Home রচনা বাংলা নববর্ষ/ পহেলা বৈশাখ রচনা

বাংলা নববর্ষ/ পহেলা বৈশাখ রচনা

by Curiosityn
0 comment

বাংলা নববর্ষ/ পহেলা বৈশাখ রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • বাংলার সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ
  • বাংলা নববর্ষের অর্থনৈতিক তাৎপর্য
  • নববর্ষের সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
  • নববর্ষ ও বৈশাখী মেলা
  • নগরজীবনে বাংলা নববর্ষ
  • বাংলা নববর্ষে উপজাতীয় উৎসব
  • উপসংহার

বাংলা নববর্ষ/ পহেলা বৈশাখ রচনা লিখন

ভূমিকা :

পহেলা বৈশাখ বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন। দিনটি সমগ্র বাঙালি তথা বাংলাদেশিদের কাছে নববর্ষ নামেপরিচিত। বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বজনীন উৎসব। এটি নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জীর সূচনা করে এবং আশায় বুকবেঁধে নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে আমাদের প্রেরণা যােগায়। অতীতের সুখ-দুঃখ ভুলে গিয়ে নতুনের আহ্বানে জেগেউঠে সবাই। বিভিন্ন আনন্দ উৎসবে সমবেত হয় দেশের সর্বস্তরের নারী-পুরুষ। অজান্তে হৃদয় তন্ত্রীতে বেজে ওঠেভালােবাসার সুর। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-

“মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,অগ্নিস্নানে শুচি হােক ধরা।রসের আবেশ রাশি, শুষ্ক করি দাও আসি,আনাে আনাে তব প্রলয়ের শাখ,এসাে, এসাে, এসাে হে বৈশাখ”।

বাংলার সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ:

যদিও বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতাে ইংরেজি বর্ষের দিনক্ষণমেনে চলতে হয় তবুও বাঙালির ঐতিহ্যের শেকড়ে গ্রথিত বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলা নববর্ষই আমাদের একমাত্র সাংস্কৃতিক সর্বজনীন উৎসব। ধর্মীয়ভাবে এ দেশের মুসলমানরা ঈদ, হিন্দুরা দুর্গোৎসব, বৌদ্ধরা বৌদ্ধ পূর্ণিমা এবংখ্রিস্টানরা বড় দিনের উৎসব পালন করে থাকেন। এগুলাে ধর্মীয় চেতনায় উদ্ভূত উৎসব। কিন্তু বাঙালি জাতির সম্মিলিতউৎসব একটিই। তা হলাে নববর্ষের এ বৈশাখী উৎসব। বাংলা নববর্ষ বহুমাত্রিকতায় পরিপূর্ণ। আমাদের প্রকৃতি, সমাজ,অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, জীবনাচার সবকিছুর সঙ্গেই নববর্ষের যােগ। আগে নববর্ষের উৎসব অনুষ্ঠান পল্লিকেন্দ্রিক ছিল। কিন্তুএখন তা শহরে ব্যাপ্ত হয়ে জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। পহেলা বৈশাখ নতুনতর চেতনা ও উপলদ্ধি নিয়ে বাঙালিরসাংস্কৃতিক চৈতন্যে পল্লব বিস্তার করছে। ব্যক্তির কাছে ব্যক্তিকে, ব্যষ্টির কাছে সমষ্টিকে এনে মেলবন্ধন রচনা করছে।আর তাই কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ই-মেইলের আধুনিক যুগেও আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় পহেলা বৈশাখে সাড়ম্বরে শুভহালখাতা অনুষ্ঠানের আয়ােজন করে।

বাংলা নববর্ষের অর্থনৈতিক তাৎপর্য:

বৈশাখের সঙ্গে বালার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের যােগসূত্রটি সুপ্রাচীন। আগেবৈশাখ মাসটি বাংলা সনের সূচনা মাস হিসেবে গণ্য ছিল না। তখন প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। সেন আমলের অবসানের পরবাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। মুসলিম শাসনামলে বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক তৎপরতা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধিপেয়েছিল। মােঘল শাসনামলে আকবরের সময় কৃষকদের ধান তােলার কাল ও রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে বৈশাখ মাসটিকেবঙ্গাব্দের প্রথম মাস হিসেবে ধার্য করা হয়। কোনাে জাতির অর্থনৈতিক বিকাশে শিল্প বিপ্লবজনিত ভূমিকাটি আধুনিককালেরব্যাপার, কিন্তু সে আমলে যেকোনাে জাতির সমৃদ্ধির পেছনে কৃষিনির্ভরতাই ছিল অগ্রগণ্য। তাই মূলত কৃষিজাত পণ্যেরপ্রাচুর্যের কারণেই বৈশাখ মাসটি বাংলা সনের প্রথম মাস হিসেবে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হয়। তাই বাংলা নববর্ষ।গ্রামবাংলার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে আছে।

নববর্ষের সাংস্কৃতিক তাৎপর্য :

