Home রচনা চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা (৭০০ শব্দ) | JSC, SSC |

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান রচনা (৭০০ শব্দ) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান
বা চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান রচনার সংকেত (Hints)

  • ভূমিকা
  • রােগ নিরূপণে চিকিৎসা বিজ্ঞান
  • রােগ নিরাময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান
  • উপসংহার

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান অবদান রচনা

ভূমিকা:

আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের অব্যাহত অগ্রগতি ও জয়যাত্রার যুগ। এ জয়যাত্রায় চিকিৎসাক্ষেত্র পেয়েছে অভাবনীয় সাফল্য। একুশ শতকে রােগ নিরূপণ ও নিরাময়ে অর্থাৎ চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্য বিস্ময়কর। বিভিন্ন ধরনের রােগের চিকিৎসায় নিত্যনতুন ওষুধ আবিষ্কারের ফলে বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে মানুষের কর্মক্ষমতা । অথচ সুপ্রাচীনকালে মানুষ রােগব্যাধিকে স্রষ্টার অভিশাপ ও অশুভ আত্মার কুপ্রভাব বলে মনে করত। চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্যে মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্নতা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। বিজ্ঞান মানুষকে করেছে আধুনিক মনস্ক।

রােগ নিরূপণে চিকিৎসা বিজ্ঞান:

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক সাফল্য এসেছে বিশ ও একুশ শতকে। সঠিকভাবে রােগ নিরূপণ, এমনকি জন্মপূর্ব রােগ নির্ণয়েও ঘটেছে বড় ধরনের উত্তরণ। রােগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের রক্তে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপাদান। এর সঠিক ও নিয়ন্ত্রিত মাত্রা শরীরের সুস্থতার লক্ষণ । কিন্তু শরীর অসুস্থ হলে রক্তের উপাদানের মাত্রায় হেরফের ঘটে। রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। আর এর মাধ্যমেই রােগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়। রক্তের সঙ্গে নানারকম রাসায়নিক যৌগ মিশিয়ে গবেষণাগারে এসব পরীক্ষা বিজ্ঞানেরই অবদান। রক্তের মতাে ক্ষেত্রবিশেষে মলমূত্রও পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এইসব পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। যেমন— গ্লুকোমিটার যন্ত্রের মাধ্যমে মূত্র পরীক্ষা করে ঘরে বসেই ডায়াবেটিক রােগীর শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয়
করা যায়।

স্কিনমােম্যানােমিটার রক্তচাপ মাপার যন্ত্র। এর মাধ্যমে পালসবিট নির্ণয় করে বেরিয়ে যায় রক্তচাপের পরিমাপ। এক্সরে, আলট্রাসনােগ্রাফি, এন্ডােস্কোপি ইত্যাদির মাধ্যমে মানবদেহের অভ্যন্তরস্থ হাড়, ফুসফুস, বৃহদন্ত্র, পাকস্থলী, উদর, ক্ষুদ্রান্ত্র, শিরা, ধমনী ইত্যাদির অবস্থা অবলােকন করে নির্ভুলভাবে রােগ নির্ণয় করা যায়। ফাইবার অপটিক সংবলিত বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে ক্যান্সার নির্ণয়ও আজ আর জটিল কিছু নয়। সিটিস্ক্যান ও এম আর আই-এর মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় মস্তিষ্কের যেকোনাে ধরনের রােগ— ব্রেইন টিউমার থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নানা সমস্যা। ইসিজি ও ইকো মেশিনের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে হৃদযন্ত্রের সমস্যা। হৃদযন্ত্রের রক্তনালীর রােগ নির্ণয় করা যায় এনজিওগ্রাম করে।

চোখের নানাবিধ সমস্যা যেমন- দূরের বা কাছের দৃষ্টিশক্তিজনিত রােগ নির্ণয়েও রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান। আবিস্কৃত হয়েছে বিশেষ বিশেষ যন্ত্র, যার মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় চোখের সঠিক পাওয়ার, নির্ণয় করা যায় চোখের বিভিন্ন রকমের রােগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে লেজার রশ্মি ও কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে রােগ নির্ণয় হচ্ছে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে।

রােগ নিরাময়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান:

