Table of Contents
গৃহকাজে বিজ্ঞান রচনার সংকেত (Hints)
- ভূমিকা
- গৃহকাজে বিজ্ঞান
- রান্নাবান্নার কাজে বিজ্ঞান
- ধৌতকর্মে বিজ্ঞান
- টেলিভিশন ব্যবহারে বিজ্ঞান
- গৃহকাজে বিদ্যুতের ব্যবহার
- বিজ্ঞানের সর্বগামিতা
- শেষ কথা
গৃহকাজে বিজ্ঞান রচনা
ভূমিকা:
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিশ্বজুড়ে সভ্যতার এত উৎকর্ষ সাধিত হতে পেরেছে বিজ্ঞান নির্ভরতার ফলেই। বিজ্ঞান বদলে দিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবন, বদলে দিয়েছে বিশ্ব ব্যবস্থাপনা। অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বিজ্ঞান, দূরকে কাছে করেছে বিজ্ঞান। যােগাযােগ, চিকিৎসা, মহাকাশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান সাফল্য দেখিয়েছে বিস্ময়কর। গােটা বিশ্ব আজ পরিচালিত হচ্ছে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির শক্তি বলে। আজ দেখা যায়, যে জাতি যত বেশি বিজ্ঞানমনস্ক হতে পারছে তারাই তত বেশি উন্নতি করছে। বিজ্ঞানের প্রভাবে বদলে গেছে গৃহিণীর গৃহকর্মও।
গৃহকাজে বিজ্ঞান:
যে বিজ্ঞান মহাকাশ, মহাসমুদ্র জয় করেছে সে বিজ্ঞান তার প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছে গৃহিণীর চার দেয়ালের
ভেতরেও। বলা যায় গৃহকর্মের সকল কাজই এখন বিজ্ঞাননির্ভর। গৃহকর্তা আর গৃহিণী শুধু বিজ্ঞানের ছােটোখাটো ফুট ফরমাশ পালন করছে যেন। গৃহকাজে বিজ্ঞান শুধু মানুষের হাতের কাজকেই হরণ করেনি বরং বৈচিত্র্যও দিয়েছে ঢের । গৃহিণীর রান্নাঘর থেকে ড্রয়িংরুম পর্যন্ত যা কিছু ঘটে তার প্রায় সবই বিজ্ঞানের দান।
রান্নাবান্নার কাজে বিজ্ঞান:
একসময় গৃহিণীদের নিত্য কাজ চুলায় আগুন দেওয়া ছিল লাকড়িনির্ভর। গাছের শুকনাে কাঠ বা ডালপালায় আগুন ধরিয়ে জ্বালানির ব্যবস্থা করা হতাে। কিন্তু আজ শহরে, বন্দরে এমনকি গ্রামের গৃহলক্ষী বধূটিও প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে জ্বালানি কাজ সম্পন্ন করছে। বিজ্ঞান প্রাকৃতিক গ্যাসকে জ্বালানি হিসেবে গৃহিণীর হাতের নাগালে পৌঁছে দিয়েছে। ফলে জ্বালানির জন্য কাঠ বা ডালপালা যেমন খুঁজতে হচ্ছে না তেমনি সুলভে বিনাশ্রমে ঘরে বসেই তা পাওয়া যাচ্ছে। অতি দ্রুত রান্না শেষ করার জন্য বিজ্ঞান দিয়েছে প্রেসার কুকার। যার সাহায্যে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই হয়ে যাচ্ছে প্রচুর রান্না । আবার রান্না হয়ে থাকা বিভিন্ন নাশতা গরম করার প্রয়ােজন হলে মিনিটেই ওভেনের সাহায্যে তা করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। রিফ্রিজারেটরের সাহায্যে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের পচনরােধ করে তাকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে খাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞানের এ দানটি নিঃসন্দেহে গৃহকাজে নবমাত্রা সংযােজন করেছে।
