Table of Contents
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনার সংকেত (Hints)
- ভূমিকা
- মানবসভ্যতা ও কৃষি
- প্রাচীন যুগের কৃষি
- মধ্যযুগের কৃষি
- আধুনিক কালের কৃষি
- উন্নত দেশের কৃষি
- বাংলাদেশের কৃষি
- বিজ্ঞানসম্মত কৃষির বাস্তবিক গুরুত্ব
- বৈজ্ঞানিক কৃষি ও অর্থনীতি
- উপসংহার
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা
ভূমিকা:
মানবজীবন প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল; সেই সঙ্গে পরিবর্তনশীল তার নির্মিত সভ্যতা। আজ থেকে একশ বছর আগে সভ্যতা কেমন ছিল আর বর্তমান সময়ে সভ্যতা কোন জায়গায় এসে পৌছেছে তা ভাবতেই অবাক লাগে। সভ্যতার এই ক্রম পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে বিজ্ঞান। বর্তমান বিশ্বে মানুষের এই যে অগ্রযাত্রা তা বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছে। বিজ্ঞান মানুষকে গতিশীল করেছে এবং সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে করেছে ত্বরান্বিত। প্রকৃতিকে শাসনের মতাে শক্তিশালী কর্মকাণ্ড মানুষ বিজ্ঞানের হাত ধরে সম্ভবপর করে তুলেছে। আর বর্তমানে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূত্রও বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ।
মানবসভ্যতা ও কৃষি:
মানুষের সভ্যতার ইতিহাস অত্যন্ত পুরােনাে। তবে সেই সভ্যতার প্রথম প্রতিষ্ঠা হয়েছিল কৃষির হাত
ধরে । মানুষ শিকারের বিকল্প হিসেবে কৃষিকে বেছে নিয়ে তার জীবনকে সুস্থির করেছিল। তাই এটি মানুষের আদিমতম জীবিকার একটি উপায়ও বটে। সভ্যতার ইতিহাসকে পর্যালােচনা করে দেখা যায় যে কৃষিতে যে দেশ যত তাড়াতাড়ি অগ্রগতি সাধন করতে পেরেছে সে দেশ তত তাড়াতাড়ি সভ্যতার উপরের সিড়িকে অতিক্রম করেছে। এ থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, কৃষির উন্নতিতেই সমাজ, দেশ ও সভ্যতার ক্রমন্নোতি সম্ভব।
প্রাচীন যুগের কৃষি:
প্রাচীন যুগের পৃথিবী মানুষের জন্য খুব সুখকর ছিল না। পদে পদে তাদের জন্য বিপদ অপেক্ষা করত এবং ভয়াবহ সব বন্য জীবজন্তুর সঙ্গে তাদের লড়তে হতাে। এ অবস্থায় হঠাৎ তার হাতে কৃষিকাজের সূত্র আবিষ্কৃত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় মানুষ নিজেই লাঙলের ভার বহন করত। কিন্তু তৎপরবর্তীকালে গরু, ঘােড়া ও মহিষের সাহায্যে জমি চাষের প্রচলন করেছিল। কিন্তু প্রকৃতির কাছে মানুষ ছিল ভীষণ অসহায়। বন্যা, খরা, ঝড়, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টিতে ফসলের জমিতে কী করণীয় তা তারা জানত না। একই জমিতে একইভাবে তারা ফসল ফলানাের চেষ্টা করত; ফলে জমির উর্বরতা শক্তি কয়ে কাঙ্ক্ষিত ফসল হতাে না। এছাড়া বীজ সম্পর্কেও তাদের বিশদ কোনাে জ্ঞান ছিল না। তাই প্রাচীন কৃষির ইতিহাস খুব সুখকর ছিল না বলেই মনে হয়।
মধ্যযুগের কৃষি:
মধ্যযুগে মানুষ চাকা আবিষ্কার করে বহুদূর এগিয়ে যায়। এ আবিষ্কার কৃষিতেও ব্যাপক উন্নতি সাধন করে। সমগ্র পৃথিবীর পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশেও কৃষি মানুষের জীবিকার প্রধানতম বিষয় হয়ে দেখা দেয়। উন্নত ফসল ফলানাের জন্য মানুষ নানাবিধ পরিকল্পনা করতে থাকে। বনজঙ্গল কেটে নগর পত্তনের পাশাপাশি মানুষ কৃষি জমিও বৃদ্ধি করতে থাকে। নদী তীরবর্তী অঞ্চলসমূহে পলিযুক্ত মাটিতে কৃষি কাজ করে ব্যাপক সাফল্য পায়। বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে যে মঙ্গলকাব্যসমূহ লেখা হয়েছে তাতে কৃষিকাজের নানারকম প্রয়ােগ ও উদ্ভাবন সম্পর্কে তথ্য দেয়া হয়েছে। সে সমস্ত তথ্য থেকে ধারণা করা যায় মধ্যযুগের পৃথিবীতে কৃষি তার প্রসার ভালােভাবেই শুরু করেছিল।
আধুনিক কালের কৃষি:
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে এবং উনবিংশ শতাব্দীর গােড়ার দিকে বেঁনেসাস তথা শিল্পবিপ্লবের
মাধ্যমে কৃষি বিস্তৃত উন্নতি সাধন করে। কৃষিক্ষেত্রে কৃষক উন্নত যন্ত্রপাতি, বীজ, সার প্রভৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়। কাঠের লাঙলের পরিবর্তে যন্ত্র দ্বারা চাষ শুরু হয়। সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের নানা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। খরায় ফসল ফলানাের পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকরা অবগত হয়। বিদ্যুৎচালিত পাম্পের সাহায্যে সেচ দেয়ার ফলে শুকনাে মাটিতেও সবুজ ফসল হেসে ওঠে। উন্নত বীজ, রাসায়নিক সার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, মাটির পরীক্ষানিরীক্ষা করে কৃষক এখন মাটিতে ফসল ফলায়। ফলে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ব্যতিরেকে ফসল ফলানােতে তেমন কোনাে সমস্যায় পড়তে হয় না।
