Table of Contents
শীতকাল অধিকাংশ মানুষের প্রিয় ঋতু হওয়াতে শীতকাল সম্পর্কে একটি রচনা লেখা সহজ বিষয়। শ্রেণি ভিত্তিক সাজানোর চেষ্টা করেছি। প্রয়োজনীয় কিছু পাবেন বলে আশা করছি।
শীতকাল রচনা Class 5 :PSC
সূচনা
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতুচক্রের আবর্তনে আমাদের দেশে শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে। উত্তরের হিমেল হাওয়ার প্রভাবে হাঁড় কাঁপানো শীত এবং সময় জেঁকে বসে বাংলাদেশের প্রকৃতির উপর
প্রকৃতি:
শীতকালে প্রায় সময়ই ঘন কুয়াশা পড়ে। কোনো কোনো দিন সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখা যায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে চারদিকে তাকালে মনে হয় যেন প্রকৃতি কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে। এ সময় অধিকাংশ গাছের পাতা রুক্ষ ও বিবর্ণ হয়ে ঝরে যায়।
শীতের সকাল:
শীতের সকাল থাকে কুয়াশাচ্ছন্ন ও শিশির ভেজা। তাই অনেক বেলা পর্যন্ত পথ-ঘাট নির্জন থাকে। শহরবাসীদের নিকট শীতের সকাল আরামপ্রদ। মানুষেরকর্মকোলাহল শুরু হয় সূর্যোদয়ের অনেক পরে। তবে গ্রামে-গঞ্জে এবং শহরের বস্তি এলাকায় শীতের সকাল আসে নির্মমরূপে। তাদের থাকে না প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র। সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তারা জেগে বসে কাটিয়ে দেয় সকালের রোদ পোহাবার আশায়।
স্থায়িত্ব:
বাংলার ঋতুচক্রের পঞ্চম ঋতু শীতকাল। পৌষ-মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। কিন্তু কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকেই একটু একটু করে শীতের আগমন ঘটতে শুরু করে, যা ফাল্গুন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে দেখা
যায়।
সুবিধা:
শীতকালে কৃষকের ঘরে ঘরে ওঠে আমন ধান। চারদিকে জাগে নবান্নের উৎসব । খেজুরের রস, চিড়া, মুড়ি, পিঠা-পায়েস ও খেজুরের গুড়ের মিষ্টি সুবাসে চারদিক আমোদিত থাকে। এ সময় টাটকা মাছ, তরি-তরকারি ও শাকসবজি পাওয়া যায়। শীতের দিনে বেশি পরিশ্রম করা যায়, সহজে ক্লান্তি আসে না। তাছাড়া মশা-মাছির উপদ্রবও থাকে অনেকটা কম।
অসুবিধা:
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে। দারিদ্র্য যাদের নিত্যসঙ্গী, গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য তাদের অনেকেরই থাকে না। আর এভাবেই শীত গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও শহরের বস্তিবাসীর জীবনে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দেখা দেয়। তাছাড়া শীতকালে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানা রকম চর্মরোগের প্রকোপ দেখা দেয়।
উপসংহার:
নানা অসুবিধা সত্ত্বেও শীতকাল বাংলাদেশের মানুষের বেশ পছন্দের ঋতু। কেননা এ ঋতুতে একদিকে যেমন নবান্নের উৎসব চলে, অন্যদিকে তেমনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও দেশবাসীকে আনন্দে মাতিয়ে রাখে।
বাংলাদেশের শীতকাল রচনার সংকেত JSC SSC
- ভূমিকা
- বাংলাদেশে শীতকাল
