Table of Contents
পল্লিউন্নয়ন রচনার সংকেত
- ভূমিকা
- পল্লির অবস্থান
- পল্লিউন্নয়ন
- অতীত ও বর্তমানের চিত্র
- পল্লিউন্নয়নের প্রয়ােজনীয়তা বা জাতীয় উন্নতিতে পল্পির গুরুত্ব
- পল্লিউন্নয়ন পরিকল্পনা
- পল্লিউন্নয়নের উপায় ও গৃহীত উদ্যোগ
- পল্লিউন্নয়নের উপায়
- গৃহীত উদ্যোগ
- পল্লিউন্নয়নের সমস্যা
- একবিংশ শতাব্দীর পল্লিউন্নয়ন চিন্তা
- আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
- উপসংহার
পল্লিউন্নয়ন রচনা
ভূমিকা :
এ দেশের শতকরা ৮৫% ভাগ মানুষের দেহ গড়ে ওঠে পল্লি মায়ের স্নেহের পরশে। চাকচিক্যময় শহরে যারা এখন বসবাস করছে তাদের শেকড় অনুসন্ধান করলেও দেখা যাবে মূল তাদের গ্রামে। সুজলা-সুফলা, শস্যশ্যামলা পল্লি রূপ এদেশের সব শ্রেণির মানুষকে সব সময়ই আকর্ষণ করে। যেহেতু আমাদের দেশ গ্রামপ্রধান, তাই সময় এসেছে পল্লিমাতাকে উন্নয়নের নব নব মাত্রায় আধুনিক রূপ প্রদানের তথা পল্লিউন্নয়নের। সাধারণভাবে পল্লিউন্নয়ন বলতে পল্লির বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বােঝায়। নাগরিক বিভিন্ন সুযােগ-সুবিধার যথাযথ প্রয়ােগের মাধ্যমে পল্লির মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনা দরকার।
পল্লির অবস্থান:
শহরের রঙিন আলােয় বিভ্রান্ত হয়ে মানুষ ধাবিত হচ্ছে শহরের নির্মম সৌন্দর্যের দিকে। পল্লি হয়ে যাচ্ছে শ্রীহীন, শুষ্ক, প্রাণহীন। দেশের অধিকাংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। পল্লির অবস্থা এ ক্ষেত্রে আরও শােচনীয় বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞানের যুগ। কিন্তু আমাদের পল্লি এখনও অনেক পিছিয়ে। প্রতি বছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগও আমাদের পল্লিজীবনকে করছে বিপর্যস্ত। কিন্তু এক সময় গ্রামগুলােই ছিল সম্পদ আর সমৃদ্ধির প্রাণকেন্দ্র।
“তুমি যাবে ভাই, যাবে মাের সাথে আমাদের ছােট গাঁয়। গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়।” (জসীমউদদীন)
কবির সােনার বাংলা এখন আর নেই। দিন দিন পল্লি তার আপন চেহারা হারিয়ে ফেলছে।
পল্লিউন্নয়ন:
পল্লির অতীত ঐতিহা এখন আর নেই। গােলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গােয়াল ভরা গরু এসব দিন দিন যেন রূপকথার মতােই মনে হয় আমাদের কাছে। বিশ্বায়নের ফলে বদলে যাচ্ছে মানুষের রুচি, অভ্যাস, পােশাক ও সংস্কৃতি। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখেই পল্লিউন্নয়নে মনযােগী হতে হবে। সেখানে দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রামে বাস করে সেখানে গ্রামীণ উন্নয়ন ব্যতীত দেশের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, কৃষি উৎপাদন ও সকল ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের মাধ্যমে পল্লিউন্নয়ন সম্ভব। প্রাচীন বিভিন্ন শিল্প যেমন মসলিন, জামদানি, খদ্দর প্রকৃতির অবস্থা সংকটাপন্ন । আমাদের এ ঐতিহ্যগুলাে রক্ষা করতে হবে।
অতীত ও বর্তমানের চিত্র:
পল্লির বর্তমান ও প্রাচীন চিত্রের মধ্যে অনেক তফাত। এখন আর পঙ্কির ঘরের উঠানে সবজিবাগান বা কৃষিজ পণ্য দেখা যায় না। প্রায় সব জায়গায় দালানকোঠা ও ইলেকট্রনিক্সের ব্যবহার। গ্রামের পাতকুয়াে এবং ইদারা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত । শহর ও গ্রামের ব্যবধান এখন অনেক কম। গ্রামের ছেলেমেয়ের মাঝে শিক্ষা লাভের আগ্রহ বাড়ছে। বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন সৌরবিদ্যুৎ দেখা যায়। এভাবে নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গ্রামের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত আছে।
পল্লিউন্নয়নের প্রয়ােজনীয়তা বা জাতীয় উন্নতিতে পল্পির গুরুত্ব:
