Table of Contents
বাংলাদেশের শ্রমিক রচনার সংকেত (Hints)
- ভূমিকা
- শ্রমিক কারা
- দেশগঠনে শ্রমিকদের অবদান
- কৃষিকাজে শ্রমিক
- শিল্প উৎপাদনে শ্রমিক
- নাগরিক সভ্যতা বিকাশে শ্রমিক
- শ্রমিকের গুরুত্ব
- শ্রম অসন্তোষ
- উপসংহার
বাংলাদেশের শ্রমিক রচনা
ভূমিকা:
শ্রম পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা মূল্যবান সম্পদ। আজকের সাজানাে পৃথিবী আর উন্নত সভ্যতা যুগে যুগে শ্রমের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে। আর শ্রম দিয়ে, ঘাম দিয়ে যারা এ অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারাই শ্রমিক। বাংলাদেশের মতাে উন্নয়নশীল একটি দেশে শ্রম আর শ্রমিকের অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকার সাথে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে শ্রমিক শ্রমিক তাই উন্নয়নের হাতিয়ার।
শ্রমিক কারা:
বৃহৎ অর্থে কলকারখানায় যিনি কাজ করেন তিনি একজন শ্রমিক। কেননা যিনি শ্রম দেন এবং শ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন তিনিই শ্রমিক। তাই বলে দেশের রাষ্ট্রপতি, চিকিৎসক, শিক্ষক সকলেই এ অর্থে শ্রমিক নন। অজ্ঞ, মুখ, নিরক্ষর নিম্নবর্গের মানুষ যারা দৈনন্দিন জীবনে শরীরে খেটে জীবিকা নির্বাহ করছে এবং যারা দক্ষ হােক আর অদক্ষ হােক কলকারখানায়, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে, কৃষিকাজে, বাড়ি নির্মাণে, রাস্তাঘাট সংস্কারে ইত্যাদি কাজের সাথে নিজের জীবিকাকে যুক্ত করে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত- মূলত তারাই শ্রমিক, বাংলাদেশের শ্রমিকরা এদেশের একটি অনিবার্য অঙ্গ বলা যায় । চরম দরিদ্রতাকে মােকাবিলা করে এদেশের শ্রমিকরা বেঁচে থাকার লড়াই অব্যাহত রেখেছে।
দেশগঠনে শ্রমিকদের অবদান:
দেশের অভ্যন্তরে নানারকম গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা নিবিড়ভাবে জড়িত । ১৯৭১ নিকট পরবর্তী একটি প্রায় ভর দেশের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টসহ নানারকম সংস্কার কাজে শ্রমিকদের ভূমিকাই ছিল অগ্রগণ্য। আজও সড়ক নির্মাণ, রেলপথ সম্প্রসারণ ইত্যাদি কাজে শ্রমিকরা অবদান রেখে চলছে। তাই দেশ গঠনে শ্রমিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
কৃষিকাজে শ্রমিক:
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের কৃষির সাথে শ্রমিকের শ্রম অত্যন্ত নিবিড়ভাবে একীভূত হয়ে আছে। একজন কৃষক নিজে কৃষক বলে শ্রমের সাথে নিজে যেমন জড়িত তেমনিভাবে ফসল রােপণ, পরিচর্যা ও ফসল উত্তোলনের সময় তাকেও শ্রমিকদের সহায়তা নিতে হয়। আর তখনই কৃষকের সােনার ফসল ঘরে তােলা সম্ভব হয়। এক সময়ের স্বর্ণসূত্র পাট শ্রমিকদের শ্রমের মাধ্যমেই প্রক্রিয়াজাত হয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। কৃষিতে শ্রমিকদের শ্রম সন্নিবিষ্ট যদি না হতাে খাদ্য সংকট প্রকট হয়ে উঠত দেশে । রােদে পুড়ে, জলে ভিজে এদেশের কৃষক- শ্রমিকরা যদি শস্য উৎপাদন না করত তাহলে বিপুল জনগােষ্ঠীর খাদ্যাভাব দেখা দিত। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক গতিও হয়ে পড়ত ভঙ্গুর। তাই কৃষক-শ্রমিকদের অবদান অতুলনীয়।
শিল্প উৎপাদনে শ্রমিক:
বাংলাদেশ ক্রমে ক্রমে শিল্প উৎপাদনে তৎপর হবার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। শিল্পকারখানার ব্যাপক জনবল মূলত শ্রমিক শ্রেণি। শ্রমিকদের শ্রম না থাকলে শিল্প উৎপাদন স্তিমিত হয়ে পড়বে এবং ব্যাহত হবে শিল্পের বিকাশ ও
