Home রচনা জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা (950) words | JSC, SSC |

জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা (950) words | JSC, SSC |

by Curiosityn
1 comment

জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা রচনার সংকেত (Hints)

  • ভূমিকা
  • বাংলাদেশে নারীর অবস্থান
  • নারী আন্দোলন ও নারী উন্নয়ন
  • নারীর অদৃশ্য অবদান
  • বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীসমাজ
  • প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়
  • উপসংহার

জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা রচনা

ভূমিকা:

বাংলাদেশে মােট জনসংখ্যার অর্ধেকই হচ্ছে নারী। তাই দেশের সুষম আর্থসামাজিক উন্নয়ন অর্থাৎ জাতীয় উন্নয়নে নারীর সমান অংশগ্রহণের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব কাজ অর্থাৎ গৃহস্থালী বা সাংসারিক কর্মকাণ্ডের বােঝা বহন করা, সন্তান ধারণ এবং মা হিসেবে ভবিষ্যতের উপযুক্ত নাগরিক গড়ে তােলাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জাতীয় অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে নারীসমাজ। তারই অকুণ্ঠ স্বীকৃতি মেলে মানবতার কবিকাজী নজরুল ইসলামের নারী’ কবিতায়-

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।

বাংলাদেশে নারীর অবস্থান:

সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীর ভূমিকা ও অবদান স্বীকৃতি পেলেও সার্বিকভাবে উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। শিক্ষার অভাবে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না। পুরুষশাসিত প্রথাবদ্ধ সমাজে নারীরা লিঙ্গবৈষম্য, সামাজিক নিপীড়নসহ বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার। জনসংখ্যার অর্ধেক হলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা খুবই সীমিত। ব্যাপক সংখ্যক নারী এখনাে পর্দাপ্রথার অন্তরাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। অশিক্ষা, দারিদ্র্য ও প্রথাবদ্ধ ধ্যানধারণার কারণে নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারছে না, তারা পুরুষের ওপর নির্ভরশীল। নারী হত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, অ্যাসিড নিক্ষেপের মতাে নির্মম ঘটনার শিকার অসংখ্য অসহায় নারী। সংবিধানে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বিষয়টি স্বীকৃত হলেও ধর্মীয় ও পারিবারিক আইনে নারীর সার্বভৌমত্ব ও সমানাধিকার স্বীকৃত নয় । শিক্ষা ক্ষেত্রে, চাকরির ক্ষেত্রে এবং প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক নানা সুযােগ-সুবিধার ক্ষেত্রে নারীসমাজ প্রতিনিয়তই বঞ্চিত।
সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে সচেতনতা বাড়ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রমশ বাড়ছে নারীর অংশগ্রহণ।

নারী আন্দোলন ও নারী উন্নয়ন:

মােট জনসংখ্যার অর্ধেক হিসেবে নারীসমাজ অর্ধেক জনশক্তির প্রতিনিধি। এ জনশক্তি পশ্চাৎপদ, অশিক্ষিত এবং অসচেতন থাকলে জাতীয় উন্নয়ন ব্যাহত হয়। এ উপলব্ধি থেকেই নারীসমাজকে সচেতন করে তুলতে, সমাজের নানান অদৃশ্য শৃঙ্খল থেকে নারীদের মুক্ত করতে এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে বিভিন্ন নারী সংগঠন। ফলে পুরুষ নিয়ন্ত্রিত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধীরে ধীরে নারীর অধিকার ও স্বীকৃতির বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হয় ১ম বিশ্ব নারী সম্মেলন। ১৯৭৬-৮৫ সাল ১ম নারীদশক হিসেবে ঘােষণা করে প্রতিটি দেশে নারীর স্বার্থ সংরক্ষণে জাতীয় কমিটি প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন সংস্থায় নারী ইউনিট গড়ে তােলার সুপারিশ করে জাতিসংঘ। ফলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সরকার নারী উন্নয়ন বিভাগ বা নারী মন্ত্রণালয় চালু করে। আশির দশকের শেষে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন দাতা সংস্থায় নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘উন্নয়নে নারী বিভাগ চালু হয়। জাতিসংঘের দ্বিতীয় উন্নয়ন দশক (১৯৭০-৮০) থেকে নারী ইস্যু এবং উন্নয়নে নারী আন্দোলনটি বিকাশ লাভ করে ।

জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা:

বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন ছাড়াও ব্রাজিলের জাতিসংঘ ‘পরিবেশ ওউন্নয়ন সম্মেলন’, ‘ভিয়েনা মানবাধিকার সম্মেলন’, ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত সামাজিক উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলন’, কমনয়েলথ জেন্ডার ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় জাতীয় উন্নয়ন ও জাতি গঠনে নারীসমাজের অংশগ্রহণের বিষয়টি বিশেষভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশেও জাতীয় উন্নয়নে নারীর ব্যাপকতর অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৫ মিলিয়ন নারী বিভিন্ন কর্মপেশায় নিয়ােজিত। শিক্ষাক্ষেত্রে, রাজনৈতিক অবস্থান ও দলসমূহে, স্থানীয় সরকারে, প্রশাসনে, উৎপাদনে, আত্মকর্মসংস্থানে, অর্থনৈতিক অবস্থানে, স্বাস্থ্য ও পুষ্টিতে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকঅবস্থানে বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে নারীরা। প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনায় নিয়ােজিত রয়েছে প্রায় দশ হাজার নারী শ্রমিক ও কর্মজীবী নারীদের প্রায় আশি শতাংশ কাজ করছে পােশাকশিল্পে । মাছ চাষ, বনায়ন, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, হাঁস-মুরগি পালনসহ শিল্প উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণন কাজেও রয়েছে নারীর উল্লেখযােগ্য অংশগ্রহণ । শিক্ষকতা, চিকিৎসা সেবা বিশেষত নার্সিংয়ে নারী সংখ্যাই বেশি। বিজ্ঞাপনী
সংস্থা, অভ্যর্থনা ডেস্ক এবং বিপণীকেন্দ্রেও কাজ করছে অনেক শহুরে নারী । নারীরা নিয়ােজিত রয়েছে আইনজীবী ও সাংবাদিকতার মতাে চ্যালেঞ্জিং পেশায়। ব্যবসায়ী অর্থাৎ উদ্যোক্তা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত কেউ কেউ। সকলেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে জাতীয় উন্নয়নে।

