Home রচনা যানজট ও এর প্রতিকার রচনা (750 words)

যানজট ও এর প্রতিকার রচনা (750 words)

by Curiosityn
0 comment

যানজট ও এর প্রতিকার রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • বাংলাদেশের যানজট
  • যানজটের কারণ
  • যানজটের ক্ষয়ক্ষতি
  • যানজট প্রতিকারের উপায়
  • উপসংহার

যানজট ও এর প্রতিকার রচনা

ভূমিকা:

বিরামহীন সিটি বাজিয়ে চলেছে একটা অ্যাম্বুলেন্স। ভেতরে মুমূর্ষ রােগী, উদ্বিগ্ন আত্মীয়পরিজন। এক্ষুনি হাসপাতালে পৌছনাে দরকার। সামনে কার, জিপ, মিনিবাস, মাইক্রোবাসের দীর্ঘ সারি। পাশে রিকশা, অটোরিকশা ঠ্যালাগাড়ি। খানিকটা সরে গিয়ে কেউ যে অ্যাম্বুলেন্সকে জায়গা করে দেবে সে উপায়ও নেই । এ দীর্ঘ সারি সারি যানবাহনের ভিড়েই কেউ আছে পরীক্ষার্থী, কেউ অফিস যাত্রী, কেউ দূরপাল্লার বাস-ট্রেনের যাত্রী। কেউ স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়গামী। সময় মতাে কেউই পৌছতে পারছে না গন্তব্যে। এরই নাম যানজট।

বাংলাদেশের যানজট:

যানজট এক দুঃসহ, বিড়ম্বনাময়, ক্লান্তিকর অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলাে, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ভয়াবহভাবে আক্রান্ত যানজট সমস্যায় । আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার এ যুগে গতিশীল পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ কেবল সামনে ছুটে চলার প্রতিযােগিতায় নেমেছে, হচ্ছে শহরমুখী, রাজধানীমুখী। তাই এক কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা শহরে যানজট সমস্যা সবচেয়ে প্রকট। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কর্মচওল মানুষকে কাজে বের হতে হয় । শিক্ষা, প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, দোকান, মার্কেট, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সবখানেই কাজ শুরু হয়। আর রাস্তায় শুরু হয়ে যায যানবাহনের সামনে এগােনাের প্রতিযােগিতা। ধীরগতি ও দ্রুতগতির যান একই রাস্তায় বিশৃঙ্খলভাবে চলতে থাকে। সেই সাথে রয়েছে ওভারটেকের ব্যস্ততা। ছােট রাস্তা, এলােপাথাড়ি চলাচল। একসময় সব জট পাকিয়ে যায়। শুরু হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পালা। জট খুললেও স্বস্তি নেই। যানবাহনের সারি একটু এগােয়, আবার দাড়িয়ে পড়ে । এভাবে পাঁচ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় প্রায় ত্রিশ মিনিট। কোনাে কোনাে এলাকায় প্রায় সারাদিন যানজট লেগে থাকে। তার ওপর রয়েছে ওয়াসা, ডেসা, গ্যাস, টেলিফোন এদের যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মেরামত, রাস্তা দখল করে হকারদের বেচা-কেনা, বাসওয়ালাদের যত্রতত্র পার্কিং, মিছিল, মিটিং, সমাবেশ, টোটকা ওষুধ বিক্রেতা কিংবা বানরওয়ালাকে ঘিরে কর্মহীন মানুষের বিশাল জটলা। এমন পরিস্থিতিতে যানজটে পড়ে হাল ছেড়ে নিরুপায় বসে সময় গােনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

যানজটের কারণ:

যানজটের প্রধান কারণ হলাে ধারণ ক্ষমতার চাইতে বেশি জনসংখ্যা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি যানজট সংকুল ঢাকার চিত্র তুলে ধরলে দেখা যায়, ৩০০ বর্গকিলােমিটার আয়তনের ঢাকা শহরে লােকসংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। লােকসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যাও বাড়ছে দ্রুত। তবে সর্বত্র যে এ কারণেই যানজট হচ্ছে তা নয়। এর সাথে আরও বেশ কিছু বিষয় জড়িয়ে আছে। যেমন—
১. যান চলাচলে অব্যবস্থা এবং নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতি অনীহা;
২. একই সড়কে দ্রুতগতি ও ধীরগতিসম্পন্ন যান চলাচল;
৩. বাস, ট্রাক প্রভৃতি ভারি যানবাহনের জন্য টার্মিনাল ও পর্যাপ্ত স্টপেজের অভাব:
৪. যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা;
৫.অপ্রশস্ত সড়ক এবং পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না রেখেই সড়কের পাশে বহুতল ভবন নির্মাণ;
৬. চারলেন বিশিষ্ট ডিভাইডারযুক্ত সড়কের অভাব;
৭. অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি, দোকানপাট ও রাস্তা নির্মাণ;
৮. ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়ােগের অভাব;
৯. ট্রাফিক আইন সম্পর্কে চালকদের অজ্ঞতা;
১০. ফুটপাতবিহীন কিছু সড়ক, অবৈধ পার্কিং, হকারদের দখলে কিছু ফুটপাথ;
১১. যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি;
১২. সর্বোপরি দ্রুত ও আগে যাবার জন্য চালকদের ওভারটেকিং।

যানজটের ক্ষয়ক্ষতি:

যানজটের ক্ষয়ক্ষতি অপূরণীয় । এর ফলে প্রতিদিন নগরবাসীর লাখ লাখ কর্মঘণ্টা বিফলে যায়। সময়ের এ অপচয়ের ফলে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কাঁচামাল পরিবহনের সময় যানজটের কবলে পড়লে অনেক সময় পথেই তা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌছতে পারে না। চাকরিপ্রার্থীরা হন বিড়ম্বনার শিকার। বাস-ট্রেন যাত্রীরা বাস-ট্রেন ফেল করে বসেন। অ্যাম্বুলেন্সে মুমূর্ষ রােগী অনেক সময় পথেই মারা যায়। যানজটের কারণে কখনাে কখনাে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটে। কোথাও আগুন লাগলে অগ্নিনির্বাপক গাড়ি ঠিক সময়ে পৌছতে পারে না। ফলে জানমালের মারাত্মক ক্ষতি হয়। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, যানজটের জন্য বাংলাদেশে যে আর্থিক ক্ষতি হয় তার পরিমাণ
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।

যানজট প্রতিকারের উপায়:

যানজটের অপূরণীয় ক্ষতিকর দিকগুলাে বিবেচনা করে জনগণ ও দেশের স্বার্থে এ সমস্যা নিরসনে
দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এর জন্য প্রয়ােজন সুষ্ঠু ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন । এর জন্য প্রয়ােজন—
১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, শিল্পকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবন, বহুতল ভবন প্রভৃতি পরিকল্পিতভাবে বিকেন্দ্রীকরণ করা। এতে স্থান বিশেষে জনসংখ্যার চাপ কমবে;
২. ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও এর সুষ্ঠু প্রয়ােগ;
৩. ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা;
৪. রাস্তার পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা;
৫. যানজটপ্রবণ সড়কগুলাের নিদিষ্ট স্থানে পরিকল্পিতভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা;
৬.বিভিন্ন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিস্তৃত সড়ক পরিসর ও গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা;
৭. ব্যস্ততম রাস্তাগুলােকে একমুখী করা;
৮. রাস্তার যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড়ানাে ও অবৈধভাবে পার্কিং নিষিদ্ধ করা।
এ ধরনের পদক্ষেপ সুষ্ঠু ও পরিকল্পিতভাবে প্রয়ােগ করা হলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে

উপসংহার:

যানজট মানুষের চলার গতিকে অনেক শ্লথ ও মন্থর করে দিয়েছে। তাই নগর জীবনের কর্মব্যস্ততা সুষ্ঠু ও সার্বিকভাবে সম্পাদনের জন্য যানজট সমস্যা নিরসনে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা উচিত। কেননা এটি কেবল এককভাবে প্রকার কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নয়, জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে সচেতন হবার । কেননা আইন প্রয়ােগ করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না । গাড়ি চালককে আইন মান্য করতে হবে । যানজট নিরসন সম্ভব হলে মূল্যবান সময়ের অপচয় হবে। মানুষ হবে আরও কর্মমুখর। সমাজজীবনেও আসবে স্থিতি।

আরো দেখুন-

অনুচ্ছেদ: যানজট
রচনা: যানজটের কবলে

2.9/5 - (7 votes)

You may also like

Leave a Comment