Home রচনা চলাে গ্রামে ফিরে যাই রচনা (৯০০ শব্দ)

চলাে গ্রামে ফিরে যাই রচনা (৯০০ শব্দ)

by Curiosityn
0 comment

চলাে গ্রামে ফিরে যাই রচনার সংকেত

» গ্রামে ফিরে যাও » গ্রামােন্নয়নই দেশােন্নয়ন » শহরের বিকল্প গ্রাম » গ্রামােন্নয়ন » গ্রামীণ জীবন » এসো দেশ গড়ি » সুখি জীবন বনাম গ্রাম্য জীবন » পল্লি উন্নয়ন রচনার সংংকেত

  • ভূমিকা
  • প্রাচীন গ্রামবাংলার চিত্র
  • বাংলাদেশের গ্রামের বর্তমান চিত্র
  • শহুরে জীবনে চাকচিক্য ও সমস্যা
  • গ্রামােন্নয়নের প্রয়ােজনীয়তা ও উপায়
  • উপসংহার

চলাে গ্রামে ফিরে যাই রচনা

» গ্রামে ফিরে যাও » গ্রামােন্নয়নই দেশােন্নয়ন » শহরের বিকল্প গ্রাম » গ্রামােন্নয়ন » গ্রামীণ জীবন » এসো দেশ গড়ি » সুখি জীবন বনাম গ্রাম্য জীবন » পল্লি উন্নয়ন রচনা

ভূমিকা:

বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। কত হাজার বছর ধরে গায়ের সাথে বাংলার নিবিড় বন্ধন গ্রামের প্রাণরস নিংড়েই তিলে তিলে মানুষ গড়ে তুলেছে তিলােত্তমা শহর। আর শহরের চোখ ধাঁধানাে কৃত্রিম জৌলুসে, বিলাস-ব্যাসনের মােহে কাজের আশায় মানুষ ছুটে চলেছে শহর পানে। শহরে মাথা গোঁজার ঠাই নেই। তবু মিথ্যে মরীচিকার পেছনে ছােটাছুটি। অথচ সুদূর অতীতে বাংলাদেশের কৃষিপ্রধান স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামই ছিল সুখ-সমৃদ্ধির আধার। আজ গ্রামের সেই পুরােনাে রূপ আর নেই। কিন্তু মানুষ উপলদ্ধি করছে, গ্রামের উন্নতি ও অগ্রগতির মানে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন । তাই মানুষ যেন আবার সেই অকৃত্রিম সুখে অবগাহন করতে চাইছে।

প্রাচীন গ্রামবাংলার চিত্র:

নদীমাতৃক বাংলাদেশের গ্রামগুলাে ছিল প্রকৃতির এক অপার্থিব দান। বাংলার পলিসমৃদ্ধ মাটিতে চাষাবাদ করে মানুষ একই জায়গায় বছরের পর বছর ধরে প্রচুর ফসল ফলিয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা ছিল সচ্ছল। কেবল চাষিরাই নয়, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি সকলেই হিল স্বয়ংসম্পূর্ণ । গ্রামগুলাে ছিল উৎসমুখর ছিল বারাে মাসে তেরাে পার্বণ। কিন্তু যন্ত্রসভ্যতার বীজ একসময় এদেশের বুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিদেশি বেনিয়া শাসন-শােষণের রূিপ প্রতিক্রিয়া পড়ে বাংলার গ্রামীণ অর্থনীতি ও কৃষকের ওপর। বাংলার সম্পদ লুটে নিয়ে যায় তারা নিজ দেশে । তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, কুটিরশিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। কৃষক হয়ে পড়ে সর্বস্বান্ত জমিদারি প্রথা আর মহাজনি সুদের জাতাকলে পড়ে বাংলার স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। তার ওপর আসে দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তরের আঘাত। গ্রামবাংলার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পরও উন্নয়ন যা ঘটেছে তা শহরকেন্দ্রিক। স্বাধীনােত্তর বাংলায় ভেঙে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলেছে, কিন্তু বাস্তবে উন্নয়নের জন্য অর্থসম্পদ নিয়ােজিত হয়েছে শহরে। শহরের যান্ত্রিক সভ্যতায় মুষ্টিমেয় লােকের হাতে অর্থ ও ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হয়েছে। এরা গ্রামবিমুখ। অথচ গ্রামের যেসব মানুষ তাদের সমস্ত শক্তি নিয়ােগ করে তন্ন উৎপাদন করে সেই অন্নেই তথাকথিত সভ্যজগৎ প্রাণধারণ করে।

