Home রচনা বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব (1000 words) | JSC, SSC |

বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব (1000 words) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব রচনার সংকেত (Hints)

  • ভূমিকা
  • বিজ্ঞান কী
  • আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা
  • বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা
  • বিজ্ঞানমস্কতা কী
  • বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার বর্তমান অবস্থা
  • বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে করণীয়
  • উপসংহার

বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব রচনা

ভূমিকা:

পৃথিবীতে মানুষের যে জয়যাত্রা সূচিত হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতির কারণেই। বর্তমান বিশ্বায়নের মূলে রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান। উন্নত বিশ্বের দেশগুলাে বিজ্ঞানকে মূলমন্ত্র করে উত্তরােত্তর সাফল্য অর্জন করে চলেছে। অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা দেশগুলােও তাই তাদের অনুসরণ করে হাঁটছে একই পথে। ফলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের চর্চা হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মননশীলতায় সমৃদ্ধ। জাতি গঠনে তাই বিজ্ঞান শিক্ষার বিকল্প নেই।

বিজ্ঞান কী:

বিজ্ঞান’ শব্দের অর্থ হলাে বিশেষ জ্ঞান । যেকোনাে জ্ঞানের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণকে বিজ্ঞান বলা হয় । বিশ্বজগতে যাবতীয় কর্মকাণ্ড কোনাে না কোনাে কারণে সংঘটিত হয়। এসব কারণ জানার জন্য অনুসন্ধিৎসু মানুষের রয়েছে প্রবল আকাঙ্ক্ষা । এর জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের অনুসন্ধান ও গ্রীক্ষানিরীক্ষা চালায়। এর মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় নতুন জ্ঞান। এ জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়াই হলাে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে এর সাথে দর্শনেরও যােগসূত্র পাওয়া যায় । এদিক থেকে বিজ্ঞানকে দর্শন হিসেবেও ভাবা যেতে পারে, যে দর্শনের মূলভিত্তি হচ্ছে যেকোনাে বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা এবং এর কার্যকারণ অনুসন্ধান করা।

আধুনিক জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা:

বিজ্ঞানের জাদুকরী স্পর্শে আমূল বদলে গিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই এখন বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার দ্বারা প্রভাবিত। মানুষের আদিমতম পেশা পশুপালন ও কৃষিকাজও আজ প্রযুক্তিনির্ভর।তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে মানুষের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। বিদ্যুতের আশীর্বাদে পিছিয়ে পড়া জনপদগুলােতেও পৌছে গেছে সেই বার্তা । বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী শাকসবজি ও ফলমূল এখন উৎপাদিত হচ্ছে সারাবছর। এছাড়াও উন্নতমানের ফসলের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি ফসল রােপণ, পরিচর্যা, সংগ্রহ এসব ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে প্রযুক্তি। গবেষণার মাধ্যমে অর্থকরী পশুপাখিগুলাের নানা জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে যােগাযােগ ব্যবস্থা হয়েছে। উন্নততর যা অর্থনীতিকে বহুগুণ গতিশীল করেছে। শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান নতুন দিগন্ত উন্মােচন করেছে। শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট প্রায় সবকিছুই এখন মিলছে ইন্টারনেট থেকে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে লক্ষ মানুষের জীবন রক্ষা হচ্ছে দুরারােগ্য রােগের কবল থেকে। অধিত বিদ্যা আর প্রায়ােগিক দক্ষতার মিশেলে ধীরে ধীরে উন্মােচিত হচ্ছে সৃষ্টিজগতের অপার রহস্য। বহু কুসংস্কার দূর হয়ে সমাজ হয়ে উঠছে জ্ঞানের আলােয় উদ্ভাসিত । আর মানবসমাজের এ অগ্রযাত্রায় দেশ, জাতি ও সমাজ গঠনে বিজ্ঞান রাখছে প্রধান ভূমিকা।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা:

বিশ্বের সর্বত্রই এখন বিজ্ঞানের জয়জয়কার। বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে উন্নত সমাজ গঠনের কথা আজ ভাবাই যায় না। আদিম মানুষ একসময় নিজের অজান্তেই বিজ্ঞানকে আপন করে নিয়েছিল। পরবর্তীতে আগুন, চাকী ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার মানুষকে ধীরে ধীরে সভ্যতার পথে টেনে এনেছে। অসংখ্য অযৌক্তিক কুসংস্কারের কারণে মানুষের এই এগিয়ে চলা পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তবে বিজ্ঞান যুগে যুগে মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়েছে। বর্তমানে আমরা আধুনিক ও উন্নত মানুষ বলতে মূলত একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকেই বুঝি। তাই দেশের সার্বিক উন্নতিকল্পে বিজ্ঞান শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়ার বিকল্প নেই। বিজ্ঞানের শিক্ষা বিশ্লেষণধর্মী ও বাস্তবমুখী। তাই বৈজ্ঞানিক উপায়ে কোনাে কাজের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করাই সর্বোত্তম। বাংলাদেশের মতাে উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কেবল এর মাধ্যমেই সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারি। তাছাড়া বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমেই কেবল আমাদের জীবনসংস্কৃতিতে উন্নয়ন সূচিত হতে পারে । অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে সমানভাবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষা তাই অপরিহার্য।

