Table of Contents
কম্পিউটার বিজ্ঞানের এক বিস্ময়, কম্পিউটার রচনার সংকেত (Hints)
- ভূমিকা
- কম্পিউটারের ধারণা
- ইতিহাস ও বিবর্তন
- বাংলাদেশে কম্পিউটার
- আধুনিক জীবন ও কম্পিউটার
- কম্পিউটার ও বেকারত্ব
- কম্পিউটার ও শিক্ষা
- কম্পিউটার ও শিল্পবাণিজ্য
- কম্পিউটার ও কৃষি
- উপসংহার
কম্পিউটার বিজ্ঞানের এক বিস্ময়, কম্পিউটার রচনা
দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটার » কম্পিউটার » আধুনিক জীবনে কম্পিউটার » কম্পিউটার ও আধনিক সভ্যতা » কম্পিউটার ও আধুনিক বিশ্ব » বিংশ শতকের বিস্ময় : কম্পিউটার » কম্পিউটার ও বাংলাদেশ
ভূমিকা:
অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরােপসহ সমগ্র বিশ্বে শিল্পবিপ্লবের ছোঁয়ায় মানুষের জীবনে যন্ত্রের প্রভাব বিস্ময়করভাবে পরিলক্ষিত হয় । এই বিস্ময় আরও তীব্র হয়েছে বিংশ শতাব্দীতে মানুষের পৃথিবী ছেড়ে চাঁদে গমন করার অনন্য সাফল্যে । আর এই সাফল্যের পেছনে যে যন্ত্রটি অসামান্য ভূমিকা পালন করেছে তা হলো কম্পিউটার’ । মানুষের মানসিক শ্রম লাঘব করার অসম্ভব দায়িত্ব পালন করছে কম্পিউটার। কম্পিউটার আবিষ্কারের ফলে মানুষ যন্ত্রশক্তির মাধ্যমে দুর্বার শক্তির অধিকারী হয়েছে।
কম্পিউটারের ধারণা:
ল্যাটিন শব্দ ‘কম্পিউট’ (Compute) থেকে কম্পিউটার কথার উদ্ভব। কম্পিউটারকে এক অর্থে যন্ত্র মস্তিষ্কও বলা যায়। এটি এমন একটি যন্ত্র যা অগণিত উপাত্ত ও তথ্য গ্রহণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। মানুষ যেমনভাবে তার স্মৃতিতে তথ্য ধরে রাখে, তেমনি কম্পিউটারও তার স্মৃতি বা মেমরিতে তথ্য ধরে রাখে। কম্পিউটারে রয়েছে তিনটি সুস্পষ্ট অংশ ১. সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট, ২. ইনপুট ও ৩. আউটপুট। কম্পিউটার যেসব তথ্য নিয়ে কাজ করে তাকে ডেটা বলে; আর যে ক্রমবিন্যাস পদ্ধতিতে কাজ করে তাকে বলে প্রােগ্রাম। কম্পিউটারের নির্ভুলভাবে কাজ করার পেছনে রয়েছে বিশেষ কিছু পদ্ধতি অত্যন্ত দ্রুত গণনা করার ক্ষমতা; বিপুল পরিমাণ উপাত্তকে স্মৃতিতে ধরে রাখার ক্ষমতা; তথ্য বিশ্লেষণের নির্ভুল ক্ষমতা; প্রােগ্রাম অনুসারে কাজ করার ক্ষমতা।
ইতিহাস ও বিবর্তন:
গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ (১৭৯২-১৮৭১)-কে কম্পিউটার সৃষ্টির জনক বলা হয় । ১৮৩৩ সালে ব্যাবেজ ‘এনালিটিক্যাল ইঞ্জিন’ নামক গণনা যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেন। ব্যাবেজ যে পাঁচটি ভাগে (স্টোর, মিল, কন্ট্রোল, ইনপুট, আউটপুট) কম্পিউটার তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন তার ওপর ভিত্তি করেই ১৯৬৪ সালে ‘ইনিয়াক’ নামক প্রথম কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয় । তবে বর্তমানকালে এগুলাে শুধুই ইতিহাস; বাজারে ষষ্ঠ প্রজন্মের কম্পিউটারের আগমন ঘটেছে আর সপ্তম প্রজন্মের কম্পিউটার আসার প্রতীক্ষায় রয়েছে। তবে সাধারণভাবে আমরা যেকোনাে ইলেকট্রিক জিনিসের যদি ce (Computer Electronics) লেখা দেখি তবে বুঝতে হবে সেটি কোনাে না কোনােভাবে কম্পিউটারের প্রভাবজাত।
বাংলাদেশে কম্পিউটার:
পূর্ব পাকিস্তানে (১৯৭১ পূর্ববর্তী বাংলাদেশ) ১৯৬৪ সালে আণবিক শক্তিকেন্দ্রে IBM 1620 সিরিজে একটি কম্পিউটার আনার মাধ্যমে এ দেশে কম্পিউটারের পদচারণা শুরু হয় । কিন্তু আশির দশকের আগে এ দেশে কম্পিউটার শিক্ষার কোনাে প্রসার হয়নি। নব্বইয়ের দশক থেকেই মূলত এদেশে কম্পিউটার শিক্ষা ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে কম্পিউটার মানুষের প্রায় হাতে হাতে পৌছে গেছে। দেশেই তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের সফটওয়্যার। দিন দিন বাংলাদেশের আইটি (ইনফরমেশন টেকনােলজি) কম্পিউটারকে ভিত্তি করে বিশ্বদরবারে শক্তিশালী জায়গা করে নিচ্ছে।
আধুনিক জীবন ও কম্পিউটার:
বর্তমান সময়ে কম্পিউটার আধুনিক মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু। বহু বহু অঙ্কের হিসাব সহজেই কম্পিউটার করে দিতে পারে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান সবস্থানেই। কাজের সুবিধার্থে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষার ফল থেকে শুরু করে অপরাধী শনাক্তকরণের সব কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের নকশা তৈরি, বহুতল ভবনের ডিজাইন, শিশুদের অঙ্কন শিক্ষাসহ বিনােদনমূলক নানা। শিক্ষা, জটিল রােগ নির্ণয়া প্রভৃতি কাজে কম্পিউটারের সাফল্য ঈর্ষণীয়। মােটকথা, বর্তমানে জীবনের প্রায় সব কাজ কম্পিউটারের ওপর নির্ভরশীল।