বাংলাদেশের গ্রামের বর্তমান চিত্র:

বাংলাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ লােক গ্রামে বাস করে। যাদের অধিকাংশই ভূমিহীন। কিছু লােক অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করে, কিছু লােকের আত্মকর্মসংস্থানের কোনাে সুযােগ নেই। এরা সম্পদহীন। সামাজিক বিভিন্ন সুযােগ-সুবিধা থেকে এরা বঞ্চিত । চাঁদের যেমন এক পিঠে আলাে, অন্যপিঠে অন্ধকার, শহর আর গ্রামের অবস্থাও যেন তেমনই । শহরে সম্পদের গরিমা, ভােগবিলাস-সাধনের ব্যস্ততা আর গ্রাম মিয়মাণ, আর্থিক দৈন্য গ্রামের মানুষকে যেন পঙ্গু করে রেখেছে। শহুরে বিলাসিতার যে উচ্ছিষ্ট গ্রামে পৌঁছায় তা প্রয়ােজনের তুলনায় নিতান্তই অল্প । গ্রামােন্নয়ন ও গ্রামের দারিদ্র্য বিমােচনের যেসব বাহারি নামসর্বস্ব কর্মসূচি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তার কতখানি সত্যিকার অর্থে গ্রামের কল্যাণে বাস্তবায়িত হয় তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে যথেষ্ট । আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার ছোঁয়ায় শিল্পের ক্রমবিকাশমান ধারা কেবল শহরমুখী। গ্রামে সেই সুযােগ-সুবিধা, সেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি বললেই চলে। যন্ত্রে যারা পিছিয়ে আছে তারা যন্ত্রসভ্যতায় অগ্রবর্তীদের সাথে কিছুতেই পেরে উঠবে না— এটিই স্বাভাবিক। গ্রামে তাই দরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে এবং তারা প্রিয় গ্রাম ছেড়ে দলে দলে শহরে ছুটে চলেছে কাজের আশায়।

শহুরে জীবনে চাকচিক্য ও সমস্যা:

কলে তৈরি শহুরে জীবন কেবল কৃত্রিম আলাে আর চাকচিক্যে ভরপুর। সে আলােয় প্রাণ নেই, নেই চাঁদ, সূর্য কিংবা তারার সংগীত । শহুরে জীবনে অনেক সুবিধা রয়েছে এটি সত্য। আধুনিক রাস্তাঘাট, যানবাহন, বিদ্যুৎ-পানি-জ্বালানির সুযােগ-সুবিধা, সারি সারি সুরম্য অট্টালিকা, বহির্বিশ্বের সাথে যােগাযােগ; শিক্ষাদীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, বিনােদন সভ্যতার অগ্রগতিতে দিন-দিন সংযােজিত হচ্ছে আরও নতুন নতুন বিষয়। তবে নিদারুণ সত্য যে, এর সবই কেন্দ্রীভূত থাকছে মুষ্টিমেয়র হাতে। বহুতল ভবনের পায়ের নিচে ঠাই করে নিয়েছে আশ্রয়হীন মানুষ, বস্তিবাসী। ছিন্নমূল মানুষেরা আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে রেলস্টেশনে, ফুটপাতে, খােলা আকাশের নিচে। শহরে নেমে এসেছে ভারসাম্যহীনতা, বিশৃঙ্খলতা। বেড়ে গেছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। ঘরে বাইরে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শহর জীবনে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা । বিপুল জনভারে ভারাক্রান্ত নগরবাসী যেন স্বস্তি পেতে চাইছে। নিবিড় গ্রামই যেন ফিরিয়ে দিতে পারে সেই স্বস্তি। প্রাণে ধ্বনিত হয় রবীন্দ্রনাথের কবিতার সেই চরণ

