Home রচনা আমার প্রিয় লেখক- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা(1100 words)

আমার প্রিয় লেখক- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা(1100 words)

by Curiosityn
0 comment

আমার প্রিয় লেখক- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনার সংকেত (Hints)

  • ভূমিকা
  • জন্ম পরিচয়
  • শৈশবকাল
  • শিক্ষাজীবন
  • সাহিত্য সাধনা
  • বাংলা সাহিত্যে অবদান
  • উপাধি ও সম্মাননা
  • আমার ভালাে লাগার কারণ
  • জীবনাবসান
  • উপসংহার

আমার প্রিয় লেখক-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা

ভূমিকা:

এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাহাই তুমি করে গেলে দান।’

চিত্তরঞ্জন দাসকে উদ্দেশ করে কথাগুলাে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । কিন্তু কথাগুলাে আসলে তার ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য। বাংলার সাহিত্যাকাশে সদা জাজ্বল্যমান তিনি, নক্ষত্রের মতাে সদা উজ্জ্বল আর আলােকিত, প্রতিভায় অভূতপূর্ব এক ব্যক্তিত্ব তিনি। বাংলার কথা, বাংলাদেশের কথা বলতে গেলেই–

‘আমার সােনার বাংলা আমি তােমায় ভালােবাসি
চিরদিন তােমার আকাশ তােমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাশি।’

এই সুরের মাধ্যমেই চলে আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। তিনি বাঙালির প্রাণের কবি, ভালােলাগার কবি, ভালােবাসার কবি। তিনি বিশ্বকবি ।

জন্ম পরিচয়:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৭ই মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতা ছিলেন সারদা দেবী । রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতামাতার চতুর্দশ সন্তান ও অষ্টম পুত্র ।

শৈশবকাল:

রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বােলপুর ও
পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবােধ করতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

শিক্ষাজীবন:

শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কোলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশােনা করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তাঁর শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল । ১৮৭৩ সালে এগারাে বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন। প্রথমে তারা আসেন শান্তিনিকেতনে । এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ যান ডালহৌসি শৈলশহরের কাছে বক্রোটায় । বক্রোটা বাংলােয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন। ১৮৭৮ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশােনা শুরু করেন । কিন্তু সাহিত্যচর্চার আকর্ষণে সেই পড়াশােনা তিনি শেষ করতে পারেননি।

সাহিত্য সাধনা:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত কবি । প্রচুর সাহিত্য রচনা করে তিনি বাংলা সাহিত্যকে এতই সম্পদশালী করেছিলেন যে তা বাংলার অন্যসব লেখককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সাহিত্য শিল্পের এমন কোনাে শাখা নেই, যেখানে তাঁর বিচরণ নেই। তাঁর উল্লেখযােগ্য কয়েকটি গল্প হলাে ‘নিশীথে’, ‘মণিহারা’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘স্ত্রীর পত্র’, ‘নষ্টনীড়’, কাবুলিওয়ালা’, ‘হৈমন্তী’, ‘দেনাপাওনা’, ‘মুসলমানীর গল্প’ ইত্যাদি । তিনি তাঁর গল্পে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি বা আধুনিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতেন । কখনাে তিনি গল্পে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বৌদ্ধিক বিশ্লেষণকেই বেশি প্রাধান্য দিতেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মােট তেরােটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলাের মধ্যে বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩)’, রাজর্ষী (১৮৮৭)’, ‘চোখের বালি (১৯০৩)’, ‘নৌকাডুবি (১৯০৬)’, ‘প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮)’, ‘গােরা (১৯১০)’, ‘ঘরে বাইরে (১৯১৬)’, ‘চতুরঙ্গ (১৯১৬), উল্লেখযােগ্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২২৩০টি গান রচনা করেছিলেন। ধ্রুপদী ভারতীয় সংগীত, বাংলা লােকসংগীত ও ইউরােপীয় সংগীতের ধারা তিনটিকে আত্মস্থ করে তিনি একটি স্মরণীয় সুরশৈলীর জন্ম দেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় সত্তর বছর বয়সে । প্রথমদিকে তিনি লেখার হিজিবিজি কাটাকুটিগুলিকে একটি চেহারা দিতে চেষ্টা করতেন। এই প্রচেষ্টা থেকেই তার ছবি আঁকার সূত্রপাত ঘটে। তার স্কেচ ও ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের ওপর যার। ১৫৭৪টি শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’; ঋতুপর্ণ ঘােষের চোখের বালি’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। এসব প্রবন্ধে তিনি সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন।

