Table of Contents
গণমাধ্যম রচনার সংকেত
- ভূমিকা
- গণমাধ্যম কী
- গণমাধ্যমের অতীত ও বর্তমান
- শিক্ষাবিস্তারে সংবাদপত্রের ভূমিকা
- শিক্ষাবিস্তারে রেডিওর ভূমিকা
- শিক্ষাবিস্তারে টেলিভিশনের ভূমিকা
- উপসংহার
গণমাধ্যম রচনা
ভূমিকা:
জাতির উন্নতি ও প্রগতির অন্যতম বাহন শিক্ষা । দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সাধন এবংআলােকিত মানুষ তৈরি করাই শিক্ষার লক্ষ্য। শিক্ষার উপযােগিতা বিবেচনায় শিক্ষার বিস্তারের বিষয়টিও বর্তমানে সময়েরদাবি। আর শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করে গণমাধ্যম।
গণমাধ্যম কী:
জনগণের দ্বারা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত তথ্য ও বিনােদনের মাধ্যমকে বলা হয় গণমাধ্যম। সাধারণত সংবাদপত্র,বিভিন্ন পত্রিকা, রেডিও এবং টেলিভিশন গণমাধ্যম হিসেবে সমাদৃত। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটবিপুল তথ্যের এক অবিশ্বাস্য ভাণ্ডার। এ গণমাধ্যমটিরও দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটছে। স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম জাতি গঠনেবিশেষ ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যমকে তাই বলা হয় জাতির বিবেক, সমাজের দর্পণ।
গণমাধ্যমের অতীত ও বর্তমান:
ছাপাখানা আবিষ্কারের পর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চালু হয় সংবাদপত্র। তবে সেকালের।সংবাদপত্র আজকের সংবাদপত্রের মতাে ছিল না। পৃথিবীর প্রথম সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় রােমে। দৈনন্দিন বিভিন্ন খবরপরিবেশনের পাশাপাশি জন্মমৃত্যুর খবর, কোর্টের মামলা, অফিসিয়াল ঘােষণা, আর্থিক খবর প্রভৃতি প্রকাশিত হতাে সেইসংবাদপত্রে। রেডিও আবিষ্কারের পর গণমাধ্যম এগিয়ে গেল একধাপ। এ শুতিযন্ত্রটি শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে মানুষের কথা খবর,গান প্রভৃতি পৌছে দেবার উপযােগী হওয়ায় ভীষণভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। ১৯২৬ সালে আবিষ্কৃত হলাে টেলিভিশন। শােনারসাথে সাথে গ্রাহকযন্ত্রের পর্দায় ভেসে উঠল ছবি। পরবর্তীকালে কম্পিউটার আবিষ্কার, কম্পিউটারে ইন্টারনেটের ব্যবহার ইত্যাদিরমাধ্যমে গণমাধ্যম আধুনিক রূপে বিকশিত হতে লাগল । অতীতে গণমাধ্যম শিক্ষাবিস্তারের কাজে ব্যবহৃত হতাে না। সভ্যতারঅগ্রগতির সাথে সাথে এবং সময়ের পরিবর্তনে গণমাধ্যমগুলাে শিক্ষাবিস্তারের অন্যতম প্রধান অজগ হয়ে উঠেছে।
শিক্ষাবিস্তারে সংবাদপত্রের ভূমিকা:
সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় থাকে চলমান বিশ্বের চলতি ঘটনার যাবতীয় তথ্য।লেখাপড়াকে শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তােলার জন্য পড়ালেখার পাতা’, ক্যাম্পাস’, ‘বিজ্ঞানের পাতা’ প্রভৃতিশিরােনামে সংবাদপত্রগুলােতে আলাদা পাতা প্রকাশিত হয়। বর্তমানে সংবাদপত্রের সংখ্যাও অনেক বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরাতাদের পছন্দমতাে বেছে নিতে পারে।সংবাদপত্রে প্রকাশিত কৃতী শিক্ষার্থীদের ভালাে ফলাফলের কৃতিত্বপূর্ণ খবর ছবিসহ ছাপা হয়। এ ধরনের ছবি, সাক্ষাৎকারপৌছে যায় সারা দেশে। এ থেকে উৎসাহিত হয় অন্য শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অনেক দরিদ্র মেধাবীর জীবনসংগ্রাম এবংকৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের কাহিনি গ্রাম ও শহরের পিছিয়ে পড়া দারিদ্র্যপীড়িত সন্তান ও তাদের বাবা-মাকে উৎসাহিত করে।প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তথ্য ও ঘটনার সাথে পরিচিত হওয়া যায় সংবাদপত্রের মাধ্যমে।
শিক্ষাবিস্তারে রেডিওর ভূমিকা:
