Table of Contents
কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব রচনার সংকেত
ভূমিকা
বাংলাদেশের কৃষির গুরুত্ব
বাংলাদেশের কৃষি সমস্যা
কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব
কৃষিশিক্ষা ও কৃষিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান
উপসংহার
কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব রচনা
ভুমিকা:
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি একক বৃহত্তম খাত। কৃষি কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে দেশজ অর্থনীতি। তাই কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমেই এদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। আর কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রয়ােজন কৃষিতে উচ্চতর ও আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি । এ দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য প্রয়ােজন কৃষিশিক্ষা। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের উন্নতি কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তির ওপরই প্রধানত নির্ভরশীল। অনেক ঘটনাই লক্ষ করি। বেশিরভাগ ঘটনায় হয় বন্ধু-বান্ধব বা সহপাঠী কিংবা পারিবারিক অশান্তিই মূল কারণ হিসেবে।
বাংলাদেশের কৃষির গুরুত্ব:
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। আর
গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন কৃষিখাতের ওপরই নির্ভরশীল। তাছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা তথা খাদ্যশস্য
উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন, শিল্পায়ন, দারিদ্র্য বিমােচন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশজ অর্থনীতির ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে কৃষি। বাংলাদেশের কৃষি প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে—
১. মৌলিক চাহিদা পূরণ:
খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা মানুষের এসব মৌলিক চাহিদা পূরণে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। এর মধ্যে আমাদের খাদ্যচাহিদা সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বস্ত্র তৈরির প্রধান উপকরণও আসে কৃষি হতে। যেমন— পাট, তুলা, রেশম ইত্যাদি। বাসস্থান তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, বেত, কাঠ, ছন, খড় ইত্যাদিও কৃষি হতেই আসে। শিক্ষার উপকরণ কাগজ, পেন্সিল ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয় কৃষি উৎপাদিত বাঁশ, আখের ছােবড়া ইত্যাদি। চিকিৎসার প্রয়ােজনীয় হােমিওপ্যাথিক, ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির কাঁচামালও প্রায় সবগুলােই কৃষিজাত । এছাড়াও আসবাব তৈরি কিংবা জ্বালানি খাতে কৃষি উৎপাদনের ভূমিকা অপরিসীম।
২. কর্মসংস্থান:
দেশের মােট জনসংখ্যার প্রায় ৭০% লােক প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এদের কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস কৃষি। কৃষি বাংলাদেশের জনগণের আত্ম-র্মসংস্থানের প্রধান খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
৩. শিল্প ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে কৃষি:
শিল্প ও বাণিজ্যের সমপ্রসারণে কৃষির ভূমিকা অতুলনীয়। বাংলাদেশের প্রধান শিল্পখাত. পাট শিল্প, চা শিল্প, বস্ত্র শিল্প, কাগজ শিল্প, চিনি শিল্প ইত্যাদিতে কাঁচামালের প্রধান উৎস হচ্ছে কৃষি। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে কৃষিপণ্য উৎপাদনে শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটে, বাড়ে কর্মসংস্থান । কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য বেশি উৎপাদিত হলে বাণিজ্যের সম্প্রসারণও ঘটে। আবার কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৬০ ভাগই কৃষি হতে আসে। সুতরাং, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে হলে কৃষির উন্নয়ন সাধনের বিকল্প নেই ।
বাংলাদেশের কৃষি সমস্যা:
বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা বর্তমানে বহু সমস্যায় জর্জরিত ফলে ব্যাহত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন।
যা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামােকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এদেশের কৃষিতে বিরাজমান সমস্যাগুলাে হলাে—
১. উন্নত প্রযুক্তির অভাব
২. কৃষকের দারিদ্র্য
৩. প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীলতা
৪. কার্যকর নীতি ও পদক্ষেপের অভাব
৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
৬. জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জমির স্বল্পতা
৭. ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা
৮. কৃষিকাজে দক্ষতার অভাব
রােগ ও পােকার আক্রমণ
১০. শস্য গুদামজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাব
১১. মৃত্তিকার স্বাস্থ্যহীনতা।
পৃথিবীব্যাপী যখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষিখাতে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তখন বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা উল্লিখিত সমস্যায় জর্জরিত। এর প্রধান কারণ কৃষকের শিক্ষার অভাব। কৃষিখাতের সমস্যা মােকাবিলায় প্রয়ােজন।
