Table of Contents
প্রশ্নঃ যৌতুকপ্রথা নিয়ে বাংলা অনুচ্ছেদ লিখ ।
উত্তরঃ
যৌতুক প্রথা অনুচ্ছেদ ১
যৌতুক একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। আমাদের সমাজে ধনী-গরিব সকল শ্রেণির পরিবারে প্রচলিত এই সমস্যার কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। গ্রাম ও শহর সব জায়গাতেই স্ত্রীরা স্বামী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে, কখনাে কখনাে মারাও যাচ্ছে। সাধারণ অর্থে ‘যৌতুক’ বলতে বিয়ের সময় মেয়েপক্ষের কাছ থেকে ছেলেপক্ষের দাবি-দাওয়া আদায়কে বােঝালেও আইনে বিয়ের শর্ত হিসেবে বর বা কনে যেকোনাে পক্ষের দাবি-দাওয়াকে যৌতুক বলে। ১৯৮০ সালে প্রণীত যৌতুক নিরােধ আইন অনুসারে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে যদি কোনাে পক্ষ অপর পক্ষকে বিয়ের আগে বা পরে
যেকোনাে সময় যেকোনাে সম্পদ বা মূল্যবান জামানত হস্তান্তর করে বা করতে সম্মত হয় সেটাই যৌতুক বলে বিবেচ্য। কিন্তু ১৯৮০ সালে যৌতুক নিরােধ আইনের ২(খ) ধারায় বলা হয়েছে– যৌতুক বলতে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) মােতাবেক ব্যবস্থিত দেনমােহর বা মােহরানা বােঝাবে না। যৌতুক দেওয়া-নেওয়া উভয়ই সমান অপরাধ। যৌতুক নেওয়া প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। যৌতুক আদায়ের জন্য নির্যাতন করলে বা স্ত্রীর মৃত্যু ঘটলে নারীকে কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’, ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র’ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান সাহায্য করে থাকে। এছাড়া স্থানীয়ভাবেও কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যৌতুকের কারণে নির্যাতিতকে সাহায্য করে। যেমন- ইউনিয়ন বা পৌরসভার চেয়ারম্যান, নিকটবর্তী থানা কর্মকর্তা, নিকটস্থ এনজিও প্রভৃতি। বাংলাদেশে যৌতুক প্রথার কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা যায়। এগুলাে হলাে- ১. দারিদ্র্য ২. পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থা ও মহিলাদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ৩. সামাজিক মর্যাদা লাভের আকাঙ্ক্ষা ৪. নারীর পরনির্ভরশীলতা ৫. কনের তথাকথিত সৌন্দর্যের অভাব ৬, সামাজিক দুর্নীতির প্রভাব ইত্যাদি। আমাদের মতাে দারিদ্র্যপীড়িত এবং আর্থসামজিক বৈষম্য জর্জরিত সমাজব্যবস্থা যৌতুকের মূল উৎসভূমি। এ সামাজিক সমস্যা দূর করতে হলে আমাদের কিছু করণীয় আছে। এগুলাে হলাে— ১. যৌতুকবিরােধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তােলা; ২. নারীশিক্ষার প্রসার; ৩. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা; ৪. যৌতুকবিরােধী আইনের যথাযথ প্রয়ােগ করা । উল্লিখিত কাজগুলাে যদি আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে সমাজে যৌতুকপ্রথা হ্রাস পাবে এবং একটি বৈষম্যহীন সুন্দর সমাজ গড়ে উঠবে।
যৌতুক প্রথা অনুচ্ছেদ ২
আমাদের দেশে বিরাজমান সবচেয়ে ঘৃণ্য সামাজিক প্রথা হচ্ছে যৌতুক প্রথা। এ প্রথায় কনের পক্ষ থেকে বরকে যৌতুক হিসেবে মােটা অঙ্কের টাকা ও দ্রব্যসামগ্রী উপঢৌকন দিতে হয়। আমাদের কৃষিনির্ভর আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যৌতুক
ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌতুকের দাবি মেটাতে গিয়ে অনেক পরিবারকে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মুখােমুখি হতে হয়। অনেক পিতা যৌতুক পূরণ করতে গিয়ে জমিজমা, গৃহস্থালি দ্রব্য এমনকি ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে
নিঃস্ব হন। অনেক গৃহবধূ যৌতুকের বলি হয়ে মারা যায় বা গুরুতরভাবে আহত হয়। আবার অনেকে স্বামীগৃহে মুখ বুজে নির্যাতন সয়ে দিন পার করে। এটি একটি সফল ও উন্নত জাতি গঠনের অন্তরায়। যৌতুকের মূল কারণ দারিদ্র্য। নারীদের
প্রতি নেতিবাচক মনােভাব, নারীদের পরনির্ভরশীলতা, সামাজিক দুর্নীতির প্রভাব এবং সামাজিক অবক্ষয়ও এর জন্য দায়ী। স্বামীকে যৌতুকের টাকা পরিশােধ করতে না পারলে স্ত্রীকে প্রায়ই শারীরিক বা মানসিকভাবে নির্যাতন ভােগ করতে হয়। বালাদেশের দূরবর্তী গ্রাম, যেগুলাে পুরােপুরি আধুনিকতার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত সেখানে এ প্রথার প্রভাব বেশি। প্রকৃতপক্ষে, যৌতুক প্রথা অত্যন্ত অপমানজনক। সমাজ থেকে এ ঘৃণ্য প্রথা নির্মূল করতে না পারলে কল্যাণমূলক সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবারের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। এ সামাজিক অপরাধ দূরীকরণের জন্য কেবল আহন ও কিছু নয়মের বিধবধকরণ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। যৌতুক প্রথার প্রতি আমাদের সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। লােভী লােকদের সংকীর্ণ মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সমাজ সচেতনতাও বৃদ্ধি করতে হবে। তাছাড়া নারী অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। আইন প্রণয়ন করতে হবে। যদি শ্বশুরবাড়ির লােকজন যৌতুকের কারণে কোনাে গৃহবধূর মৃত্যু ঘটায় বা গুরুতরভাবে আহত করে বা করার চেষ্টা করে তবে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যৌতুক বিরােধী অভিযান এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এ সকল পদক্ষেপ নিতে পারলেই আমাদের সমাজের নারীরা ঘৃণ্য যৌতুক প্রথার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবে৷
যৌতুকপ্রথা অনুচ্ছেদটি কেমন হয়েছে ? নতুন কিছু সংযোজন করা যায় বা বাদ দেওয়া প্রয়োজন? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।অনুচ্ছেদটি কেমন হয়েছে ? নতুন কিছু সংযোজন করা যায় বা বাদ দেওয়া প্রয়োজন? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
3 comments
খুবই ভালো হয়েছে।
ভালো
Motamonti hoyeche