Home রচনা গ্রীষ্মের দুপুর রচনা (৮০০ শব্দ) | JSC, SSC |

গ্রীষ্মের দুপুর রচনা (৮০০ শব্দ) | JSC, SSC |

by Curiosityn
0 comment

গ্রীষ্মের দুপুর রচনার সংকেত

  • ভূমিকা
  • বাংলাদেশের ষড়ঋতুর মধ্যাহ্ন
  • গ্রীষ্মের প্রকৃতি ও মধ্যাহ্ন
  • মধ্যাহ্নের মানসিক অবস্থা
  • সময়ের স্বৰ্ধক্ষণ
  • মধ্যাহ্নের আড়ষ্টতা
  • হৃদয়ের সুপ্ত ভাবনার প্রকাশ
  • অতীতের স্মৃতিচারণ
  • মধ্যাহ্নে আনন্দময় ক্ষণ
  • উপসংহার

গ্রীষ্মের দুপুর রচনা

ভূমিকা:

প্রকৃতির অনন্য এক বৈচিত্র্য হলাে এর সমস্ত দিনের কালিক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনে মধ্যাহ্ন একটি বড় সময়ের আবর্তে বাঁধা পড়েছে। মধ্যাহ্ন দিনের ঠিক মাঝামাঝি সময়। অনেকে বলেন সূর্য যখন ঠিক মাথার উপরে তার আলাে ও তাপ বিকিরণ করে তখন শুরু হয় মধ্যাহ্নের মুহর্ত; আর শেষ হয় গােধূলির পূর্মুহূর্তে। মধ্যাহ্ন কোনাে মানুষের ব্যস্ততার আবার কোনাে মানুষের বিশ্রামের সময়। প্রাণিদের মধ্যেও রয়েছে মধ্যাহ্নের ব্যস্ততা ও অবসরের মুহূর্ত- রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘

মধ্যদিনে যবে গান বন্ধ করে পাখি

হে রাখাল, বেণু তব বাজাও একাকী।

বাংলাদেশের ষড়ঋতুর মধ্যাহ্ন:

ঋতু বৈচিত্র্যের এই বাংলাদেশে ঋতু সংখ্যা নেহাত ম নয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই রয়েছে। তিনটি চারটি ঋতু। কিন্তু আমাদের দেশে এই ঋতুর সংখ্যা ৬টি। কাজেই ৬টি ঋতুর মধ্যাহ্নের প্রকৃতিও অনেক বিচিত্র ।vগ্রীষ্মের মধ্যাহ্ন যেখানে খরতাপ প্রখর; বর্ষার মধ্যাহ্ন সিক্ত চঞ্চল । আবার শরতের মধ্যাহ্ন যেমন উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ হেমন্তের মধ্যাহ্ন ফসলের গন্ধভরা। শীতের মধ্যাহ্ন ঘােলাটে পােশাকি আবরণে আচ্ছন্ন; কিন্তু বসন্তের মধ্যাহ্ন ফুলের গন্ধে কোকিলের কলতানে মুগ্ধ। এ বিষয়গুলাে পরিদৃষ্টে সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, ষড়ঋতুর ভিন্ন প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে এর মধ্যাহ্নের প্রকৃতিতেও আলাদা স্বাদ রয়েছে।

গ্রীষ্মের প্রকৃতি ও মধ্যাহ্ন:

বাংলাদেশের ষড়ঋতুর সূত্রপাত হয় গ্রীষ্মকাল দিয়ে। গ্রীষ্মের দুমাস বৈশাখ (বাঙালির নতুন বর্ষবরণের মাস) ও জ্যৈষ্ঠ (মধু মাস) যা প্রকৃতির প্রখর খরতাপকে আমন্ত্রণ জানায় । রবীন্দ্রনাথের ভাষায় প্রখর তপনতাপে/ আকাশ তৃষ্ণায় কাপে বায়ু করে হাহাকার।’ করি এ উপলব্ধি থেকে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি যে গ্রীষ্মে প্রকৃতি রুদ্ররূপে আমাদের সামনে আবির্ভূত হয়। আকাশের সূর্যদেব বর্ষণ করে তাপের বহ্নিশিখা; যাতে বাতাসও গরম হয়ে ওঠে। চারিদিকে জলের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। চাতকের মতাে সাধক পাখি আকাশের পানে তাকিয়ে যেন জল দে বলে আকুল আবেদন করে। গাছপালা নেতিয়ে পড়ে সিক্ততার স্পর্শ না পেয়ে। এ অবস্থা মানুষের মধ্যেও সংক্রামিত হয়।

মধ্যাহ্নের মানসিক অবস্থা:

ভীষণ দাবদাহের গ্রীষ্মের দুপুরে ঘরে ফেরা মানুষ ঘামে সিক্ত হয়ে ক্লান্ত দেহে একটু শান্তির বাতাস। রূঢ়তাকে কোনােভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না মানুষ। কিছুটা রূঢ় ও শ্রান্তির অক্ষুন্ন আবেশে মন যেন ব্যাকুল হয়ে খোজে।

সময়ের স্বৰ্ধক্ষণ:

গ্রীষের দুপুরে সময়ের কাটা যেন কিছুতেই সামনের দিকে এগােতে চায় না। শহরে মানুষের ব্যস্তজীবনে কাজের অব্রিাম গতি হয়ত সে কথা স্মরণ করতে দেয় না। কিন্তু পন্নিপ্রকৃতিতে সময় যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। এক দীর্ঘ ভ্রমণে বের হন সময়ের দেবতা; যা সমস্ত দুপুরকে একটি ছাঁদে আটকে রাখে। জানালায় চোখ রাখা কিশাের-কিশােরী, তরুণ-তরুণী অথবা যে কোনাে বয়সি মানুষ মাটির বুকে সূর্যের মরিচীকা দেখতে থাকে। তার দু’চোখ তখন আটকে থাকে সেই বিশেষ মুহুর্তে; তাই সময়ও যেন আটকে যায় তার অক্ষিগােলকে।

মধ্যাহ্নের আড়ষ্টতা:

স্তন্ধ সময়ের এই বিশেষ ক্ষণে মানুষ নিজের মধ্যে এক ধরনের আড়ষ্টতা খুঁজে পায়। মানুরে জীবনে
নেমে আসে মন্থরতা। অফিস-আদালত ব্যস্ততার স্থান হলেও এ সময় মানুষ শান্তিতে শরীরে মন্থরতা আবিষ্কার করে। গ্রামের ফসলের জমিতে কৃষকের এ সময় কোনাে কাজ নেই; অলস ওই ক্ষণে তার দু’চোখে ঘুম জড়িয়ে আসে। আগুনের
হলকার মতাে সূর্যের তাপ শরীর স্পর্শ করে । কাজ ফেলে গাছের নিচে তখন অবস্থান নেয় কৃষক। মধ্যাহ্নের এ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কবি বলেন- “রৌদ্রময়ী রাতি/ঝা ঝা করে চারিদিকে নিস্তব্ধ নিঃঝুম ।

হৃদয়ের সুপ্ত ভাবনার প্রকাশ:

এরকম নিঃসাড় রৌদ্রদগ্ধ দুপুরে হৃদয়ের গােস্ন কুটুরিতে থাকা অব্যক্ত অনেক কথা যেন বাইরে আসে । শিল্পী না হয়েও আঙুল দিয়ে ছবি আঁকে অনেকে; আবার গুণ গুণ সুরে গান করে অনেকে । রবীন্দ্র জীবনীকারদের ভাষ্য থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ এ দুপুরগুলােকে দু’চোখ ভরে উপভােগ করতেন আর নির্জনে বসে তার অমর সাহিত্য সৃষ্টি করতেন। তাঁর নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে দুপুর দেখার এ অভিজ্ঞতা সত্যিকার অর্থেই অনবদ্য। শুধু রবীন্দ্রনাথই নন; অনেক শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকই তাঁদের অনন্য সৃষ্টিকর্মগুলাে দুপুরে সম্পাদন করেছেন।

অতীতের স্মৃতিচারণ:

অলস এ দুপুরে মানুষের অতীত উপলব্ধির দরজা খুলে যায়। কতদিনের কত স্মৃতি মানুষকে তখন তড়িয়ে বেড়ায়। প্রেম, বিরহ, বন্ধুত্ব, সুন্দর কাটানাে মুহূর্ত সব একে একে তার মনের ঘরে উকি দেয়। এসব স্মৃতি মনে করতে করতে কখনাে কখনাে মানুষের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে; আবার কখনাে মনের অজান্তেই সে হেসে ওঠে। জীবনকে উপলব্দির জায়গা থেকে বিচার করার এ যেন আদর্শ এক সময়। মানুষের পাওয়া না পাওয়ার বােধগুলাে যেন সুস্পষ্টভাবে আত্মপ্রকাশ করে এ সময়ে। উদাসী ঘুঘু মানুষের কণ্ঠস্বরে কেঁদে ওঠে এ সময়।

মধ্যাহ্নে আনন্দময় ক্ষণ:

মধ্যাহ্নে পল্পিপ্রকৃতিতে মানুষের মধ্যে আনন্দময় কিছু মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। মনের ভালােলাগার বােধ। কাটে আর ঝড়ের আভাস পেলে হাজির হয় আমগাছের নিচে। শহরে অবশ্য এ রকম চিত্র দেখা যায় না। কমময় ব্যস্ত শহরে। দুপুর যেন একরকম উপেক্ষিত; শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আভিজাত্য তাদের এরকম দুপুর উপভােগের খুব বেশি সুযােগ দেয় না। বাস্তবিক কোনাে সিক্ততা। কিন্তু ওই রকম দুপুরে প্রকৃতিও বিমুখ হয় মানুষের মানসিক চাহিদার কাছে। তাই চারিদিকে শূন্যতা হাহাকার রূঢ়তা যেন মানুষের মনকে গ্রাস করে ফেলে ।

উপসংহার:

গ্রীষ্যের মধ্যাহ্নের ওই ক্ষণও প্রকৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এক সময় সূর্য ঢলে পড়ে শান্ত হয়ে আসে প্রকৃতির রুদ্ররূপ। গােধূলিলগ্ন থেকে পাখির ঘরে ফেরা শুরু হয়। সূর্যতাপ রহিত প্রকৃতি একটু হলেও ঠান্ডা হয়ে আসে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা শেষে রাত নামে প্রকৃতিতে। তবে দীর্ঘ মধ্যাহ্ন প্রকৃতির বুকে যে স্মৃতি এঁকে দেয় তা মানুষের মধ্যেও স্থায়ী কল্পনার উৎসারণ করে । অলস মানুষ বিশ্রামে পার করে গ্রীষের এ রকম প্রতিটি মুহূর্ত আর কল্পনার শক্তিতে শিল্পী গড়ে তােলেন অপূর্ব নির্মাণসৌধ।

Rate this post

You may also like

Leave a Comment