Home রচনা দেশভ্রমণ রচনা (৭৫০ শব্দ) | JSC, SSC |

দেশভ্রমণ রচনা (৭৫০ শব্দ) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

দেশভ্রমণ রচনার সংকেত (Hints)

  • ভূমিকা
  • দেশভ্রমণ ও বৈচিত্র্যানুসন্ধানী মন
  • দেশভ্রমণ ও মুক্তির আনন্দ
  • শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে দেশভ্রমণ
  • অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে দেশভ্রমণ
  • দেশভ্রমণ ও বাংলাদেশ
  • দেশভ্রমণের সেকাল ও একাল
  • উপসংহার

দেশভ্রমণ রচনা লিখন

ভূমিকা:

অজানাকে জানার, অচেনাকে চেনার আগ্রহ মানুষের অন্তরের চিরন্তন আকুতি। বাহ্যিকভাবে মানুষ পারিবারিক, সামাজিক বন্ধনকে স্বীকার করে নিলেও অন্তর্জগতে সে আসলে মুক্তিপিয়াসী। তাই নতুনের আহ্বান আর সুদূরের হাতছানিতে সাড়া দিতে তার মন অস্থির হয়ে ওঠে। অন্তরের আকুল আগ্রহে সে ছুটে যায় দেশ হতে দেশান্তরে।

দেশভ্রমণ ও বৈচিত্র্যানুসন্ধানী মন:

বিপুলা এ পৃথিবী নানান বৈচিত্র্যের সমাহার। সৃষ্টিকর্তা নিপুণ শিল্পীর হাতে বিচিত্র, সজ্জিত করেছেন পৃথিবীকে। বহু অরণ্য-সমুদ্র-মরু-পর্বতের সমন্বয়ে ধরণী হয়ে উঠেছে রূপ ও ঐশ্বর্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার। প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবনধারায় একঘেয়ে মানবমন বিশাল পৃথিবীর এ সৌন্দর্যানুসন্ধানে হয় ব্যাকুল। পৃথিবীর নানান স্থানে বিচিত্র ও সৌন্দর্য তথ্য সম্পর্কে মানুষ অনেক সময় গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অবহিত হয়। কিন্তু নিজ চোখে না দেখে তার মন শান্তি পায় না। তাই মন তার মুক্ত বিহঙ্গের মতাে বৈচিত্র্যানুসন্ধানী, ছুটে চলে দেশে দেশে অজানাকে জানার জন্যে, অদেখাকে দেখার জন্যে। সর্বোপরি আত্মার পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যে। কিন্তু স্বল্পায়ু জীবনে বিশাল পৃথিবীর সর্বত্র বিচরণ সম্ভব। হয় না বলে সৌন্দর্যপিপাসু মানবমন অতৃপ্তই থেকে যায় । অতৃপ্ত আত্মার হাহাকার যেন কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয় –

‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি ।
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী
মানুষের কত কীর্তি, কত না নদী-গিরি-সিন্ধু-মরু,
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগােচরে।’

দেশভ্রমণ ও মুক্তির আনন্দ:

প্রথাবদ্ধ জীবনের গণ্ডি মানুষকে করে দেয় নিরস ও একঘেয়ে। খাঁচায় বন্দি পাখির মতাে মানুষ ছটফট করতে থাকে মুক্তির প্রত্যাশায় । উড়ে যেতে চায় দূর থেকে দূরে, আকাশের উন্মুক্ত বিশাল প্রাঙ্গণে বিচরণ করে পেতে চায় মুক্তির অনাবিল আনন্দমাখা সুখ । চার দেয়ালে বন্দি নিশ্চিন্ত জীবন মানুষকে প্রকৃত সুখ, প্রকৃত আনন্দ দিতে ব্যর্থ। কেননা জন্মগতভাবেই মানুষ মুক্ত পথে চলতে চলতে আবিষ্কার করতে চায় অজানা তথ্য, উন্মােচন করতে চায় অজানা সৌন্দর্য, বিস্ময়ের অপূর্ব শিহরণে শিহরিত হতে চায়। তাইতাে মৃত্যুভয়কে অস্বীকার করে মানুষ দুঃসাহসী অভিযান চালিয়ে মহাশূন্যের অজানা তথ্য আবিষ্কার করতে চায়, দুর্গম পথের বাধা অতিক্রম করে গহীন অরণ্যে পৌছে সন্ধান করে অজানা বিচিত্র জীবজন্তুর ইতিহাস। পর্বতের চূড়ায় পৌছে জয়ের অনাবিল আনন্দে হেসে ওঠে। মুক্ত জীবনের আনন্দ আস্বাদনের প্রবল ইচ্ছ। তাকে নিয়ে যায় সাগরের গভীর তলদেশে, শক্তি জোগায় সব অসাধ্য সাধনের। মুক্তিপ্রিয় মানুষের প্রবল ইচ্ছা, সাহস ও মনােবলের কাছে হার মেনেছে সবকিছু। অজানা রহস্যের উন্মােচনে তারা অস্বীকার করেছে সবকিছু। চার দেয়ালের কারাগারে থেকে দেশভ্রমণের মাধ্যমেই মানুষ অনাবিল মুক্তির স্বাদ পায়, সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হয়ে পায় বৃহতের সন্ধান।

শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে দেশভ্রমণ:

দেশভ্রমণ একদিকে মুক্ত জীবনের আনন্দ দেয়, অন্যদিকে শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে মানুষের জ্ঞানকে করে পরিপূর্ণ। যুগে যুগে ভ্রমণপ্রেমী মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা, দুঃসাহসী অভিযাত্রার কাহিনি লিপিবদ্ধ করে গেছে বইয়ের পাতায়। তাদের সে ভ্রমণকাহিনি বইয়ের পাতায় পড়ে আমরা নানান দেশের নানান মানুষের ঐতিহাসিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পুরাতাত্ত্বিক জীবনের সাথে পরােক্ষভাবে পরিচিতি লাভ করি । আর দেশভ্রমণের মাধ্যমে আমরা লাভ করি প্রত্যক্ষ ও বাস্তব জ্ঞান। গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে যে শিক্ষালাভ, তাকে অর্থময় ও পরিপূর্ণ করে তুলতে দেশভ্রমণের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে দেশভ্রমণ:

দেশভ্রমণের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সমাজ, ইতিহাস ও ভৌগােলিক অভিজ্ঞতা লাভ করা যায় । কালের আবহে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা ও মানবকীর্তি সম্পর্কে জানা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বিস্ময়কর সব সৃষ্টি, স্থাপনা, ভাস্কর্য ইত্যাদি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ হয়। জানা যায়, নানান দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। এককথায় মানুষের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে দেশভ্রমণ।

দেশভ্রমণ ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ:

ভ্রমণপিয়াসী মানুষ নিজস্ব ভৌগােলিক গণ্ডিতে আবদ্ধ না থেকে প্রাণের টানে ছুটে যায় ভিনদেশে। বিনিময় করে নিজ দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির সাথে ভিন্নদেশের শিক্ষাসংস্কৃতি। এক অখণ্ড প্রাণের টান অনুভব করে, জেগে ওঠে সৌহার্দ্যপূর্ণ ভ্রাতৃত্ববােধ। বিশ্বের সকল দেশের সকল মানুষের সাথে এ একাত্মতাবােধই জন্ম দেয় বিশ্বশান্তি। তাইতাে জাতিসংঘ দেশভ্রমণকে দিয়েছে “বিশ্বশান্তির ছাড়পত্র’ । বিখ্যাত পর্যটক কলম্বাস, ভাস্কোদাগামা, ক্যাপ্টেন কুক, ইবনে বতুতা, মার্কোপােলাে প্রমুখ ভ্রমণের মাধ্যমে বিশ্বসমাজে ঐক্যের বাণীই প্রচার করেছেন।

দেশভ্রমণ ও বাংলাদেশ:

সুজলা-সুফলা, সবুজ-শ্যামলে ঘেরা আমাদের এ বাংলাদেশও অনাবিল সৌন্দর্যের রানি। পাহাড়-সমুদ্র
আর অরণ্যের নিপুণ মেলবন্ধন একে করেছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এদেশের সবুজ বিশাল বনানী, বিশ্বের বৃহৎ উন্মুক্ত সৈকত কক্সবাজার, সুন্দরবন, নদ-নদী পাহাড়বেষ্টিত হ্রদ, ময়নামতি, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়ের প্রাচীন কীর্তি অসংখ্য পর্যটকের আকর্ষণ । দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও প্রাচীনত্বের গর্বিত নিদর্শন ক্রমেই মানুষের মধ্যে ভ্রমণের আকর্ষণ সৃষ্টি করছে।

দেশভ্রমণের সেকাল ও একাল:

ভ্রমণের নেশা মানুষের মনে সুপ্রাচীন কাল থেকেই বিদ্যমান। কিন্তু তখন পথ ছিল দুর্গম, শ্বাপদসংকুল এবং যােগাযােগ ব্যবস্থা ছিল খুবই অনুন্নত ও কষ্টসাধ্য। তবুও পথের অনিশ্চয়তা, বাধা-বিপত্তি কোনােকিছুই ভ্রমণাকুল মানুষকে পিছিয়ে রাখতে পারেনি। যুগে যুগে বিজ্ঞানের অবদানে ভ্রমণের উপকরণ ও যানবাহনের বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। উন্নতমানের গাড়ি, জাহাজ, অ্যারােপ্লেন ইত্যাদি ভ্রমণপথকে করেছে সহজসাধ্য। যেখানে কাছের পথ যেতেই মানুষকে কষ্ট স্বীকার করতে হয় অনেক বেশি, সেখানে আকাশ পথের দূরত্বও এখন হাতের মুঠোয়। আবিষ্কৃত হচ্ছে মহাশূন্যের অজানা তথ্য।

উপসংহার:

দেশভ্রমণ মানে গণ্ডিবদ্ধ মানুষের জীবনে বৃহতের আহ্বান, অজানাকে জানার উপায়। প্রাত্যহিক জীবনের ব্যস্ততা, জটিলতা মানবমনকে উন্মুখ করে তােলে একটুখানি অনাবিল শান্তির আশায়। দেশভ্রমণ সে শান্তির সন্ধান দেয়। তাই মুক্ত জীবনের স্বাদ নিতে মানুষ বেরিয়ে পড়ে দেশ হতে দেশে ভ্রমণের নেশায়। বর্তমানে যান্ত্রিক সভ্যতার গ্লানিময় জীবনের হাত থেকে মুক্তির চিন্তায় অস্থির মানুষের কাছে ভ্রমণের আকর্ষণ ও আগ্রহ ক্রমবর্ধমান।

4.3/5 - (50 votes)

You may also like

Leave a Comment