শিক্ষাবিস্তারে রেডিও অত্যন্ত শক্তিশালী একটি মাধ্যম। গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রেডিওসহজলভ্য। দামে সস্তা হওয়ায় বিনােদনের এ মাধ্যমটি অনেকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। বিনােদনের পাশাপাশি শিক্ষার প্রসারে এমাধ্যমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রেডিওর মাধ্যমে শিক্ষার গুরুত্ব প্রচার করা হলে অনেক নিরক্ষর লােকও এতেউৎসাহিত হয়। শিক্ষামূলক শিশুতােষ অনুষ্ঠান আকর্ষণীয়ভাবে সম্প্রচার করলে শিশুরাও তাদের দৈনন্দিন পাঠকে আনন্দেরসাথে গ্রহণ করে । রেডিওর মাধ্যমে শিক্ষা আন্দোলনে ব্যাপক গণজাগরণ গড়ে তােলা সম্ভব।
শিক্ষাবিস্তারে টেলিভিশনের ভূমিকা:
টেলিভিশন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় বিনােদনমাধ্যম। শােনার পাশাপাশি ।দৃশ্য উপভােগকরার সুযােগ রয়েছে বলে তা আরও বাস্তবসম্মত। কাহিনির মাধ্যমে দৃশ্যদ্রব্য বিষয় উপস্থান, টেলিভিশনের একটি ইতিবাচকদিক। শিক্ষার প্রসারে যা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন বাংলাদেশে টেলিভিশন চ্যানেলগুলােতে প্রচারিত হয়শিক্ষামূলক কার্টুন মীনা’, ‘সিসিমপুর’ প্রভৃতি। নিরক্ষরদের অক্ষরজ্ঞান শেখানাে, লেখাপড়ার গুরুত্বসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষণীয়কার্টুনগুলােতে খুবই আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয়। শিশুদের জন্য তৈরি হলেও বড়রাও এ ধরনের অনুষ্ঠান উপভােগপরেন। রেডিওর মতাে অতটা সহজলভ্য না হলেও টেলিভিশনও এখন পৌছে গেছে গ্রামবাংলার চৌহদ্দিতে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেলিভিশনের চ্যানেলুগুলােতে শিশুদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সেখানে রঙিন ছবি, কাটুন,বিষয়।পাপেট ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে লেখাপড়াকে শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়।
অন্যদিকে, তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকতম মাধ্যম কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সারা বিশ্বের দরজা খােলা রাখে মানুষের জন্য।পৃথিবীর এমন কোনাে বিষয় নেই যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানা যায় না। অবশ্য এটি জ্ঞান অর্জনের অফুরন্ত ভাণ্ডার এবংকেবল শিক্ষিতরাই জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে উপকৃত হন। বিভিন্ন শিক্ষামূলক সিডি ব্যবহার করেকম্পিউটারের মাধ্যমেও শিক্ষার প্রসার ঘটানাে যায়। তবে এ মাধ্যম ব্যয়সাপেক্ষ। তাই সরাসরি না হলেও পরােক্ষভাবেকম্পিউটার এবং ইন্টারনেট শিক্ষাবিস্তারে ভূমিকা রাখে।
সার্বিকভাবে গণমাধ্যমগুলাের সাধারণ জ্ঞানের প্রতিযােগিতা, শব্দের ধাধা, বুদ্ধির খেলা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে। তাদেরসাধারণ জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। অন্যদিকে, পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন ভুল ও অসংগতি, শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটিসহ নানা বিষয়সমাজে তুলে ধরার মাধ্যমে গণমাধ্যমগুলাে যে সচেতনতা তৈরি করে তাও পরােক্ষভাবে শিক্ষাবিস্তারেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি, কীভাবে শিক্ষাকে আরও আকর্ষণীয় করাযায় সেসব বিষয়েও ধারণা লাভ করা যায় গণমাধ্যম থেকে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলাে শিক্ষাবিস্তারে যথেষ্ট ভূমিকা রাখলেও দেশের প্রত্যন্ত অর্থলগুলােতে, ছিন্নমূলদেরমাঝে শিক্ষার আলাে পৌছে দিতে প্রয়ােজন গণমাধ্যমের আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ। এ লক্ষ্যে মানুষকে শিক্ষা কার্যক্রমে আগ্রহী।করে তুলতে গণমাধ্যমগুলােকে আরও নিত্য নতুন প্রচারণা, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে যাতে বিপুলনিরক্ষর জনগােষ্ঠীকে লেখাপড়ায় উৎসাহী করা সম্ভব হয় এবং নিরক্ষরদের কাছে শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করা যায়।