ধৌতকর্মে বিজ্ঞান:
বিজ্ঞান কাপড়-চোপড় বা নিত্য পােশাক ধৌত কাজেও অবদান রাখছে। ওয়াশিং মেশিনের সাহায্যে অতি
অল্প সময়ে অত্যন্ত নিপুণভাবে অধিক পরিমাণ কাপড় ধােয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে শ্রম ও সময় দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। আবার পােশাকগুলাে দ্রুত শুকিয়ে নেবার হিটারও বিজ্ঞান উদ্ভাবন করেছে। আয়রনের সাহায্যে ঘরে বসেই নিপুণভাবে ইস্ত্রি করে কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানের কল্যাণেই।
টেলিভিশন ব্যবহারে বিজ্ঞান:
টেলিভিশন গৃহকাজের মধ্যে পড়ে না বটে। তবে গৃহে বসে দেশ-বিদেশে নানা সংবাদ মুহূর্তেই পাবার প্রধান বাহন এ টেলিভিশন বিজ্ঞানের দান। বাসাবাড়িতে ড্রয়িংরুম মানেই একটি টেলিভিশনের উপস্থিতি যেন অনিবার্য। ঘরে বসে গােটা বিশ্বকে অবলােকনের এ মাধ্যমটি ঘরে বিজ্ঞানের সরব উপস্থিতি যেন! চিত্তবিনােদন যদি ঘরে বসে কেউ উপভােগ করতে চায় তবে তাকে টেলিভিশনের কথা স্বীকার করতেই হবে।
গৃহকাজে বিদ্যুতের ব্যবহার:
রান্নাবান্না, পােশাক ধােয়া আর টেলিভিশনের যত কথাই আমরা বলি না কেন প্রত্যেকটির নেপথ্যে শক্তিশালী অবদান রেখে যাচ্ছে বিজ্ঞানের আরেকটি বড় অবদান, সে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ বিজ্ঞানের অন্যতম দান। এ দানকে গৃহকর্মে স্থান দিতে হয়েছে উদারভাবে। বিদ্যুতের ব্যবহার ব্যতীত গৃহ-অভ্যন্তরে বিজ্ঞানের সকল ব্যবস্থাপনাই অচল। সে হিসেবে গৃহকাজের চালিকাশক্তি বিদ্যুৎ– একথা স্বীকার করাই শ্রেয়। বিদ্যুৎকে বাহন করেই গৃহঅভ্যন্তরে গ্রীষ্মের তপ্ত গরমে আমাদের মাথার ওপরে ঘুরতে থাকে ফ্যান। এ ফ্যানও বিজ্ঞানের অবদান।
বিজ্ঞানের সর্বগামিতা:
বিজ্ঞান গৃহিণীর হাতের লাকড়ি হরণ করেছে, এবার হাতের ঝাড়ুও হরণ করতে ব্যস্ত হয়েছে। ঘরের ধুলাবালি পরিষ্কারের জন্য প্রযুক্তি বেরিয়েছে। এক সাথে ময়লা সাফ করা আর ঝকঝকে পরিষ্কার আসবাব নিশ্চিত করার
দায়িত্ব এখন প্রযুক্তির হাতেই সমর্পণ করা সম্ভব হচ্ছে। সকালে গৃহিণীর হাতে বানানাে নাশতা দুপুরে অফিসে বসে গরম গরম খাওয়া সম্ভব হচ্ছে হটপটের কল্যাণে । মােটকথা গৃহকর্মের চারপাশ এখন বিজ্ঞানের দখলে।
শেষ কথা:
বিজ্ঞান যুগে যুগে মানুষের জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করে দিতে সক্ষম হচ্ছে। গৃহকাজেও পড়েছে এর ব্যাপক প্রভাব । বিজ্ঞান জয় করেছে এখন গৃহকোণ । এ বুঝি বিজ্ঞানের সহাবস্থানের বাসনারই বাস্তবায়ন।
আরো পড়ুনঃ মানবকল্যাণে বিজ্ঞান রচনা