Table of Contents
খেলাধুলায় বাংলাদেশ রচনার সংকেত (Hints)
- ভূমিকা
- বাংলাদেশের দেশীয় খেলাধুলা
- বিদেশি খেলায় বাংলাদেশ
- ক্রিকেট
- ফুটবল
- দাবা
- অন্যান্য খেলাধুলা
- বাংলাদেশে খেলাধুলায় নারীরা
- বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সুখকর ঘটনা
- ক্রীড়া পুরস্কার
- বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা
- উপসংহার
খেলাধুলায় বাংলাদেশ রচনা
ভূমিকা:
সুপ্রাচীনকাল থেকেই খেলাধুলা মানবজীবনে বিনােদনের একটি মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও এর প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই নিজস্ব কিছু খেলাধুলা রয়েছে। যার মধ্য দিয়ে জাতীয় সত্তা সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে নিজস্ব ঐতিহ্যসমৃদ্ধ খেলাধুলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত বিদেশি খেলাধুলারও প্রচলন রয়েছে। এদেশে হা-ডু-ডু, গােল্লাছুট, দাড়িয়াবান্ধার মতাে লােকজীবনঘনিষ্ঠ দেশীয় খেলা যেমন অনুষ্ঠিত হয়, তেমনি ক্রিকেট, ফুটবলের মতাে আন্তর্জাতিক খেলায়ও বাংলাদেশ অংশ নেয়। তাই বলা চলে খেলাধুলায় বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় ।
বাংলাদেশের দেশীয় খেলাধুলা:
আর্থসামাজিক ও ভৌগােলিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গ্রামবাংলার দেশীয় খেলাগুলাে । এগুলাের মধ্যে রয়েছে লাঠিখেলা, কুস্তি, হা-ডু-ডু বা কাবাডি, ডাংগুলি, গােল্লাছুট, কানামাছি, লুকোচুরি, দাড়িয়াবান্ধা, এক্কা-দোক্কা, নৌকাবাইচ, মার্বেল ইত্যাদি। তাস, পাশা, বাঘবন্দি, লুডু, দাবা, ক্যারম, ছয়গুটি প্রভৃতি ঘরােয়া খেলার প্রচলনও রয়েছে বাংলাদেশে । যদিও এর সবগুলাে আমাদের নিজস্ব খেলা নয়। তবে এ খেলাগুলােতে বুদ্ধির চর্চা হয়ে থাকে। অতিরিক্ত সরঞ্জামেরও প্রয়ােজন পড়ে না।
বাংলাদেশের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খেলার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হা-ডু-ডু বা কাবাডি । এটি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে জাতীয় কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। এরপর থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাবাডি খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সারাবছর তাে বটেই এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠানে লাঠিখেলা, কুস্তি, কাবাডি ইত্যাদি খেলা অনুষ্ঠিত হয় বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে।
বিদেশি খেলায় বাংলাদেশ:
জনপ্রিয়তার দিক থেকে দেশীয় খেলাগুলো ছাপিয়ে বর্তমানে বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে বিদেশি
ঘানার বেশ কিছু খেলা। যেমন- ক্রিকেট, ফুটবল, সাঁতার, দাবা, অ্যাথলেটিক্স, শুটিং ইত্যাদি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এসব খেলায় বাংলাদেশের নিয়মিত অংশগ্রহণের ফলে খেলাগুলাে আমাদের নিজস্ব ক্রীড়া ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। সাফল্য-ব্যর্থতা দুটো মিলিয়েই বাংলাদেশ নিজের অবস্থান টিকিয়ে রেখেছে এসব খেলায়। যেমন:
ক্রিকেট:
দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলার প্রচলন থাকলেও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম অংশগ্রহণের গৌরব অর্জন করে ১৯৯৯ সালে। এর আগে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপে খেলার মর্যাদা অর্জন করে। টেস্ট খেলার মর্যাদা লাভ করে ২০০০ সালের ২৬-এ জুন। বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা বা ইল্যান্ডের মতাে টেস্ট পরাশক্তির বিরুদ্ধে জয়লাভ সেকথারই সত্যতা প্রতিপন্ন করে। এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে তারা সবগুলাে টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারিয়েছে। বাংলাদেশে ক্রিকেট চর্চাকে জাতীয়ভাবেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেই এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আর বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রিয় খেলােয়াড়ের তালিকায় এখন এদেশের খেলােয়াড়দেরই নাম। মাশরাফি, সাকিব, আশরাফুল, তামিম আর মুস্তাফিজের মতাে খেলােয়াড়দের খেলা দেখতে মেতে ওঠে হাজার হাজার বাঙালি দর্শক। সেই সাথে প্রমীলা ক্রিকেট চালু হওয়ার মাধ্যমে ক্রিকেটে মেয়েদের অংশগ্রহণ ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে আরেক ধাপ।
ফুটবল:
ফুটবলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের তুলনায় খানিকটা দুর্বল হলেও একেবারে পিছিয়ে নেই। ফুটবলের প্রসার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বা বাফুফে। বাফুফের তত্ত্বাবধানে ছাড়াও জেলা ও থানা পর্যায়ে। প্রতি বছরই ফুটবল প্রতিযােগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে। l সামপ্রতিককালে বাংলাদেশের ফুটবলে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। চালু হয়েছে পেশাদার ফুটবল লীগ। দেশের ফুটবল ক্লাবগুলােও আবার সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। মেয়েরাও খেলছে ফুটবল
