Table of Contents
আমার জীবনের লক্ষ্য রচনার সংকেত
- ভূমিকা
- শৈশবের ভাবনা:
- আমার জীবনের লক্ষ্য
- কেন বিজ্ঞানী হতে চাই
- লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তুতি
- লক্ষ্য এবং আমি
- উপসংহার
আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
ভূমিকা:
মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এ জীবনে সাধ প্রচুর। মানুষ চায় তার জীবনকে সাফল্যের কানায় কানায় পূর্ণ করে তুলতে। মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালােবাসে। স্বপ্ন দেখে বড় হবার । স্বপ্ন দেখে লক্ষ্যে পৌছার । কেউ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে, কেউ পারে না। লক্ষ্যই সাফল্যের সােপান। লক্ষ্যহীন জীবন কাণ্ডারিহীন তরীর মতাে। কোথায়, কখন যে কোন ঘাটে ভিড়বে এর কোনাে নিশ্চয়তা নেই। এমনকি মাঝনদীতে ডুবে যাওয়াও খুব সহজ। তাই জীবনে লক্ষ্য থাকা উচিত- যাকে গন্তব্য ধরে এগিয়ে যাবে জীবন।
শৈশবের ভাবনা:
আর কজন মানুষের মতােই আমার শৈশব ছিল আবেগ কোলাহলে বিভাের। শিশুমনে কত স্বপ্ন যে সেদিন মাথা উঁচু করে উঠতে চেয়েছিল সে সব মনে পড়লে আজ হাসি পায় বিস্তর। পঞম শ্রেণিতে পড়ছি তখন। স্যার এরশাদ মােহাম্মদ পাটোয়ারী ক্লাসে এসে একদিন আমার কান মলে দিয়েছিলেন। আমার অপরাধ ছিল স্কুল পলায়ন। সেদিন সহপাঠীদের সঙ্গে বসে বড় বিব্রতবােধ করেছিলাম। আর মনে মনে স্থির করেছিলাম বড় হয়ে একদিন আমিও শিক্ষক হব। আর ছাত্রদের কান মলে দেব। যেদিন রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের নাম শুনেছি সেদিন নিজেকে ভবিষ্যতের কবি হিসেবেই ভাবতে ভালাে লেগেছিল। এলাকায় কোনাে মন্ত্রীর আগমন দেখে, তার প্রভূত ক্ষমতা ও সম্মান দেখে মন্ত্রী হব বলে স্থির করেছিলাম। স্বপ্ন দেখেছিলাম ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করব, গ্রাম থেকে অসুখ তাড়াব । জীবনে প্রথম রেলগাড়িতে চলতে চলতে স্থির করেছিলাম দুটো শিকের ওপর দিয়ে এত লম্বা গাড়িটি চালনা করা ব্রিাট ব্যাপার— এ কাজটি করতে পারা বড় ধরনের কৃতিত্ব অতএব, ড্রাইভার হব । প্রকৃতপক্ষে শৈশবে যখনি যেটি সামনে এসেছে সেটিই আমার কাছে আনন্দোদ্দীপক মনে হয়েছে এবং সেটিই হতে চেয়েছিলাম। শৈশবের সে নানা রঙের নানা স্বপ্নের দিনগুলাের কথা কখনােই ভােলার নয়।
আমার জীবনের লক্ষ্য:
ফেলে আসা শৈশব এখন আমার কাছে শুধুই অতীত। আমি এখন কিশাের বয়সে উপনীত। শৈশবের অর্থহীন আবেগগুলাে আমার জীবন থেকে এখন হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। আমি এখন ভালাে-মন্দ যাচাই করতে শিখেছি, পঠন পাঠনে জ্ঞানীগুণীদের সাহচর্যে আমি এখন কল্পনা বা বাস্তবতাকে পৃথক পৃথকভাবে বুঝতে শিখেছি। আমি এখন বুঝতে পারি ইচ্ছে করলেই কিছু হয়ে যাওয়া যেমন সহজ নয়, তেমনি সংগতও নয় । আমি অনেক ভেবেচিন্তে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করে একটি অটল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আমি স্থির করেছি, আমি একজন বিজ্ঞানী হব । মহাশূন্যের অপার বিস্ময় নিয়ে কাজ করে জগৎবাসীর জন্যে বয়ে আনব নতুন বার্তা।
কেন বিজ্ঞানী হতে চাই:
আমার জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছি শখ থেকে নয়, প্রয়ােজনের অনিবার্য তাগিদ থেকে। আমি লক্ষ করেছি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এ বিশ্বে আমার দেশ বিজ্ঞানের দানকেই কেবল গ্রহণ করছে দু’হাত ভরে । কিন্তু বিজ্ঞানে বিশেষ কোনাে অবদান রাখতে পারছে না। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, কুদরত এ খােদা প্রমুখ কীর্তিমান পুরুষরা বিজ্ঞানচর্চার যে ধারাকে পত্তন করেছিলেন তা আজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। বর্তমান সময়ে দেশে উল্লেখযােগ্য
কোনাে বিজ্ঞানী নেই বললেই চলে। অথচ ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে যে দুটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছিল এরই অংশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশ। একই সময়ে স্বাধীনতা লাভ করলেও ভারতের শত শত বিজ্ঞানী যেখানে নিজ দেশে এবং যুক্তরাষ্টের মহাশূন্য গবেষণা কেন্দ্র নাসাতে গবেষণা করে ব্যাপক অবদান রেখে চলেছেন সেখানে আমাদের দেশে বিজ্ঞানে পড়ুয়াদের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে যা আমাদের দেশের জন্যে দুশ্চিন্তা এবং অসম্মানের কারণ। বিজ্ঞানে আমাদের দেশের তরুণ ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে না এলে এবং আন্তরিকভাবে আত্মনিয়ােগ না করলে বিজ্ঞানের এ যুগে আমরা কেবল বেঁচেই থাকব হয়তাে কিন্তু কোনাে উদ্ভাবন দিয়ে কাউকে বাঁচাতে পারব না। আমরা বাঁচতে যেমন চাই, কাউকে সেবা দিয়ে বাঁচাতেও চাই। তাই বিজ্ঞানচর্চা হবে আমার অভীষ্ট লক্ষ্য যার মাধ্যমে আমি পৃথিবীতে অবদান রেখে যেতে চাই এবং আমার দেশকেও বিজ্ঞানে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
লক্ষ্য অর্জনে প্রস্তুতি:
আমি আশা করছি এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর আমি ঢাকার কোনাে একটি ভালাে কলেজে অধ্যয়ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করব। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের কোনাে খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের কোনাে গবেষণা করে দেয় ফিরে এসে বিজ্ঞানচর্চায় নিজেকে আত্মনিয়ােগ করব। আমার
বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি আমার দেশের তরুণ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি বলয় তৈরি করব, যেখানে বিজ্ঞানের নানাবিধ বিষয় নিয়ে পর্যালােচনা ও গবেষণা করা সম্ভব হবে । মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কায়কোবাদ প্রমুখ নিবেদিত প্রাণ মানুষের মতাে আমিও সারাদেশে বিজ্ঞানমনস্ক একটি জাতি গঠনের কাজটি সুচারুরূপে পরিচালনা করব।
লক্ষ্য এবং আমি:
আমি জানি আমার লক্ষ্যে পৌছা সহজসাধ্য বিষয় নয়। আমার সফলতার পথে পদে পদে প্রতিবন্ধকতাও
আসতে পারে । আমার আগ্রহে যেন ভাটা না পড়ে সেজন্য আমি লক্ষ্যে অটুট আছি। পর্যাপ্ত আস্থা ও বিশ্বাস আছে নিজের ওপর। আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে সাফল্য যে আসবে এর উদাহরণও আছে আমাদের চোখের সামনে। আমাদের দেশের বেশ কজন বিজ্ঞানী বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁরা কঠিন প্রত্যয়ী ছিলেন বলেই সাফল্য অর্জন করেছেন। তাই আমি আমার লক্ষ্যে অবিচল।
উপসংহার:
স্বপ্নের আয়ােজন আর স্বপ্নপূরণ এক কথা নয়। স্বপ্নের আয়ােজন আর পূরণের মধ্যবর্তী জায়গাটি বড় কঠিন।
সেখানে দাঁড়িয়ে সাফল্যকে আলিঙ্গন করতে পারা পরম তৃপ্তির ব্যাপার। আমি সে সাফল্যকে স্বাগত জানিয়ে দেশ মাতৃকার জন্য গৌরব বয়ে আনতে চাই।
1 comment
So nice idea for writing One’s Aim in Life