উন্নত দেশের কৃষি:
বিজ্ঞানের অভিঘাতে ভর করে উন্নত দেশগুলােতে কৃষি কাজ পরিচালিত হচ্ছে। বীজবপন থেকে শুরু করে। ফসল ঘরে তােলা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা যন্ত্রের দ্বারস্থ হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কৃষিযন্ত্র যেমন– মােয়ার (শস্য ছেদনকারী যন্ত্র), রপার (শস্য কাটার যন্ত্র), বাইন্ডার (শস্য বাধাই করার যন্ত্র), থ্রেশিং মেসিন (মাড়াই যন্ত্র), ম্যানিউর স্পেড়ার (সার বিস্তারণ যন্ত্র) উন্নত দেশের কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফিলিপাইন, চীন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে। জাপানের জমির উর্বরতা অনেক কম, কিন্তু তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে ।
বাংলাদেশের কৃষি:
বাংলাদেশের কৃষিতে আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া খুব বেশিদিন আগে লাগেনি। এক দশক আগেও লাঙলের
সাহায্যে এদেশের কৃষক হাল চাষ করত। এখনাে কিছু কিছু স্থানে এ দৃশ্য পরিলক্ষিত হবে। তবে এ কথা সত্যি যে মাঠের কৃষিতে বিজ্ঞানের খানিকটা শ্লথ গতি হলেও এদেশের গবেষণাগারে কৃষি সম্পর্কিত বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। ইতােমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ফল গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কিছু উন্নতজাতের ফল ও ফসল উদ্ভাবন করেছে, যা মাঠ পর্যায়ে এসে বেশ সাফল্য পেয়েছে।
বিজ্ঞানসম্মত কৃষির বাস্তবিক গুরুত্ব:
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কৃষির বাস্তবিক গুরুত্ব অনেকখানি। তবে পুরােনাে পদ্ধতির চাষাবাদে এখন আর সাফল্য লাভ করা সম্ভব নয়। এখন প্রয়ােজন অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ। উন্নত বিশ্বের মতাে ছােটো জায়গায় অধিক ফসল ফলানাের কৌশল আমাদেরও আয়ত্ত করতে হবে। তবেই কৃষক ও কৃষির সমন্বিত সাফল্য
আসবে।
বৈজ্ঞানিক কৃষি ও অর্থনীতি:
বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজের ফলে অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন সাধিত হওয়া সম্ভব। অত্যন্ত আনন্দের
বিষয় এই যে আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। কিছু কিছু ফসল আমরা বাইরেও রপ্তানি করতে সমর্থ হচ্ছি। জীবন রহস্য আবিষ্কারের ফলে পাটের সােনালি দিন আবার আমাদের মধ্যে আসতে শুরু করেছে। বহু আগে থেকেই আমরা বিভিন্ন দেশে চা রপ্তানি করে থাকি। সুতরাং সর্বাধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদের ফলে আমাদের পক্ষে এ সাফল্যকে আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
উপসংহার:
আমাদের সবুজ ও শস্যসমৃদ্ধ এ দেশে কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের জাদুর ছোঁয়ায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। বিজ্ঞানকে আমরা যত কাজে লাগাতে পারব ততই আমাদের কৃষিতে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। তাই সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকেই বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদে কৃষককে উৎসাহিত ও সহযােগিতা করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান রচনার সংকেত ২
- সূচনা
- কৃষির অতীত কথা
- কৃষিতে বিজ্ঞানের অবদান
- আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি
- উন্নত বিশ্বের কৃষি ব্যবস্থাপনা
- বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব
- বাংলাদেশের কৃষির বর্তমান অবস্থা
- আমাদের কৃষিকাজে বিজ্ঞান
- কৃষিকাজে বিজ্ঞানের সফল প্রয়ােগের উপায়
- উপসংহার
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান রচনা ২
সূচনা :
বর্তমান সভ্যতা বিজ্ঞানের আশীর্বাদপুষ্ট। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের জাদুকরী স্পর্শে মানবজীবনের সর্বত্র।এসেছে অভাবনীয় পরিবর্তন। সর্বক্ষেত্রে আজ পরিলক্ষিত হচ্ছে বিজ্ঞানের অব্যাহত জয়যাত্রা। সারা বিশ্বে বিজ্ঞানের অভিনবআবিষ্কারের প্রেক্ষিতে কৃষিক্ষেত্রেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
