Table of Contents
প্রশ্নঃ গ্রাম্যমেলা নিয়ে বাংলা অনুচ্ছেদ লিখ ।
উত্তরঃ
গ্রাম্যমেলা অনুচ্ছেদ ১
গ্রাম্যমেলা বাঙালি সংস্কৃতির স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ। এটি আবহমান গ্রামবাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মেলা শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘বিশেষ কোনাে উপলক্ষ্যে হাট-বাজার অপেক্ষা প্রচুরতর পণ্য ক্রয়-বিক্রয় তৎসহ আমােদ-প্রমােদের অস্থায়ী ব্যবস্থা। ‘মেলা’ কথাটির আরেকটি অর্থ হচ্ছে ‘মিলন’। অর্থাৎ গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ সব কষ্ট ও বিভেদ ভুলে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়, প্রাণের মিলন ঘটায় এই গ্রাম্যমেলাকে উপলক্ষ্য করে। তাই , গ্রাম্যমেলার সঙ্গে বাঙালির আত্মিক সম্পর্ক বেশ সুনিবিড়। এ মেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের লােকজীবন ও লােকসংস্কৃতির অন্তরঙ্গ পরিচয় পাওয়া যায়। পল্লির মানুষের নিরানন্দ জীবনে আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে দিতে গ্রাম্যমেলার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সু-প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির জীবনেতিহাসে মেলার অস্তিত্ব লক্ষণীয়। বিচিত্র উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে গ্রাম্যমেলা আয়ােজন হতে দেখা যায় । ধর্মীয় অনুষ্ঠান, লৌকিক বিশ্বাস কিংবা বিশেষ দিবসে গ্রাম্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের অনেক স্থানে বাংলা বছরের শেষ দিনে। অর্থাৎ চৈত্র-সংক্রান্তিতে মেলা আয়ােজনের রেওয়াজ আছে। আবার পহেলা বৈশাখে আয়ােজিত বৈশাখী মেলার মাধ্যমে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানানাে হয়। এভাবেই হেমন্তে নতুন ধান কাটার পর কোথাও মেলা বসে, পৌষের বিদায় লগ্নে হয় পৌষ সংক্রান্তির মেলা। হিন্দু সম্প্রদায়ের রথযাত্রা, দোল পূর্ণিমা এবং মুসলমানদের মহররম উপলক্ষ্যে গ্রাম্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। অগণিত মানুষের পদচারণায় মুখর এসব মেলা গ্রামীণ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। পুতুলনাচ, নাগরদোলা, লাঠিখেলা, যাত্রা, ম্যাজিক প্রদর্শন, সার্কাস ইত্যাদির মাধ্যমে সবাই আনন্দে মাতে। গ্রামবাংলার শিল্পী-কারিগরদের নিপুণ হাতে তৈরি তৈজসপত্র ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রীর বেচাকেনা চলে হরদম। বিন্নি ধানের খই, মুড়ি-মুড়কি, জিলাপি, বাতাসা ও অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবার ছেলে-বুড়াে সবার রসনাকে তৃপ্ত করে। সময়ের পরিক্রমায়, যন্ত্রসভ্যতার প্রভাবে গ্রাম্যমেলার আবেদন দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে, তার নিজস্ব রূপ যাচ্ছে পাল্টে। তবু এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, গ্রাম্যমেলায় গ্রামবাংলার শাশ্বত রূপ সার্থকভাবে ফুটে ওঠে। যুগ যুগ ধরে বাঙালির প্রাণােচ্ছাসকে ধারণ করে গ্রাম্যমেলা গ্রামবাংলার মানুষের সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাঙালির নিজস্বতা প্রকাশে গ্রাম্যমেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
গ্রাম্যমেলা অনুচ্ছেদ ২
গ্রাম্যমেলা হচ্ছে গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ ও শিশুদের মিলনমেলা। গ্রাম্যমেলা বাঙালি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। গ্রাম্যমেলায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সমাগম ঘটে। মেলাকে আশ্রয় করে খুলে যায় গ্রামীণ মানুষের আনন্দ-উৎসবের রুদ্ধ দ্বার। বিভেদের পার্থক্য ভুলে সকলে যেতে এক আনন্দের জোয়ারে। এটি সধারণত গ্রামের কেন্দ্রীয় অংশে, নদীর তীরে, বাজারের স্থানে বা মন্দিরের আঙিনায় বসে। গ্রাম্যমেলা সাধারণত ধর্মীয় উৎসব বা না নববর্ষ উপলক্ষে বসে থাকে। আবার কোনাে মহৎ ব্যক্তির মৃত্যু কিবা জন্মবার্ষিকীও হতে পারে এর উপলক্ষ। তবে উপলক্ষ যা-ই হােক, মেলা বাঙালি সমাজ ও মানুষের নিকট খুবই জনপ্রিয় ও আনন্দের উৎস। এ মেলা এক দিন বা কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। গ্রাম্যমেলায় বিভিন্ন পেশার লােকজন তাদের হাতে তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি ও প্রদর্শনের জন্য নিয়ে আসে। অনেকে তাদের তৈরিকৃত পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে এ দিনটির অপেক্ষায় থাকে। মেলার দোকানদাররা সারিবদ্ধভাবে তাদের পসরা সাজিয়ে বসে। এখানে কাপড়-চোপড়, খেলনা, সস্তা গয়না, কসমেটিক্স, সস্তা শৌখিন সামগ্রী, বাসনপত্র, বাঁশের তৈরি সরঞ্জাম, মিষ্টি এবং অনেক আকর্ষণীয় জিনিস বিক্রি হয়। যাত্রা, সার্কাস, পুতুলনাচ, ম্যাজিক শাে ইত্যাদি গ্রাম্যমেলার অন্যতম আকর্ষণ। শিশু-কিশোররা পূর্ব থেকেই মেলার জন্য প্রস্তুতি নেয়। গ্রাম্যমেলা কুটির শিল্প কারিগর, শ্রমশিল্পী, কুমার, তাঁতি এবং চাষিদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ প্রদান করে। তবে মেলার নেতিবাচক দিকও লক্ষ করা যায়। মেলাতে প্রায়ই জুয়াড়িদের আর বসে। এগুলো সহজ-সরল গ্রামবাসীকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিসাধন করে এবং তাদের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটায়। সবশেষে বলা যায়, গ্রাম্যমেলা শুধু আনন্দ-অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রই নয়, এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে জীবনের অফুরান প্রানশক্তির প্রকাশ।
গ্রাম্যমেলা অনুচ্ছেদটি কেমন হয়েছে ? নতুন কিছু সংযোজন করা যায় বা বাদ দেওয়া প্রয়োজন? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।