Home রচনা বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি রচনা (৮৫০ শব্দ) | JSC, SSC |

বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি রচনা (৮৫০ শব্দ) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি রচনা লিখন

জীবনের পট পরিবর্তনের ধারায় মানুষ চিরকালই পুরাতনকে পেছনে ফেলে নতুন পথের যাত্রী। কিন্তু ফেলে আসা অতীতের অনেক ঘটনা স্মৃতির পাতায় স্থান নেয় অম্লান ঔজ্জ্বল্য নিয়ে । সে স্মৃতিময় ঘটনা কখনাে আনন্দের, আবার কখনাে বেদনার। বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি আমার মনে বেদনাময় আবেদনে স্থান করে নিয়েছে। এ বেদনা ভাষায় অপ্রকাশ্য। কবির ভাষায়-

বেদনা কী ভাষায় রে
মর্মে মর্মরি গুঞ্জরি বাজে।

এসএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে মাত্র। তাই বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার সমাপ্তিও ঘটেছে। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠছে অনেক স্মৃতি। কৈশােরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অধ্যায় হলাে স্কুলজীবন । পরীক্ষা পরবর্তী এ সময়ে যে স্মৃতিগুলাে আমার মনে আনন্দ-হিল্লোল জাগাচ্ছে তার অধিকাংশই স্কুলজীবনের স্মৃতি। আর বারবার মনে পড়ছে সে দিনটার কথা যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে । সেদিনের অনুভূতি এখনাে আমাকে বেদনাভারাক্রান্ত করে তােলে। মনে হয়,কী এক অমূল্য সময় যেন আমি ফেলে এসেছি, কী যেন হারিয়ে গেছে।

জীবনের দিনগুলাে নদীর প্রবাহের মতােই সম্মুখে প্রবহমান। এ প্রবহমান জীবনে জন্মের পর থেকেই মানুষ নিজেকে গড়ে তােলার প্রচেষ্টায় অগ্রসরমান। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে সে শিশু থেকে হয় পরিণত মানুষ, তারপর পূর্ণাঙ্গ মানুষ। নিজেকে বিকশিত করার এ ধারায় একদিন ভয় কম্পিত হৃদয়ে বাবার হাত ধরে গিয়েছি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হাতে ছিল ‘আদর্শ লিপি’, ‘বৃহৎ ধারাপাত’ আর চক-স্লেট। তারপর ভবিষ্যতের হাতছানিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হলাম সীতাকুণ্ড গার্লস হাই স্কুল এন্ড কলেজে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম যাত্রার দিন স্মৃতিতে স্পষ্ট হলেও ছেড়ে আসার দিন আমার শিশুমনে খুব প্রভাব ফেলেনি। বরং নতুন স্কুলে যাওয়ার স্বপ্নই বেশি প্রভাবিত করেছিল ।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর নতুন স্কুলের বৃহত্তর পরিবেশ আমাকে নতুন জীবনের সন্ধান দিল নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ আমার চোখে এঁকে দিল স্বপ্ন কাজল। শিক্ষকদের ভালােবাসা, বন্ধুদের সাহচর্য আর চঞল চিত্ত নিয়ে দিনগুলাে যেন দ্রুতগামী ঘােড়ার গাড়িতে চেপে কেটে যেতে লাগল । কৈশােরের মন তখন বুঝতে শিখেছে। তাই আজও স্মৃতিগুলাে অম্লান ও আনন্দের উৎস হয়ে আছে।

দেখতে দেখতে এসএসসি পরীক্ষা আমাদের কাছে বিদায়-বার্তা নিয়ে হাজির হলাে। জানিয়ে দিল, আনন্দপূর্ণ এ পরিবেশ ছেড়ে যেতে হবে বিস্তীর্ণ জ্ঞানের সাধনার জন্যে আরও উচ্চতর ক্ষেত্রে। সেদিন ছিল ৪ জানুয়ারি । স্কুল অডিটোরিয়ামে ছােট আয়োজন এবং আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী এবং জুনিয়র ছাত্রীরা আমাদের বিদায় জানানাের উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছিল। আমরাও অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করলাম বিদায়ের ব্যথা যে কেমন তখনও তা উপলব্ধি করতে পারিনি। তাই অন্যান্য দিনের মতােই উচ্ছল ছিলাম। যখন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলী মলিন মুখে ম আসন গ্রহণ করলেন তখন পুরাে অডিটোরিয়াম গম্ভীর হয়ে গেল । গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ দেখে হঠাৎ করে বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠল। পাঁচ বছরের আনন্দময় জীবনের বিদায়ঘণ্টা শুনে মন যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল একের পর এক ছবি।

আমাদের পরের ব্যাচেরই এক মেয়ে উপস্থাপনা করছিল । সে জানিয়ে দিল অনুষ্ঠানসূচি সম্পর্কে। অনুষ্ঠান দুটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে আলােচনা অনুষ্ঠান, দ্বিতীয় পর্বে ছােট একটা সাংস্কৃতিক আয়ােজন। একে একে বিদায়ীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিলেন জুনিয়রদের পক্ষ থেকে একজন ছাত্রী, বিদায়ীদের পক্ষ থেকে একজন এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে তিনজন শিক্ষক, বিদায়ী মানপত্র পাঠ করল একজন ছাত্রী এবং বিদায়ীদের পক্ষ থেকে আমি তা গ্রহণ করলাম । গ্রহণ করতে গিয়ে আমার হাত কেঁপে উঠল, হৃদয় মথিত করে চোখ দিয়ে বের হলাে অশ্রুর ফোয়ারা- বাধন- ছেড়ার বেদনায় মন অস্থির হয়ে উঠেছিল।

