Home রচনা ফুটবল রচনা (770 words) | JSC, SSC |

ফুটবল রচনা (770 words) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

ফুটবল রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • ফুটবলের উৎপত্তি ও বিকাশ
  • ফুটবলের রীতিনীতি
  • বিশ্বকাপ ফুটবল
  • বাংলাদেশে ফুটবল
  • উপসংহার

ফুটবল রচনা

ভূমিকা:

রাস্তার ধারে ছােট্ট খােলামতন জায়গা কিংবা খােলা মাঠে ফুটবল খেলছে দামাল কিশাের দল। হঠাৎ মাঠ ছাড়িয়ে ফুটবলটি এসে পড়ল চলার পথে। পথিকের মনে সুপ্ত ইচ্ছা জাগবেই তাতে একটা ছােট্ট শট করার। আর যখন একাল পেশাদার খেলােয়াড় এ ফুটবল বিশাল মাঠে জালে জড়ানাের চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে তখন তা হয়ে ওঠে এক অনন্য আনন্দ আর
উত্তেজনাময় খেলা।

ফুটবলের উৎপত্তি ও বিকাশ:

ফুটবলের জন্মভূমি নিয়ে কিছুটা মতভেদ রয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে চীনে এ খেলা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়। তবে সে সময় এটি ছিল দু দলের মধ্যে নিয়মনীতিহীন, কিছুটা উদ্ধৃঙ্খলাপূর্ণ, আঘাত-প্রতিঘাতময় খেলা। নির্দিষ্ট নিয়মবদ্ধ ফুটবল খেলা প্রবর্তিত হয় গ্রিসে। আবার কোনাে কোনাে বিশ্লেষক রােম, কেউ ইংল্যান্ডে ফুটবলের উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করেন। তবে ফুটবলে বর্তমান বিশ্বে দক্ষিণ আমেরিকা আর ইউরােপের দেশগুলাের দাপটই বেশি। বিশ্বে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ে উনিশ শতকের শুরুতে। এর আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়ার লক্ষ্যে ১৯০৪ সালের ২১-এ মে ফ্রান্সের প্যারিসে ইউরােপের ৭টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এক বৈঠকে আধুনিক ফুটবলের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দ্য ফুটবল অ্যাসােসিয়েশন’ বা ফিফা (FIFA) গঠিত হয়। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন জুলে রিমে। ফিফার বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযােগিতা অনুষ্ঠানের। পরবর্তীকালে অলিম্পিকে এবং এশিয়ান গেমসেও অন্তর্ভুক্ত হয় ফুটবল।

ফুটবলের রীতিনীতি:

ফুটবল সীমিত সময়ের দ্রুত চলমান উত্তেজনাপূর্ণ একটি খেলা । এছাড়া নিয়ম-কানুন বেশ সহজ ঘরানার বলে দারুণ উপভােগ্য এবং নিঃসন্দেহে অত্যন্ত জনপ্রিয় । ফুটবল মাঠ আয়তাকার, দৈর্ঘ্যে ১০০-১২০ গজ এবং প্রস্থে ৫০-৫৬ গজ হয়ে থাকে। একটি আদর্শ ফুটবলের পরিধি ২৭-২৮ ইঞ্চি এবং ওজন ১৪-১৬ আউন্স । একটি আন্তর্জাতিক মানের ফুটবল ম্যাচের সময়সীমা ১০ মিনিট। প্রথম ৪৫ মিনিট খেলার পর ২০ মিনিটের বিরতি দিয়ে আবার ৪৫ মিনিট খেলা হয়। খেলা চলাকালীন খেলােয়াড় আহত হলে কিংবা অন্য কোনাে কারণে খেলা বন্ধ থাকলে সে সময়টুকু অতিরিক্ত সময় হিসেবে মূল খেলার সাথে যুক্ত হয়। খেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন একজন রেফারি, দু জন লাইনম্যান এবং একজন চতুর্থ রেফারি ম্যাচ চলাকালীন প্রতিপক্ষের খেলােয়াড়কে ফাউল করা বা আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে রেফারি যেকোনাে খেলােয়াড়কে সতর্ক করা, হলুদ কার্ড দেখানাে, এমনকি সরাসরি লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দিতে পারেন। একটি ফুটবল দলে ১ জন গােলকিপারসহ মােট ১১ জন মূল খেলােয়াড় এবং ৩ জন অতিরিক্ত খেলােয়াড় থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ক্ষেত্রে খেলা অমীমাংসিতভাবে শেষ হলে টাইব্রেকারের
মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারিত হয়।