কৃষির অতীত কথা :
কৃষিই মানব সভ্যতার আদিমতম পেশা। তবে সুদূর অতীতে কৃষি ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না।জীবনধারণের তাগিদে আদিম অধিবাসীরা ফল-মূল সংগ্রহ করত এবং মাছ ও জন্তু-জানােয়ার শিকার করত। অনেক সময়বুনাে খাবার একেবারেই জুটত না। ফলে খাদ্যের সন্ধানে তারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়াত। অবশেষে তারা পশুপালন ও বীজ বপন করতে শেখে। এরই ফলে খাদ্যদ্রব্য সুলভ হয় এবং জীবনযাত্রা হয়ে উঠে অপেক্ষাকৃত সহজ। তবে তখন।কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং চাষপদ্ধতি এতটা উন্নত ছিল না। সময়ের ব্যবধানে বিজ্ঞানের কল্যাণে কৃষিক্ষেত্রে নতুনপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষিতে বিজ্ঞানের অবদান:
বিজ্ঞান আজ উর্বরতা দিয়ে ক্ষয়িষ্ণু বসুধাকে শস্যবতী করে তুলছে। আদিম প্রযুক্তিরলাঙল, মই প্রভৃতি পরিহার করে বর্তমানে ট্রাক্টরের সাহায্যে অতি স্বল্প সময়ে, স্বল্প পরিশ্রমে অধিক পরিমাণ জমি চাষাবাদ করাহচ্ছে। বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে বিজ্ঞানের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। সার, সেচ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের ব্যবহার হচ্ছে।ভেটেরেনারি সায়েন্স বা পশুরােগ সংক্রান্ত বিজ্ঞান খামারের পশুদের মধ্যে রােগজনিত মৃত্যুহার বহুলাংশে হ্রাস করেছে।গাছপালা ও শস্যাদির মধ্যে নানা ধরনের পতঙ্গের উৎপাত, জীবাণু সংক্রমণ ও রােগ থেকে মুক্তির উপায় বের করেছেবিজ্ঞান। সর্বোপরি, বিভিন্ন কৃষিজ ফসল নিয়ে গবেষণা করে উন্নতমানের ও অধিক ফলনশীল বীজ আবিষ্কার করা হয়েছে।
আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি :
কৃষি খামারের আধুনিক যন্ত্রপাতির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে বৈদ্যুতিক দোহন যন্ত্র (মিস্কার),শীতলকারী যন্ত্র (কুলার), মাখন তােলার যন্ত্র (ক্রিম সেপারেটর), ভােজ্য দ্রব্য পেষক যন্ত্র (ফিড গ্রাইন্ডার), সার ছিটাবার যন্ত্র(ম্যানিউর স্প্রেডার) ইত্যাদি। সেলফ বাইন্ডার বা স্বয়ং বন্ধনকারী যন্ত্র ফসল কাটার সঙ্গে সঙ্গে শস্যের আঁটি বাঁধে। আর‘কম্বাইন হারভেস্টর’ যন্ত্রটি একই সাথে ফসল কাটে এবং ঝাড়াই-মাড়াই করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া,রাশিয়া প্রভৃতি দেশের খামারগুলােতে শক্তিশালী এক একটি ট্রাক্টর তিন-চারটি ফসল কাটার যন্ত্রকে একসঙ্গে কাজে লাগায়এবং ১০০ একর পর্যন্ত জমির ফসল একদিনে কাটতে পারে।
উন্নত বিশ্বের কৃষি ব্যবস্থাপনা :
বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশই কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারকে কাজেলাগিয়ে সাফল্য লাভ করছে। এসব দেশে জমি কর্ষণ, বীজ বপন, সেচকাজ, ফসল কাটা, মাড়াই, বাছাই ইত্যাদি সব কাজইযন্ত্রের সাহায্যে সম্পাদন করা হয়। শীতপ্রধান দেশগুলাে গ্রিনহাউসের সাহায্যে গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মতাে শাকসবজি ও ফলমূলউৎপাদন করছে। উন্নত বিশ্বে শুষ্ক মরুভূমির মতাে জায়গাতেও সেচ, সার ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করে সােনার ফসল ফলানাে হচ্ছে। তারা কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সফল প্রয়ােগের মাধ্যমে আমাদের চেয়ে কম জমিতেঅধিক ফসল উৎপাদন করে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে। এশিয়ার অনেক দেশেই এখন কৃষিক্ষেত্রেগবেষণা আরও জোরদার করা হয়েছে। ফিলিপাইন, চীন, থাইল্যান্ডের মতাে দেশগুলাে তাদের কৃষি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণপ্রযুক্তিনির্ভর করে গড়ে তুলেছে। এ দেশগুলাে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে কাঙিক্ষত লক্ষ্য অর্জনেসক্ষম হচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব :
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশেরঅর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। কেননা, বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ এখনওকৃষিজীবী। বাংলাদেশের মােট জাতীয় আয়ের শতকরা ৫ ভাগ আসে কৃষি থেকে এবং রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ১৪ ভাগ আসে।কৃষিজাত দ্রব্য রপ্তানি থেকে। এ ছাড়া শিল্প-কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহের উৎস হিসেবেও বাংলাদেশে কৃষি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের কৃষির বর্তমান অবস্থা :
বাংলাদেশ প্রকৃতির অপার স্নেহধন্য। এদেশের মাটি উর্বর এবং আবহাওয়াফসলবান্ধব। রয়েছে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক জলাধার। এ ছাড়া বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতও চাষাবাদের পক্ষে অনুকূল। এরপরওবাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা প্রয়ােগের মতাে জ্ঞান ওঅর্থ না থাকাই এর কারণ। ফলে জমি থেকে কাঙ্ক্ষিত ফসল আসছে না। তাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য পূরণেক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে বাংলাদেশ।
আমাদের কৃষিকাজে বিজ্ঞান :
আমাদের দেশেও আজ কৃষিকাজে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। জমিকর্ষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ট্রাক্টর। প্রকৃতির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল না হয়ে পাম্প এবং গভীর ও অগভীর নলকূপের সাহায্যেপানি সেচ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষেতের পােকা-মাকড় দমনের জন্যও সাহায্য নেয়া হচ্ছে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির। শস্য মাড়াই এবংভাঙানাের কাজ হচ্ছে কলের সাহায্যে। ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নতমানের রাসায়নিক সার। বীজ,সংরক্ষণ ব্যবস্থাও হচ্ছে বৈজ্ঞানিক প্রণালিতে। পূর্বের এক ফসলি জমিতে এখন বিজ্ঞানের কল্যাণে তিনবার ফসল ফলানােহচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের মধ্যে বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। বেশি লাভবান হওয়ার আশায়এবং ঝুঁকিমুক্তভাবে চাষাবাদের লক্ষ্যে তারা বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারকে কৃষিক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে।
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের সফল প্রয়ােগের উপায় :
কৃষিভিত্তিক দেশ হিসেবে কৃষির উন্নতির উপরই আমাদের দেশেরসামগ্রিক উন্নতি নির্ভরশীল। কিন্তু কৃষকদের অজ্ঞতার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি আমরা ব্যাপকভাবে ব্যবহারকরতে পারছি না। তাই প্রথমেই দেশে শিক্ষার হার বাড়াতে হবে। কৃষকদের আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করাতেহবে। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি কৃষি সংস্থা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষির উপর গবেষণা চালাচ্ছে। দেশের কৃষকদেরএ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল জানিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তারা যাতে বিজ্ঞানসন্মতভাবে কৃষিকাজ করতে পারেসেদিকে সক্রিয় দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষিতে উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তিরসাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। কৃষক সমপ্রদায়ের হাতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষি সমবায় তৈরির উদ্যোগকে বেগবান করতে হবে। কেননা, কৃষিপণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনের প্রতিটিধাপে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে কৃষি সমবায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়েব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
উপসংহার :
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির উন্নতির উপরই নির্ভর করে আমাদের দেশের সার্বিক উন্নতি। তাইকৃষিকে উন্নত করার স্বার্থে কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সুজলা-সুফলা আমাদের এই দেশেরকৃষিতে বিজ্ঞানের জাদুর কাঠি ছোঁয়াতে পারলে খুলে যাবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। কৃষির সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গড়েউঠবে আমাদের এ সুখী সমৃদ্ধ বালাদেশ।
আরো পড়ুনঃ গৃহকাজে বিজ্ঞান রচনা
1 comment
Excellent