শিক্ষকদের পক্ষে প্রথম বক্তৃতা দিয়েছিলেন আমাদের গণিতের শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষের অভিজ্ঞতায় আমরা এতদিন জেনেছি তিনি একজন হৃদয়হীন কাঠখােট্টা প্রকৃতির মানুষ। যিনি অঙ্কের হিসাবে ভুল হলেই বেতের আঘাতে শাস্তি প্রদান করতেন। আমরা তাকে নাম দিয়েছিলাম ‘হালুম’ বলে। বস্তুতই আমরা তাকে খুব ভয় পেতাম । কিন্তু বিদায়বেলায় স্যারের আবেগনিঃসৃত কণ্ঠে যা শুনেছি তাতে অন্য এক কোমলমৃদয় পিতারই সন্ধান পেলাম। আমাদের ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করে সজল নয়নে তিনি বক্তৃতা শেষ করলেন। এরপর বক্তৃতা রাখলেন ইংরেজির ম্যাডাম। তিনিও আমাদের ভালাে ফলাফল ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেছিলেন । আবেগে তিনি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। শিক্ষকদের এ ভালােবাসা অদ্ভুত এক অনুভূতির জন্ম দিয়েছিল । যা এখনাে আমাকে আবেগে আপ্লুত করে।

আমাদের প্রধান শিক্ষককে আমরা খুবই ভয় পেতাম । তার রুমের কাছাকাছি গেলেই আমাদের হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেত। আর সামনে পড়লে তাে মুখ দিয়ে কথাই বের হতাে না। কিন্তু সেদিন স্যারের বক্তৃতা শুনে আমরা অশু সংবরণ করতে পারলাম না । তাঁর আবেগময় বক্তৃতায় আমরা বেদনাভারাক্রান্ত হলাম। তিনি আমাদের আত্মশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার তাগিদ দিলেন এবং সত্যিকারের মানুষ হয়ে বিশ্বসভায় দাড়ানাের আহ্বান জানালেন। স্কুলজীবন এবং কলেজ জীবনের পার্থক্য সম্পর্কে বললেন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন থাকতে উপদেশ দিলেন। সবশেষে তিনি এ কামনা করলেন, সবাই যেন সত্যিকারের জ্ঞানসাধনার মাধ্যমে পরিপূর্ণ, সুন্দর ও সফল জীবন গড়তে পারে। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের বক্তৃতায় আমরা পেলাম ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার দিক নির্দেশনা। এও বুঝলাম, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তােলার জন্যেই তারা আমাদের স্বভাবসুলভ শাসনে রাখতেন। আদতে তারা সকলেই সন্তানবাৎসল্য নিয়েই আমাদের আগলে রেখেছিলেন।

এরপর দুপুরে বিদায়ীদের সবাই শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সাথে খেতে বসলাম। খাওয়া শেষে শুরু হলাে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কবিতা আবৃত্তি, গান, নাচ এবং ছােট্ট নাটিকা— তবে বিদায়–সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েই মূলত এ আয়ােজন ছিল। সাথে ছিল নতুন ক্ষেত্রে পদার্পণের অনুপ্রেরণা ।

এভাবেই কেটে গেল দিনটা। বিদায় দিলাম স্কুল প্রাঙ্গণকে। ভবিষ্যতের বিস্তৃততর প্রান্তরের হাতছানি আর পরিচিত।

বর্তমানকে বিদায় জানানাের সে ক্ষণটির যে অনুভূতি তা কখনােই ভুলবার নয় । ভবিষ্যতে আরও অনেক ঘটনা, অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা জীবনের প্লাটফর্মে এসে ভিড় করবে। কিন্তু মফস্বলের এ ছায়াঘন স্কুলের স্মৃতি কিছুতেই ভুলবার নয় । এ যেন

বিস্মৃতির অতলে স্মৃতিভাণ্ডার রইবে অম্লান চিরদিন।’

স্কুলের স্মৃতি কৈশােরের স্মৃতি। আর কৈশােরের স্মৃতি মানুষের মনে তার সােনালি চিহ্ন রেখে যায় চিরদিন। আমার স্কুল জীবনের স্মৃতিও আনন্দের উৎস হয়ে থাকবে চিরকাল । বিশেষত বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি সেদিন বিদায়ের সাথে সাথে হারানাের বেদনায় মন কেঁদেছিল । বৃহত্তর জীবন সামনে চলার আহ্বান জানায়, সে আহ্বানে মানুষ সাড়া দেয় সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়ার জন্যে। কিন্তু কিছু স্মৃতি সততই আপন ঔজ্জ্বল্যে থাকে ভাস্বর । আমার বিদ্যালয়ের শেষ ক্ষণটাও এ ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর থাকবে আমৃত্যু।

বিদ্যালয়ের শেষ দিনটি রচনাটি আপনার কেমন লাগলো? কিছু কি সংজোজন এর প্রয়োজন? জানাত্ব ভুলবেন না।

4.7/5 - (3 votes)

You may also like

Leave a Comment