Table of Contents
» বাংলার কৃষক রচনা
» বাংলাদেশের কৃষি, কৃষক ও কৃষি উন্নয়ন রচনা
বাংলাদেশের কৃষক রচনার সংকেত
- ভূমিকা
- বাংলাদেশের কৃষক
- কৃষকের গুরুত্ব
- কৃষকের অতীত অবস্থা
- কৃষকদের বর্তমান অবস্থা
- কৃষকদের দুরবস্থার কারণ
- কৃষকদের উন্নতির উপায়
- উপসংহার
বাংলাদেশের কৃষক রচনা
ভূমিকা:
শ্যামল বাংলার অর্থনীতির প্রধান উৎস কৃষি । বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। কৃষকদের সীমাহীন শ্রম আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে এদেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ বাংলাদেশের কৃষি আর কৃষকদের কথা বাদ দিলে এদেশের অর্থনীতিকে অস্বীকার করা হয়। শুধু দেশীয় অর্থনীতিতেই কৃষকদের ভূমিকা সমাপ্ত নয়, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতেও আছে কৃষকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
বাংলাদেশের কৃষক:
কৃষি ব্যবস্থাপনাটি পৃথিবীর প্রাচীন পেশা হিসেবে স্বীকৃত। সভ্যতার উষালগ্নে কৃষিই ব্যাপক অবদান। রেখেছিল। ফলে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই কমবেশি কৃষির বিস্তার ঘটেছিল। আর এ সূত্র ধরেই বাড়তে থাকে কৃষকদেরও বিস্তার। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলাে শিল্প উৎপাদন থেকে তাদের জাতীয় আয় ও অর্থনীতিকে কল্পনা করে থাকে— কিন্তু তাই বলে কৃষিকে তারা বাদ দিয়ে ফেলেনি। উদাহরণ হিসেবে চীনের কথা বলা যেতে পারে। তাদেরইলেক্ট্রনিক সামগ্রীতে ছেয়ে আছে গােটা বিশ্ব। বলা চলে, এটিই তাদের অর্থনীতির প্রধান খাত। কিন্তু তাদের দেশের কৃষকদের অবস্থা অনেক উন্নত, গুরুত্বও অনেক বেশি। তাদের দেশের কৃষকদের কৃষিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহচর্য তাদের অনেক বেশি আধুনিক করে রেখেছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের কৃষকদের অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশের কৃষক বলতে বােঝায় নিরক্ষর, রােগক্লিষ্ট ও ঋণভারে জর্জরিত অসহায় এক সম্প্রদায়কে। তারা পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রভূত উন্নতি সম্পর্কে বলা চলে। অজ্ঞ। জীর্ণ কুটিরে বাস করে হিসাব কষে বীজ রােপণের, ফসল কাটার । হালের গরু আর সেকেলের লাঙল জোয়াল তাদের বেঁধেছে সহজসরল জীবনে। তাদের জীবনে উচ্চাশা বলতে কিছু নেই, বরং ক্ষুদ্র চাওয়াটুকু থেকেও তারা বঞিত। উন্নত দেশসমূহের কৃষকরা প্রশংসিত আর বাংলাদেশের কৃষকরা অবহেলিত।
কৃষকের গুরুত্ব:
দেশের জাতীয় আয় ও অর্থনীতিতে কৃষি যে ভূমিকা পালন করে এর সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এদেশের কৃষক। প্রয়ােজনীয় খাদ্যের জোগান দিয়ে কৃষকরা আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। শস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের কৃষককুল যদি সক্রিয় ভূমিকা পালন না করত তাহলে নিত্য দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে বিপন্ন হতাে দেশের মানবঅস্তিত্ব। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ খাদ্যশস্যের জোগান দেয় এদেশের কৃষক। একসময় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতে কৃষকের উৎপাদিত পাট থেকে। আজও পাটজাত দ্রব্যের সর্বাংশের জোগান আসে কৃষকদের হাত থেকেই। পুষ্টিহীনতা আমাদের দেশের একটি জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যা দূরীকরণে কৃষকরা প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য শাকসবজি ও ফলমূল থেকে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করা হয়ে থাকে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কৃষকরা যদি তাদের উৎপাদন বন্ধ করে দিত শুধু জনস্বাস্থ্যই হুমকির মুখে পড়ত না গভীর খাদ্যসংকটে বিনা আহারে প্রাণপাত হতাে মানুষের। মূলত কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষিই বেঁচে থাকার ভরসা এবং আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার মূল কেন্দ্রবিন্দু,,,
‘সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।’
কৃষকের অতীত অবস্থা:
বাংলাদেশের কৃষকদের অতীত অবস্থা ছিল অনেকটা রূপকথার মতাে। গােলাভরা ধান, গােয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ এসব পরিচিত বচনগুলাে রূপকথা মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটিই ছিল এক সময়ের কৃষকদের জীবন বাস্তবতা। অতীতে কৃষকদের আবাদি জমির পরিমাণ ছিল পর্যাপ্ত, মাটি ছিল উর্বর। মানুষ কম ছিল, চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি ছিল উৎপাদন। আজকের কৃষকরা মহাজনদের কাছে ঋণের দায়ে জর্জরিত, কিন্তু অতীতের কৃষকরা ঋণগ্রস্ত ছিল না, ছিল দুশ্চিন্তামুক্ত প্রফুল্ল জীবনের অধিকারী।
কৃষকদের বর্তমান অবস্থা:
বর্তমান বাংলাদেশের কৃষকরা ভূমিহীন। দেশে আবাদি জমির পরিমাণ গেছে কমে। কৃষক অন্যের জমিতে বর্গা দিয়ে কোনােরকমে তাদের জীবন যাপন করে যাচ্ছে। সার, কীটনাশকের মূল্য এখন চড়া। কৃষকদের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে অত্যাবশ্যক এ উপাদান ক্রয়। এমনকি টাকা দিয়ে যে সার কিনবে সে সারও দেশে পর্যাপ্ত নেই বরং সার চাইতে গিয়ে কৃষককে দিতে হয়েছে জীবন । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে যেখানে কৃষকের পাবার কথা কলের লাঙল আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা যেখানে কৃষকরা পাচ্ছে না যেমন তেমন দুটি হালের বলদ। এ অবস্থা কাম্য হতে পরে। প্রয়ােজন আমাদের দেশের কৃষকদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপােষকতা, প্রয়ােজন তাদের চাহিদাগুলাের পূরণ ।
কৃষকদের দুরবস্থার কারণ:
আমাদের দেশের কৃষকরা কৃষিকাজ করে অভ্যাস বা পেশাগত পরম্পরা মেনে কিন্তু এখন বিজ্ঞাননির্ভর হওয়া জরুরি। কৃষকরা এখনও প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করে বলে শ্রম বেশি হচ্ছে বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে কম। ত্রুটিপূর্ণ ভূমি ব্যবস্থাও আজকের কৃষকদের দুরবস্থার একটি বড় কারণ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কৃষকদের একটি বড় অংশের নিজস্ব ভূমি নেই। অন্যের জমিতে চাষ করে জমির মালিককে বর্গা দিয়ে যা কৃষক পায় তাতে তার তেল- নুনের বন্দোবস্ত করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে দরিদ্র কৃষক দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে আর মালিক মহাজনেরা স্থির বসে আছে মহাজনী কাজে। বন্যা, খরা, ঝড়, জলােচ্ছাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিতই আঘাত করে এদেশের কৃষকদের। সর্বহারা
হয়ে চরম অসহায়ত্বকে বরণ করে তারা।
কৃষকদের উন্নতির উপায়:
বাংলাদেশের কৃষকদের দুরবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে আরও অনেক বেশি সক্রিয় করে স্থানে স্থানে কৃষকদের চাষবিষয়ক কর্মশালার আয়ােজন করে। কৃষকদের বিজ্ঞাননির্ভর করে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কৃষকদের রাষ্ট্র কর্তৃক মূলধন দিয়ে সহযােগিতা করা যেতে পারে । আধুনিক সেচব্যবস্থার প্রচলনকে সম্প্রসারণ করতে হবে এবং কৃষকদের কাছে তা পৌছাতে হবে সাশ্রয়ী মূল্যে। সার, কীটনাশকসহ যাবতীয় কৃষিজ উপকরণ কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারলে এটি হবে একটি বড় কাজ। সরকার এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। মহাজনদের চড়া সুদের ঋণ থেকে কৃষককুলকে রক্ষা করার জন্যে কৃষি ব্যাংককে সচল রেখেছে। সময়ে সময়ে সারের জোগান দিয়ে সার আমদানি বা ক্রয় করে কৃষকদের প্রতি সরকারের সহায়তা অব্যহতbরেখেছে। কিন্তু সরকারকে এ ব্যাপারে আরও বেশি উদার হতে হবে, হতে হবে কৃষকদের প্রতি আন্তরিক।
উপসংহার:
বাংলাদেশের কৃষক বাঁচলে অর্থনীতি বাঁচবে। কৃষক বেশি উৎপাদন করতে পারলে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তাই বাংলাদেশের কৃষকদের উন্নয়নে দরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপ, তবেই সুদৃঢ় হবে দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ।
আরো দেখুন-
Paragrapgh: A famer
অনুচ্ছেদ: একজন কৃষক
11 comments
Thanks a lot!
Vai xoss akta rochona
Onek sundor hoiche
Tnx a lot☺️
Not satisfied 😑
Sorry for your dissatisfaction.
Good
😊 গ্রেট
Great Essay 😎
Very nice essay
it’s a grate essay