কম্পিউটার ও বেকারত্ব:
বেকারত্ব নিরসনে কম্পিউটার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এদেশের বাস্তবতায় সবার পক্ষে
উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। সে কারণে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পর অনেকেই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের জীবনে বেকারত্বের অবসান করেছে। কেউ সফটওয়্যারের নানা ধরনের ট্রাবলশুটিং করছে, কেউ আবার হার্ডওয়্যারের সমস্যার সমাধান করছে। তাছাড়া প্রতিটি অফিসেই কম্পিউটার অপারেটর পদে জনবল নিয়ােগ দেয়া হচ্ছে যার প্রধানতম যােগ্যতা কম্পিউটার বিষয়ে দক্ষতা। কাজেই বলা যায় এদেশের বেকারত্ব নিরসনে কম্পিউটার আশীর্বাদ হয়েই দেখা দিয়েছে।
কম্পিউটার ও শিক্ষা:
বর্তমান সময়ের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সবস্থানেই কম্পিউটার বিষয়ে পড়ানাে হচ্ছে। প্রাথমিক ওমাধ্যমিক শিক্ষায় কম্পিউটার বিষয় হিসেবে যেমন পড়ানাে হচ্ছে, তেমনি উচ্চশিক্ষায় কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ে দেশে কম্পিউটার বিষয়ের প্রকৌশলী সৃষ্টি হচ্ছে যারা বিভিন্ন পর্যায়ে কম্পিউটার বিষয়ে উচ্চতর দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। দেশেই সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের কম্পিউটার ফার্ম যারা কম্পিউটারের মানােন্নয়ন ও এর ব্যবহারকে আরও প্রসারিত করার কাজে নিয়ােজিত রয়েছে।
কম্পিউটার ও শিল্পবাণিজ্য:
শিল্প ও বাণিজ্যে কম্পিউটার ব্যবহার বহু বহু কর্মঘণ্টা ও পরিশ্রমকে সাশ্রয় করেছে। অটোমেশনের ফলে ভারী ভারী অনেক কাজও সহজ হয়ে গেছে। বন্দরগুলােতে ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে, ফলে পণ্য খালাসেও নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে। পােশাক কারখানা ও দেশীয় ইলেকট্রনিকস কারখানায় কম্পিউটার চালিত বড় বড় রােবট ব্যবহার করে কাজে নতুন গতি সঞ্চার করা হয়েছে। শিল্পের সমস্ত পর্যায়ে কম্পিউটার দিয়েছে নতুন গতি ও প্রাণ। বাংলাদেশে বর্তমানে শিল্প ও বাণিজ্যের কোনাে সেক্টরই কম্পিউটারের বাইরে নয়।
কম্পিউটার ও কৃষি:
বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর; তাই কৃষিতে কম্পিউটারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন আর পরীক্ষা ছাড়া কৃষক মাটিতে সার ও কীটনাশক দেয় না। জমির উর্বরতাও এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। তাছাড়া কম্পিউটারের সাহায্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা সম্ভব হয় বলেই কৃষক তার ফসলকে রক্ষা করার সুযােগ পায়। গবেষণাগারে কম্পিউটারের মাধ্যমে গবেষণা করেই নতুন নতুন উন্নত ফসলের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হচ্ছে। আর সেগুলো মাটিতে বপন করেই কৃষক ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করছে। পরােক্ষভাবে কম্পিউটারের সাহায্য নিয়েই কৃষক তার ফসল বিদেশে রপ্তানি করছে।
উপসংহার:
তৃতীয় বিশ্বের মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আজ প্রযুক্তির বহুমুখী উৎকর্ষ সাধন খুবই জরুরি। আর সে কাজটি সম্ভব হতে পারে কম্পিউটার নামক যন্ত্রের সাহায্যে। কম্পিউটার এখনাে সব মানুষের কাছে সহজসাধ্য হয়নি। যেহেতু আমরা কম্পিউটারের প্রায় সকল যন্ত্রাংশই আমদানি করি, তাই এক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া আবশ্যক। তাছাড়া সম্ভব হলে কম্পিউটার ক্রয়-বিক্রয়ে সব রকম ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত। যাতে মানুষ খুব সহজেই কম্পিউটারের সান্নিধ্যে আসতে পারে এবং তার জীবনকে উন্নত ও আধুনিক করে তুলতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
4 comments
আরো ভালো করতে হবে। মোটেও ভালো হয়নি রচনাটা
Nice
ভালো
এমন একটি রচনা প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