আমাদের জাতীয় অর্থনীতির মূল উৎস পল্লি । পল্লিউন্নয়ন ব্যতীত দেশের সর্মুখী বা সর্বজনীন কল্যাণ সম্ভব নয়। পল্লির অবস্থান ও উন্নয়নের ওপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব নির্ভরশীল তাই পল্লিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে হবে। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন, পল্লিতে তার কোনাে অভাব নেই, অভাব শুধু যুগােপযােগী শিক্ষা, আদর্শ ও কর্মপ্রেরণার। পল্লি সব সময়েই উন্নয়নযােগ্য । শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে পল্পির সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন সম্ভব। তাই কবিগুরুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলতে পারি— “ফিরে চল ফিরে চল মাটির টানে।”
পল্লিউন্নয়ন পরিকল্পনা:
পল্লির জন্য উন্নয়নের মাঝেই সার্বিক উন্নয়ন নির্ভরশীল একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু এ উন্নয়ন-কাজে অগ্রসর হতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই পল্লিবাসীকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। সব সময় সরকারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে চলবে না। আত্মশক্তির ওপর ভরসা করেই আমাদের পল্লিউন্নয়ন কাজে অগ্রসর হতে হবে। উন্নয়নের প্রতিটি ব্যবস্থা যাতে ধীরে ধীরে উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারে, তার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
পল্লিউন্নয়নের উপায় ও গৃহীত উদ্যোগ:
বাংলাদেশে পল্লিউন্নয়নের চাবিকাঠি হলাে:
(ক) দারিদ্র্য দূরীকরণ, গ্রামীণ দরিদ্রদের
জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন,
(খ) আয় ও সম্পদের সুষম বণ্টন,
(গ) ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি,
(ঘ) পরিকল্পনা প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন, সুযােগ-সুবিধার অংশীদারিত্ব, পল্লিউন্নয়ন কর্মসূচি মূল্যায়নে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ;
(ঙ) অপ্রতুল সম্পদের ব্যবহার ও বণ্টন নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রামীণ জনগণকে অধিকতর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদান তাই সঠিক কর্মসূচি নিয়ে গ্রামে জনগণের উন্নতিকল্পে এগিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলাে নেয়া যায়:
পল্লিউন্নয়নের উপায়:
১. শিক্ষার ব্যবস্থা: গ্রামের মানুষের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পল্লির অনগ্রসরতার মূল কারণ অশিক্ষা ও কুশিক্ষা ।
২. স্বাস্থ্য উন্নয়ন: পল্লির ৭৫% শিশু অপুষ্টির শিকার। বছরে ত্রিশ হাজারেরও বেশি শিশু অন্ধত্বের কবলে পড়ে, লাখ লাখ শিশু মারা যায় ডায়রিয়া ও নিউমােনিয়ার আক্রমণে। অধিকাংশ গ্রামে রয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যা। সাম্প্রতিক কালে গ্রামে গ্রামে আর্সেনিক দূষণ গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যরক্ষায় ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত স্বাস্থ্য শক্তিশালী- জাতি গঠনে সহায়ক— এ সত্যকে সামনে রেখে পল্লির জনস্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে এবং এর জন্য প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. কৃষিউন্নয়ন: বাংলাদেশের পল্লিজীবন কৃষিভিত্তিক। বর্তমান যুগের আধুনিক স্বয়ংক্রিয় কৃষিব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন করতে হবে ।
৪. কুটিরশিল্পের উন্নয়ন: কুটিরশিল্পের মাধ্যমে গ্রামের বেকারদের কর্মসংস্থান করতে হবে। কুটিরশিল্পের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়ােজনীয় সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে হবে। কারণ, গ্রামবাসীর অগ্রগতিই দেশের অগ্রগতি।