আধুনিক কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ কৃষক ও কৃষিশ্রমিক।
কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব:
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অর্থনীতি প্রধানত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষিখাতের উৎপাদন। বৃদ্ধিই এদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পূর্বশর্ত। এক্ষেত্রে প্রয়ােজন আধুনিক কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি না পেলে বাংলার কৃষক দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারবে না। যেসব কারণে কৃষিশিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য কয়েকটি হলাে—
১. আধুনিক বৈজ্ঞানিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন
২. ফসলের রােগব্যাধি শনাক্তকরণ ও পােকার মন কৌশল জানা।
৩. কৃষিজমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা ।
৪. কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির সমপ্রসারণ করা।
৫. কৃষি ফসলে উৎপাদন ও ফলন বৃদ্ধি করা।
মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির কৌশল জানা ।।
৭. ফসলের নতুন নতুন জাতের ব্যবহার কৌশল জানা ।
৮. মাটির যথাযথ পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন সাধন করা।
মাটির স্বাস্থ্যরক্ষা ও মাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানাের কৌশল জানা ।
১০. চারে উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত বীজ নির্বাচন, খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা।
১১. পরিবেশ সম্মতভাবে ফসল, বনজ সম্পদ, মাছ, পশুপাখির উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
১২. রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার জানা।
১৩. কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি করা।
১৪. কৃষিপণ্য বিক্রির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমােচন ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করা।
১৫. মৌলিক চাহিদা পূরণে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
১৬. বেকারত্ব দূর করা ।
অর্থাৎ কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়ােজনীয় জ্ঞানার্জনের জন্য কৃষিশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। পাশাপাশি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যঘাটতি পূরণ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়ন ও দেশের বেকার জনগােষ্ঠীকে দক্ষ কর্মীতে রূপান্তরিত করার জন্য কৃষিশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য।
কৃষিশিক্ষা ও কৃষিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
কৃষিশিক্ষা বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। বিজ্ঞানের যে শাখায় কৃষির উৎপাদন প্রযুক্তিসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট
অন্যান্য তথ্যাবলি জানা যায় তাকে কৃষিশিক্ষা বলে। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Agriculture Education’। কৃষিশিক্ষার মাধ্যমে চাষ পদ্ধতিতে আধুনিকতা আনা যায়। এমনকি কৃষিকাজে দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন ও কার্যদক্ষতাও বাড়ানাে যায়। বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে তােলার জন্য বেশ কয়েকটি কৃষিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। যেমন- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। এছাড়াও বাংলাদেশে সরকারিভাবে ১২টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং বেসরকারিভাবে ২৬টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলাে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দানে সক্ষম দক্ষ জনশক্তি গড়ে তােলা ।
এছাড়াও আরও অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলাে কৃষির আধুনিক প্রযুক্তিসমূহ ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত ও সহায়তা করে। তাছাড়া কৃষিশিক্ষাকে ফলপ্রসূ ও অর্থবহ করতে হলে মৌলিক ও ফলিত গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
উপসংহার:
কৃষি বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। তাই কৃষিক্ষেত্রে বিরাজমান সকল সমস্যা সমাধান করার মধ্য দিয়ে অবিলম্বেই উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে কৃষিতে আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। ইতােমধ্যে বাংলাদেশ সরকার এ উপলক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছেন। জাতীয় অর্থনীতির উন্নতিকল্পে প্রকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে কৃষিশিক্ষা সম্প্রসারণে সচেষ্ট হতে হবে। কেননা কৃষিশিক্ষার প্রসার তথা কৃষির সাথে সম্পর্কযুক্ত, আনুষঙ্গিক বিষয়ে শিক্ষাদান, গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের কৃষিখাতের
ঈপ্সিত উন্নয়ন সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা (৮০০ শব্দ)