বাংলা নববর্ষ আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়কে বহন করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নববর্ষআজ আমাদের জাতীয় উৎসব। আমাদের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে আমরা প্রত্যক্ষ করি নববর্ষের অনুষ্ঠানে,আবিষ্কারও করি এ উৎসবে। নববর্ষের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আমরা আমাদের জীবনবাদী ও কল্যাণধর্মী রূপটিকেই খুঁজে পাই।নতুন বর্ষকে স্বাগত জানানাে মানে আমাদের জীবনকেই নতুনভাবে গ্রহণের, সাজানাের প্রস্তুতি। আমাদের নববর্ষের উৎসব।নির্মল আনন্দের উৎসধারা। আমরা বাংলা নববর্ষকে বরণ করি প্রভাতী অরুণালােকে প্রকৃতির উন্মুক্ত পরিবেশে নির্মল আনন্দআয়ােজনের মাধ্যমে।পাওয়া যায়।

নববর্ষ ও বৈশাখী মেলা :

বৈশাখী মেলা সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সর্বজনীন মিলনােৎসব। নববর্ষকে।উৎসবমুখর করে তােলে বৈশাখী মেলা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের এক মহামিলন ক্ষেত্র এই মেলা। মেলা’ শব্দেরআভিধানিক অর্থ প্রাচুর্য। আমাদের কুটির শিল্পজাত এমন কোনাে পণ্য নেই, যা বৈশাখী মেলায় দৃষ্টিগােচর হয় না। বাহারিপণ্যের এমন বিপুল সমাবেশ হয় বলেই এর নাম ‘মেলা’। বৈশাখী মেলা অত্যন্ত আনন্দঘন হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষিজাতদ্রব্য, কারুপণ্য, লােকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী ও সকল প্রকার হস্তশিল্পজাত এবং মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী এ মেলায়এ ছাড়া শিশু-কিশােরদের খেলনা, মহিলাদের সাজ-সজ্জার সামগ্রী এবং বিভিন্ন লােকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন :চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় সমারােহ থাকে বৈশাখী মেলায়।বৈশাখী মেলাগুলাে শুধু হস্তশিল্প ও কারুশিল্পের প্রদর্শনী হিসেবে চিহ্নিত নয়। মেলায় বিনােদনেরও ব্যবস্থা থাকে।গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একটি পরিচিতি এ, মেলাগুলােতে ফুটে ওঠে। মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলেরলােগায়ক ও লােকনর্তকদের উপস্থিতি থাকে।

নগরজীবনে বাংলা নববর্ষ :

বর্তমানে নগরজীবনে নগর-সংস্কৃতির আদলে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে নববর্ষ উদ্যাপিতহয়। পহেলা বৈশাখের প্রভাতে উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানাের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নববর্ষের উৎসব। এ সময় নতুনসূর্যকে প্রত্যক্ষ করতে রমনার বটমূলে অতি প্রত্যুষে নগরবাসীরা সমবেত হয়। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে শিল্পীরা সঙ্গীতপরিবেশন করে। এদিন সাধারণত সকল শ্রেণির এবং সকল বয়সের মানুষ ঐতিহ্যবাহী বাঙালি পােশাক পরিধান করে।নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তরুণীরা লালপেড়ে সাদা শাড়ি, হাতে চুড়ি, খােপায় ফুল, গলায় ফুলের মালা এবং কপালে টিপপরে; আর ছেলেরা পরে পাজামা ও পাঞ্জাবি। কেউ কেউ ধুতি-পাঞ্জাবিও পরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকেমঙ্গল শােভাযাত্রার আয়ােজন করা হয়। এতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে।

বাংলা নববর্ষে উপজাতীয় উৎসব :

চৈত্রসংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, বান্দরবানও খাগড়াছড়ি) উপজাতীয়দের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয়-সামাজিক উৎসব ‘বৈসাবি’ আনন্দমুখর পরিবেশে পালিত হয়। বৈসাবিহলাে পাহাড়িদের সবচেয়ে বড় উৎসব। এ উৎসবকে চাকমারা ‘বিজু’, মারমারা সাংগ্রাই’ এবং ত্রিপুরারা ‘বৈসুক’ বলে আখ্যাদিলেও সারাদেশে তা ‘বৈসাবি’ নামেই পরিচিত। বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিজু এ তিনটি উৎসবের আদ্যাক্ষর নিয়েই মূলত এমননামকরণ। পাহাড়িরা তিন দিনব্যাপী এ বর্ষবরণ উৎসব সেই আদিকাল থেকে পালন করে আসছে। এ উৎসব উপলক্ষেপাহাড়িদের বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আদিবাসী মেলার আয়ােজন করা হয়। নববর্ষের দিন মারমা উপজাতীয়রা আয়ােজন করে ঐতিহ্যবাহী জল কেলি বা পানি খেলা। পানিকে পবিত্রতার প্রতীক ধরে নিয়ে মারমারা তরুণ-তরুণীদের পানিছিটিয়ে পবিত্র ও শুদ্ধ করে নেয়। পাহাড়িদের মধ্যে পানি উৎসবটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

উপসংহার :

বাংলা নববর্ষ শুধু আমাদের বর্ষসূচনার দিন নয়, এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচিতি খুঁজে পেতে অবাধসুযােগ প্রদান করে। নববর্ষ আমাদের অতীত ঐতিহ্যকে জাগ্রত করে, বর্তমানের মূল্যায়ন ঘটায়, জাতির আগামী দিনেরূপরেখাটির দিকনির্দেশনা দেয়। বাঙালি এই দিনে নিজেকে আবিষ্কার করে নতুন আঙ্গিকে। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলেঅনাগত দিনের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে।

5/5 - (1 vote)

You may also like

Leave a Comment