একটি কম্পিউটারের আত্মকাহিনি রচনা লিখন
আমি একটি কম্পিউটার। মানুষদের যেমন বাহারি সব নাম থাকে, আমাদের সেরকম নেই। আমি তাে যন্ত্র । তাই আমার নামও যান্ত্রিক। কেউ আমাদের প্রসেসরের নামে ডাকে, আবার কেউ অপারেটিং সিসূটেমের নামে । কারাে নাম ইন্টেল, কারাে বা ভিসতা। আমাকে বলা হয় ইন্টেল আর উইনডােজ এক্সপির সংমিশ্রণ । তবে এমনিতে আমাকে ‘পিসি’ বলা হয়, যাকে বলেপারসােনাল কম্পিউটার ।
আমি একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ । আমাকে ছাড়া এখন পুরাে পৃথিবী অচল । কয়েকদিনের কাজ কয়েক ঘণ্টায় করে দিতে পারি। কয়েক ঘণ্টার কাজ কয়েক সেকেন্ডে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাজার হাজার মাইলের দূরত্বকে ঘুচিয়ে প্রিয়জনদের কাছাকাছি থাকার সুযােগ করে দেই। অবশ্য এমন একটি সাফল্যের ভাগিদার হয়ে গেছে মােবাইল ফোন নামের যন্ত্রটিও। তােমাদের অনেক কাজেই এখন মােবাইল ফোন ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভয় হয়, এ পুচকে যন্ত্রটার কাছেই
নিজের অস্তিত্ব হারাতে হয় ।
মানুষের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমন মস্তিষ্ক, আমার শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ সিপিইউ। পুরাে নাম সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। এখানে চলে আমার যাবতীয় কাজ। এ বাক্সেই আমার হার্ড ডিস্ক যেখানে তথ্য সংগ্রহ করে রাখা হয়। র্যাম, সিডি রম, প্রসেসর সব এখানে ফিট করা। আর এসব যন্ত্রকে একসাথে জুড়ে দেয়া হয় মাদারবাের্ডে । এ মাদারবাের্ড থেকেই আমি আমার যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। টেলিভিশনের মতাে যে পর্দায় আমি সবকিছু ফুটিয়ে তুলি, তাকে বলা হয় মনিটর। মনিটরে সিনেমাও দেখা যায় । আমার সাথে লাগানাে স্পিকারে শােনা যায় গান। আমি সবসময় দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করি। কিন্তু অনেকেই আমার দুততা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। মাঝে মাঝে কী যে বকা দেয়। তখন আমার খুব মন খারাপ হয়। এখানে আমার কী করার আছে? কিছু মানুষ ইন্টারনেট থেকে এত বেশি প্রােগ্রাম আমার ভেতর ঢুকিয়ে দেয় যে আমার দুততা আপনা থেকেই কমে যায় ।
আমার বর্তমান বাসস্থান একটা উচ্চমধ্যবিত্ত বাড়িতে। অফিসের কাজে ব্যবহারের জন্যে একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলােক আমাকে আইডিবি ভবনের এক চকচকে শাে-রুম থেকে কিনে এনেছিল প্রায় ছয় বছর আগে। এখন তার স্কুলপড়ুয়া ছেলেও আমাকে ব্যবহার করে। প্রথম প্রথম আমার মধ্যে ইন্টারনেট কানেকশন আনা হয়নি। দেড় বছর আগে যখন ইন্টারনেট আনা হলাে, তখন থেকে আমার অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। অসুখ-বিসুখ মানে ভাইরাস আর কী! প্রতিদিন ছােট বড় মাঝারি নানা আকৃতির নানা