বাংলা সাহিত্যে অবদান:

রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা, চিত্রময়তা, অধ্যাত্মচেতনা,
ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রােমান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা । রবীন্দ্রনাথের গদ্য ভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল । কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামােন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তােলার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন । রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী, অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তাঁর রচিত ‘আমার সােনার বাংলা’ ও ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গান দুটি যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীত ।

উপাধি ও সম্মাননা:

যাঁর কীর্তি অসামান্য তাকে কোনাে উপাধি বা ভূষণ দিয়ে ভূষিত করলেও নিজের তুষ্টি মেলে না। তবুও
তাঁর অবদানকে উৎসাহিত করতে আমরা উপাধি দিই, জানাই সম্মাননা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘গুরুদেব’ উপাধি দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী, ক্ষিতিমােহন সেন বলেছিলেন কবিগুরু’, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় বিশ্বকবি’ উপাধি দিয়েছিলেন আর চীনের কবি চি সি লিজন তাকে উপাধি দিয়েছেন ভারতের মহাকবি’। ১৯১৫ সালে তৎকালীন ভারত সরকার তাকে স্যার’ বা ‘নাইটহুড’ উপাধি প্রদান করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি এই উপাধি পরিত্যাগ করেন। তাঁকে যথাক্রমে ১৯১৩ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৫ সালে কাশী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেন। আর সবচেয়ে বড়াে ব্যাপার যেটি তা হলাে তিনি ১৯১৩ সালে। নােবেল পুরস্কার লাভ করেন, শুধু প্রথম ভারতীয় হিসেবেই নয়, প্রথম এশীয় হিসেবেও।

আমার ভালাে লাগার কারণ:

ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গির প্রাণাবেগে চল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আর গান । ছন্দে আর সুরে, অনুরাগে আর বিরাগে তাঁর গান আমার প্রাণকে দোলা দেয় ।

কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা মনে মনে।
মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে
কিংবা
“ঝিল্লিমুখর বাদল-সাঝে কে দেখা দেয় হৃদয়-মাঝে
স্বপনরূপে চুপে চুপে ব্যথায় আমার চরণ ফেলে”

তার এসব প্রকৃতিনির্ভর প্রেম ও গানের কথা আর সুর আমার প্রাণকে দোলা দেয়। শুধু গান বা কবিতাই নয়, তার গল্প আর উপন্যাসগুলাের কাহিনি আর ভাষা আমাদের প্রাণকে উদ্বেলিত করে। চেতনে-অবচেতনে আমরা তার কথা আর সুরকে লালন করি অন্তরের অন্তঃস্থলে । যার সাহিত্য হৃদয়কে এতভাবে দোলা দেয়, প্রাণকে সজীব করে তিনি তাে নিঃসন্দেহে আমার প্রায় কবি হবেনই।

জীবনাবসান:

জীবনের শেষ চার বছর ছিল তার ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়। এই সময়ের মধ্যে দুইবার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি। এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলাে ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পঙক্তিমালা। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন । দীর্ঘ রােগভােগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

উপসংহার:

মাত্র তেরাে বছর বয়সে শুরু করে আমৃত্যু সাহিত্য রচনা করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাহিত্যের যেদিকে তাকাব তাকে আমাদের দেখতেই হবে। তাকে ছাড়া, তার সাহিত্য ছাড়া আমরা অস্তিত্বহীন। রবীন্দ্রনাথের সমগ্র জীবনের প্রেক্ষাপটেই তাঁর কবিমানস ও সাহিত্যকর্মের স্বরূপ অনুধাবন সম্ভব । রবীন্দ্রনাথের অন্তর্নিহিত জীবনবােধ ছিল স্থির এবং বহু পরিবর্তনকে স্বীকার করে নিয়ে আপন আদর্শে প্রতিষ্ঠিত; অন্যদিকে তার সৃজনশীল রূপটি ছিল চলিষ্ণু ও পরিবর্তনশীল। রবীন্দ্রনাথ কেবল তার কালের কবি নন, তিনি কালজয়ী । বাংলা কাব্যসাহিত্যের ইতিহাসে তার আবির্ভাব ছিল এক যুগান্তরী ঘটনা।

4.4/5 - (45 votes)

You may also like

Leave a Comment