‘অবারিত মাঠ গগনললাট চুমে তব পদধূলি
ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছােটো ছােটো গ্রামগুলি।

গ্রামােন্নয়নের প্রয়ােজনীয়তা ও উপায়:

নগরজীবনে জীবিকা বড় কঠিন। সেখানে শক্তির প্রতিযােগিতা। এ প্রতিযােগিতা আর সংকটের আবর্তের মধ্যে পড়ে দেশের উন্নয়নের জন্য গ্রামােন্নয়নের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ তাই কৃষি ও গ্রামের উন্নয়নের ওপরই নির্ভর করছে জাতীয় উন্নয়ন। আর গ্রামীণ অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমেই কৃষির উন্নয়ন সম্ভব। এ বাস্তব উপলব্ধি থেকেও মানুষ গ্রামে ফিরে যেতে চাইছে। আর সত্যিকার অর্থে গ্রামােন্নয়নের জন্য শিক্ষিত যুবসমাজ ও বিত্তবানদের ফিরে যেতে হবে গ্রামে । বিজ্ঞান মানুষকে যে শক্তি দিয়েছে সে শক্তির বিকাশ ঘটাতে হবে গ্রামে । রবীন্দ্রনাথ পল্লি উন্নয়ন সম্পর্কে বলেছেন, “আজ শুধু একলা চাষির চাষ করবার দিন নাই, আজ তাহার সঙ্গে বিদ্বানকে, বৈজ্ঞানিককে যােগ দিতে হইবে আজ শুধু চাষির লাঙলের ফলার সঙ্গে আমাদের দেশের মাটির সংযােগ যথেষ্ট নয়— সমস্ত দেশের বুদ্ধির সঙ্গে, বিদ্যার সঙ্গে, অধ্যবসায়ের সঙ্গে তাহার সংযােগ হওয়া চাই।” গ্রামের মানুষের মানসিকতার উন্নয়ন ঘটাতে শিক্ষার বিস্তার সবচেয়ে জরুরি। স্কুলকলেজ, পাঠাগার ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে সেই সুযােগ তৈরি করা যায়। চিকিৎসার সুব্যবস্থার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, হাসপাতাল নির্মাণ করতে হবে। রাস্তাঘাট সংস্কারের মাধ্যমে যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, পানীয় জলের সুব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, চিত্তবিনােদনের জন্য পার্ক নির্মাণ, অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনা প্রভৃতি পদক্ষেপ নিয়ে গ্রামােন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার ও জনসাধারণকে। দেশের প্রশাসনকে করতে হবে গ্রামমুখী। নাগরিক জীবনের মতাে নিরবচ্ছিন্ন সুযােগ-সুবিধা না হলেও মামলা-মােকদ্দমাসহ প্রশাসনিক কিছু কিছু সুবিধা গ্রামেও পৌছে দিতে হবে। গ্রামে আবাস ও কাজের সুযােগ সৃষ্টি হলে শহরের ওপর চাপ কমবে। শেকড়ের টানে মানুষ ফিরে যেতে চাইবে গ্রামে।

উপসংহার:

গ্রামের মানুষের ভেতর নাগরিক কৃত্রিমতা নেই। প্রকৃতির মতােই তারা সহজসরল। সেই সাথে গ্রামে রয়েছে। প্রকৃতির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানাের সুযােগ। আকাশ থেকে আকাশে, দিগন্ত থেকে দিগন্তে, জলহাওয়ায়, শস্যে- ফুলেফলে কেবলই নির্মল সৌন্দর্য। প্রকৃতির ঔদার্য আর মানুষের ঔদার্য তাই কেবলই হাতছানি দিয়ে ডাকে শহরের যন্ত্রমানবদের। চেতনার গভীরে লুকিয়ে থাকা অচেনা অনুভূতি সর্বক্ষণ হৃদয়ে কড়া নাড়ে। বলে— ‘চলাে, গ্রামে ফিরে যাই’

Rate this post

You may also like

Leave a Comment