জাতের ভাইরাস আমাকে আক্রমণ করে। তখন আমার কাজকর্মে বেজায় ব্যাঘাত ঘটে। একবার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ফাইল স্যার ওপেন করতে পারছিলেন না। সেটার জন্যে তিনি আমাকে বিন্দুমাত্র ভৎসনা করেননি। পরে স্যারের এক তরুণ আত্মীয় এসে আমার ভেতর অ্যান্টি ভাইরাস গার্ড ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। এরপর থেকে আমি নিজেই ভাইরাস মুছে ফেলতে পারি।
আমি স্যারের স্টাডি রুমে বেশ যত্নেই থাকি। সম্প্রতি আমার জন্যে আলাদা টেবিল কেনা হয়েছে। গৃহকত্রী প্রতিদিন সকালে আমার ধুলােবালি মুছে দেন। তারপরও হার্ডওয়্যারের মারাত্মক সমস্যার কারণে আমাকে এ কদিন সার্ভিসিং সেন্টারে থাকতে হয়েছিল। সেখানে অন্যান্য কম্পিউটারের সাথে আমার পরিচয় হয়। একটা কম্পিউটারের সমস্যা শুনে আমি ভয়ে আঁতকে
উঠেছিলাম। সেই দুর্ভাগার বাসায় থাকে একটা ছােট বাচ্চা। সেই বাচ্চাটা প্রতিদিন তার পাওয়ার সুইচ অন্-অফ করে বেড়াত। বলা বাহুল্য, তার হার্ডওয়্যারে সমস্যা দেখা দিল। ভাগ্যিস আমার বাসায় কোনাে ছােট বাচ্চা নেই। আমার মনে আছে, আমাকে মেরামত করার সময় একজন আমার নতুন পার্টস খুলে তার জায়গায় পুরােনাে পার্টস লাগিয়ে দিয়েছিল। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম । দু পয়সা লাভের জন্যে কী বিচ্ছিরিভাবেই না মানুষ মানুষকে ঠকায়!
বাসায় ফেরার পর সবার মুখে হাসি দেখে নিজেকে খুব বড় মনে হয়েছিল। স্যার মাইক্রোসফট অফিসে কাজ করলেন। তার ছেলে আবার ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করা শুরু করল । ছেলেটার ফেসবুক নামের ওয়েবসাইটটা খুব পছন্দ। সেখানে বন্ধুদের সাথে তার যােগাযােগ হয়। বাসার বাইরের লােকজন এসেও আমাকে ব্যবহার করে। কেউ ভুল কমান্ড দিলে আমি মনিটরে সেটা জানিয়ে দিই। দেখে অনেকেই মেজাজ খারাপ করে। তাদের বােঝা উচিত আমি লােহার কলকজার এক মেশিন মাত্র। আমাকে যেভাবে চালানাে হয় আমি সেভাবেই চলি। আমাকে ভালাে কাজেও ব্যবহার করা যায়, খারাপ কাজেও। তবে এখন পর্যন্ত আমাকে কোনাে মন্দ কাজ করতে হয়নি। আশা করি ভবিষ্যতেও করতে হবে না ।
বিশ্বায়ন আর আধুনিকতার এ যুগে আমাদের ওপর মানবজাতি খুবই নির্ভরশীল । প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি আরও আধুনিক হচ্ছে। আয়তনে আরও ছােট হয়ে আসছে। একদিন হয়তাে আমাদের মতাে বিশালবপু যন্ত্রগুলাে হয়ে যাবে সেকেলে। আরও আধুনিক দৃষ্টিনন্দন কিছু আমাদের হটিয়ে জায়গা করে নেবে । কিন্তু আমি তা চাই না। এ পৃথিবী ছেড়ে আমার একটুও যাবার ইচ্ছে নেই । কেননা সুন্দর এ পৃথিবীটা আমার খুব পছন্দ। বিশেষ করে আমি যে বাসায় থাকি সে বাসার মানুষগুলাে । আমি যে এ পরিবারেরই একজন।
একটি কম্পিউটারের আত্মকাহিনি রচনা টি কেমন হয়েছে? কোন ভুল ত্রূটি থাকলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।