অগ্রগতি। বাংলাদেশে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের টিন ও সিমেন্ট উৎপাদনের ফ্যাক্টরি। এসব কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক
কাজ করে যাচ্ছে, যা ক্রম ঊর্ধ্বমুখী দেশীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রাখছে।
তৈরি পােশাকশিল্পে শ্রমিক:
বাংলাদেশের জাতীয় রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে তৈরি পােশাক শিল্পখাত থেকে। তৈরি পােশাক শিল্পখাত এখন অর্থনীতির সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ খাত। সারাদেশে লাখ লাখ গার্মেন্টস-শ্রমিক পােশাক তৈরিতে যে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে তা রীতিমতাে বিস্ময়কর বলা চলে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পােশাক যে জায়গা করে নিয়েছে এর নেপথ্যে শ্রমিক শ্রেণির ব্যাপক অবদানকে কোনাে অবস্থাতেই অস্বীকার করা যায় না। গার্মেন্টস-কারখানার শ্রমিকরা ইতােমধ্যেই অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিপ্লব বয়ে এনেছে দাবি করা যায়। তাদের নিরন্তর শ্রম জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে সন্দেহ নেই।
নাগরিক সভ্যতা বিকাশে শ্রমিক:
আজকের বাংলাদেশে নগরায়ন চলছে দ্রুতগতিতে। মানুষ ক্রমশ শহুরে বা নাগরিক জীবনে অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে। ফলে নতুন নতুন সুউচ্চ ভবন নির্মাণ হচ্ছে দেশে। বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, মধ্যবিত্তীয় আবাসন প্রকল্প সব কিছুই ক্রমবর্ধমান এখন। এ ভবনগুলাে নির্মাণে ইট ভাঙা থেকে দেয়ালের চুনকাম সর্বত্রই শ্রমিকদের হাতের ছোঁয়া। দৃষ্টিনন্দন ভবন আর নাগরিক জীবনের অন্যান্য নির্মাণ কাজেও বাংলাদেশের শ্রমিকদের আছে একটি উল্লেখযােগ্য ভূমিকা।
শ্রমিকের গুরুত্ব:
একটি দেশ শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষিত ও মার্জিত ব্যক্তিদের নিয়ে চলতে পারে না। তারা সমাজ বা দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন সত্য, কিন্তু তাদের দিয়ে সকল কাজ সম্ভব নয়। একটি দেশ শ্রমিক, কৃষক পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী সকলকে নিয়েই গঠিত। একজন কৃষিবিজ্ঞানী ভালাে বীজের বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটি বিজ্ঞানসম্মত ভাষণ দিতে পারেন কিন্তু তার পক্ষে খালখনন অসম্ভব। এমনিভাবে একজন স্থপতি স্থাপত্য বিষয়ে আধুনিক স্থাপত্যের নমুনা নিয়ে কথা বলতে পারলেও তার পক্ষে ইট ভাঙা সহজ নয়। এ কাজগুলাে মূলত শ্রমিকশ্রেণি সুচারুরূপে করে থাকে। তাই রাষ্ট্রে শ্রমিকদের গুরুত্বও কম নয়।
শ্রম অসন্তোষ:
বাংলাদেশে সম্প্রতি শ্রম অসন্তোষের কথা প্রায়ই শােনা যাচ্ছে। গার্মেন্টসকর্মীরা তাদের দেয় শ্রমের বিপরীতে উপযুক্ত সম্মানী পাচ্ছে না বলে মালিক শ্রেণির সাথে তাদের দ্বন্দ্ব হচ্ছে। অভিযােগ আছে, শ্রমিকরা মানবাধিকার থেকেও বঞিত হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, দেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক হাত গুটিয়ে বসলে জাতীয় আয় ও উন্নয়ন মুহূর্তেই চূর্ণ হয়ে যাবে। তাদের শ্রমের উপযুক্ত মজুরি এবং তাদের প্রতি সম্মানবােধ দরকার। শ্রমিকের উপযুক্ত সম্মানী তার ঘাম মুছে যাবার আগেই পরিশােধ করার কথা ধর্মেও বলা হয়েছে। তাই শ্রম অসন্তোষ নয়, বরং শ্রমিকের প্রতি উপযুক্ত সম্মানজনক আচরণই আমাদের কাম্য।
উপসংহার:
বাংলাদেশের শ্রমিক বাংলাদেশের উন্নয়নের হাতিয়ার। এ হাতিয়ার ভেঙে পড়লে অর্থনৈতিক বুনিয়াদ হয়ে পড়বে দুর্বল । তাই অর্থনৈতিক ও জাতীয় উন্নতির স্বার্থেই শ্রমিকদের উপযুক্ত মূল্যায়ন জরুরি।
1 comment
Thnx