নারীর অদৃশ্য অবদান:

জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব কাজ যেমন, গৃহস্থালী অর্থাৎ সাংসারিক কর্মকাণ্ডের বােঝা বহন
করে নারীসমাজ। জাতীয় অর্থনীতিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক মূল্য নেই বলে তা স্বীকৃতিহীন। গৃহশ্রম তাই জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় না। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীরা সংসারে যে কাজ করে তার মূল্য দিতে হলে এবং তা সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হলে বিশ্বের মােট উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যাবে বিশ থেকে ত্রিশ শতাংশ। জাতীয় উন্নয়নে নারীর এ অবদানও ছােট করে দেখার কোনাে অবকাশ নেই।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীসমাজ:

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম বাঙালি জাতির পরিচয়। জাতি গঠনে নারীসমাজের কথা বলতে গেলে অবধারিতভাবে এসে যায় মুক্তিযুদ্ধে নারীসমাজের গৌরবােজ্জ্বল অবদানের কথা। মুক্তিযুদ্ধে নারীসমাজ নানাভাবে অংশ নেয়। যুদ্ধের শুরুতে প্রতিটি অঞ্চলে যে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় তাতে নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। তারামন বিবি, কাকন বিবি, রহিমা বেগমসহ নাম না জানা অনেক নারী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযােদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, আহার জুগিয়েছেন, আহত মুক্তিযােদ্ধাদের সেবা শুশ্রুষা করেছেন। জীবন বাজি রেখে হানাদার ও রাজাকার বাহিনী সম্পর্কে গােপনে মুক্তিযােদ্ধাদেরকে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেছেন অনেক নারী । মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকার বাহিনীর কাছে সম্ভ্রম হারিয়েছেন প্রায় দুই লক্ষ নারী। নারীর এ আত্মত্যাগ বাঙালি জাতির কাছে এক বিশাল ঋণ শুধু মুক্তিযুদ্ধই নয় ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিরােধী মুক্তি আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগ্রাম এদেশের নারীসমাজের বহুমাত্রিক অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে।

জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতা:

বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর ভূমিকা এখনও সীমিত। তাই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও নারীসমাজ নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন। এর মধ্যে রয়েছে-

১. শ্রমবাজারে নারীর সীমিত প্রবেশাধিকার ;
২. কাজে নিয়ােগের ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার ;
৩. মজুরি বৈষম্যের শিকার ;
৪. গণতন্ত্রে নারীর অধিকার এখনও অবিকশিত ;
৫, সঠিক সমন্বয়হীনতার অভাবে গ্রামাঞ্চলে নারীর স্বকর্মসংস্থানের অনেক কর্মসূচি নারীর কাছে পৌছায় না ;
৬. সামাজিক অবস্থান ও মানসিক দৈন্য এখনও শিক্ষা থেকে নারীকে দূরে সরিয়ে রেখেছে ;
৭. ফতােয়াবাজ মৌলবাদীদের অপতৎপরতার শিকার হচ্ছে নারীরা এখনও।

প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়:

বাংলাদেশে জাতীয় উন্নয়নের সাথে জড়িয়ে আছে নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি। ক্ষমতায়ন অর্থাৎ বস্তুগত, মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই নারীসমাজ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে অংশ নিতে পারবে। আর এর মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব। শ্রমবাজারে নারীর সমান প্রবেশাধিকার ও সমান মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার সুযোেগ পৌছে দিতে হবে তৃণমূল পর্যায়ে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ও গণতন্ত্রে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ফতােয়াবাজদের অপতৎপরতা বন্ধ করে সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে নারীকে সচেতন করতে হবে। সর্বোপরি প্রশাসনিক ও রাজনৈতকি নেতৃত্বে নারীর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।

উপসংহার:

বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে আলােচ্য বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশের সরকার জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ঘােষণা করে। কেননা নারীকে উন্নয়ন পরিকল্পনার বাইরে রেখে ফলপ্রসূ জাতীয় উন্নয়ন অর্থাৎ সঠিক জাতি গঠন সম্ভব নয়। তাই এ ব্যাপারে পুরুষপ্রধান সমাজে পুরুষকেও সচেতন হতে হবে। সঠিক বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে গৃহীত নীতিমালার। তাহলেই কাক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হবে।

4.6/5 - (12 votes)

You may also like

1 comment

Ornab April 17, 2021 - 1:02 pm

Very Good
Best Of Lack

Reply

Leave a Comment