Home রচনা আর্সেনিক দূষণ ও এর প্রতিকার রচনা (900 words) |

আর্সেনিক দূষণ ও এর প্রতিকার রচনা (900 words) |

by Curiosityn
0 comment

আর্সেনিক দূষণ ও এর প্রতিকার রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • আর্সেনিক দূষণের স্বরূপ
  • আর্সেনিক দূষণের কারণ
  • আর্সেনিক দূষণের প্রতিক্রিয়া
  • বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণ পরিস্থিতি
  • আর্সেনিক দূষণ প্রতিরােধ ও প্রতিকারের উপায়
  • উপসংহার

আর্সেনিক দূষণ ও এর প্রতিকার রচনা

ভূমিকা:

জীবন ধারণের জন্য পানির কোনাে বিকল্প নেই। কিন্তু সে পানি দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানিতে ব্যাপকহারে আর্সেনিক দূষণ মানব ইতিহাসের এক নজিরবিহীন দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণের ভয়াবহতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের এ সমস্যা এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নীরব বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত। সম্প্রতি এ ব্যাপারে প্রশাসন ও জনমনে কিছুটা সচেতনতা সৃষ্টি হলেও কোটি কোটি মানুষের জীবন এখনও বিপন্ন ।

আর্সেনিক দূষণের স্বরূপ:

আর্সেনিক অত্যন্ত বিষাক্ত ধাতব পদার্থ। যা ভূগর্ভের পানি বা নরম শিলার সঙ্গে মিশ্রিত থাকে। এটি পানির মধ্যেই স্থান পরিবর্তন করতে পারে এবং প্রতিনিয়ত রূপান্তরিত হতে পারে । ভূগর্ভস্থ একটি বিশেষ স্তরে আর্সেনিক সঞ্চিত থাকে এবং পানির সঙ্গে মিশে পানিকে দূষিত করে। তবে প্রকৃতিতে বিদ্যমান আর্সেনিক মানেই জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ নয়। কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশিমাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতিই পানিকে দূষিত করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.০৫ মিলিগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এর সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। এর চেয়ে বেশিমাত্রার আর্সেনিকের উপস্থিতিই আর্সেনিক দূষণ হিসেবে ধরা হয় অতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি

আর্সেনিক দূষণের কারণ:

আর্সেনিক সর্বজনীন পরিবেশ দূষণ ক্ষমতাসম্পন্ন পদার্থ, নানান গবেষণায় পানিতে আর্সেনিক দূষণের অনেক কারণ চিহ্নিত হয়েছে। উল্লেখযােগ্য কারণগুলাে হলাে— মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে আর্সেনিক দূষণ ঘটে। আর্সেনােপাইরাইট নামক পদার্থ ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উৎস। আর এটি রাসায়নিক সারের ফলে সৃষ্ট এসিডিক পরিবেশে দ্রবীভূত হয় এবং পানিতে আর্সেনিক বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশে অধিক জনসংখ্যার চাহিদা মেটানাের জন্য অধিক পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তােলিত হয়। ফলে ভূগর্ভস্থ পানি কমে গিয়ে আসেনিকের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। অধিক খাদ্যোৎপাদনের লক্ষ্যে সেচ প্রক্রিয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক ব্যবহারের ফলেও আর্সেনিক দূষণ হয়। অর্থাৎ সামপ্রতিককালে আর্সেনিকের যে ভয়াবহতা তা আসলে মানুষের অসচেতনতার ফলেই সৃষ্টি হয়েছে।

আর্সেনিক দূষণের প্রতিক্রিয়া:

আর্সেনিক দূষণমুক্ত পানি মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। এ পানি পান করে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে বিবিসি থেকে আর্সেনিক দূষণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়, যার শিরােনাম ছিল ‘ফোটায় ফোঁটায় মৃত্যু আসছে কোটি মানুষের জীবনে।’ আর্সেনিকের বিষক্রিয়া মানুষের শরীরে ধীরে ধীরে ক্ষতি করে। তাই এটিকে বলা হয় Slow Killer’ । এর বিষক্রিয়ায় মানুষের শরীরে নানা ধরনের চর্মরােগ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, (প্ৰকাইটিস), গ্যাংগ্রিন, ত্বক-মূত্রথলি ও ফুসফুসের ক্যানসার এবং কিডনি ও লিভারের কার্যক্রমতা সম্পূর্ণ লােপ পাওয়া ছাড়াও অনেক রােগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে । বিশ্বব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চিলি, আর্জেন্টিনা এবং তাইওয়ানে আর্সেনিক দূষণযুক্ত পানি পানের ফলে দেহাভ্যন্তরীণ ক্যানসারাক্রান্ত রােগীর সংখ্যা অনেক বেশি আর্সেনিকের ফলে সৃষ্ট রােগকে বলা হয় আর্সেনিকোসিস। এ রােগে আক্রান্ত রােগীর শরীরে কালাে দানা ও কালাে ছােপ দেখা দেয়। বাংলাদেশে এ ধরনের রােগীর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়।

বাংলাদেশে আর্সেনিক দূষণ পরিস্থিতি:

যুক্তরাষ্ট্রের হেরাল ট্রিবিউন ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা বাংলাদেশের আর্সেনিক সমস্যাকে ইতিহাসের বৃহত্তম গণবিষক্রিয়ার সাথে তুলনা করেছেন। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৩ সালে আর্সেনিকের উপস্থিতি নির্ণীত হয়। রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বারঘরিয়া ইউনিয়নের চামাগ্রাম গ্রামের টিউবওয়েলের পানিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (DPHE) এ উপস্থিতি নির্ণয় করে। কিন্তু এটি ব্যাপকভাবে আলােচনায় এসেছে ১৯৯৬ সাল থেকে। এ বছরের জুন-জুলাই মাসে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুর গ্রামে একটি স্বাস্থ্য ক্যাম্প পরিচালনা করতে গিয়ে ঢাকা
কমিউনিটি হাসপাতালের ডাক্তাররা বেশ কজন আর্সেনিক দূষণাক্রান্ত রােগীর সন্ধান পান। এরপর সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ (DPHE) এবং অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত কয়েকটি জরিপে দেখা যায়, দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৯টিই উচ্চমাত্রার আর্সেনিক দূষণের শিকার হয়ে পড়েছে। ১৯৯৯ সালে সরকারিভাবে ৭,৬০০ রােগীকে চিহ্নিত করা হয়, যারা আর্সেনিক ক্যান্সারে আক্রান্ত। ২০০২ সালে রাজধানীতে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল ও পশ্চিমবঙ্গের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ আয়ােজিত চতুর্থ আন্তর্জাতিক আর্সেনিক সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, বাংলাদেশে এখন শুধু নলকূপের পানিতে নয়; ধান-চাল, সবজি ও তরকারিসহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য,এমনকি ভূগর্ভস্থ পানি দ্বারা তৈরি কোনাে কোনাে ওষুধেও ধরা পড়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি। ড. দীপংকর চক্রবর্তীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে আর্সেনিকের দূষণের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে প্রায় ৬ কোটি মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে আর্সেনিক দূষিত পানি পান করার ফলে প্রতি হাজারে ১৩ জনের ক্যান্সার হতে পারে। সুতরাং, বাংলাদেশকে আসন্ন মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হলে অতিসত্বর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে ।

আর্সেনিক দূষণ প্রতিরােধ ও প্রতিকারের উপায়:

আর্সেনিকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে হলে সর্বপ্রথম জনগণের সচেতনতাই প্রয়ােজন। গবেষণায় দেখা গেছে, ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১০০ ফুট গভীরে পানিবাহী স্তরে আর্সেনােপাইরাইটের পকেট বিদ্যমান এবং ভূগর্ভে ২৫ মিটার থেকে ১২০ মিটার গভীরতায় মূলত আর্সেনিক দূষণ ঘটছে। সেক্ষেত্রে আর্সেনিক দূষণ প্রতিরােধে প্রথমত এ গভীরতায় অবস্থিত পলিস্তর থেকে নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে আর্সেনিক দূষণমুক্ত নলকূপ স্থাপন করতে হবে। এছাড়াও আরও যেসব কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে, তার মধ্যে রয়েছে—

১. বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা;
২. নদী, পুকুর ইত্যাদির পানি ফুটিয়ে পান করা;
৩. গ্রামে গ্রামে বালিশােধিত জলাধার (Sand Pond Filter) সৃষ্টি করা;
৪. প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আর্সেনিকের উপস্থিতি ও পরিমাণ নির্ণয়ের পদক্ষেপ নেয়া;
৫. জনসচেতনতা সৃষ্টি করে জাতীয় আন্দোলন গড়ে তােলা;
৬.আর্সেনিক যুক্ত পানি কৃত্রিম উপায়ে আর্সেনিকমুক্ত করার জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি প্লান্ট স্থাপন;
৭. আর্সেনিক আক্রান্ত রােগীর উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া;
৮. আর্সেনিক বিষয়ে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা;

আর্সেনিক দূষণ থেকে প্রতিকার লাভের জন্য জনগণ, সরকার সবাইকে একযােগে কাজ করতে হবে। আর্সেনিক বিষক্রিয়ার সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি আজও তেমনভাবে আবিষ্কৃত হয়নি, তবে সমপ্রতি বাংলাদেশের আর্সেনিক পীড়িত মানুষের জন্য প্রবাসী বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হ্যারিসের কচুরিপানা থেকে উদ্ভাবিত পাউডার বৈজ্ঞানিক মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে।

উপসংহার:

আর্সেনিক সমস্যা কেবল কোনাে নির্দিষ্ট এলাকা বা দেশের সমস্যা নয়। এটি বৈশ্বিক সমস্যা। সর্বনিম্ন ৭০ মাইক্রোগ্রাম থেকে ১৮০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি এক জন মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাই এ সমস্যা মােকাবিলায় সকলকে অতিসত্বর এগিয়ে আসতে হবে। আর্সেনিকের ভয়াবহতা একটা জাতিকে পঙ্গু করে দিতে পারে। আবার খাদ্যসামগ্রীতে এর উপস্থিতি ঘটাতে পারে খাদ্যঘাটতি। তাই ভবিষ্যৎ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে আর্সেনিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।

3/5 - (5 votes)

You may also like

Leave a Comment