দাবা:
দাবায় বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালাে। জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিয়ত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বিভিন্ন
প্রতিযােগিতা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের দাবাড়দের সুখ্যাতি রয়েছে। নিয়াজ মােরশেদ, এনামুল হােসেন রাজবী, জিয়াউর রহমান ও ফাহাদ রহমানের মতাে ফিদে গ্র্যান্ডমাস্টার বিশ্বে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। দেশের বিশিষ্ট দাবাড়দের মধ্যে আরও রয়েছেন রাণী হামিদ, ইয়াসমিন বেগম, তনিমাসহ আরও অনেকে। বিভিন্ন সময়ে এরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা প্রতিযােগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন।
অন্যান্য খেলাধুলা:
অ্যাথলেটিক্সের বিভিন্ন ইভেন্ট, শুটিং, হকি এবং সাঁতারে বাংলাদেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে নিয়মিত। অ্যাথলেটিক্সে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাফল্য দৌড়ে। বাংলাদেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ, দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার এবং সাবেক দ্রুততম মানব মােহাম্মদ শামসুদ্দীন বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। অন্যদিকে, শুটিং-এ বাংলাদেশের কৃতী নাম আসিফ হােসেন খান । ২০০৮ সালে অলিম্পিক গেমসে শুটিং-এ স্বর্ণপদক জেতা ভারতের অভিনব বিন্দ্রাকে সাফ গেমসে হারিয়েছেন বাংলাদেশের এ অসাধারণ শুটার। হকিতে বাংলাদেশের কৃতিত্ব তেমন উজ্জ্বল না হলেও জাতীয় দল রয়েছে। সাঁতারেও বাংলাদেশের অবদান সাফল্যজনক ২০০১ সালে ইরানে অনুষ্ঠিত মুসলিম নারী ক্রীড়া প্রতিযােগিতায় সাঁতারে একটি স্বর্ণ, একটি রৌপ্য এবং দুটি ব্রোঞ্জ পদক জেতে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে খেলাধুলায় নারীরা:
বাংলাদেশের খেলাধুলায় নারীদের অবদান কোনাে অংশে কম নয়। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে তারা। অ্যাথলেটিক্সে নাজমুন নাহার বিউটি, দাবায় রাণী হামিদ, ক্রিকেটে সালমা খাতুন, চম্পা চাকমা, ভারােত্তলনে সাবিয়া আক্তার সীমান্ত, টেবিল টেনিসে জোবেরা রহমান লিনু বাংলাদেশের গর্ব ।
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সুখকর ঘটনা:
ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ক্রিকেট অঙ্গনে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে ওঠা, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়, ১৯৯৯ সালে আইসিসি ট্রফি লাভ, ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানাে, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সর্বশেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত আনন্দায়ক ঘটনা। বিশ্বের সেরা অল রাউন্ডার হিসেবে সাকিব আল হাসানের নাম, বিশ্বের সেরা বােলারদের মধ্যে মাশরাফি ও মুস্তাফিজের উল্লেখযােগ্য অবস্থান বাংলাদেশের ক্রীড়া প্রতিভার অনন্য দৃষ্টান্ত।
ক্রীড়া পুরস্কার:
খেলাধুলার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্যে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ক্রীড়াবিদদের পুরস্কৃত
করা হয়ে থাকে। এ ধরনের পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযােগ্য গ্রামীণ ফোন- প্রথম আলাে ক্রীড়া পুরস্কার। বেসরকারি পর্যায়ে এ পুরস্কার দেয়া হয় পাঁচটি বিভাগে। এ ধরনের পুরস্কার ক্রীড়াবিদদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জোগায় নিঃসন্দেহে।
বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যা:
বাংলাদেশে খেলাধুলার ক্ষেত্রটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। পর্যাপ্ত মাঠের অভাব, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রয়ােজনীয় পৃষ্ঠপােষকতার অভাব, সংকীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক মনােভাব প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশ ক্রীড়াক্ষেত্রে পরিপূর্ণ সাফল্য ধরে রাখতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে প্রয়ােজন সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা, সুযােগ-সুবিধা ও প্রয়ােজনীয় অবকাঠামাে তৈরি, খেলােয়াড়দের পেশাদারি মনােভাব এবং সর্বোপরি দেশপ্রেম।
উপসংহার:
খেলাধুলায় বাংলাদেশের অবস্থান কখনাে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতাে, কখনাে ততটাই ম্রিয়মাণ। তাই খেলাধুলারমানকে উন্নত করার জন্যে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপােষকতা প্রয়ােজন। সেই সাথে খেলােয়াড়দেরও কঠোর অনুশীলন ও চর্চা করে যেতে হবে। বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাধর খেলােয়ড়ি রয়েছেন এবং এরা দেশের জন্যে বয়ে এনেছেন গৌরব। যা বিশ্ব সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে।