Home রচনা একজন ফেরিওয়ালার আত্মকাহিনি রচনা (৬৫০ শব্দ) | JSC, SSC |

একজন ফেরিওয়ালার আত্মকাহিনি রচনা (৬৫০ শব্দ) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

একজন ফেরিওয়ালার আত্মকাহিনি রচনা লিখন

প্রতিদিন সকালে আমার ছােট্ট ঘুপচি ঘর থেকে বেরিয়ে গলির পর গলি পার হয়ে যখন বড় রাস্তায় উঠি আমার ছােট মেয়েটা আমার সাথে সাথে আসে । ওকে অনেক ভুলিয়ে, নানান ফন্দি-ফিকির করে ঘরে পাঠাই। তারপর আমি নেমে পড়ি আমার প্রতিদিনের কাজে। নানা কৌশলে, বিভিন্ন সুরে ডেকে ডেকে আমি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করি, চেষ্টা করি সওদা বেচার । আমার কাধে থাকে বিশাল বােঝা, হাতে কাচের ঢাকনাওয়ালা ছােট বাক্স আমি একজন ফেরিওয়ালা। আমি মেয়েদের সাজ-গােজের জিনিস আর শিশুদের খেলনা বিক্রি করি। সবাই আমাকে লেস ফিতাওয়ালা বলেই জানে।

আমার পিঠের বিশাল বােঝায় চার-পাঁচটা বাক্স থাকে। এদের কোনােটায় খেলনা, কোনােটায় চুড়ি, কোনােটায় কানের দুল, লিপস্টিক, নেইল পলিশ, ফিতাসহ নানারকম গয়না থাকে। সুন্দর সুন্দর জিনিসগুলাে আমি কাচের বাক্সটায় রাখি। যাতে বাইরে থেকে দেখা যায়। কোনাে বাড়ি থেকে ডাক এলে মনটা খুশিতে নেচে ওঠে। এবার হয়তাে কিছু একটা বিক্রি হবে।

আমার কাছ থেকে কিছু কিনতে হলে মানুষকে কষ্ট করে আমার কাছে আসতে হয় না । আমিই তাদের কাছে যাই। রাস্তায় নেমে সুর করে ডেকে ডেকে আমার উপস্থিতি জানান দিই। আমার কাছ থেকে সওদা কেনে যারা তাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত । কখনাে কখনাে বিশাল বােঝা নিয়ে চারতলা কিংবা পাঁচ তলাতেও উঠতে হয় আমাকে । কত বাড়ি, কত বিচিত্র মানুষ, কত বিচিত্র তাদের ব্যবহার ! অনেকে আছে তেমন দামাদামি করে না। পছন্দ হলে কিনে ফেলে । কারাে কারাে মন ভােলানােই দায়। এটা নাড়ে, ওটা নাড়ে, অনেকক্ষণ ধরে জিনিস দেখে। তারপর তাচ্ছিল্যভরে ছুড়ে দেয়। কী যে তাদের
পছন্দ তাই আমি ভেবে পাই না। মাঝে মাঝে বাক্সপত্র গুছিয়ে যখন আমি কিছুদূর চলে আসি তখন আবার ডাকে। আমি আবার যাই, আবার বাক্স খুলি। মনে মনে খুব রাগ হয়, কিন্তু মুখে প্রকাশ করি না।

যেসব বাড়িতে ছােট ছােট শিশু থাকে সেসব বাড়িই আমার বেশি পছন্দ। ওরা খেলনাগুলাে ধরে ধরে দেখে। মায়ের কাছে বায়না ধরে। এর চেয়ে আরও দামি আর ভালাে খেলনা হয়তাে ওদের আছে। তবু কেউ কেউ কেনে, কেউ কেউ কেনে না। কারাে আবার তার সন্তানকে এ খেলনা কিনে দেবার সংগতি নেই । ওইসব বাচ্চাদের কষ্টমাখা মুখটা দেখে আমারও খুব কষ্ট হয় । আমার নিজের সন্তানের কথা মনে পড়ে ।

বাড়ি বাড়ি ঘুরে দুপুরের কড়া রােদে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তখন ফুটপাতের পাশে বড় কোনাে গাছের ছায়ায় গামছা বিছিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেই । মাঝে মাঝে সেখানে বসেই অনেক জিনিস বিক্রি করি । চিড়া কিংবা মুড়ি খাই। সকাল থেকে কতটুকু বিক্রি হলাে গুণি রােদ একটু পড়ে এলে আবার শুরু হয় আমার পথ চলা । মাঝে মাঝে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামে। রাস্তার ধারের যাত্রী ছাউনি কিংবা কোনাে বাড়ির ছাউনিতে আশ্রয় নেই! একবার এমনই এক বৃষ্টির দিনে এক ধনীর বাড়ির সীমানায় আশ্রয় নিয়েছি। হঠাৎ কোথেকে বেরিয়ে এলো তাদের পােষা কুকুরটা । এসেই আমাকে তাড়া করল। আমি পড়িমরি করে দৌড়াতে গিয়ে হোঁচট খেলাম কাচের আয়নাওয়ালা বাক্সটা হাত থেকে পড়ে গেল। আয়নাটা মাঝ বরাবর ফেটে গেল । সেই ফাটা কাচের বাক্সটাই এখনাে আমার সঙ্গী। নতুন একটা বাকি কিনে নেবার মতাে টাকা নেই। চারজনের সংসারে দু বেলা পেট ভরে খাবারই তাে জোটে না রােজ। তারপরও বড় মেয়েটাকে স্কুলে ভর্তি করেছি। আমি লেখাপড়া শিখিনি, কিন্তু তার মূল্য যে কত সে আমি বুঝি । আমার অনেক দিনের স্বপ্ন, আমার দুটি মেয়েই লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে । রাস্তায় আমার মতাে আরও অনেক ফেরিওয়ালা নানা জিনিস ফেরি করে বেড়ায়। যারা আমার চেনা তাদের সাথে কিছুটা সময়
সুখ-দুঃখের কথা বলি । সূর্য ডুবে যাবার পর আমি বাড়ি ফিরি। সারাদিনের পরিশ্রমের পর যা কিছু আয় হয় তা থেকেই আমার সংসার চলে । যেদিন ভালাে বিক্রি হয় সেদিন রাতের খাবারটাও একটু ভালাে হয়। স্ত্রী-সন্তান খুশি থাকে। আমারও ভালাে লাগে।

বাড়ি ফিরে সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সারাদিনের পরিশ্রমের কষ্ট ভুলে যাই । বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়লে আমি আর আমার স্ত্রী নতুন করে বাক্সগুলাে সাজাই । খেলনার বাক্সটা সাজাতে গেলে বুকের ভেতর খুব কষ্ট হয়। ছােট মেয়েটা রােজ খেলনার জন্যে আবদার করে। সকালে আমার সাথে বড় রাস্তা পর্যন্ত যায়। রােজই আমি তাকে মিথ্যে আশ্বাস দেই । আমার ঘরেই রং-বেরঙের এত খেলনা অথচ আমার মেয়েটার সেগুলাে নিয়ে খেলবার অধিকার নেই । পিতা হিসেবে নিজেকে তখন অসহায় মনে হয়। তারপরও আমি আশায় বুক বাঁধি। রাতে ঘুমিয়ে সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখি। পরদিন আবার বােঝা কাঁধে নিয়ে বের হই। স্বপ্নটাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে।

একজন ফেরিওয়ালার আত্মকাহিনি রচনাটি কেমন হয়েছে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

3.3/5 - (3 votes)

You may also like

Leave a Comment