- শীতের সকাল
- গ্রামীণ জীবনে শীতকাল
- নগরজীবনে শীতকাল
- শীতের বিশেষ আকর্ষণ
- উপসংহার
বাংলাদেশের শীতকাল রচনা JSC SSC
ভূমিকা:
ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এ ষড়ঋতু বাংলায় বয়ে আনে রকমারি রূপ। ঋতু আসে, ঋতু যায় প্রকৃতি সাজে নানারঙে নানা সাজে। কবির ভাষায়-
‘ঋতুর দল নাচিয়া চলে।
ভরিয়া ডালি ফুল ও ফলে,
নৃত্যলােকে চরণতলে মুক্তি পায় ধরা
ছন্দে মেতে যৌবনেতে রাঙিয়া উঠে জরা।
এমনই এক ধারাবাহিকতায় হেমন্তের পর আসে শীত। শীত বাংলাদেশে আসে রিক্ততার রূপ ধারণ করে। বন-বনানীর পাতা ঝরার বার্তা বয়ে আনে শীতকাল।
বাংলাদেশে শীতকাল:
পৌষ ও মাঘ এ দু মাস শীতকাল । এ ঋতু অনেকেরই প্রিয় ঋতু। এ ঋতুর তুলনা হয় না। শীতকালে আমাদের দেশে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। ফলে পথঘাটে স্বচ্ছন্দে হাঁটা-চলার আনন্দ পাওয়া যায়। শীতকালে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি পাওয়া যায়। এছাড়া শীতকালে এদেশের মানুষ পিঠাপুলি খেতে ভালােবাসে। শীতের সকালে খেজুর রসের কথা মনে হলে কার না ইচ্ছে করে শীতকালে ফিরে যেতে কবি সুফিয়া কামাল তাই শীতকে স্মরণ করেছেন এভাবে-
‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে
আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।
কুলের কাঁটার আঘাত সহিয়া, কাঁচা-পাকা কুল খেয়ে, অমৃতের স্বাদ যেন লভিয়াছি গাঁয়ের দুলালী মেয়ে।
শীতের সকাল:
শীতের সকাল যেকোনাে সকালের চেয়ে ব্যতিক্রম। গাছের পত্রপল্লবের কোনাে ফাক দিয়ে সকালের সােনা রােদ এসে স্পর্শ করে আমাদের বারান্দা আর উঠোন। শীতের সকালে ঈষদুষ্ণ রােদে বসে শীতের পিঠাপুলিতে সকালের নাশতা করতে সবারই ইচ্ছে হয়। গায়ে চাদর জড়িয়ে মেঠো পথে হাঁটতে গেলেই শিশির ভেজা ঘাস পায়ের গােড়ালি ভিজিয়ে দেয়। শিমুল ফুলের লাল পাপড়ির আড়ালে বসে দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়ে কিচিরমিচির শব্দ তুলে নেচে ওঠে কলতানে। সূর্যোদয়ের সময় পাখিরা গান গেয়ে গেয়ে শীতের সকালকে স্বাগত জানায়। সমস্ত আয়ােজনটা তখন হয়ে ওঠে প্রাকৃতিক। সামনে চোখ বাড়ালেই ফসলহীন শূন্য মাঠ, পাতাঝরা শূন্য গাছ দেখে তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন অভিমান করে ছুড়ে ফেলেছে তার পুরাতন সাজ । কবি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়—
‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকির এই ডালে ডালে। পাতাগুলি শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে।
গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা আর সূর্যমুখীর গায়ে কাঁচা রােদের কোমল স্পর্শে যে ঝকঝকে সুন্দরের বিচ্ছুরণ ঘটে তা সত্যিই শীতের সকাল ছাড়া অন্য কোনাে সময়ে অবলােকন অসম্ভব ।
গ্রামীণ জীবনে শীতকাল:
গ্রামের অধিকাংশ মানুষ পেশাগত দিক থেকে কৃষির সাথে জড়িত। তাই শীতের সকালেও তাদের শীতের আরাম ও আনন্দকে উপভােগ করার সময় থাকে না শীতের কুয়াশা ভেদ করে লাঙল নিয়ে তারা হােটে ফসলের মাঠে। শীতকাল ইরি ধান রােপণের প্রধান সময়। এ সময়ে কৃষকের বসে থাকলে চলে না। অন্যদিকে, কৃষাণী বধূরাও সবজি ক্ষেতে শুরু করে পরিচর্যা, আবার কেউ তােলে শাকসবজি। শীতের কনকনে ঠান্ডা বার্ধক্য, পীড়িতদের খানিকটা বেশিই চেপে ধরে। তাই ভাের হলেই খড়কুটোর আগুন জ্বালিয়ে তারা উষ্ণ করে নেয় তাদের শরীর। এ সময় শিশুরাও এসে যােগ দেয়। আগুন পােহানাের কাজে। আর মাঝে মধ্যে চলতে থাকে রসপূর্ণ গল্পকথা। ওদিকে পিঠা বানানাের ধুম পড়ে যায় রান্নাঘরে।গরম গরম পিঠা আর মিঠে রােদ সব মিলিয়ে যেন অভূতপূর্ব আনন্দের আয়ােজন।
নগরজীবনে শীতকাল:
নগরজীবনে সাধারণত শীতকে উপভােগ করার সুযােগ কম। নগরের উঁচু তলার মানুষেরা গরম কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে কাটায় শীতের প্রভাত। ফলে তাদের পক্ষে সকালের কুয়াশাচ্ছন্ন সুন্দর রূপ অবলােকন সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, চাকরিজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষ অফিসে আর কাজে বেরিয়ে পড়ে নগরের পথে পথে । কুয়াশা ভেদ করে ছুটে চলে তারা নিজ নিজ গন্তব্যে। জীবনের ব্যস্ততা চোখে পড়ে নিয়ত । গাড়িগুলাে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে ছুটে চলে অবিরাম। এখানে শিশিরে পা ভেজে না, পিঠার গন্ধে বাতাস ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে না। দরিদ্র এ দেশে শীত বস্তিবাসীর জন্যে নিয়ে আসে দুর্ভোগ। নগরে ভাসমান মানুষ হয় শীতের নির্মম শিকার। বাস্তুহীন শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ফুটপাতে, রেলস্টেশনে গরম কাপড় ছাড়াই প্রচণ্ড শীতের সাথে লড়াই করে।
শীতের বিশেষ আকর্ষণ:
শীতকাল বাংলাদেশের জন্যে বিশেষ একটি আকর্ষণের সুযােগও সৃষ্টি করে দেয়। শীতকালে বৃষ্টিপাত থাকে না বলে প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকে স্বাভাবিক। শীত তাই অবকাশের ঋতু, বেড়ানাের ঋতু। এ সময় সাগর থাকে শান্ত। তাই ভ্রমণপিপাসু পর্যটক যান কক্সবাজার সমুদ্র দর্শনের ব্যাকুল বাসনা মানুষকে অস্থির করে তােলে। তাই শীতকালকেই বেছে নেন তারা সমুদ্রবিলাসের সময় হিসেবে। সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে শীতের সূর্যাস্ত দেখার অনুভূতিটাই আলাদা। পৃথিবীতে যেন কোনাে ঐশ্বরিক সৌন্দর্য এসে ধরা দেয় তখন। তাই সমুদ্রদশী মানুষের কাছে শীতের আবেদন বড়ই রোমাঞকর।
উপসংহার:
বাংলাদেশের শীতকাল আনন্দ ও অবকাশের এক বিশেষ ঋতু। শীত বয়ে আনে ডালিয়া, গাঁদা আর চন্দ্রমল্লিকার ঘ্রাণ। কুয়াশাঘেরা প্রকৃতি তুলে ধরে শিশিরের সৌন্দর্য। রসনাবিলাসী বাঙালি শীতেই লাভ করে পিঠাপুলির তৃপ্তি । আর ভ্রমণবিলাসী মানুষ পায় ভ্রমণের আনন্দ কবির ভাষায় বলা যায়-
‘ঘন শিশির মাখা মেঠো ঘাসের পথ ধরে। হাজার বছর ধরে শীত কন্যা নাইয়রির বেশে আসে এ দেশে, আসবে, গ্রাম-বাংলার জনপদে।’
আরো দেখুন-
রচনা: শীতের সকাল (৯২০ শব্দ)
রচনা: অতিথি পাখি / পরিযায়ী পাখি
অনুচ্ছেদ: শীতের সকাল
3 comments
good
exellent
That’s fine but it is very long