বিশ্বকাপ ফুটবল:

প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে। এতে আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, বলিভিয়া, উরুগুয়েসহ মােট ১৩টি দল অংশ নেয় । চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিক উরুগুয়ে। এরপর থেকে প্রতি ৪ বছর পর পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসে বিশ্বকাপের জমজমাট আসর। মাঝখানে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের দুটি আসর অনুষ্ঠিত হয়নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলে ফ্রান্স চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত হবে ২২তম ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা।

ইউরােপীয় ফুটবল:

সময়ের সাথে সাথে দ্রুত ফুটবল ছড়িয়ে পড়েছে গােটা বিশ্বে। এর মধ্যে ইউরােপে অনুষ্ঠিত হয় নানা ধরনের টুর্নামেন্ট। যেমন— ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, স্প্যানিশ লিগ, ইউরাে চ্যাম্পিয়নশিপ, উয়েফা ইত্যাদি। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে বিশাল বাজার ও শিল্প। ইউরােপের গতিময় ফুটবল আর লাতিন আমেরিকার শৈল্পিক ফুটবল— দুয়ের দ্বৈরথ উন্মাদনা ভরিয়ে রাখে ফুটবলপ্রেমীদের।

বাংলাদেশে ফুটবল:

অবিভক্ত ভারতে ফুটবল খেলা চালু করে ইংরেজরা । ব্রিটিশ খেলােয়াড় ও সৈন্যদলের সুশৃঙ্খল ও ছন্দময় ফুটবল সহজেই ক্রীড়ামােদীদের এ খেলার প্রতি আকৃষ্ট করে বাঙালিদের মধ্যে ফুটবল খেলার উদ্দীপনা দেখা দেয় ১৮৯৩ সাল থেকে। এ সময় ঢাকা ও কলকাতার বাঙালিদের মধ্যে বেশ কটি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা যায় । ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ফুটবলের প্রসার ও উন্নয়নের জন্য গঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বা বাফুফে। বাফুফের তত্ত্বাবধানে একে একে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা ফুটবল লীগ, জাতীয় ফুটবল, জাতীয় যুব ফুটবল, ফেডারেশন কাপ ফুটবল, প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল লীগ, ডামা কাপসহ বেশ কিছু টুর্নামেন্ট। এছাড়া প্রতিবছরই জেলা ও থানা পর্যায়ে প্রতিযােগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উল্লেখযােগ্য ফুটবল সংগঠনগুলাের মধ্যে রয়েছে আবাহনী ক্রীড়াচক্র, মােহামেডান স্পােটিং ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মুক্তিযােদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র প্রভৃতি। বাংলাদেশের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে নানা কারণে বাংলাদেশের ফুটবল চর্চা ও এর উন্নয়ন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় পেশাদার ফুটবল লীগসহ বয়সভিত্তিক ফুটবল খেলা । দেশের ফুটবল ক্লাবগুলাে ধীরে ধীরে তাদের আর্থিক সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। কমে যেতে থাকে ফুটবলের মান। তবে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ফুটবলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। আবার চালু হয়েছে পেশাদার ফুটবল লীগ। প্রয়ােজনীয় পৃষ্ঠপােষকতা, চর্চা ও বিভিন্ন ধরনের প্রতিযােগিতা অব্যাহত থাকলে এদেশের ফুটবল ক্রীড়া ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী ক্রীড়া বিশ্লেষক ও ফুটবলপ্রেমীরা।

উপসংহার:

ফুটবল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি খেলা। এ খেলা অতিক্রম করেছে ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতার বাধাকে । ফুটবলের মাঠে ভিন্ন ভিন্ন দেশের, সংস্কৃতির, ভাষাভাষীর মানুষের এ অপূর্ব মেলবন্ধনই ফুটবলকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলতে পারে।

3.1/5 - (8 votes)

You may also like

Leave a Comment