৫. যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের জন্য রাস্তাগুলাের সংস্কার সাধন ও পর্যাপ্ত নতুন রাস্তা নির্মাণ করে যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।
৬. মৎস্যচাষের ব্যবস্থা: গ্রামে অনেক হাজামজা পুকুর, নালা, ডােবা পতিত অবস্থায় আছে। এগুলাের সংস্কার করে মাছ চাষের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. পল্লিবিদ্যুতায়ন: পল্লির জনগণের উন্নতির জন্যে পল্লিবিদ্যুতায়ন একান্ত অপরিহার্য। আমাদের দেশের অধিকাংশ গ্রামে এখনাে বিদ্যুৎ-সুবিধা পৌছায়নি। তাই যত শীঘ্র সম্ভব প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৮. সঞ্জয়ী মনােভাব গড়ে তােলা: গ্রমের জনগণকে সয়ে উদ্বুদ্ধ তাদের সঞয়ী করে তুলতে হবে এ ব্যাপারে
৯. ভূমিহীনদের পুনর্বাসন,
১০. কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা,
১১. সমবায় প্রবর্তন,
১২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মােকাবিলা ও পরবর্তী পুনর্বাসন এবং
১৩. সম্পদের সুষম বণ্টন করতে হবে ।
এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়ী ব্যাংক যেমন— গ্রামীণ ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক প্রভৃতি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে ।
গৃহীত উদ্যোগ:
বর্তমান পল্লিউন্নয়ন কর্মসূচিকে জাতীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি প্রচেষ্টা পল্লিউন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। পল্লির বৃহত্তম জনগােষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানাের জন্য কৃষি, গবাদি পশুপালন, সমবায়, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা; শিক্ষা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, গণসচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রম এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। সর্বোপরি উপযুক্ত আলােচনায় পল্লিউন্নয়নের জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। সরকার ইতােমধ্যে সবকটি পদক্ষেপই নিয়েছে, তন্মধ্যে
১. গ্রামে শিক্ষাবিস্তারের জন্য স্কুলকলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
২. বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, গণশিক্ষা, সর্বজনীন শিক্ষা, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বয়স্কশিক্ষা, অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে।
৩. গ্রামীণ অর্থনীতিকে সবল করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
৪. কুটিরশিল্পে উৎকর্ষ বিধানের জন্য প্রয়ােজনীয় প্রশিক্ষণ দান ও মূলধন সরাহ করা হচ্ছে
৫. কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়ােগ হচ্ছে।
৬. জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
৭. জনসংখ্যা বৃদ্ধি মােকাবিলায় এবং বেকার সমস্যা সমাধানকল্পে নানাধরনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
ঋণের ব্যবস্থা করেছে।
১০. স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে গ্রামীণ উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকার গ্রামীণ অবকাঠামাে রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮০ মে. টন চাল ব্যয়ে ১৪ হাজার ১৭০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
পল্লিউন্নয়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে পল্লিজীবনে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। একবিংশ শতাব্দীর এমকে আর অবহেলিত বলা চলে না, আগামী শতাব্দীতে শহর আর গ্রামের পার্থক্য নির্ণয় করা খুবই কঠিন হয়ে পড়বে— যা আমাদের সবার স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখনও বহুবিধ সমস্যা ও বধা রয়েছে গেছে।