বিজ্ঞানমস্কতা কী:

‘বিজ্ঞান শিক্ষা’ ও ‘বিজ্ঞানমনস্কতা’ শব্দদুটোকে সাধারণভাবে একই মনে হলেও এ দুয়ের মাঝে বিস্তর
পার্থক্য রয়েছে। কেবল বিজ্ঞান শিক্ষা নিলেই কেউ বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানশিক্ষা না নিলেও বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া যায়। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষা অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানমনস্কতা হলাে- প্রশ্ন করার এবং কার্যকারণ অনুসন্ধানের প্রবণতা। অর্থাৎ বিজ্ঞানমনস্ক একজন মানুষ কোনােকিছুতে অন্ধভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে না। যেকোনাে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিচার-বিশ্লেষণ করে তবেই সিদ্ধান্ত নেবে। বিজ্ঞানমনস্কতা এমন এক বােধের জন্ম দেয় যার কারণে আমাদের মনে কোনাে ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে । তুলনা করা ও যাচাই করার মানসিকতা তৈরি হয়। কেননা প্রশ্ন করলেই সঠিক উত্তর পাওয়া যায়, তুলনা
করলেই ভালাে-মন্দ প্রভেদ করা যায় কেবল যাচাই করলেই কোনাে তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার বর্তমান অবস্থা:

বর্তমানে কোনাে একটি দেশের সার্বিক উন্নতি বিজ্ঞানের প্রসারের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। উন্নত দেশগুলােতে তাই বিজ্ঞান শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং এ কারণেই তারা দিন দিন ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে আছে। আশঙ্কার বিষয় হলাে, বিজ্ঞান শিক্ষায় বাংলাদেশ দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যুরাে অব এডুকেশন ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী ১৯৯০ সালে মােট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিল ৪২.৮১ শতাংশ। ২০০০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৯.৪৭ শতাংশে ২০১০ সালে ২২.৩৫ শতাংশে পৌছে। ২০১৪ সালে বেড়ে তা হয়েছে ২৫,৬১ শতাংশ। একই দৃশ্য আমরা দেখি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও। ১৯৯০ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল ২৮.১৩ শতাংশ। ২০১৪ সালে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ১৭.০৩ শতাংশে। পরিসংখ্যানে আরও দেখা গিয়েছে যে, বিজ্ঞান শিক্ষার চেয়ে ব্যবসায় শিক্ষার প্রতিই শিক্ষার্থীদের ঝোঁক বাড়ছে। এর পেছনে দক্ষ বিজ্ঞান শিক্ষকের অভাব, উন্নতমানের পাঠ্যপুস্তকের অভাব, বিজ্ঞান শিক্ষায় অতিরিক্ত খরচ, বিজ্ঞান গবেষণার জন্য প্রয়ােজনীয় অবকাঠামাের অভাব, প্রতিযােগিতামূলক চাকরির বাজারে এ শিক্ষার অবমূল্যায়ন ইত্যাদি কারণকে দায়ী করা যায় । যারা বিজ্ঞান শিক্ষার সাথে জড়িত তাদের অধিকাংশই আবার না বুঝে কেবল পাঠ মুখস্থ করে। পরীক্ষায় পাশ করাকেই কৃতিত্ব বলে ভাবছে। অসচেতন অভিভাবক ও শিক্ষকগণও এ বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করছেন। ফলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও তারা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠছে না।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে করণীয়:

কার্যকরী বিজ্ঞান শিক্ষা ব্যতীত আমাদের পক্ষে কোনােভাবেই উন্নত জাতি গঠন করা সহ নয়। তাই বিজ্ঞান শিক্ষাকে সবার আগে জনপ্রিয় করে তােলা প্রয়ােজন। প্রাথমিক থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক সকল স্তরে বিজ্ঞানের বইগুলােকে সুখপাঠ্য করে রচনা করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিষয়ে পড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এছাড়া বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়ােজনীয় প্রশিক্ষণও দেওয়া দরকার। দরিদ্র শিক্ষার্থীরা যাতে বিজ্ঞান পড়ার প্রতি অনাগ্রহী না হয় সেই লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলােকেও উদ্যোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য প্রয়ােজনীয় বরাদ্দ দেওয়া এবং অবকাঠামাে তৈরিতে সরকারকে মনযােগী হতে হবে। পাশাপাশি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের অর্জিত শিক্ষাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে সেই লক্ষ্যে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

উপসংহার:

বর্তমান ও আগামীর পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের দখলে। অন্ধকার ও অজ্ঞতাকে জয় করে বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বিজয়ের আনন্দ বিশ্বব্যাপী তাই বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞান চর্চার গুরত্ব বেড়েছে। আর এক্ষেত্রে আমাদের মতাে উন্নয়নশীল দেশে বিজ্ঞান শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপক বাস্তবায়নের জন্য বিজ্ঞান শিক্ষা সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। সেই সাথে সাধারণ জনগণের মাঝে বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশেও এটি অত্যন্ত জরুরি। তাই বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্রগতিতে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

3.1/5 - (8 votes)

You may also like

Leave a Comment