Faria Hasan / December 29, 2020
Table of Contents
যেসব সমস্যা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রগতিকে ব্যাহত করছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিরক্ষরতা। ইউনেস্কোর এক পরিসংখ্যানে প্রকাশ, বিশ্বে প্রায় একশ কোটি লােক নিরক্ষর। এদের অধিকাংশই উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশের বাসিন্দা। আধুনিক সমাজে নির হচ্ছে জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ। এ অভিশাপের ক্ষমতা এতই প্রখর যে, তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকেও স্থবির করে দেয়। আর শিক্ষা হলাে জ্ঞানের আলাে। এ আলাে ছাড়া কোনাে অর্থসামাজিক সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না, দেশ পৌছাতে পারে না তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণের ব্যাপারটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। আর এ লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে দেশের সরকার, শিক্ষিত সমাজ, বিশেষ করে দায়িত্বশীল ছাত্রদের।
বাংলাদেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ এখনাে নিরক্ষরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। এখানে শিক্ষিতের হার মাত্র ৭৩.৯ শতাংশ। শিক্ষার আলাে থেকে বঞিত এই জনগােষ্ঠী অজ্ঞানতা, কুসংস্কার আর পশ্চাৎপদতার স্বাধীন জাতির জন্যে মর্যাদাহানিকর তাে বটেই, এক বিশাল বােঝাও। এদের নিয়ে কোনাে উন্নয়ন পরিকল্পনা অলীক স্বপ্নমাত্র। সমাজ,
ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এ নিরক্ষরতা দূরীকরণে সবচেয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখতে পারে তরুণ ছাত্রসমাজ শিকার।এরা প্রগতিবিমুখ বিজ্ঞানের এচরম উৎকর্ষের যুগেও এরা অন্ধকারে নিমজ্জমান। পিছিয়ে পড়া এ বিশাল জনগােষ্ঠী তাই দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্যে দেশের জনগণকে শিক্ষিত করে তােলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের জনগােষ্ঠীই অতীতে কম-বেশি নিরক্ষর ছিল। আজকের উন্নত রাশিয়ায় বিপ্লবের আগে শতকরা আশিভাগ লােক ছিল নিরক্ষর । বর্তমানে সেদেশে শিক্ষিতের সংখ্যা শতকরা একশ ভাগ। অতীতে তুরস্ককে বলা হতাে ইউরােপের ‘রুগণ দেশ। কিন্তু তুরস্কের অগ্নিসন্তান কামাল পাশার নেতৃত্বে মাত্র বিশ বছরে তুরস্ক তার শিক্ষামান শতকরা আশি ভাগে উন্নীত করেছে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্যে স্বাক্ষরতার কোনাে বিকল্প নেই। শিক্ষিত জনগােষ্ঠীই নিজ ও দেশের উন্নয়নে সচেষ্ট হয়। সমাজের রীতি-নীতি মেনে চলে সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। ইতিহাস সাক্ষী, কালে-কালে যুগে-যুগে পৃথিবীর দেশে-দেশে যেকোনাে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে তরুণ ছাত্রসমাজ এগিয়ে এসেছে সবার আগে। দেশের স্বাধীনতা, অগ্রগতি আর কল্যাণ সাধনে যেকোনাে বাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে তারা ঝাপিয়ে পড়ে। ছাত্রসমাজই যেন মুক্তির অগ্রদূত। তাই নিরক্ষরতা দূরীকরণেও ছাত্রসমাজই জাতির আশ্রয়। তবে এর জন্যে চাই উপযুক্ত ও বাস্তব পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সরকারি পৃষ্ঠপােষকতা । এ প্রেক্ষাপটে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন: প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বয়স্ক শিক্ষাব্যবস্থার, গণশিক্ষার জন্যে গ্রামে খােলা হয়েছে গণশিক্ষা কেন্দ্র। এ ধরনের উদ্যোগ কার্যকর করতে হলে প্রয়ােজন নিরক্ষরদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং কর্মোদ্যোগ। আর এ দায়িত্ব নিতে পারে ছাত্রসমাজ। এক্ষেত্রে যেসব পরিকল্পনা নিয়ে এগােতে হবে
১. নিরক্ষরতার নেতিবাচক দিক সম্পর্কে নিরক্ষর জনগােষ্ঠীকে সঠিকভাবে অবহিত করতে হবে। গণমুখী প্রচারের মাধ্যমে তাদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে সচেতনতা। এ কাজে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকতে পারে ছাত্ররা।
২. বয়স্ক নিরক্ষরদের শিক্ষাদানের জন্যে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পাড়ায়-পাড়ায় নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে।
৩. এছাড়া প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলােকেও নৈশ বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে সরকার কিংবা সমাজ প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ নিলে ছাত্রসমাজ নিরক্ষরদের বিদ্যালয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে প্রয়ােজনীয় ভূমিকা পালন করতে পারবে।
যেসব এলাকায় শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, সেসব এলাকায় অস্থায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করে ছাত্ররা শিক্ষকের ভূমিকা পালন করতে পারে ।
৪. পরিবারে কোনাে সদস্য, এমনকি কাজে সহায়তাকারী কেউ যদি নিরক্ষর থেকে থাকে তবে অবসরে ছাত্ররা তাকে স্বাক্ষর করে তুলতে সহযােগিতা করতে পারে।
৫. পর্দানসীন নারীদের শিক্ষাদানের জন্যে ছাত্রীরা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
৬. সর্বোপরি দেশ থেকে নিরক্ষরতা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার জন্যে নির্দিষ্ট সময়সীমা সামনে রেখে প্রয়ােজনীয় সরকারি ও বেসরকরি পদক্ষেপ নিলে দেশ গঠনমূলক এ কাজে ছাত্রদের জন্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করা সহজ হবে।
শিক্ষিত ছাত্রসমাজ নিজ পরিবার থেকে শুরু করে সারাদেশে শিক্ষা বিস্তারে প্রয়ােজনীয় ভূমিকা পালন করতে পারে। শুধু নিজে শিক্ষিত হলে চলবে না, শিক্ষার মহান শিখা ছড়িয়ে দিতে হবে দেশের আনাচে-কানাচে– এ সচেতনতাবােধে উদ্বুদ্ধ হতে হবে ছাত্রদের শিক্ষিত কর্মজীবী-পেশাজীবী সকলের হাতেই রয়েছে জ্ঞানের প্রদীপ। কিন্তু ছাত্রসমাজ সচেতনভাবে এগিয়ে এলে দেশ নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
FILED UNDER : রচনা