পল্লিউন্নয়নের সমস্যা:
পল্লিউন্নয়ন প্রয়াস সম্পর্কিত অতীত অভিজ্ঞতার বিশ্লেষণ থেকে বড় ধরনের বেশ কিছু সমস্যাকে চিহ্নিতকরা যায়, যেগুলাে উন্নয়ন প্রয়াসের সফল সম্পাদনকে ব্যাহত করে আসছে। এসব সমস্যা হচ্ছে:
১। পল্লিউন্নয়ন সংস্থাসমূহের অস্থায়িত্ব,
২। অযােগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ নেতৃত্ব,
৩। কেন্দ্রীয় শাসকগােষ্ঠী কর্তৃক স্থানীয় সরকারগুলােকে অসহযােগিতা,
৪। সুবিন্যস্ত পল্লিউন্নয়ন নীতিমালার অভাব,
৫। পল্লিউন্নয়ন প্রকল্প থেকে উদ্ভূত সুযােগ-সুবিধার অসম বণ্টন,
৬। প্রাকৃতিক ও লাখ সম্পদের সীমাবদ্ধতা,
৭। পল্লিউন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনায় উচ্চশ্রেণির আধিপত্য এবং অসহায়ক এক গ্রামীণ সমাজ।
বাংলাদেশের পল্লির আর্থসামাজিক বুনিয়াদের প্রকৃতিই পল্লিউন্নয়ন কর্মসূচির কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দেখা দেয়। সেসব বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-পুঁজি গঠনের নিম্নস্তর, কৃষিনির্ভর অর্থনীতি, নিপুণ ও শিক্ষিত জনশক্তির অভাব, কোরত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, বিদেশি সহায়তার ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা, দুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, গ্রাম্য রাজনৈতিক দলাদলি, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনুন্নত বাজার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়ােগ।
একবিংশ শতাব্দীর পল্লিউন্নয়ন চিন্তা:
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ব্যবস্থাপনার দুর্লতা ও অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বিপর্যয়ের সম্মুখীন। এ দেশের ব্যাপক জনগােষ্ঠী বিশ্বের দরিদ্র দেশসমূহের মধ্যে দরিদ্রতম এবং বেশিরভাগ মানুষ মূলত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। এর ফলে অপরিকল্পিত এবং মাত্রাধিক সম্পদ ব্যবহারের কারণ প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং শস্য উৎপাদন এ দেশের কৃষকের অন্যতম একক অবলম্বন । এর জন্য মাটি এবং ভূমির ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। শস্য উৎপাদনের জন্য মাটির উর্বরতা কিংবা উৎপাদনশীলতা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; যার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব। আর কৃষিব্যবস্থার ওপরই নির্ভর করছে গ্রামীণ উন্নয়ন। এ জন্য একবিংশ শতাব্দীর পল্লিউন্নয়ন চিন্তা ভাবনায় কৃষিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এ লক্ষ্যে মাটির উপাদান, এগুলাের রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণের প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে।
আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য:
গ্রামে সহস্র অভাব, এই ভেবে গ্রাম ত্যাগ করলে চলবে না। গ্রামের মানুষকে ফিরে যেতে হবে গ্রামে এবং গড়তে হবে কলুষমুক্ত গ্রাম । সমস্যা এড়িয়ে গেলে সমস্যার সমাধান হয় না। গ্রামের উন্নয়নকে নিজের মনে করতে হবে । সকলের সম্মিলিত প্রবল প্রচেষ্টায় গ্রামের হৃতশ্রী পুনরুদ্ধার সম্ভব
উপসংহার:
দেশের পঙ্গ অর্থনীতিকে সজীব ও জীবন্ত করে তুলতে হলে গ্রামকে সজীব করে তুলতে হবে। গ্রামই দেশের প্রাণ।’ এটা ভুলে গেলে চলবে না। ড. লুৎফর রহমান বলেছেন- ‘জাতিকে বড় করতে হলে পল্লির মানুষকে প্রথমে জাগাতে হবে।’ গ্রামের উন্নতি ও দেশের উন্নতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আশা করা যায়, অচিরেই আমাদের সরকার ও সচেতন দেশবাসীর সক্রিয় সহযােগিতায় গ্রামগুলােকে আমরা ‘সােনার গ্রাম’ হিসেবে দেখার সুযােগ পাব। তখন আমরা অতি আনন্দেই নিমন্ত্রণ করব-
“তুমি যাবে ভাই/ যাবে মাের সাথে আমাদের ছােট গাঁয়?”