেলাজুড়ে বিরাজ করে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। একুশের বইমেলায় মেলা চত্বরকে বিভিন্ন ভাষাশহিদ যেমন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ বিভিন্ন খ্যাতনামা কবি-সাহিত্যিকদের নামে ভাগ করা হয়। এই মেলায় শিশু কর্নার’ নামে শিশুদের জন্য আলাদা জায়গা রাখা হয়। সেখানে শিশুদের উপযােগী ছড়া, গল্প ও শিশুতােষ বই রাখা হয়। ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি জুড়ে চলে উৎসবমুখর এই মিলনমেলা। সারাদেশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ গভীর আগ্রহ নিয়ে বই কিনতে আসে এই মেলায়। মেলা শেষ হলেও দর্শক ও পাঠকের মন থেকে এ মেলার আমেজ সহজে কাটে না। তাই তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে, কখন তাদের মাঝে এ সময়টি আবারও ফিরে আসবে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা বা একুশের বইমেলা অনুচ্ছেদটি কেমন হয়েছে ? নতুন কিছু সংযোজন করা যায় বা বাদ দেওয়া প্রয়োজন? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
FILED UNDER : অনুচ্ছেদ