Home রচনা বেকার সমস্যা ও প্রতিকার রচনা (৫৭০ শব্দ)

বেকার সমস্যা ও প্রতিকার রচনা (৫৭০ শব্দ)

by Curiosityn
0 comment

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও প্রতিকার রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • বেকারত্বের ধরন
  • বাংলাদেশে বেকারত্বের কারণ
  • বাংলাদেশে বেকারত্বের ক্ষতিকর প্রভাব
  • বেকারত্ব দূরীকরণের উপায়
  • উপসংহার

বাংলাদেশের বেকার সমস্যা ও প্রতিকার রচনা

ভূমিকা:

বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বেকার সমস্যা তার মধ্যে অন্যতম। পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে পড়ছে এর নেতিবাচক প্রভাব। প্রচলিত অর্থে শ্রমশক্তির সেই অংশই বেকার, যারা কর্মক্ষম, কাজ করতে ইচ্ছুক, কিন্তু কাজের সুযােগ নেই। অন্যদিকে, কাজের সুযােগ থাকা সত্ত্বেও যারা শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে কাজ রতে সক্ষম নয় তাদেরকে বেকার বলা যায় না।

বেকারত্বের ধরন:

বেকারত্বের ধরন ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বেকারত্বকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- আর্থ-সামাজিক কাঠামােগত কারণে অর্থাৎ মূলধনের অভাব, প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কর্মক্ষেত্রের অভাবজনিত কারণে সৃষ্টি হওয়া বেকারত্বকে বলা হয় কাঠামােগত বেকারত্ব। হঠাৎ কোনাে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে সৃষ্ট বেকারত্বকে বলা হয় আকস্মিক বেকারত্ব। প্রযুক্তিগত ও কারিগরি উন্নয়নের জন্য কর্মক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আসে এর ফলে সৃষ্টি হয় প্রযুক্তিজনিত বেকারত্ব। কিছু কিছু উৎপাদন খাতে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে কাজ হয়। এ অবস্থাজনিত বেকারত্বকে বলা হয় মৌসুমি বেকারত্ব। বাংলাদেশে মূলত কাঠামােগত বেকারত্বই বিরাজমান। তবে অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক হওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন,
কোরত্বও বিরাজ করে।

বাংলাদেশে বেকারত্বের কারণ:

যেসব কারণে বাংলাদেশে বেকারত্ব বিরাজমান তার মধ্যে প্রধান হলাে—
১. জনসংখ্যা বৃদ্ধির উচ্চহার;
২. কৃষিখাতে বর্ধিত জনশক্তির আত্তীকরণ না হওয়া;
৩, শিল্পে অনগ্রসরতা;
৪.মূলধনের অভাব;
৫.অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বৃদ্ধি;
৬.সঠিক বিনিয়ােগের অভাব;
৭.জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট;
৮. সমবায় আন্দোলনের সমন্বয়হীনতা;
৯.পুঁজিপতি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য;
১০. সরকারি অদূরদর্শিতা;
১১. ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা:
১২. সামজিক প্রতিবন্ধকতা;
১৩. রাজনৈতিক অস্থিরতা:
১৪. নুজতিক অর্থনীতির মন্দাভাব

বাংলাদেশে বেকারত্বের ক্ষতিকর প্রভাব:

বেসরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশে মােট কর্মক্ষম জনগােষ্ঠীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেকার। এ বেকারত্ব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। স্বল্পশিক্ষিতদের তুলনায় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট এবং তার চেয়ে একটু বেশি পর্যায়ের শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। সঠিক কর্মসংস্থানের অভাবে বাধ্য হয়ে অনেকে নিম্নমানের কাজ করছে। কর্মহীনতার হতাশায় কেউ কেউ নানারকম সামাজিক অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। বেড়ে গেছে ছিনতাই, চোরাচালান, মাদকাসক্তি এবং দুর্নীতি। শিক্ষিত যুবকদের অনেকেই এসব অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে। পারিবারিক-সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য।

সর্বোপরি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে দেশের সম্পদ যুবশটি চরম হতাশায় নিমগ্ন হচ্ছে ।

বেকারত্ব দূরীকরণের উপায়:

বাংলাদেশ থেকে বেকারত্ব দূর কর। স্বল্প সময়ে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়ােজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা । এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রােধ এবং অর্থনৈতিক কাঠামােগত পরিবর্তনে। প্রয়ােজন। কর্মমুখী শিক্ষাবিস্তার, কুটিরশিল্পের প্রসারসহ আত্মকর্মসংস্থানমূলক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন। উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়ােগ বাড়ালে কর্মসংস্থানের সুযােগও বাড়বে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে ঢাকার আদমজী জুট মিল ও খুলনার পিপল্স জুট মিল’ হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তা না পেয়ে বিনিয়ােগ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে বিদেশি গুপ টাটা। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের একটা সুযােগ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্ত হতে হবে সঠিক, সময়ােপযােগী ও বাস্তবমুখী। শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে বৃত্তিমূলক,কারিগরি ও কৃষিশিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের জন্য সার, বীজ, যন্ত্রাংশ, কীটনাশক প্রভৃতির বাজার সম্প্রসারণ; হাঁস-মুগি ও গবাদি পশুপালন, মাছ চাষ, বনায়ন ইত্যাদির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযােগ তৈরি করতে হবে। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প এবং বিদেশি বিনিয়ােগের লক্ষ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষুদ্র শিল্প এবং বিভিন্ন প্রচলিত-অপ্রচলিত খাতে মহিলা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা প্রদান করতে হবে। সর্বোপরি এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ রাজনৈতিক দলগুলােকেও এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহার:

বাংলাদেশে বেকার সমস্যা একক কোনাে সমস্যা নয়, ব্রং বহুবিধ সমস্যার জনক। এ সমস্যা ব্যক্তি ও পারিবারিক জীন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি সদিচ্ছা যেমন জরুরি, তেমনি সৎ ও যােগ্য নেতৃত্বেরও প্রয়ােজন। বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিক্ষিত ও পরিশ্রমী জনগােষ্ঠীকে বিভিন্ন ধরনের কাজে উৎসাহী করে তুলতে পারলেই বেকারত্বের বিশাল বােঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

3.2/5 - (4 votes)

You may also like

Leave a Comment