যক্ষ্মা, পােলিও, টিটেনাস, হাম, ডিপথেরিয়া ও হুপিংকাশিসহ বিভিন্ন মারাত্মক রােগ থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য টিকা আবিষ্কার বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর সাফল্য। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ভাইরাস দ্বারা এসব রােগ সৃষ্টি হচ্ছে সেসব ভাইরাস দিয়েই তৈরি হচ্ছে সেসব রােগের প্রতিরােধক টিকা। রােগবীজনাশক রাসায়নিক পেনিসিলিন বিভিন্ন ধরনের রােগবীজ ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে । পেনিসিলিনের আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

ভাঙা হাড় জোড়া লাগানাে, কৃত্রিম অঙ্গ সংযােজন, অস্থিমজ্জা, হৃদপিণ্ড, বৃক্ক, যকৃৎ, এমনকি ফুসফুসের মতাে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হচ্ছে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে । প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে শরীরের বাহ্যিক পরিবর্তনও সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে। ওপেন হার্ট সার্জারি, হার্টের বাইপাস সার্জারি, পেসমেকার স্থাপন করে কৃত্রিমভাবে হৃদ্যন্ত্র সচল রাখা— সবই চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান। আলােক চন্দ্র বা অপটিক ফাইবার সংবলিত বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে ছােট টিউমার অপসারণ এবং রক্তবাহী নালিকা মেরামত করা যায় । মূত্রথলি ও পিত্তকোষের পাথর কাটাছেড়া ছাড়াই লেজার রশ্মি ও অতিকম্পনশীল শব্দের মাধ্যমে চর্ণ করা যায়। চোখ ও দাঁতের চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে লেজার রশ্মি । লেজার রশ্মির মাধ্যমে চোখের ছানি অপারেশন এখন স্বাভাবিক ঘটনা। কসমেটিক লেন্স আবিষ্কার, এখন চশমা ব্যবহারের বাড়তি ঝক্কি থেকেও মানুষকে রেহাই দিয়েছে। রুট ক্যানেলের মাধ্যমে প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়া দাঁতকে স্বাভাবিক করে তােলা, কৃত্রিম দাঁত মানুষকে দিচ্ছে স্বস্তি।

ক্যান্সার এখন আর দুরারােগ্য ব্যাধি নয় । চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে এ রােগে আক্রান্তদের সুস্থ হওয়ার হার বাড়ছে। ‘কেমাে থেরাপি’, ‘রেডিও থেরাপি’, ‘মেপ থেরাপি’ প্রভৃতি চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষকে নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে। সন্তানহীন মায়ের কোলে ছোট্ট শিশুর হাসি দেখিয়েছে বিজ্ঞান। ক্লোন বেবি’, ‘টেস্ট টিউব বেবি’ নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আরেকটি বিস্ময় জীবনরক্ষাকারী যন্ত্র ভেন্টিলেটর । ভেন্টিলেটরের সাহায্যে মুমূর্ষ রােগীকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেয়া হয়। কৃত্রিমভাবে হৃদযন্ত্র পাম্প করে হৃদস্পন্দন চালু রাখা হয়। ফলে কখনাে কখনাে প্রায় মৃত অর্থাৎ ‘কোমা পরিস্থিতি থেকে মানুষ জীবন ফিরে পায়।

শুধু যন্ত্রপাতি আর অস্ত্রোপচার নয়, রােগ নিরাময়ে ওষুধ আবিষ্কারও বিজ্ঞানের গবেষণারই ফল। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপের পাশাপাশি নাপােজিটারি, ইনজেকশন, ইনহেলার, নেবুলাইজার ইত্যাদি বিজ্ঞানেরই গবেষণার ফল । ওষুধে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, মেয়াদ, নিয়ন্ত্রিত মাত্রা, ব্যবহারবিধি ইত্যাদি নির্দেশাবলি থাকে।

উপসংহার:

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের এ ধরনের অবদান মানুষের জীবনকে করেছে আনন্দময়, কর্মক্ষম । চিকিৎসায় বিজ্ঞানের নানা ধরনের আবিষ্কারের আগে কলেরা, বসন্ত, যক্ষ্মাসহ নানারকম রােগে অকালে অনেক মানুষ মারা যেত। উজাড় হয়ে যেত গ্রামের পর গ্রাম । আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের কল্যাণক্রমে শুধু এগুলােই নয়, জটিল অনেক ব্যাধি জয় করেছে মানুষ। আর এসবের পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানীদের নিরলস সাধনা ও গবেষণা।

আরো পড়ুনঃ মানবকল্যাণে বিজ্ঞান রচনা

Rate this post

You may also like

Leave a Comment