Home রচনা রচনা: নারী শিক্ষার গুরুত্ব (১০০০ শব্দ) |

রচনা: নারী শিক্ষার গুরুত্ব (১০০০ শব্দ) |

by Curiosityn
3 comments

রচনা: নারী শিক্ষার গুরুত্ব/ জাতি গঠনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব / নারী শিক্ষা ও নারী মুক্তি / নারী শিক্ষা ও নারী প্রগতি

নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • এদেশে নারীর অবস্থা
  • উন্নত দেশে নারী
  • নারী শিক্ষার গুরুত্ব
  • শিক্ষিত জননী হিসেবে নারী
  • স্বাবলম্বিতা অর্জনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব
  • গৃহস্থালি কাজে নারী শিক্ষার গুরুত্ব
  • দেশ গঠনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব
  • শিক্ষিত নারীদের সফলতার দৃষ্টান্ত
  • নারী শিক্ষার অন্তরায়
  • নারী শিক্ষা বিস্তারের উপায়
  • নারী শিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাবলি
  • উপসংহার

নারী শিক্ষার গুরুত্ব রচনা

ভূমিকা :

“চক্ষু থাকিতে অন্ধ যারা আলােকের দুনিয়ায়
সিন্ধু সেচিয়া বিষ পায় তারা অমৃত নাহি পায়।”

এরূপ অন্ধত্ব মােচনে শিক্ষার বিকল্প নেই। যেহেতু নারী ও পুরুষ সমাজ দেহের দুটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, সেহেতু সমাজ গঠনে উভয়েরই স্ব স্ব ক্ষেত্রে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আর এ দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনে পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও বাস্তবমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে, যা তাদের জীবন ও কর্মধারার সাথে সম্পৃক্ত।

এদেশে নারীর অবস্থা :

আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নর-নারী উভয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব সমানভাবে দেখা হতাে না।আমাদের এ পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের জন্য শিক্ষার সুযােগ ও উদার মানসিকতা যতটুকু ছিল নারীদের জন্য ততটুকু ছিলনা। ফলে একই পরিবারে পুরুষের শিক্ষার সুযােগ থাকলেও নারীর ক্ষেত্রে তেমন হতাে না। এ অভিশাপ আমাদের জাতীয় জীবনে সৃষ্টি করছে নানা সমস্যা। ফলে জাতীয় অগ্রগতি ব্যাহত হতাে। কিন্তু বর্তমানে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরাও পুরুষদের পাশাপাশি সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি সফলতা দেখাচ্ছে। শিক্ষার মাধ্যমে নারীরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হচ্ছে। বর্তমানে পরিবারগুলােতে ছেলে-মেয়েকে আলাদা করে দেখা হচ্ছে না। প্রায় সব ক্ষেত্রে উভয়কেই সমান সুযােগ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষাগুলােতে দেখা যায়, পাসের ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের থেকে বেশ এগিয়ে। এতে সহজেই বুঝা যায় বর্তমানে বাংলার নারীরা পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে পাচ্ছে।

উন্নত দেশে নারী :

উন্নত দেশে নারীদের অবস্থান আজ সুদৃঢ়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে তারা নারী শিক্ষার উপর গুরুত্বারােপ করেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীতে সেখানে কোনাে ভেদাভেদ নেই। আমেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, জার্মানি, কানাডা প্রভৃতি দেশের নারীরা সকল ক্ষেত্রে পারদর্শী। এসব দেশের নারীরা আজ আর পুরুষের মুখাপেক্ষী নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা পুরুষকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।

নারী শিক্ষার গুরুত্ব :

নারী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে আজ কোনাে সন্দেহ নেই। নারীরা দেশের মােট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। তাই এ নারীদের অশিক্ষার অন্ধকারে রেখে জাতি কখনাে উন্নতি করতে পারে না। এক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়-

“রাজা করিতেছে রাজ্য শাসন, রাজারে শাসিছে রানি, রানির দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি।”

তাই জাতিকে উন্নতি করতে হলে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। নারীর ভূমিকা মায়ের হলেও রাষ্ট্রীয় ও অর্থনীতিতে ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আজ নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পুরুষের সাথে নারী কল-কারখানায়, মাঠে কাজ করছে। নারীরা এখন প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। তাই নারী শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম।

শিক্ষিত জননী হিসেবে নারী :

একজন সুশিক্ষিতা মাতা জন্ম দিতে পারে একজন সুশিক্ষিত সন্তান, করতে পারে তাকে নিজের আদর্শে আদর্শিত। কারণ, ছেলে-মেয়েদের উপর মায়ের প্রভাবই বেশি পড়ে। মায়ের কাছ থেকে তারা আচার-আচরণ, আদব-কায়দা ইত্যাদি শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের প্রভাব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে নেপােলিয়ন বলেছিলেন,

“আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তােমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব।”

স্বাবলম্বিতা অর্জনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব :

স্বাবলম্বিতা অর্জনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাচীনকালে নারীরা সবকিছুর জন্য তাদের স্বামীদের উপর নির্ভরশীল ছিল। তারা ছিল অবহেলিতা ও নির্যাতিতা। গৃহ মধ্যেই তাদের কার্যাদি সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আজ নারীরা শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বৈমানিক, শিক্ষিকা, পুলিশ অফিসার এমনকি সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছে। তারা আজ সম্পূর্ণরূপে স্বাবলম্বী। সুতরাং আজ আর নারীকে অবহেলা করার কোনাে সুযােগ নেই। কবিকণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে তাই আজ বলতে হয় –

“সে যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল নাক,
নারীরা আছিল দাসী।”

গৃহস্থালি কাজে নারী শিক্ষার গুরুত্ব :

গৃহস্থালি কাজের দিকে তাকালেও দেখা যায় নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শিক্ষিতা নারীরা সন্তানের অসুখে-বিসুখে যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সেবা শুশ্রুষা ও সংসারের প্রাত্যহিক আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ করতে পারে, অশিক্ষিতা নারীরা সেভাবে করতে পারে না। শিক্ষিতা নারীর হাতে যদি সংসারের ভার ন্যস্ত থাকে তাহলে সংসারের উন্নতি হবেই। তাই মেয়েদেরকে পুরুষদের ন্যায় শিক্ষিত করে তােলা অত্যাবশ্যক।

দেশ গঠনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব :

দেশ গঠনেও নারী শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। অতীতে দেশ গঠনে নারীদের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। বর্তমানেও দেশ গঠনে নারীদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে এ পর্যন্ত যতটি আন্দোলন হয়েছে প্রত্যেকটি আন্দোলনে নারীদের কিছু না কিছু অবদান রয়েছে। আর এ অবদান রেখেছে শুধু শিক্ষিতা মেয়েরাই। তাই দেশ গঠনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

শিক্ষিত নারীদের সফলতার দৃষ্টান্ত :

যুগে যুগে শিক্ষিত নারীরা তাদের কর্মপ্রচেষ্টা দ্বারা পৃথিবীতে অনেক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে প্রভৃতি দেশের নারীরা সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, আন্তর্জাতিক রাজনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রতিভা পাতিল, বেনজীর ভুট্টো, ইন্দিরা গান্ধী, সােনিয়া গান্ধী, শ্রীমাভাে বন্দরনায়েক, মার্গারেট থ্যাচার, হিলারী ক্লিনটন, কন্ডােলিৎসা রাইস প্রমুখ তাদের শিক্ষা ও মেধা দ্বারা মহিলা হয়েও বিশ্বব্যাপী পরিচিত। অনুরূপভাবে বাংলাদেশের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। যেমন- সাহিত্য ক্ষেত্রে সুফিয়া কামাল, সেলিনা হােসেন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন (মহীয়সী নারী), জাহানারা ইমাম প্রমুখ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনা ওয়াজেদ যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।

নারী শিক্ষার অন্তরায় :

বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রধান অন্তরায় কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি। বিশেষ করে পর্দা প্রথার কড়াকড়ির কারণে অনেক মুসলিম নারী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাঙ্গনে যেতে পারে না। এ ছাড়া নারী শিক্ষার একটি বিশেষ বাধা হচ্ছে নিরাপত্তার অভাব। নিরাপত্তার অভাবে অনেক অভিভাবকই তাদের কন্যা সন্তানকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। এর সাথে আছে চরম দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের নির্মম কষাঘাত থেকে জনগণকে মুক্ত করতে না পারলে শুধু শিক্ষাই নয় দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। সর্বোপরি, দেশের বিপুল সংখ্যক নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার জগতে নিয়ে আসার জন্য যে বিশাল উদ্যোগ, আয়ােজন ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামাে দরকার তা আমাদের নেই। এমতাবস্থায় সর্বস্তরের জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায় থেকে উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না হলে নারী শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

নারী শিক্ষা বিস্তারের উপায় :

নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্য কতিপয় কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি। যেমন- দেশে নারী শিক্ষার্থীর অনুপাতে প্রয়ােজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলা, মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বয়স্ক নারীদের শিক্ষার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের উদারনীতি ইত্যাদি।

নারী শিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাবলি :

বর্তমান সরকার নারীবান্ধব সরকার। নারীসমাজকে শিক্ষিত জনসম্পদ করে গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর। নারী শিক্ষা বিস্তারে বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক গৃহীত ব্যবস্থাবলি অনেকটা প্রশংসনীয়। বাংলাদেশ সরকার নারী শিক্ষা প্রসারে স্কুল পর্যায়ে মেয়েদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। এ উপবৃত্তি ব্যবস্থা ইতােমধ্যে কলেজ পর্যায়ে উন্নীত করা হয়েছে। তাছাড়া বয়স্ক নারীদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বয়স্ক নারী শিক্ষা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি মহলও নারী শিক্ষা প্রসারে নানাভাবে অবদান রাখছে।

উপসংহার :

“কোনাে কালে একা হয়নিক জয়ী পুরুষের তরবারি প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী”

সুতরাং নারীকে পশ্চাতে রেখে উন্নতির প্রত্যাশা করা দুরাশারই শামিল। তাই অজ্ঞানতার অশুভ অক্টোপাস থেকে নারীকে মুক্ত করতে হবে। আর একমাত্র উপযুক্ত শিক্ষাই বাতলে দিতে পারে নারীমুক্তির পথ।

আরও দেখুনঃ

১। নারী শিক্ষা রচনা (৭০০ শব্দ)

4.1/5 - (34 votes)

You may also like

3 comments

Md Rasel Rana July 23, 2022 - 6:06 am

Very helpful post. thanks for this posting

Reply
Sumaya Islam November 17, 2022 - 9:54 am

সবই ভালো লাগছে এই রচনা কিন্তু একটা জিনিস ভালো লাগে নি……সেটা হলো, পর্দার কারণে নারীরা শিক্ষা থেকে পিছিয়ে……. আমরা কিন্তু পর্দা করেই শিক্ষা অর্জন করছি।আমাদের কিন্তু আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা হচ্ছে না।

Reply
Curiosityn November 18, 2022 - 1:20 am

❤️সুন্দর মতামত প্রকাশের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Reply

Leave a Comment